একঝাঁক জোনাকি পর্ব ২২

একঝাঁক জোনাকি পর্ব ২২
ইশরাত জাহান অধরা

আপনাকে আজকে এমন লাগছে কেন?”
নিহান হেসে বলল,
“কেমন?”
“এইযে মনমরা!কেমন চুপচাপ।আপনি তো এমন না!”
“সবাই যে সবসময় ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে থাকে কথাটা কে বলেছে আপনাকে?”
“কেও বলেনি।মনে হলো।আচ্ছা কিছু কি হয়েছে?মন খারাপ আপনার?”
“মন খারাপ হলেই বা কি?আপনি ভালো করে দিবেন?”
“নাহ!বাট মনের কথা শেয়ার করলে নাকি মন খারাপ একটু হলেও কমে!আপনি বলতে পারেন আমাকে।”
নিহান অনিমার দিকে ফিরলো।

“সোহান যদি কোনদিন অরিনকে ফেরত নিতে চায় তখন কি করবেন?”
“সেটা সম্ভব না!”
“কেন সম্ভব না?উনার সস্পূর্ণ অধিকার আছে অরিনের উপর!ফেরত নিতে চাইলে আমি আপনি কেওই বাধা দিতে পারব না!”
“আমি ওকে আগেই এই কথা বলে দিয়েছি যাতে ভবিষ্যতে কোন অধিকার ফলাতে না আসে আমার বাচ্চার উপর! ও মেনেও নিয়েছে।”
“কিন্ত তাও!মানুষের মন কখন পরিবর্তন হয়ে যায় বলা যায় না।হঠাত করে অরিনকে দেখে যদি উনার মায়া লাগে।তখন?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কোর্টে যাবো। মামলা করবো ওর নামে।”
নিহান কিছু না বলে চুপ করে গেলো।
“আপনি এটা নিয়ে চিন্তা করছিলেন?”
“নাহ!জাস্ট মনে হলো আরকি!যান ঘুমিয়ে পরুন।”
“আপনি ঘুমাবেন না?”
“একটু পরে ঘুমাবো।”
“আমিও একটু পরে ঘুমাবো।এখানে থাকতে ভাল লাগছে।”

অনিমার কথা শুনে নিহান চমকে অনিমার দিকে তাকালো।এইমুহুর্তে অনিমার কাছ থেকে সে এরকম কথা আশা করেনি।নিহান তাকাতেই অনিমা বুঝল কি বলে ফেলেছে সে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,
“না মানে,বাসার ভিতরে গরম লাগছিলো।কিন্তু বারান্দায় আসার পর ঠান্ডা লাগছে তাই বললাম। ”
“তাহলে থাকুন।আমার সমস্যা নেই।”

এই কথাটা বলেই নিহান সামনে তাকিয়ে হাসলো।অনিমা মনে হয় ভুলে গেছে রুমের ভিতর এসি।সেখানে গরম লাগার কোন প্রশ্নই আসে না।বরং হুট করে এসি রুম থেকে বারান্দায় আসলে গরম লাগার কথা।এইমুহুর্তে সে চাইলেই অনিমাকে এই কথাটা বলতে পারতো!কিন্তু মেয়েটাকে লজ্জায় ফেলতে ইচ্ছা করছে না।বারান্দায় নীল রঙের ড্রিম লাইট জ্বালানো।নীল রঙের ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় নিহানের হাসি অনিমা নজর এড়ালোনা।সে ঠিক বুঝতে পেরেছে ওর কথা শুনেই নিহান হেসেছে।অনিমা এদিক ওদিক তাকাতেই আবছা আলোয় নিহানের হাতের ক্ষতের দাগের দিকে নজর গেলো যেহেতু নিহান রেলিং ধরেছিলো ক্ষতটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো।ক্ষতটা দেখতেই অনিমার ভ্রু কুচকে এলো।

“আপনার হাতে এটা কিসের দাগ?”
নিহান অনিমার কথা শুনে হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তেমন কিছুনা ছোটবেলায় গাছ থেকে পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলাম।সেটারই দাগটা এখনো রয়ে গেছে।”
“অহ আচ্ছা!গাছে কেন উঠেছিলেন?”
“অনেক আগের কথা।কিসের জন্য উঠেছিলাম মনে নেই।”

মাহির রাস্তা দিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলো।হঠাত রাস্তার মাঝে অনিমাকে দেখে অনিমার একটু সামনে যেতেই দেখলো অনিমা সামনে থাকা গাছের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে যেন কিছু গবেষনা করছে।মাহির অনিমার পাশে দাঁড়িয়ে সামনে থাকা বড় গাছের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি দেখছেন? ”

মাহিরের কথায় মাহিরের দিকে তাকাতেই মাহিরও অনিমার দিকে তাকালো।চোখে মুখে তার হাজারও প্রশ্নের ছড়াছড়ি।মাহিরকে দেখেই যেন অনিমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।ঠোটে হাসি রেখেই বলল,
“এসেছো ভালো করেছো!এখম আমার ব্যাগটা ধরো।ব্যাগটার জন্য আমি গাছে উঠতে পারছিলাম না।”
মাহির চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে বলল,

“গাছে উঠে কি করবেন আপনি?”
“একটু আগে একটা বিড়ালের ছানাকে দেখেছি।বেচারা আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিলো।আমার এখন ওকে উদ্বার করতে হবে।”
“উদ্বার কেন করতে হবে?”
“কারন ও নামতে পারছে না!”
“আপনি বুঝলেন কি করে যে ও নামতে পারছে না!”

“কারন ও বারবার নামার চেষ্টা করছিলো।বাট নিচের ভিউ দেখে ভয়ে মেবি ওর কলিজার পানি শুকিয়ে যাচ্ছিলো তাই নামতে পারছিলোনা।পিছিয়ে যাচ্ছিলো।এখন তুমিই বলো একজন মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে বিপদে সাহায্য করাটা আমার কর্তব্য না?”
“মানুষ হবে না প্রাণী হবে।”
“রাইট!তাই ওকে আমি সাহায্য করতে যাচ্ছি।”
“আপনি উঠতে পারেন গাছে?”
“অবশ্যই! ”

“কিন্তু বলছিলাম কি এসব ঝামেলায় না জড়ালে হয় না?পরে যদি আপনি বিপদে পরেন তখন আপনি কি করবেন?”
“একজন প্রাণীকে বাঁচানো কি ঝামেলা?আর আমি বিপদে পরি তখন আমাকে এই বিড়ালটা বাঁচাবে।গল্প পড়োনি যে একটা সিংহ একটা ইঁদুরকে খায়নি দেখে পরবর্তীতে সিংহ যখন জালে আটকা পরেছিলো ইঁদুরটা সিংহকে সাহায্য করেছিলো।যাইহোক দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি উঠি…”

বলেই কাধ থেকে উড়নাটা নামিয়ে কোমড়ে শক্ত করে বেধে নিলো।উঠার আগে পিছনে ফিরে বলল,
“বিড়ালটাকে কেচ ধরতে হবে তোমাকে। পারবে না?”
মাহির উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বুঝালো পারবে সে।অনিমা মিষ্টি হেসে গাছে উঠার মিশনে নেমে গেলো।কিছুক্ষন বাদেই গাছে উঠার মিশনে সফলও হয়ে গেলো।বিড়ালটা অনিমাকে দেখতেই অনিমার কাছে এগিয়ে গেলো।অনিমা বিড়ালটাকে গাছের একটা ডালে বসে বলল,
“মাহির!রেডি তো?”
“হুম!”

“কেচ ধরবে ১,২,৩ বলার সাথে সাথে! ”
মাহির গাছের নিচে দুই হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে।অনিমাও তার কথা অনুযায়ী এক দুই তিন বলেই ছুড়ে ফেলল মাহিরের হাতের মাঝে।মাহিরও বিড়ালটাকে কেচ ধরে খুশিতে বলল,
“কেচ ধরতে পেরেছি।আপনি নেমে আসুন।”
অনিমা খুশি হয়ে নিচে নামতেই যাবে হঠাত নিচের ভিউ দেখে ওর আত্মা কেঁপে উঠলো।এখন মনে হচ্ছে বিড়াল ছানার মতো ওর নিজেরও কলিজার পানি শুকিয়ে আসছে।কই যখন উঠলো তখন তো ভয় পায়নি।তাহলে এখন কেন ভয় পাচ্ছে?এজন্যই বুঝি বিড়াল ছানাটা নামতে পারছিলো না!অনেকক্ষন ধরে অনিমার নামার কোন নাম নেই বলে মাহির গলা উচিয়ে বলল,

“কি হলো নামছেন না কেন?”
অনিমা জিহ্বা দিয়ে শুকিয়ে যাওয়া ঠোটকে ভিজিয়ে বলল,
“নামতে পারছিনা।ভয় লাগছে।”
মাহির অবাক হয়ে বলল,
“বলেন কি?আপনি না বললেন গাছে আপনি উঠতে পারেন?”
অনিমা অসহায় হয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,

“আরে দুর!উঠতে পারি এটা মনে ছিলো।নামতে যে পারি না এটা তো মনে ছিলো না!”
“চিন্তা করবেন না বিড়াল নামিয়ে দিয়ে যাবে।অইযে গল্প পড়েন নি যে একটা সিংহ একটা ইঁদুরকে খায়নি দেখে পরবর্তীতে সিংহ যখন জালে আটকা পরেছিলো ইঁদুরটা সিংহকে সাহায্য করেছিলো।।এভাবে বিড়ালও আপনাকে সাহায্য করবে।”
“হুম ঠিক বলেছো।”
পরমুহুর্তেই পুরো বিষয়টা মাথায় আসতেই বলল,
“বিড়াল কিভাবে আমাকে নিচে নামাবে?আমি এখন বিপদে পরেছি বলে মজা নিচ্ছো আমার উপর?”
“বলেছিলাম আপনাকে না উঠতে!”

‘এখন আমি নামব কেমনে?”
মাহির কি একটা ভেবে বলল,
“আপনি লাফ দেন।আমি আপনাকে কেচ ধরব!”
মাহিরের কথা শুনে অনিমা বলল,
“অইটুকু ছেলে কিভাবে কেচ ধরবে আমাকে?”
“আমি পারব!আপনি লাফ দিন!”
“সিউর পারবে?”
“হুম।কোন চিন্তা করবেন না।আমি রেডি।”

বলেই গাছের নিচে দুই হাত মেলে দাঁড়ালো।অনিমা চোখ মুখ খিচে নিচে লাফ দিতেই অনিমার ভারি শরীর ছোট্ত মাহির নিতে পারলো না।দুজনেই মাটিতে গিয়ে পরলো।মাহিরের উপর অনিমা। মাহির ব্যথায় চোখ মুখ খিচে ফেলেছে।অনিমা মাহিরের উপর থেকে উঠে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“যাক!কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম।”
বলেই পিছনে তাকাতেই দেখল মাহির চোখ মুখ খিচে হাত ধরে বসে আছে।অনিমা এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কি হয়েছে ব্যথা পেয়েছো?”

হাতটা নিজের দিকে নিতেই দেখলো রক্ত পরছে হাত থেকে।
“আয় হায় রক্ত পরছে তো!ব্যথা পেলে কিভাবে?”
বলেই আশেপাশে তাকাতেই একটা ছোট্ত ইটের টুকরা চোখে পরলো।বুঝতে বাকি রইলো এই ইটের টুকরার জন্যই মাহিরের হাত থেকে রক্ত পরছে।মাহিরকে দাঁড় করিয়ে বলল,
“রক্ত থামাতে হবে।আমার জন্যই এমনটা হয়েছে।”
“আপনি চিন্তা করবেন না!রক্ত থেমে যাবে।”
“বললেই হলো!হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে তোমাকে!”
“কিন্তু এইটুকু চোটের জন্য…. ”

“চুপ করো!বেশি কথা বলো তুমি।চলো আমার সাথে।”
অনিমার ধমকে মাহির চুপ হয়ে গেলো।ভদ্র ছেলের মতো অনিমার হাত ধরে হাসপাতালে গেলো।ড্রেসিং করানোর সময় মাহির ভয়ে অনিমার হাত চেপে ধরে ছিলো।অনিমা শান্ত করার জন্য বলল,
“কিচ্ছু হবে না!ড্রেসিংটা তোমার ভালোর জন্যই করাচ্ছে।”
মাহির একবার অনিমার দিকে তাকালো। ক্ষতস্তানে স্যাভলন লাগাতেই অনিমার হাত আরও জোরে চেপে ধরল মাহির।

সকাল সকাল তিথি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরুতেই মায়ের সামনে পরল।তিথির মা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কিরে?এত সকালে কই যাচ্ছিস?”।
” কেন অফিসে!”
“তুই অই অফিসে জয়েন করবি?তুই না বলেলি জয়েন করবি না!”
“তখন তো ভেবেছিলাম আমার বিয়ে হয়ে যাবে নিহানের সাথে।তাই অফিস করার কোন মানে হয় না।কিন্ত বিয়েটা যখন হলো না তখন ঘরে আজাইরা বসে তো লাভ নাই।তাই ভাবলাম জয়েন করেই ফেলি।”
“ব্রেকফাস্ট খেয়ে যা!”

“ক্ষিধে নেই পেটে। আমি আসছি।”
বলেই ব্যাগ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।তিথির মা মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।নিহান যা করেছে একদমই ঠিক করেনি।অনেক বগ অন্যায় করে ফেলেছে তিথির প্রতি।পাত্রী দেখতে এসে তার বগ বোনকে বিয়ে করাটা তো অপরাধই।বরং অপরাধের থেকেও বড় অপরাধ।

একঝাঁক জোনাকি পর্ব ২১

তিথি রিকশা করে অফিসের কাছে আসলো।হাতে থাকা ঘড়ির কাটার দিকে তাকাতেই দেখল নয়টা পাঁচ বাজে।অলরেডি ৫ মিনিট লেট করে ফেলেছে সে।ভাড়া মিটিয়ে তাড়াহুড়ো করে নামতে যেতেই……

একঝাঁক জোনাকি পর্ব ২৩