একঝাঁক জোনাকি পর্ব ২৪
ইশরাত জাহান অধরা
তিথি কাজ শেষে ঘড়ির কাটার দিকে তাকাতেই দেখলো সাতটা বাজে।সবকিছু গুছিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে বাস স্টেশনে দাঁড়ালো বাস আসার অপেক্ষায়।বাস আসবে ৭ঃ৩০ এ।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখছিলো। হঠাত পাশে তাকাতেই দেখলো কয়েকটা ছেলে ওর ওড়নার দিকে তাকিয়ে আছে।তিথি ভ্রু কুচকে ওড়নার দিকে তাকাতেই দেখলো অর্ধেকটা ছিড়ে গেছে।মনে হয় সকালের রিকশার ঘটনার জন্যই ছিড়ে গেছে।
ছিড়া ওড়নাটাকে গায়ে ভালোভাবে জড়িয়ে নিলো।তবুও বিশ্রী লাগছে।ওড়না ছিড়ে যাবার ফলে শরীরের বেশ খানিকটা অংশই দেখা যাচ্ছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো তিথি।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো পুরো রাস্তা জন মানবহীন।জড়ো হয়ো একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো।আর দোয়া করলো যেন বাস তাড়াতাড়ি চলে আসে হঠাৎ পিঠে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে ভয়ে কেঁপে উঠলো পুরো শরীর।তবে কি অই ছেলেগুলা পিছনে চলে এসেছে?ওরাই পিঠে স্পর্শ করেছে?ভেবেই ঘৃণাউ শরীর রিরি করে উঠলো।পিছনের লোকটা পাশে এসে দাঁড়াতেই রাগে লোকটার গালে দুইটা চড় দিয়ে বসলো।চোখ খুলে সামনে তাকাতেই তাহসানের মুখ চোখে পরল।গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে।তিথিও অবাক হয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আপনি?আপনি কখন আসলেন?”
“আপনি আমার গালে থাপ্পড় মারার একটু আগে।”
“দুঃখিত।আমি বুঝতে পারিনি। আমি ভেবেছি অই ছেলেগুলাই মনে হয় পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।”
“ইট’স ওকে৷ আমি কিছু মনে করিনি।”
“আপনি এখানে কি করছেন?”
“আপনাকে সাহায্য করতে আসছিলাম।তার বদলে যে থাপ্পড় খাবো ভাবি নি।যাইহোক,আমার ব্লেজার কালকে অফিসে দিয়ে দিবেন।আজকের জন্য আপনাকে ধার দিলাম জাস্ট। ”
তিথি ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ব্লেজার?”
“হুম!যেটা রাখতে গিয়ে আপনার হাতে থাপ্পড় খেলাম।”
তিথি অবাক হয়ে নিজের দিকে তাকাতেই দেখল ব্লেজার গায়ে জড়ানো।ব্লেজারটা খুলে তাহসানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আমার কোন ব্লেজার লাগবে না।আপনি এটা নিয়ে যান!”
“ভেবে বলছেন?দেখুন ব্লেজারটা আমি হেল্পের জন্যই দিয়েছি।ইম্প্রেস করার জন্য নয়।আপনার যদি ছিড়া ওড়না পরে থাকার ইচ্ছা থাকে তাহলে দিন আমাকে।”
তিথি সামনে তাকিয়ে দেখল বখাটে ছেলেগুলা এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ভয়ে পুরো শরীর শিউরে উঠলো।হাত ঘুটিয়ে ব্লেজারটা আবার পরে বলল,
“কালকে ফেরত দিয়ে দিব।চিন্তা করবেন না।”
তাহসান মাথা নাড়ালো।বাসের জন্য ওয়েট করতে লাগলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই বাস এসেও গেল। বাস আসার সাথে সাথেই পুরো এলাকায় লোড শেডিং হয়ে গেলো।চারপাশ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো।তিথি অন্ধকারে ভয়ে ভয়ে বাসের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।না জানি কখন পরে গিয়ে পা ভেংগে ফেলে।ওর সাথেই কেন এরকম সবসময় হয়?দীর্ঘশ্বাস ফেলে দু কদম পা ফেলতেই কেও ওর দিকে লাইট ফেলল।ভ্রু কুচকে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখল তাহসান মোবাইলের টর্চ লাইট তিথির সামনের ফেলেছে।এতে করে সামনের রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে।তিথিকে তাকাতে দেখে তাহসান পিছু হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“অন্ধকার! রাস্তা দেখা যাচ্ছে না।তাই লাইট জ্বালালাম নয়তো পরে গিয়ে হাত পা ভেংগে ফেলতে পারি!আবার ভাববেন না আপনার সুবিধার জন্য চালিয়েছি।আমি আমার।সুবিধার জন্য লাইট জ্বালিয়েছি।”
তিথি বিরক্ত নিয়ে বাসে উঠে বসল।তাহসান ও তিথির পিছু পিছু বাসে উঠে পরল।চারপাশ নজর বুলাতেই দেখল একটা সিটও খালি নেই শুধু তিথিরটা বাদে।অগত্যা না চাইলেও দাঁড়িয়ে থাকতে হলো তাহসানকে একটা সিটের মাথা ধরেই দাঁড়িয়ে ছিল।গাড়ি চলা শুরু করে দিয়েছে।তিথি একবার তাহসানের দিকে তাকালো পরমুহূর্তেই জানলার বাইরের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
মুক্তা বেগম নিহানের ঘরের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলেন।এমন সময় আড়চোখে ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন অনিমা খাটের কোণায় বসে আছে।না চাইতেও ঘরের ভিতর ঢুকে বললেন,
“শুনলাম বিকালে নিহান নাকি তোমাকে নিয়ে বেরুবে?”
নিহানের মাকে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরল অনিমা।
“হুম।উনি যাবার সময় বলে দিয়ে গিয়েছিলেন।”
নিহানের মা সামনে থাকা দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলেন চারটা বাজে।
“বিকাল তো হয়ে গিয়েছে!রেডি হচ্ছো না কেন?নিহান আসার পরে যদি রেডি হও তাহলে তো দেরি হয়ে যাবে!রেডি হয়ে বসে থাকো!”
অনিমা মাথা নাড়াতেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।অরিনের দিকে তাকাতেই দেখল অরিন ঘুমাচ্ছে।কয়েক কদম হেঁটে কাবার্ড থেকে একটা শাড়ি বের করলো।কালোর মধ্যে সাদা কাজ করা।এটা ছাড়া আর কোন শাড়ি নেই অনিমার যেহেতু বেশি একটা শাড়ি পরে না তাই শাড়ি কিনেও নি।কিছু না ভেবে চট করে ওয়াশরুমে শাড়ি নিয়ে চলে গেলো।সব প্রয়োজনীয় জিনিস পরে শাড়িটা পরতে যেয়েই সমস্যা হলো।শাড়ি জিনিসটা অতটা ভালো করে পরতে পারে না সে।এরআগে যতবারই শাড়ি পরেছে কেও না কেও পরিয়ে দিয়েছে।তাই নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে শাড়ি পরার চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু এত চেষ্টার পরেও শাড়িটা পরতে পারলো নন কোনমতে গায়ে জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।নিচে নিহান এসেছে।নিহানকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে নিহানের মা নিহানের রুমে এসে অনিমাকে এখনো রেডি না হতে দেখে বললেন,
“কি হলো?এখনো রেডি হওনি কেন?আমার ছেলেটা নিচে দাঁড়িয়ে আছে!”
অনিমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“শাড়িটা পরলেই হয়ে যাবে।”
“তাহলে পড়ো!বসে আছো কেন?”
“ইয়ে মানে….”
নিহানের মা বিরক্ত হয়ে বললেন,
“আবার বলো না যে তুমি শাড়ি পড়তে পারো না!”
অনিমাকে চুপ করে মাথা নিচু করে থাকতে দাঁড়িয়ে নিহানের মা অবাক হয়ে বললেন,
“তুমি শাড়ি পরতে পারো না?”
কিছুক্ষন থেমে বললেন,
“শাড়িটা দাও আমাকে!”
অনিমা শাড়ি মুক্তা বেগমকে দিতেই অনিমাকে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই শাড়ি পরিয়ে দিলেন।
“আমাকে গিয়ে বললে কি হতো?আমি তো কোন না কোন ব্যবস্তা করতাম!কত সময় নষ্ট করলে বসে থেকে।”
অনিমা নিজের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো।পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কেও যে এত সুন্দর করে শাড়ি পরাতে পারে তা সে কোনদিন কল্পনাও করেনি!
“যাও এবার দাঁড়িয়ে থেকে আর সময় নষ্ট করো না।”
কুচি ঠিক করতে করতে কথাটা বললেন।অনিমা অরিনকে কোলে নিয়ে কিছুদুর যেতেই কি একটা মনে করে পিছু ফিরে বলল,
“ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দেবার জন্য। ”
“হয়েছে!আমি তোমাকে সাহায্য করার জন্য শাড়ি পরিয়ে দেয়নি।আমার ছেলেটা এই গরমের মধ্যে নিচে দাঁড়িয়ে আছে দেখে সাহায্য করেছি।”
অনিমা কিছু না বলে হেসে অরিনকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।নিহান সত্যিই বলেছিলো উনি বাইরে থেকে শক্ত দেখালেও ভিতরে অনেক নরম।
নিহান নিচে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো।বাসের সময় বিকাল ৫ টা।এখন ৪ টা বাজে।বাস স্টেশন ওদের বাসা থেকে দুরে হওয়ায় একটু আগেই রওনা দেওয়া লাগে!আচ্ছা অনিমা এত দেরি করছেন কেন?কোন অসুবিধা হলো নাকি?ভেবেই পায়চারি করা বন্ধ করে দিলো।বাড়ির ভিতর যেতেই যাবে হঠাত সামনে অনিমাকে আসতে দেখে পা জোড়া থমকে গেলো।এর আগে কোনদিন শাড়ি পরতে দেখেনি।
খুবই সিম্পল ভাবে সেজে এসেছে অনিমা।লম্বা চুলগুলাকে বেনি করে কাদের এক পাশে রেখে দিয়েছে।কপালে একটা কালো টিপ,চোখে হালকা কাজল।ব্যাস!আর কোন রকম প্রসাধনীর ছোয়া নেই মুখে।এই সাধারন মানুষটার উপরই সে আসক্ত!কত্ত বছর ধরে এই মানুষটার জন্য তার অপেক্ষা করা!একমাত্র আল্লাহ জানে কত করে মোনাজাতে শুধু এই মানুষটাকেই চেয়েছে সে।আজ সে তার চাওয়াতে সফল!আল্লাহ তার পাশে ছিলো বলেই অনিমাকে আজ স্ত্রী হিসেবে পাওয়া!
“চলুন!দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
অনিমার কথায় ধ্যান ভাংগল নিহানের।মুখ ফুটে বলল,
“অহ হ্যা হ্যা চলুন।”
বলেই অনিমার কাছ থেকে অরিনকে কোলে তুলে নিলো।
বাসের সিটে অনিমা আর নিহান বসে আছে।বাস সে কখনই ছেড়ে দিয়েছে।অরিন অনিমার কোলে ঘুমাচ্ছে।অনিমাও প্রায় ঘুমে পরে যাবার অবস্তা!বাসে উঠলেই তার এই এক সমস্যা! ঘুমিয়ে যাওয়া!যতোই ঘুমটাকে আটকাবার চেষ্টা করে কিছুতেই পারে না।বাসে উঠলেই মনে হয় ঘুমের দলগুলা দৌড়ে আসে অনিমার কাছে।নিহান এক চোখ ঘুরিয়ে দেখলো।অরিনকে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।অনিমাও ঘুমের ঘোরে টের পেলো না। সিটে মাথা এলিয়ে দিলো।অনিমার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিহান মুচকি হাসলো।কে জানতো এই মেয়েটার জন্যই একদিন পৃথিবীর সবার সাথে লড়াই করতে হবে।
একঝাঁক জোনাকি পর্ব ২৩
প্রায় অনেকটা সময় জার্নি করে অবশেষে কাংখিত জায়গায় পৌছালো।অনিমা আর নিহান বাস থেকে নেমেই একটা সিএনজিতে উঠে পরল।ততক্ষনে অরিনও ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।সিএনজিতে নামার পর অনেকখানি রাস্তা হেঁটে যাওয়া লাগবে।অই রাস্তায় কোন রিকশা বা ভ্যানগাড়ি যাওয়া আসা করে না।একদম মাটির কাচা পথ।আশেপাশে তাকাতেই দেখল চারদিকে ক্ষেত আর গাছ গাছালি।এরকম পরিবেশে কতদিন আসেনি অনিমা।ঠিক কবে এসেছিলো মনেও পরছে না তার। শেষমেষ বাড়িতে এসে পৌছালো তারা।বাড়িতে পৌছাতেই দেখল…