একঝাঁক জোনাকি পর্ব ৬
ইশরাত জাহান অধরা
গাড়ি রাস্তার পাশে পার্ক করে নিহান অনিমাকে বলল,
“চলুন!আপনার জন্য বাসা খুঁজে বের করি।”
নিহানের কথা শুনে অনিমা অবাক হয়ে বলল,
“এতরাতে?বাসা খুঁজে পাবেন আপনি?”
“চেষ্টা করলে অবশ্যই পাবো!চেষ্টা করে তো দেখি পাওয়া যায় কিনা!”
নিহানের কথা শুনে অনিমা গাড়ি থেকে বের হলো বাসার খুুঁজার উদ্দেশ্যে।কিছু রাস্তা হাঁটার পর অনিমা বলল,
“এখনো তো কোন বাসাতে টুলেট দেখতে পাচ্ছি না।”
“বাসা তো পাওয়া যায় মাসের শেষ দিকে।এভাবে মাসের মাঝখানে বাসা পাওয়াটা অনেক টাফ হয়ে যাবে।”
বলতে বলতেই সামনে একটা বিল্ডিংয়ে টুলেট দেখতে পেয়ে অনিমাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল,
“অইযে দেখুন!বলতে না বলতেই বাসা পেয়ে গেছি।চলুন গিয়ে দেখি।”
বাসার গেটের সামনে লাগানো টুলেট থেকে ফোন নাম্বারটা মোবাইলে ডায়াল করার পর কিছুক্ষন রিং হতেই এক ভদ্র মহিলা ফোন ধরলেন।নিহান সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো টুলেটে যে বাসা ভাড়ার কথা বলা হয়েছে তা এখনো খালি আছে কিনা!ভদ্র মহিলা হ্যা বলে নিহানকে উপরে আসতে বললেন।রুম দেখিয়ে কথা-বার্তা বলে ফাইনাল করবেন।নিহান পকেটে ফোন রেখে অনিমাকে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“চলুন!বাড়ির মালিকের সাথে দেখা করে রুমটা দেখে আসি।”
“কিন্তু টুলেটে তো বলা আছে চার রুম।চার রুম দিয়ে আমি কি করব?আমার এক রুম হলেই হবে।”
“আগে দেখে আসি।আর এখন এমনিতেও বাসা খুঁজে পাবেন না।এটা অনেক ভাগ্য করে পেয়েছি।”
সবদিক থেকে বিবেচনা করে অনিমা রাজি হলো।ভদ্রমহিলার কথা অনুযায়ী ৩ তলায় গিয়ে বাসায় নক করতেই দরজা খুলে ভিতরে আসতে বললেন।নিহান আর অনিমা ভিতরে ঢুকতে সোফায় বসতে বলে নিজেও সামনের একটা সিংগেল সোফায় বসে দুইজনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলল,
“তা তোমরা তো মনে হয় হাজবেন্ড ওয়াইফ?”
মহিলার কথা শুনে অনিমা তড়িৎগতিতে নিহানের দিকে তাকালো।ভদ্রমহিলা যে এ কথা বলবেন তা নিহানের ভাবনায় আসে নাই। অনিমা মানা করতেই যাবে নিহান অনিমার হাতে হাত রেখে বাধা দিয়ে বলল,
“জ্বি আমরা ম্যারিড!”
“তোমরাই কি শুধু থাকবে নাকি তোমাদের সাথে আরও কেউ….”
“নাহ নাহ শুধু আমরাই থাকবো।”
“আচ্ছা!তোমরা ম্যারিড শুনে খুশি হলাম।আসলে ম্যারিড কাপল ছাড়া আমি ভাড়া দেই না।বুঝোই তো?”
“জ্বি। ”
“তাহলে চলো তোমাদের বাসাটা দেখিয়ে দিয়ে আসি।”
“জ্বি।”
“তোমাদেরকে আমার পছন্দ হয়েছে।এখন বাসা তোমাদের পছন্দ হলেই হয়।”
বলতে বলতেই চারতলায় বাসার সামনে এসে পরলেন।চাবি দিয়ে তালা খুলে ভিতরে গিয়ে পুরো রুম দেখিয়ে বললেন,
“পছন্দ হয়েছে তোমাদের?”
” বাসা ভাড়াটা যদি বলতেন….”
“বাসাভাড়ার ব্যাপারে চিন্তা করো না তো!পছন্দ হয়েছে কিনা তাই বলো। ”
“জ্বি।পছন্দ হয়েছে।”
“তাহলে এখন বাসাভাড়ার কথায় আসি।দেখো তোমাদের তো বললামই তোমাদের আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।অনেক ভদ্র তোমরা! দেখেই বুঝা যাচ্ছে।তোমাদের জন্য বাসা ভাড়া ১৮০০০ টাকা।সাথে গ্যাস,কারেন্ট বিল আলাদা।”
বাসা ভাড়ার দাম শুনে অনিমা চমকে বলল,
“ভাড়া তো অনেক।একটু কমানো যায় না?”
বাড়িওয়ালা মুখে থাকা পান চিবুতে চিবুতে বললেন,
“তাহলে ১৬০০০ টাকাই দিও।আর কমাতে পারব না বাপু!”
নিহান হেসে বলল,
“থ্যাংক ইউ।আমি বাসাটা ভাড়া নিতে চাচ্ছি!এডবান্স কত দিতে হবে?”
“আপনি ১৬০০০ টাকায় বাসাটা ভাড়া নিলেন কেন?এত টাকায় আমি…. ”
বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে অনিমাকে ঘরে বসিয়ে বাইরে গিয়েছিল ফ্যান,চাদর,হাড়ি-পাতিল আরও প্রয়োজনীয় বাজার করতে ।খাটও কিনার ইচ্ছা ছিল।তবে সাথে সাথে তো আর খাট পাওয়া যাবে না।অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিতে হবে।কেবল তোশক,আর চাদরই কিনেছে।সব কিছু কিনে বাসায় ফিরে নিহান কেবল ফ্লোরে বসেছিলো।বাড়িওয়ালাকে বলে দিয়েছে আজকেই উঠতে চায় সে।বাড়িওয়ালাও রাজি হয়েছে যেহেতু ক্যাশে এডভান্স পেয়ে গিয়েছে।অনিমার কথা শুনে নিহান বলল,
“আর কি করার ছিল?কোথায় থাকতেন আপনি?
(আর সবচেয়ে বড় কথা আমারও উচিত হয় নি হুট করে কিছু না ভেবে নিয়ে আসাটা।কিন্তু অই কথাগুলা শুনে আমি নিজেকে আটকাতেও পারিনি।)
লাস্টের কথাটুকু মনে মনেই বলল।
” আপনি যে বললেন আমরা ম্যারিড!আসলে তো আমরা তা না!মিথ্যা বললেন কেন?”
“আমার অই মহিলাকে প্রথম দেখেই মনে হয়েছিল উনি আমাদের সন্দেহ করছেন।কিছুক্ষন পর পর কথা বলার মাঝে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছিলেন।আর কোন বাড়িওয়ারাই চাইবে না তার বাসায় শুধু একজন মেয়ে থাকুক।অনেক সময় অনেক দুর্ঘটনা হয় না?তাই বলতে বাধ্য হয়েছি।দেখলেনই তো এই বাসাটাই খুঁজতে কত কষ্ট করতে হয়েছে আমাদের।এই বাসা বাদ দিয়ে যদি আরেকটা খুঁজতে যেতাম তাহলে যে বাসা পেতাম সেটারও তো কোন গ্যারান্টি নেই।”
“কিন্তু আপনি এখানে থাকবেন নাকি?বাড়িওয়ালা যদি দেখে আপনি নেই তাহলে তো বুঝে ফেলবে””
“সমস্যা নেই।বলে দিব অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছি।উনি তো আর জানেন না আমি ডাক্তার। আর জানলেও বলে দিব নাইট ডিউটির কাজ করি আমি।ব্যাস!এটা কোন সমস্যা না।বাই দা ওয়ে,অনেকক্ষন তো হয়ে গেল!ক্ষিধে পায়নি আপনার?”
“নাহ!”
“মিথ্যা বলছেন কেন?খেয়েছেন সেই দুপুরের দিকে।এখন রাত ১০ টা বাজে।নিশ্চয়ই ক্ষিধে পেয়েছে! ”
বলতে বলতেই পাশে থাকা ব্যাগ থেকে একটা খাবারের প্যাকেট বের করে অনিমার হাতে দিয়ে বলল খেয়ে নিতে। যেহেতু অনেক রাত হয়ে গিয়েছে তাই বাইরে থেকে খাবার আনাটাকেই বেস্ট মনে করেছে নিহান।এত রাতে গিয়ে আবার রান্নার ঝামেলা না করাই ভালো। অনিমা সামনে খাবার নিয়ে বসে আছে প্রায় ১০ মিনিট হলো।এখনো একটা দানাও মুখে তুলেনি সে।আসলে ভাবছে খাবারটা খাওয়া ঠিক হবে কিনা!হুট করেই তো একটা মানুষকে আর বিশ্বাস করা যায় না।যদি কিছু মিশিয়ে থাকে খাবারে?
অনেকক্ষন অনিমাকে বসে থাকতে দেখে নিহান অবাক হলো।ভ্রু কুচকে বলল,
“খাচ্ছেন না কেন?কোন সমস্যা? ”
অনিমা আমতা আমতা করে বলল,
“আমি আপনাকে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছি না।যদি…..”
“খাবারে কোন ক্ষতিকারক জিনিস মিশাই তাই তো?”
“আমি কথাটা অইভাবে বলতে চাইনি।”
নিহান আর কিছু না বলে অনিমার সামনে থেকে খাবারটা নিয়ে এক লোকমা মুখে নিয়ে খেয়ে প্লেটটা অনিমার কাছে আবার ফেরত দিয়ে বলল,
“এখন খেতে কোন অসুবিধা আছে?”
অনিমা মাথা নাড়ালো।মনে মনে শান্ত হলো।
“আমি তাহলে যাচ্ছি।দরজা ভালো লক করবেন!আর এইযে মোবাইলটা রাখেন।আমার নাম্বার সেইভ করা আছে।কোন অসুবিধা হলে কল দিবেন।মনে থাকবে?”
“কিন্তু মোবাইল….”
“দরকারেই দিচ্ছি এটা।কোন অসুবিধা হলে আমি জানব কি করে?যাইহোক আসছি।”
বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
“এত রাতে কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
কয়েক সিড়ি পেরিয়েছে নিহান।কথাটা শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখল বাড়িওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে।
“আপনি এত রাতে…. ”
“সিসি ক্যামেরায় দেখলাম বাইরে যাচ্ছো।কিসের কারনে?”
“আব ইয়ে মানে…..বাসায় লবন নেই।সেটা কিনতে যাচ্ছি।”
“সামান্য লবনের জন্য বাইরে যাচ্ছো?আমার সাথে আসো!”
নিহান বাড়িওয়ালার পিছু পিছু গেল।কিছুক্ষনের মধ্যেই তিনি একটা ছোট কাঁচের বাটিতে লবন এনে নিহানের হাতে দিয়ে বলল,
“বুঝলে! রাস্তাটা তেমন ভালো না।ছিনতাইকারীর দল বসে থাকে।তাই রাতের বেলা না যাবার চেষ্টা করবা।আর কোন প্রয়োজন হলে আমাকে বলবা।আমি চেষ্টা করব। ঠিক আছে?”
“আচ্ছা।ধন্যবাদ। ”
অনিমা তখনও খাচ্ছিলো।হঠাত দরজা খুলার আওয়াজ শুনে মুখভর্তি খাবার নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল নিহান মুখ কালো করে রুমে ঢুকেছে।মুখের খাবারটুকু শেষ করে বলল,
“ফিরে আসলেন যে?কোন কিছু ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন?”
“নাহ!”
“তাহলে?”
নিহান পুরো ঘটনা খুলে বলতেই অনিমা অবাক হয়ে বলল,
একঝাঁক জোনাকি পর্ব ৫
“তাহলে এখন?এখন কি করবেন?”
“এক কাজ করা যায়।আপনি এই রুমেই থাকুন।আমি পাশের রুমটাতে থাকছি।”
“কিন্তু পাশের রুমতো পুরাই খালি?খালি ফ্লোরে ঘুমাবেন কিভাবে?”
“আমার অভ্যাস আছে।আমি গেলাম ঘুমাতে।আপনিও খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পরুন!”