একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৯

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৯
Mousumi Akter

গতরাতে মৃন্ময় বাড়িতে এসছিলো, রাতেই আবার ব্যাক করার উদ্দেশ্য। ভেবেছিলো গদখালী থেকে ফুল বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই ফিরে যাবে। কিন্তু তা আর হলো কই। এই পৃথিবীতে তার দেখা শত শত সুন্দর ফুলের মাঝে শ্রেষ্ঠ ফুলের দেখা গতরাতে সে পেয়েছে। সেই ফুলের সুবাস এত মিষ্টি, এত বেশী খুশবু ছড়াচ্ছিলো মৃন্ময়কে মাতোয়ারা করে তুলছিলো। বাসরঘর সাজানোর সময় সারাক্ষণ মৃন্ময় আড়চোখে তরীকেই দেখেছিলো।

তরীর দিকে বারেবার চোখ চলে যাওয়া যেন আফিমের নেশার মত লাগছিলো। আজ প্রথম কোনো ভোর মৃন্ময় দ্রুত বিছানা ছেড়েছে। সকাল থেকে কয়েকবার ডায়নিং এ উঁকি দিয়েছে, কোনভাবে তরীকে দেখা যায় কীনা! কিন্তু ওদের ফ্ল্যাটের দরজা আর খোলেইনা। অনেকদিন পর বাড়ির ছেলে আজ বাড়িতে খাবার খাবে। মৃন্ময়ের মা খুব ভোরে উঠেই ছেলের জন্য রান্না -বান্না বসিয়ে দিয়েছেন। সাথে পিহু সমস্ত রকমের সাহায্য করছে। এখনি মৃন্ময় বেরিয়ে যাবে। মেসে যাবে, সেখান থেকে আবার কলেজে যাবে। পরীক্ষা আছে। পিহু প্লেটে গরম ভাত তুলে দিয়েছে। ভাত দিয়ে ধোয়া উড়ছে। ভাতের ওপর মৃন্ময়ের ফেভারিট ঘি আর আলুভর্তা রাখা। পিহু মৃন্ময় কে ডাকছে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ ভাইয়া দ্রুত খেতে এসো।’
মৃন্ময় ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছে। মাথাভর্তি চুল পানিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে। পরণে পিহুর গামছা। ডায়নিং এ অর্ধভেজা অবস্থায় এসে বসল। মৃন্ময়ের পরণে পিহুর গামছা দেখে পিহু চিৎকার দিয়ে উঠে বলল,
‘ আম্মুউউউউ দেখো ভাইয়া আমার গামছা পরেছে। ওটা আমি আর নিবোনা। ‘
মৃন্ময় পিহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ দরকার নেই, এটা আমি দ্বীপকে দান করে দিবো। বেচারার অনেকদিন ধরে গামছা নেই। তুই বড়লোকের মেয়ে আরেকটা গামছা কিনে নিস।’
পিহু আহলাদে নাকে কান্না জুড়লো। মৃন্ময়ের আম্মু কিচেন থেকে বলল,
‘ তুমি বাড়িতে এসেই এই অকাজটা করো কেন? জানোযে, তোমার বোন তার গামছা অন্য কারো পরা পছন্দ করেনা।’

মৃন্ময় ঘি আর আলুভর্তা খেতে খেতে বলল,
‘ তোমার জামাই যখন তোমার মেয়ের গামছা নিবে তখন কি জামাই কে গিয়ে হুমকি দিবা।’
মৃন্ময়ের আম্মু মাতৃভাষায় বলল,
‘ তোমাকে বিয়ে দিবো আগে। তখন তুমি তোমার বউ-এর গামছা নিও। বউমা আমার কাছে একবার নালিশ করতে আসলেই ঝা’ টা দিবো তোমাকে।’
মৃন্ময় খুব আনন্দের সাথে উত্তর দিলো,
‘ আসলেই আম্মু, তুমি আর কতকাল কাজ করবা বলো। এই বয়সে আগুনের তাপে বেশী থাকা উচিৎ নয়। তোমার সিদ্ধান্তে আমি খুশী, মহাখুশী আম্মু। ‘

মৃন্ময়ের আম্মু খুন্তি হাতে এগিয়ে এসে অগ্নিচোখে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। মৃন্ময় ভাত মুখে দিয়ে মায়ের অগ্নিমূর্তি চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ কি, ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমিতো তোমার ভালোর জন্যই বললাম আম্মু। দুনিয়াতে ছেলে ছাড়া মায়ের কষ্ট আর কে বুঝে বলো।’
‘ তুমি আসলে কি বুঝাতে চাইছো বাবু?’
‘ কিচ্ছুনা আম্মু, কিচ্ছুনা।’
‘ মনে থাকে যেন।’ বলেই মৃন্ময়ের আম্মু আবার কিচেনে চলে গেলো। এমন সময় তরী ওদের ফ্ল্যাটের দরজা খুলল। গুটি গুটি পায়ে পিহুদের ডায়নিং এ প্রবেশ করল। পিহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ কি হয়েছে পিহু আপু। তুমি চিৎকার দিলে কেন?’

‘ দেখো তরী,আমার ভাই যখনি বাসায় আসবে আমার গামছা পরবে গোসল করে। ‘
মৃন্ময়ের হৃদপিন্ড কেমন থমকে গেলো তরীর আগমনে। সে ভাত খেতে খেতে মৃদু হেসে তরীর দিকে তাকিয়ে পিহুকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ নালিশ দিচ্ছিস?’
‘ হ্যাঁ দিচ্ছি। পৃথিবীর সব মেয়ের কাছে নালিস দিবো। যাতে কেউ তোমাকে বিয়ে না করে।’
মৃন্ময় আবারও তরীর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এভাবে ভাই-এর বদনাম করতে লজ্জা করেনা তোর। কবে আমি মেয়েদের দিকে তাকিয়েছি।’
তরী মিহি কণ্ঠে বলল,
‘ ঝ’গ’ড়া না করে আপুর গামছা টা দিয়ে দিন কাকু।’

কাকু শব্দটা শুনে যেন মৃন্ময়ের সারা জাহান নড়ে উঠল। যে মেয়েকে কীনা গতরাতে মনে মনে করে বাচ্চা অবধি পয়দা করে ফেলেছে সেই মেয়ে তাকে ডাকছে কাকু বলে। এই দৃশ্য তার জীবনে আসার আগে মৃত্যু হওয়া ও বেশী ভালো ছিলো। মৃন্ময় উঠে দাঁড়ালো। হা করে তরীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
‘ বিদায় পৃথিবী। ‘
তরী ভোলাভালা মেয়ে। সে সরল মুখে প্রশ্ন করল,
‘ কেন কাকু?’
মৃন্ময় বা হাত দিয়ে ওর বুক চেপে ধরে বলল,
‘ প্লিজ ডোন্ট কল মি কাকু! আমার বুকে খুব ব্যাথা হচ্ছে।’
পিহু ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
‘ তোমার ভাতিজি তোমাকে কাকু ছাড়া আর কি ডাকবে।’
‘ তোকে যেমন আপু ডাকে আমাকেও ভাইয়া ডাকবে ব্যাস।’

তরী এত ভারী কথা বোঝেনা। মৃন্ময়ের কথার মানে অত বোঝার চেষ্টা ও করছে না। সে আবার ও মৃন্ময়কে বলল,
‘ আপুর গামছা দিন কাকু।’
মৃন্ময় দুষ্টুমি করে বলল,
‘ এখনি দিবো? খুললাম।’
তরী ভীষণ লজ্জা পেলো। এক সেকেন্ড ও অপেক্ষা না করে নিজেদের ঘরে চলে গেলো। পিহু হো হো করে হেসে উঠল। মৃন্ময় চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘তরীর বাবাকে কাকা ডাকার ব্যবস্থা করে তবেই বাড়িতে ফিরব। না ‘হলে এই মেয়ে আমাকে কাকু ডেকে মাথা খাবে। শোন, আম্মুকে বল, দ্বীপ আর তন্ময়ের জন্য বেশী করে আঁচার দিতে। আর ফ্রিজ থেকে কাঁচা চিংড়ি বের করে দে। তন্ময়ের মনে হয় চিংড়ি খেতে ইচ্ছা হচ্ছে।’
পিহু বলল,
‘ মেসে বাজার করে খেতে পারোনা।’
‘ এসব ব্যাপারে নাক গলাবিনা। যা বললাম তাই কর।’
মৃন্ময় চায়নি তন্ময়কে ছোট করতে। তন্ময়ের টাকা পয়সার সমস্যা সেটা পিহুর কাছে বলে তন্ময়কে ছোট করবেনা বলেই কথা বাড়ালোনা।

পরীক্ষা শেষ করে ওরা পাঁচজন ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। বাড়ি এমনিতেও একটু দেরি করে ফিরবে। সারাহর অনলাইনে অর্ডার দেওয়া কিছু ড্রেস আসবে। ছোঁয়া খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ এখন টাকা কই পেলি?’
সারাহ মুখ কাচুমাচু করে বলল,
‘ বলব না।’
দ্বীপ বলল,
‘ মনে হয় ওর সুগার ড্যাডি দিয়েছে।’
মৃন্ময় বলল,
‘ ওই টাকার ভাগ আমরা পাই, দে আমাদের ভাগ করে দে।’
ছোঁয়া বলল,
‘ বাসর ঘরে তোকে কি দিয়েছে রে?’
সারাহ ওদের সবার দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৮

‘ আমার কি এখনো বাসর হয়েছে,তাই বলব।’
তন্ময় বলল,
‘ রোশান স্যার যে কিছুই দেয়নি এটা অবিশ্বাসযোগ্য।’
তখন সারাহ মনে মনে ভাবল, ‘ তাইতো, একটা খাম দিয়ে এসছিলো। সেটাতো রাগে খুলেই দেখা হয়নি। বাসায় গিয়ে আগে ওটা খুলে দেখতে হবে।’

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১০