একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৫

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৫
Mousumi Akter

“লাইব্রেরীর পাশের ক্যাফেতে আসতে পারবে একটু?”
রোশানের নাম্বার থেকে সারাহ’র ফোনে মেসেজ এসছে। সারাহ মেসেজটা দেখে রিপ্লাই করল,
” আজ আমি খাবোনা কিছু। দু’দিন পর আমার বিয়ে দ্রুত বাসায় যেতে হবে। আমার যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে যদি দেখে বেগানা পুরুষের সাথে ক্যাফে বসে কোয়ালিটি টাইম পাস করছি তাহলে খুব মাইন্ড করবে। লোকটা খুব একটা সুবিধার নয়। মনে শুধু দোষ আর দোষ। সব কিছুতেই শুধু মাইন্ড করে। আমার কপালে যে কি দুঃখ সে আপনি বুঝবেন না। না পারি সইতে না পারি কইতে। এই পোড়া কপালে সুখ নেই আমার।”

এমন অদ্ভুত উত্তর আসবে রোশান কল্পনাও করতে পারেনি। সে হতভম্ব, বিস্মিত, বিরক্তি আরোও কয়েকগুন বেড়ে গেলো। কপালের চামড়া কুচকালো। চোখ, মুখে ভয়ংকর বিরক্তি নিয়ে গম্ভীর হয়ে রইলো। রোশানের ডান হাতে ফোন, রাগে বাম হাত মুষ্টিবদ্ধ করল। মানে এই মেয়ের মুখে কিচ্ছু আটকায় না। পৃথিবীর সমস্ত আশ্চর্যজনক উদ্ভট বাঁকা কথাবার্তা তার কাছেই পাওয়া যায়। রোশান রাতে দাঁতে দাঁত চেপে মেসেজ করল,
” জানতাম তুমি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কথা বলো, তাই বলে মেসেজেও গরুর রচনা লিখবে। এতটুকু টাইম বই পড়লেও তো কাজে লাগে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেসজের উত্তরটা পেয়েই সারাহ’র গায়ে লাগল। ভ্রু কুঁচকে মেসেজটা পড়ে সাথে সাথে উত্তর লিখল,
” আমি না হয় গরুর রচনা লিখেছি তা আপনি কি ছাগলের রচনা লিখেছেন আপনার মেসেজ টাও তো কম বড়না।”
রোশান রাগান্বিত হয়ে আবার রিপ্লাই দিলো,
” ইউ আর জাস্ট সাট আপ। পাঁচ মিনিটের মাঝে যদি এখানে না আসো, সবার মাঝ থেকে টানতে টানতে এখানে নিয়ে আসব। ”

সারাহ বুঝল না এত জরুরি তলব কেন? মনে মনে ভাবল কিছু কি হয়েছে। ওনি তো ওভাবে ডাকা মানুষ নন। মনে হয় সিরিয়াস কিছু। যায় শুনেই আসি। সারাহ তড়িঘড়ি করে ক্যাফের সামনে গেলো। ওখানে যেতেই দেখল রোশান দুই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ -মুখ ঘামে ভেজা। সারাহ রোশানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
” বলুন কি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে ডেকেছেন?”
রোশান থমথমে চোখে সারাহর দিকে তাকালো। থমথমে কণ্ঠে বলল,
” ভেতরে গিয়ে ডানপাশের প্রাইভেট কর্ণারে বসো।”

প্রাইভেট কর্ণার শুনে সারাহ’র চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে এলো। সে কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করল,
” কেন প্রাইভেট কর্ণার কেন? আপনি কি ভেবেছস্ন আমাকে বিয়ে করেছেন বলে রাস্তাঘাটে চিপায় চাপায় নিয়ে নাউজুবিল্লাহ মার্কা কাজ কাম করবেন তাহলে ভুল ভেবেছেন। আর একটা কথা স্পষ্ট করে মনে রাখবেন আপনি আমার স্যার, আপনাকে আমি জাস্ট স্যারের নজরে দেখি। এই বিয়েও আমি নিজ ইচ্ছায় করিনি।”
রোশান জানে সারাহ’কে একটা বললে ঠিকই দশটা বলবে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে সারাহ’র হাত চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলল,

” প্রাইভেট কর্ণারে নিয়ে যাচ্ছি বিকজ পাবলিক প্লেসে আমি রিয়্যাক্ট করতে চাইছি না। ” বলেই সারাহ’র হাতধরে টানতে টানতে নিয়ে প্রাইভেট কর্ণারে গিয়ে বসল। দু’জনে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে। মনে হচ্ছে রোশান এখনি বো’ ম ব্লাস্ট করবে। তার ফোন থেকে সারাহ কেন এসব অর্ডার দিয়েছে সেসব বলতে যাবে তার আগেই সারাহ পায়ের ওপর পা তুলে বসে বলল,
” আপনি এখানে কি বলার জন্য ডেকেছেন আই ডোন্ট নো। বাট আমি যা বলতে এসছি তা আগে শুনুন। বিকজ লেডিস ফার্স্ট।”

রোশানের বিরক্তির মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। তার উত্তরের অপেক্ষায় না থেকেই সারাহ বলল,
” জিন্স পরে আমাকে কেমন লাগছে? ”
রোশান আড়চোখে সারাহর দিকে তাকালো। থমথমে কণ্ঠে বলল,
” নাইস।”
এরপর পরই সারাহ পরের প্রশ্ন ছুড়ল,
” বিয়ের পর কিন্তু আমি জিন্স আর গেঞ্জি পরে চলাফেরা করব আপনি কিচ্ছু বলতে পারবেন না। প্রয়োজনে আমি শার্ট প্যান্ট পরব। কোনো সমস্যা আছে আপনার?”
রোশান ভাবুক দৃষ্টিতে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুমি চাইলে ন্যাকেট ঘুরতে পারো আই হ্যাভ নো প্রব্লেম।”

এমন কোনো উত্তর আসবে সারাহ কল্পনাও করতে পারেনি।সে রোশানের দিকে তাকিয়ে দেখল তার জিন্স, গেঞ্জি পরা নিয়ে রোশানের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাল। ফুঁসে উঠে বলল,
” তার মানে কি? মানুষ আপনার বউ-এর মান ইজ্জত দেখে যাবে আর আপনি কিছুই বলবেন না। আপনার কিছুই যায় আসেনা। কেমন ভালবাসেন আপনি হ্যাঁ। ”
ভালবাসা শব্দটা রোশানের নিউরণে ছড়িয়ে পড়ল। হৃদয় কিছুটা চমকে উঠল বলা চলে। তবুও রোশান নিজেকে কঠিন রেখে উত্তর দিলো,

” তুমি আমার বউ এই পরিচয়ের চেয়ে তোমার নিজস্ব পরিচয়টা আগে। সবার আগে তুমি সারাহ। তোমার সম্মান সবার আগে তোমার কাছে। তারপর তুমি রোশান সিদ্দিকীর ওয়াইফ মিসেস সারাহ সিদ্দিকী। তুমি বাঁচবে তোমার পরিচয়ে, আমার পরিচয়ে নয়। ”
সারাহ বিড়বিড় করে তাকিয়ে বলল,
” সারাক্ষণ খালি লেকচার দেয় শালার চেকচারার বিয়ে করে পড়েছি আরেক বিপদে।।”
সারাহ’র বিড়বিড় দেখে রোশান বলল,
” তোমার সব বলা ফিনিশ?”

সাথে সাথে সারাহ উত্তর দিলো,
” না। মোটেও না। একজন স্বামী হিসাবে আপনার কি খারাপ লাগা উচিৎ নয়, আপনার ওয়াইফ বেহায়াপানা, অশ্লিলতা করে বেড়ালে।”
রোশান হাতা গোটাতে গোটাতে জবাব দিলো,
” আমার স্ত্রী যখন বুঝবে তার স্বামীর খারাপ লাগছে, নিশ্চয়ই সে সেসব কাজ থেকে বিরত থাকবে। ”
সারাহ বজ্র কণ্ঠে উত্তর দিলো,
” আমি জীবনেও আপনাকে বুঝব না। ”

রোশান মনে মনে বলল, আমি জানি সারাহ তুমি ওপর ওপর একরকম ভেতরটা সম্পূর্ণ আলাদা। তুমি আমাকে পরীক্ষা করতে চাইছো আমি কি উত্তর দিই। এমন হাজারো পরীক্ষা নিয়েছি আমি জীবনে।আজ নিজের ওয়াইফের কাছে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। রোশান সিদ্দিকী জানে কীভাবে সব পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে হয়। রোশান সিদ্দিকী কখনো সেকেন্ড হয়নি। তোমাকে আমি শাষন ছাড়ায় সব খারাপ অভ্যাস থেকে বের করে নিয়ে আসব। আমি মুখে কিছু বলব না,কিছুই তোমাকে নিষেধ করব না। তবুও তুমি আমার জন্য সব কিছু বাদ দিবে। রোশান ভাবনা থেকে বের হলো। সারাহ’র চোখে চোখে রেখে বলল,

” থ্যাংকিউ। তখন থেকে আমার মাথাটা খাচ্ছো। তোমাকে যে কারণে ডেকেছি সেটা বলি?”
” বলুন।”
রোশান ওর ফোন সারাহর সামনে ধরে বলল,
” আমার পারসোনাল জিনিস হলো আমার ফোন। তুমি ছাড়া আগে -পরে আর কেউ স্পর্শ করেনি। তুমি আমার লাইফপার্টনার। যার সাথে বেড শেয়ার করতে হবে, আলমারি শেয়ার করতে হবে, পুরা জীবন শেয়ার করতে হবে, সামান্য ফোন কোনো ম্যাটারস নয়। কিন্তু তুমি আমার ফোন নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি করেছো।”
সারাহ খেয়াল করল রোশানের চোখ দু’টো রাগে জ্বলছে।এখনি ভষ্ম করে দিবে সব। সারাহ রোশানের রাগ দেখে রিতীমত ভড়কে গেলো৷ সে হালকা তোতলিয়ে বলল,

” কি, কি করেছি আমি।”
রোশান চোয়াল শক্ত করে বলল,
” আমার ফোন থেকে আজেবাজে জিনিস অর্ডার করেছো কেন? হুয়াই? আমি একদম এসব পছন্দ করিনা।”
সারাহ রোশানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খুব অসুস্থ হওয়ার ভান ধরে বলল,
” মাথাটা একদম ফেঁটে যাচ্ছে স্যার। মনে হচ্ছে এখনি ম’রে যাবো। প্লিজ স্যার! আমাকে একটা টাফনিল এনে দিন। ”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৪

সারাহ’কে যন্ত্রণা পেতে দেখে রোশান দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। সে বাহিরে গেলো ওষুধের দোকানে। রোশান ওষুধের দোকানে দাঁড়িয়ে দেখল তার সামনে দিয়ে রিক্সা নিয়ে সারাহ চলে যাচ্ছে। রোশান হতবিহম্বলের মত তাকিয়ে রইলো।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৬