একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২০
Mousumi Akter
সারাহ বিছানায় বসে ভুবনভোলানো এক হাসি দিয়ে রোশান’কে বলল,
” নিন ছবি তুলে দিন।”
রোশান হতাস, পুরাই হতাস। সে নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে সারাহ’র দিকে। ইতিহাসে এমন বাসর কি আদৌও কোথাও হয়েছিলো ইতোপূর্বে। চোখ-মুখ গম্ভীর করে পকেট থেকে ফোন বের করে সারাহ’র ছবি তুলছে। সারাহ মোটামুটি হাজারখানিক ছবি তুলিয়েছে রোশান কে দিয়ে। রোশান ছবি তুলতে তুলতে ক্লান্ত প্রায়। গরমে গলা শুকিয়ে গিয়েছে তার। হাতের ফোনটা ড্রেসিন টেবিলের ওপর রাখল। তারপর এদিক এদিক চোখ ঘুরালো। ফ্লোরেই পানির বোতল রাখা। পানি খাওয়ার উদ্দেশ্য পানির বোতলের মুখ খুলল। সারাহ রোশানকে পানির বোতলের মুখ খুলতে দেখেই বুঝতে পারল রোশান এখন পানি খাবে। সে দ্রুত কণ্ঠে বলে উঠল,
” দাঁড়ান, পানি যেন বোতলে মুখ লাগিয়ে খেয়েন না। আমিও পানি খাবো। মুখ লাগিয়ে পানি খেলে আপনার থু, থু চলে যাবে বোতলের ভেতরে। পরে খেতে আমার ঘৃণা করবে।”
সারাহ’র এমন উদ্ভট কথা শুনে রোশানের ভ্রু যুগল সুঁচালো হয়ে এলো। কপালের চামড়ায় ভাজ পড়ল কয়েকটা। সে স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো সারাহ’র দিকে। চোখ যেন তীব্র বিরক্তি। রোশানের বিরক্তির চাহনি দেখে সারাহ ঘনঘন চোখের পাপড়ি ফেলে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” কি ব্যাপার! ওভাবে তাকাচ্ছেন কেন? আমিও পানি খাবো সেজন্য বললাম আরকি।”
রোশান চোয়াল শক্ত করে বলল,
” ইডিয়টদের পানি আমি খাইনা।”
বলেই বোতল উঁচু করে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো৷ তারপর বোতলটা সারাহ’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
” নাও।”
সারাহ পাবির বোতলটা হাতে নিতে এক ডান ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে রইলো রোশানের মুখের দিকে। খুব কাছ থেকে কেউ এভাবে সরাসরি মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে প্রচন্ড অস্বস্তি লাগে মানুষের। রোশানের ও তাই হল। সে মুখ-মুখে বিরক্তিকর ভাব এনে সারাহ’র দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,
” সমস্যা কি? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
“এই চশমা পরে কি কিছু ক্লিয়ার দেখেছেন। ছবি ঠিকঠাক তুলেছেন তো।”
রোশান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“মানুষ চশমা চোখে পরে, সব ক্লিয়ার দেখার জন্য। এতটুকু সেন্স ও তোমার নেই।”
” আপনি চশমা খুলে আরোও কয়েকটা ছবি তুলে দিবেন। ”
রোশান অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সারাহ’র দিকে। এই মেয়ে কি দুনিয়াতে আল্লাহ এই এক পিস ই পাঠিয়েছেন। সারাহ এইবার বোতল উঁচু করে পানি খেতে গিয়ে অর্ধেক পানি নিজের গায়ে ঢেলে পড়ে গেলো। সাথে সাথে ব্লাউজ আর শাড়ি ভিজে গেলো। এজন্য ও সারাহ রোশানকে দায়ী করল। সে রিতীমত বলে উঠল,
” পানি যদি প্রথমে আমি খেতাম তাহলে আর ভিজতাম না। সব আপনার জন্য হলো।”
রোশান এমন অভিযোগে সন্দিহান দৃষ্টিতে সারাহ’ র দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
” আমার জন্য?”
” হ্যাঁ আপনার জন্য, পানি আমি প্রথমে খেলেতো ভিজতাম না।”
রোশান তাচ্ছিল্যভরে হেসে জবাব দিলো,
” বোতলের তলায় একটু পানি ছিলো, তাই ভিজে গিয়েছো। ভরা বোতলের পানি খেতে গেলে গোসল হয়ে যেত তোমার।”
সারাহ অমনি চেতে গিয়ে বলল,
” অপমান করলেন?”
“অপমান আবার কেমনে করে।”
সারাহ থম মেরে উত্তর দিলো,
” কথাতো অপমানের সুরেই বললেন।”
রোশান এবার হাত উল্টে ঘড়ি দেখে নিয়ে বলল,
” শীট! অনেক রাত অলরেডি। আমি ঘুমোতে গেলাম।”
সারাহ রোশানের ঘুমোতে যাওয়ার কথা শুনে বেশ খানিক সিরিয়াস মুডে বলল,
” ঘুমোতে যাবেন মানে! আমার ছবি তোলা শেষ হয়নি।”
এত এত ছবি তোলার পরেও যখন ছবি তোলা শেষ হয়নি শুনতে হলো। তখন রোশান তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,
“ছবি তোলা ছাড়া আর কি কাজ নেই তোমার।”
সারাহ রোশানের বিরক্ত চোখ-মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এত বিরক্ত হচ্ছেন কেন? একসাথে দুই তিনটা সুবিধা তো আর নিতে পারবেন না। এমনিই বিয়ে করেছেন টাকা কামানোর মেশিন। এমন কপাল কজনের হয় বলুন দেখি।”
রোশান দারুণ অবাক হল। কৌতুহলী মনে প্রশ্ন ছুড়ল,
“টাকা কামানোর মেশিন? হাউ!”
সারাহ এবার খুব প্রাউডলি বলল,
“আমার তিনটি একাউন্ট আছে বুঝলেন।”
রোশান বেশ অবাক হল শুনে। তার মাত্র একটা একাউন্ট। অথচ সারাহ’র তিনটা একাউন্ট। এতগুলা একাউন্ট দিয়ে কি করে সে। মনের মাঝে হাজারখানিক প্রশ্ন। কৌতুহলী বদনে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
” এত গুলা একাউন্ট? বড়লোক। কোন কোন ব্যাংকে আছে একাউন্ট গুলা।”
সারাহ চোখ-মুখ ঘুচিয়ে উত্তর দিলো,
” আরে ধুর! ব্যাংক একাউন্ট হতে যাবে কেন?
একটা টিকটক একাউন্ট, একটা ইন্সটাগ্রাম, একটা ফেসবুক একাউন্ট।”
রোশানের চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেল। সে সারাহ’র এহেম কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। যাকে বলে ধপাস করে আকাশ থেকে পড়া। চোখের চশমাটা খুলে সে সারাহর দিকে তাকালো। এত অদ্ভুত ভাবে তাকালো তা প্রকাশ করার মত নয়। মানে এমন একাউন্ট নিয়ে গর্ব করে কে? রোশানকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সারাহ বলল,
” ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমার তিন একাউন্ট থেকে যদি আপনি আর আমি মিলে কাপল ব্লগিং করি তাও প্রচুর টাকা হবে। মানুষ ফুড ব্লগিং করে প্রচুর টাকা কামাচ্ছে। যেমন ধরুণ আপনি শুধু ক্যামেরার সামনে এসে কয়েক কেজি চাউলের ভাত খাবেন, দু’শ -তিনশো ডিম, আস্ত খাসি এসব খাবেন। এরপরে কি হবে জানেন? মানুষ ফুড রিভিউ এর জন্য ফ্রিতে আপনাকে খাওয়ার দাওয়াত করবে। আজীবন ভর ফ্রিতে খেতে পারবেন। আবার আমরা যদি দু’জনে মিলে কাপল ব্লগিং করি, তাহলে বিভিন্ন শপ থেকে আমাদের জন্য কাপল ড্রেস পাঠাবে প্রমোশনের জন্য। আমাদের আর বেশী পোশাক পরা লাগবেনা। আরোও অনেক কিছুই ফ্রিতে পাবো। ফ্রিতে খেতে পারলে, পোশাক পেলে বড়লোক তো এমনিই হবো। আমার এই তিনটা একাউন্ট না থাকলে কি এসব পারতেন। বুঝছেন কেমন টাকা কামানোর মেশিণ কিনেছেন।”
রোশান এইবার ভ্রু কুচকে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” তোমাকে বিয়ে করেছি, পা-গ-ল হতে বেশীদিন বাকি নেই আমার। বাই দ্যা ওয়ে, না খেয়ে থাকলেও বউ বেঁচে খাবোনা। মাইন্ড ইট। আমি ঘুমোতে গেলাম। ”
বলেই রোশান রুমের লাইট অফ করে বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়ল। রোশানকে সুয়ে পড়তে দেখে সারাহ বলল,
” আপনি লাইট অফ করে সুয়ে পড়লেন। আজ আমি সারাদিন কিছু খাইনি।”
“আমি জানি তুমি কিছুই খাওনি। টি-টেবিলের ওপর বিরিয়ানি আছে। প্যাকেট টা ওপেন করে দেখো।
বিরিয়ানি খাও, খেয়ে সুয়ে পড়ো।”
সারাহ হঠাৎ করে কেমন অশান্ত থেকে শান্ত হয়ে গেলো। এত কিছুর ভীড়ে রোশান স্যার তার খাওয়ার ব্যাপার টা মাথায় রেখেছেন। এটুকু ভেবেই সারাহ’র মনে কিছু একটা দোলা দিয়ে উঠল।সারাহ বিরিয়ানি খেয়ে, শাড়ি চেঞ্জ করে বিছানায় এসে রোশানের পাশে সুয়ে পড়ল। রোশান সাইড ফিরে সুয়ে আছে। সারাহ উঁকি দিয়ে দেখল রোশান ঘুমিয়েছে কীনা! রোশান ঘুমিয়েছে বলে মনে হচ্ছেনা। সারাহ আগে কথা বলে উঠল। সে রোশান কে বলল,
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৯
“আপনি কি সারারাত চশমা পরে থাকবেন?”
” আমার চশমা নিয়ে তোমার সমস্যা কোথায়?”
” ফুলসজ্জায় কেউ চশমা পরে ঘুমায়? এটা কি ফুলসজ্জা নাকি চশমা সজ্জা বুঝতেছিনা।”
রোশান এবার সাইড ফিরে সারাহ’র দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,
” নো, ইটস সেল্ফিসজ্জা।”