একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩২
Mousumi Akter
সন্ধ্যার পর পরই কিছু দোকানদার দ্রুত দোকান পাট বন্ধ করে ছাতা মাথায় দিয়ে দ্রুত বাড়ির দিকে রওনা হচ্ছে। রাস্তায় ক্রমশ ও যানবাহন কমে যাচ্ছে। কারণ রাত হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টি ক্রমশ বাড়ছে। এক সেকেন্ড ও রেস্ট নেই বৃষ্টির। অবিরত আকাশ থেকে পানি নির্গত হচ্ছে। জোরে জোরে মেঘও ডাকছে। ঠান্ডায় সারাহ শরীরে কাঁপুনি উঠে গেছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকালে কেবল একটু আলোর দেখা পাওয়া যাচ্ছে। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে সারাহ’র শরীরে ঠান্ডা বসে গিয়েছে।
এখন আর জেদ দেখিয়ে পারছেনা। মনে হচ্ছে এখনি লেপ গায়ে না দিলে সে মা’রা যাবে। আবার রাত বাড়ছে ভ’য় ও করছে। কাঁপা হাতে দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করল। ফোন বের করে দেখল পানিতে ভিজে ফোনের অবস্থা একাকার। ফোনের সুইচ অফ হয়ে গিয়েছে। এখনি তার রোশান স্যার’কে ফোন দিতে হবে। কিন্তু ফোন তো অফ কীভাবে ফোন দিবে? বাজারে এসে একটা রেস্টুরেন্টের মালিকের থেকে ফোন চেয়ে রোশানের নাম্বার ডায়াল করল। রোশানের ফোনের রিংটোন বাজতেই রোশান দ্রুত ফোনটা রিসিভ করে কানে দিলোম কেন যেন মনে হচ্ছিলো এটা সারাহ হবে হয়ত। সত্যি তাই হল। সারাহ কোনো কথা না বাড়িয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আমি কাচ্চি হাউজে আছি। একটু নিয়ে যাবেন।”
রোশান উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
” ওখানেই থাকো, একটুও নড়াচড়া করবে না। আমি এক্ষুনি আসছি।”
রোশান ঝুম বৃষ্টির শহরে বাইকের সর্বোচ্চ স্পিড দিয়ে নিজের জীবনের মায়া না করে গাড়ি চালাচ্ছে। এও স্পীডে একটা এক্সিডেন্ট ঘটলে মৃ’ত্যু নিশ্চিত। রোশানের মাথায় একটায় চিন্তা তাকে সারাহ’র কাছে পৌঁছাতে হবে। যেভাবেই হোক পৌছাতে হবে। ঠিক দশ মিনিটের মাঝে রোশান কাচ্চি হাউজের সামনে পৌঁছালো। বাইক স্ট্যান্ড করে হেলমেট খুলে দেখল সারাহ একটি চেয়ারে বসে কাঁপছে। কাচ্চি হাউজের একটি ছেলে সারাহ’র কপালে হাত ছোয়াতে যাচ্ছে। তখনই রোশানের চোখ দু’টো জ্বলে উঠল। সে জ্বলন্ত চোখে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে লাউড ভয়েসে বলে উঠল,
” এ্যাই, ডোন্ট টাচ মাই ওয়াইফ।”
ছেলেটি চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকালো। তাকিয়ে দেখল অগ্নিচোখে একজন লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটি অমায়িক এক হাসি দিয়ে বলল,
” আপনি যা ভাবছেন তা নয়।”
রোশানের কণ্ঠে যেন বজ্র। সে বজ্রকণ্ঠে বলল,
” তোকে পুলিশে দেব আমি। আমি যে দেখেছি তাই ভাবছি।”
ছেলেটি নমনীয় কণ্ঠে বলল,
” উনার জ্বর কীনা সেটাই দেখতে যাচ্ছিলাম।”
রোশান সারাহ’র কাছে এগিয়ে গেলো। সারাহ’র কপালে হাত রেখে বলল,
” তুই কি ডাক্তার? যে কপালে হাত দিয়ে সব বুঝবি। বুঝেই বা কি করবি তুই? মেয়ে মানুষ দেখলেই কি তোদের ছুঁতে হয়।”
” ভাই আমাকে মাফ করে দিন। আমি সত্যিই খারাপ মনে ছিলাম না।”
রোশান আর কথা বাড়াল না। এমনিই টেনশনে রোশানের মাথা খারাপ। সারাহ টলমল চোখে রোশানের দিকে তাকিয়ে আছে। এত রাগ, এত তেজ উনার মাঝে? একদমই যেন আ’গু’নে’র গোলা উনি। উনি আমার প্রত এতটা পসেসিভ কবে থেকে। রোশান সারাহ’র হাত ধরে বসা থেকে দাঁড় করালো। সারাদিনের ঘটনার জন্য আর প্রশ্ন না করে বলল,
” বাইকে বসতে পারবে?”
সারাহ রোশানের চোখের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
” পারব।”
রোশান সারাহ’র হাত ধরে বাইকের কাছে গেলো। বাইক স্টার্ট দিয়ে বলল,
” তোমার শরীর কাঁপছে, পড়ে যেতে পারো। দুই পা দু’দিকে দিয়ে আমার সাথে মিশে আমাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরো। ”
সারাহ এমন পুরুষদের মত বাইকে ওঠেনি কখনো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি খারাপ। রোশান স্যার ভয়ানক রেগে আছেন। এই মুহুর্তে আর তালবাহানা করা যাবেনা। যা বলছে তাই করি। সারাহ ছেলেদের মত রোশানের বাইকের পেছনে বসল। রোশান চোয়াল শক্ত করে বলল,
” আমাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরতে বলেছি। এখন যেন এককথা দু’বার বলা লাগেনা।”
রোশানের প্রতিটা কথা খুব ভয়ানক শোনাচ্ছে। তীব্রভাবে রেগে আছে মনে হচ্ছে। সারাহ আর কথা বাড়ালোনা। সারাহ পেছন থেকে রোশানকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরল। সাথে সাথে অদ্ভুত এক অনুভুতি সারাহ’র সমস্ত দেহ মন দুলিয়ে উঠল। বুকের মাঝে হৃদস্পন্দন টা ঘড়ির কাটার মত ঠক ঠল করছে। এক দারুণ শিহরণে শরীর কাঁপছে সারাহ’র। একটা পুরুষ’কে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলে এত মানসিক শান্তি পাওয়া যায় এটা আগে জানলে সব লজ্জা উপেক্ষা করে অনেক আগেই রোশান সিদ্দিকী’কে জড়িয়ে ধরত সারাহ। ভেতরে যে অশান্তির ঝ’ড়ে হৃদয় পু’ড়’ছি’লো তার, সেই অশান্তির আ’গু’ন রোশান সিদ্দিকী’কে জড়িয়ে ধরে নিভিয়ে ফেলত। সারাহ আর একটু শক্ত করে রোশান’কে জড়িয়ে ধরল। রোশানের অনুভূতি কি সেটা বোঝা যাচ্ছেনা। তবে সে মাথার হেলমেট খুলে সারাহ’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
” এটা পরে নাও।”
হেলমেট দেখে সারাহ কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
” আপনি ড্রাইভ করবেন আপনি পরুণ। আমি কেন পরব?”
রোশান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” দুইটা হেলমেট নেই সাথে।”
সারাহ শান্ত কণ্ঠে বলল,
“দুইটা নেই যখন, আমি কেন পরব হেলমেট?”
রোশান পূর্বের ন্যায় গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” সেফটির জন্য। ”
” আমার চেয়ে আপনার সেফটি বেশী জরুরী। আপনি সেইফ থাকলেই আমাকে সেইফ করতে পারবেন।”
রোশান সেই পূর্বের ন্যায় গম্ভীর কণ্ঠে আবারও বলল,
” ইউ আর মোর ইমপর্ট্যান্ট টু মি।”
সারাহ আমরা আমরা করে বলল,
” কিন্তু।”
রোশান রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,
” তুমি কি পরবে নাকি বাড়াবাড়ি করতেই থাকবে?”
সারাহ ভয়ে ভয়ে হেলমেটটা পরে নিলো। রোশান এখানেই শেষ করল না। সারাহ’কে এইবার বলল,
” তোমার ওড়না টা দাও।”
সারাহ এবারও অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
” ওড়না কেন?”
” দিতে বলেছি দাও।”
সারাহ গায়ের ভেজা ওড়না টা খুলে রোশানের দিকে এগিয়ে দিলো। রোশান ওড়নার এক মুড়ো নিজের হাত ধরে আরেক মুড়ো সারাহ’র হাতে দিয়ে বলল,
” কোমরে প্যাঁচ দাও।!
সারাহ কৌঁতুহলী হয়ে প্রশ্ন করল,
” আমাকে বাঁধবেন কেন?”
রোশান চোয়াল শক্ত করে বলল,
” তোমাকে তো গাছের সাথে বাঁধছি না। আমার সাথে বাঁধছি।”
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩১
সারাহ মৃদু হাসল। রোশান সারাহ’কে তার সাথে ওড়নার সাহায্য বেঁধে নিয়ে খুব সাবধানে বাইক চালাচ্ছে। সারাহ যে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছে রোশান দেখেই বুঝতে পেরেছে। যাতে বাইক থেকে না পড়ে সেজন্য এত সেইফটি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পুরুষ মানুষ তার শখের নারীকে এভাবেই আগলে রাখার চেষ্টা করে। বাইক চলছে, আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে। সারাহ রোশানের পিঠের ওপর মাথা রেখে আরামছে রোশানকে জড়িয়ে ধরে যাচ্ছে। সারাহ যেন আজ তার বর্ষণসঙ্গীকে খুজে পেয়েছে।