একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৪

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৪
Mousumi Akter

দরজা খুলতেই একটা জীর্ণদশা মুখের মালিক মলিন চেহারা নিয়ে, করুণ চোখে সারাহ’র দিকে তাকাল। মেয়েটি আর কেউ নয় তরী। চেহারা একদম ভেঙে গিয়েছে, চোখের নিচে কালি, শুকিয়ে অবস্থা বেহাল, কতদিন চুলে চিরুনি করেনি তার ও হিসাব নেই। একটা মেয়ে মানসিক এবং শারিরীকভাবে কতটা খারাপ থাকলে চেহারার এই অবস্থা হয়। এখানে, এভাবে, এ অবস্থায় সারাহ তরীকে দেখতে পাবে কল্পনাতেও ভাবেনি। সারাহ’র বুকের কম্পন আরো কয়েকগুন বেড়ে গেল। আনন্দে, উল্লাসে সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। চোখ দু’টো ছলছল করছে। নিজেকে আর সামলাতে পারল না। হাউমাউ করে কেদে উঠে তরীর দুই বাহু ধরে বলল,

” তরী, তুমি? ফাইনালি তোমাকে খুঁজে পেলাম। আমাকে চিনেছো? আমার বিয়েতে গেসিলে তুমি। আমি সারাহ, মৃন্ময়ের বন্ধু।”
তরীর ঠোঁটজোড়া কাঁপছিলো এতক্ষণ। সারাহ’র মুখে মৃন্ময়ের নাম শুনে নিজেকে আর সামলাতে পারল না। চোখ উপচে নোনাপানির যেন স্রোত বইছে। মাথাটা নিচু করে বেশ জোরে কেদে উঠল। এই কান্না ভয়াবহ কষ্টের, তীব্র যন্ত্রণার, হৃদয় পু’ড়ে আঙ্গার হওয়ার বেদনার। এই কাঁন্না তরীর অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। তরীর জীবনের ওপর দিয়ে কত কষ্ট, কত ঝ-ড় গিয়েছে তা তরীর চোখের পানি আর জীর্ণশীর্ণ অবস্থাই প্রকাশ করছে। তরীর এই কষ্ট অনুভব করেই সারাহ’র হৃদয় জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছা করছে এখনি তরীকে তার বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখতে পরম আদরে। কেউ যেন আর কোনদিন তরীকে কষ্ট দিতে না পারে। সারাহ তরীকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতে কাদতে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তুমি জানোনা, এই দিনটার জন্য, তোমাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য আমার বন্ধু কত কি করেছে। তোমাকে না পেলে ও মরেই যেত যদি আর কিছুদিন দেরি হত। মৃন্ময় ভাল নেই তরী তোমাকে ছাড়া। তোমার মতই বেহাল অবস্থা হয়েছে মৃন্ময়ের। ”

তরী আর কোনো কথা বলতে পারছে না। গলার স্বর বের হচ্ছেনা। সে শুধুই কাঁদছে। কতক্ষণ সারাহ’কে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। চোখের পানির সাথে ভেতরের সব কষ্ট ধীরে ধীরে ক্রমশ হালকা হচ্ছে। অনেক্ষানি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দু’জন দু’জনকে ছাড়ল কিন্তু কেউ স্বাভাবিক হতে পারল না। এভাবেই কেটে গেল আরো কিছুক্ষণ। সারাহ চোখের পানি মুছে কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
” তোমার চেহারার এ অবস্থা কেন? কি হয়েছে তোমার প্লিজ বলো। আমি আছি এখন, কোনো ভ’য় নেই।”
তরী কাঁদতে কাঁদতে বলল,

” মৃন্ময়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে সাক্ষী দিতে রাজি হইনি বলে ওরা আমাকে অনেক মে’রে’ছে৷, অনেক অত্যাচার করেছে সেটা বললে একটা ইতিহাস হয়ে যাবে। আমি ওদের পায়ে ধরেছি একটাবার মৃন্ময়ের সাথে কথা বলার জন্য, ওরা আমাকে ফোন দেয়নি। আমাকে এই পনেরোটা দিন আটকে রেখেছিলো একটা ঘরে। এখানে আসার পর আর গৃহবন্দী করেনি। রান্না করা আর ঘরের কাজ করার জন্য ছেড়ে দিয়েছে। ”
তরীর মুখের বর্ণনা শুনে সারাহ চোখ বন্ধ করল, নিজের যন্ত্রণা হালকা করার জন্য। সারাহ চোখ খুলে তরীর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,

” তোমার আজই মৃন্ময়ের সাথে দেখা হবে। আমি নিজে তোমাকে মৃন্ময়ের জীবনের সাথে বেঁধে দিবো৷ পৃথিবীর কেউ আটকাতে পারবে না। তার আগে তোমাকে বলি শোনো, তুমি একটু এক্টিং করে থেকো। আমি তোমাকে সময়ময় সব শিখিয়ে দিবো। এখন যাও ভেতরে যাও। আমি একটু পরেই আবার আসব।”
এতক্ষণ রোশান সিদ্দিকী পেছনে দাঁড়িয়ে সারাহ আর তরীকে দেখছিলো। ওদের কথোপকথন শুনে বুঝতে বাকি রইলো না যে, মৃন্ময়ের সাথে তরীর সম্পর্ক আর তরীর বাবাই ঝামেলা করেছে। তবে রোশান আরো একবার সারাহ’র প্রেমে পড়ল নতুনভাবে। কেউ যে নিজের বন্ধুকে এতটা ভালবাসে সেটা সারাহ’কে না দেখলে রোশান বুঝত না। পৃথিবীতে এমনও বন্ধুত্ব টিকে আছে। সারাহ চোখের পানি মুছতে মুছতে দেখল,
পেছনেই রোশান দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে রোশান’কে মিহি কণ্ঠে বলল,

” চা দিব?”
রোশান শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো,
” না, তোমার কি মন খারাপ?”
সারাহ আবার কেঁদে দিল। আবেগপ্রবন কণ্ঠে বলল,
” তরীর জীবনে এত কষ্ট কেন বলুন তো। বাবারা কি এতটাও খারাপ হয়।”
রোশান সারাহ’র চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
” অমানুষ এ দুনিয়াতে অনেক আছে। তুমি কেঁদোনা, ঘরে চলো। সব সমস্যার সমাধান আছে। তরীর জীবনের সব সমস্যাও কেটে যাবে। যদিও আমি জানিনা সবটা।”

” আমি সব বলব আপনাকে।”
” ওকে।”
” তার আগে বলুন একটা কাজ করে দিবেন।”
” কি কাজ?”
” তরীর বাবাকে বলবেন, আপনি তরীর জন্য পাত্র দেখেছেন। কোনো একটা রেস্টুরেন্টে তরীকে বোরকা পরিয়ে দেখাতে নিয়ে যাবেন।”
” আচ্ছা বলব।”

রোশান গোসল শেষ করে জাস্ট একটা টাওয়াল পরে ওয়াশরুম থেকে বের হল। মাথাভর্তি ভেজা চুল। সে সারাহ’র কাছে এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে বলল,
” পানিটা মুছে দাওতো।”
সারাহ অন্য একটা টাওয়াল দিয়ে রোশানের মাথার ভেজা চুল গুলো মুছে দিতে দিতে বলল,
” আপনাকে তো গোসলের পরে খুব স্নিগ্ধ লাগে।”

রোশান আচমকা বেশ জোরে উঠল। সাথে সাথে দাঁত গুলো চিকচিক করে উঠল। সারাহ এবার ভীষণ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো রোশান স্যারের দিকে। এই মানুষটার হাসি এত সুন্দর, তাও হাসেন না কেন? এই হাসি পৃথিবীর যে কোনো মেয়েই দেখলে ফিদা হয়ে যাবে৷ সারাহ’র হঠাত মনে পড়ল রোশান সকালে তরীর বাবা এবং দিশার সাথে হাঁটতে বের হয়েছিলো। দিশা চরিত্রের ব্যাপারে সারাহ’র জানতে কিচ্ছু বাদ নেই। বাই এনি চান্স সে রোশান সিদ্দিকী’র দিকেও নজর দেয়নি তো। তাহলে ওর মাথার চুল একটাও আস্ত রাখব না আমি। সারাহ হঠাৎ মাথা মোছানো টাওয়াল বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে বলল,

” আচ্ছা সকালে ওই তরীর বাবার কচি মুরগীর বাচ্চার বয়সী বউ দিশা ওর সাথে কথা হয়েছিলো আপনার।”
রোশান স্বাভাবিক কণ্ঠে উত্তর দিলো,
” দু’ একটা।”
” তাকিয়েছিলো নাকি?”
” আমি নিজেই তাকায়নি।”
সারাহ এইবার রোশানের গলা জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,
” দিশার লুচ্চামিতে আর মৃন্ময়-তরীর জীবনটা নরক। ও যদি ভুলেও আপনার দিকে তাকায়, আমি ওর চোখ দু’টো তু’লে আটখন্ড করে কচুর পাতায় ভাগ করব। ”
রোশান দুষ্টুমি করে বলল,

” রেগে গিয়ে কিন্তু তোমার খেয়াল নেই, তুমি আমাকে টেনে কোথায় রেখেছো। ”
সারাহ খেয়াল করল,এখনি দু’জনের বক্ষ মিলিত হবে। লজ্জায় দ্রুত সে রোশানের গলা ছেড়ে দিয়ে বলল,
” এত অসভ্য কেন আপনি?”
রোশান সারাহকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৩

” কি করেছি আমি? উমমম, তোমাকে একটা চুমু দিইনি তাইনা?” বলেই সারাহ’র গালে, কপালে চুম্বনে ভরিয়ে তুলল। তারপর দু’জনেই একটা সুন্দর সময় অতিবাহিত করল। কি নিয়ে যেন দু’জন অকারণ হাসতে শুরু করল।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৫