একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৭

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৭
Mousumi Akter

জীবনে প্রথমবার রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র বন্ধুদের অবিশ্বাস করছে। কিন্তু কেন? রোশান স্যার কি জানেন না সারাহ’র বন্ধুমহল হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বন্ধুমহল। তাহলে কেন ওনি এমন করছেন? সারাহ গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র দুই গালে হাত রেখে বলল,
” আগামিকাল অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমি নিজে তোমাকে নিয়ে যাবো। তোমাকে একা ছাড়তে ভ’য় পাই আমি সারাহ। আমার বেখেয়ালে তোমার একবিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হলে আমি যন্ত্রণায় অনলে পু’ড়ে দগ্ধ হয়ে যাবো। আমি কথা দিচ্ছি, আমি তোমাকে আগামিকাল নিয়ে যাবো। তোমার বন্ধুদের সাথে দেখা করাব। ”
সারাহ খুব মন খারাপ নিয়ে বলল,

” তাই বলে আপনি আমার বন্ধুদের অবিশ্বাস করবেন?”
” এই মুহুর্তে আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। দিনকাল ভাল নয়। কে তোমার বন্ধু কে তোমার শক্রু এটাই বুঝার উপায় নেই। ”
সারাহ চোখের কোনার পানি মুছে বলল,
” আজ আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। আপনি আমার বন্ধুদের অবিশ্বাস করলেন।”
এমন সময় সারাহদের ঘরের কলিংবেল বাজছে। এতরাতে আবার কে এলো। সারাহ আর রোশান সিদ্দিকী দু’জনেই তাকাল। রোশান সিদ্দিকী বলল,
” আমি দেখছি। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রোশান সিদ্দিকী দরজা খুলতেই দেখল ছোঁয়া দাঁড়িয়ে আছে। রোশান সিদ্দিকী’কে একটা সালাম দিয়ে ছোঁয়া ভেতরে প্রবেশ করল। সাথে ছোঁয়ার ড্রাইভার ও আছে। ছোঁয়াকে বেশ চিন্তিত আর নার্ভাস দেখে রোশান সিদ্দিকী প্রশ্ন করল,
” এ্যানি প্রব্লেম সারাহ? তোমাকে নার্ভাস লাগছে খুব। ”
ছোঁয়া মাথা নিচু করে কাঁন্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
” প্লিজ স্যার! সারাহকে আমার সাথে একটু যেতে দিন। আমি ওকে সেইফলি নিয়ে যাবো। ওর কোনো অসুবিধা হবেনা৷ আমার পারসোনাল ড্রাইভার আছে সাথে। ”
রোশান সিদ্দিকী থমথমে মেজাজে বলল,
” এত রাতে তোমাদের দু’জন মেয়েকে আমি একা ছাড়ব? তাও কুয়াকাটার মত অত দূরের রাস্তায়। পথে কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কে নিবে? আমি তোমার মা-বাবাকে বা কি বলব? কাল সকাল হোক যেও সমস্যা নেই। আজ রাতে এখানে থাকো। ”

ছোঁয়া কাকুতি মিনতি করে বলল,
” স্যার আমাদের সাথে আরো চারজন মেয়ে যাবে। আমরা মোট ছয়জন মেয়ে। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না স্যার। ”
সারাহ’র মন খারাপ। তাও সেই মন খারাপের মাঝে বলে উঠল,
” কোনো অসুবিধা হলে ৯৯৯ এ কল দিবো।”
রোশান সিদ্দিকী বেশ গম্ভীর মুডে সারাহ’র দিকে তাকাল। সারাহ’র আজ বেশ সন্দেহ হচ্ছে। কিছু না কিছু গড়মিল তো আছেই। না হলে রোশান স্যার এমন করছেন কেন? উনিতো কোনদিন আমাকে কোনো কাজে বাঁধা দেন না। আমার বন্ধুদের ও অবিশ্বাস করেন না। তাহলে আজ কি হল? কোনো সমীকরণ ই আজ মিলছে না।
এরই মাঝে রোশান সিদ্দিকী ছোঁয়াকে বলল,
” যারা যারা যাচ্ছে প্রত্যোকের ঠিকানা আমাকে দাও সারাহ। তোমার ড্রাইভার সহ প্রত্যোকের ভোটার আইডি কার্ডের ছবি আমার হোয়াটস এপ্স এ পাঠাও। ”
ছোঁয়া বলল,

” ঠিকাছে স্যার।”
রোশান সিদ্দিকী জানে সারাহ একবার যখন ডিসিশন নিয়েছে, সে যাবেই। বাঁধা দিলে সে শুনবেনা। বরং ঝামেলা আরো চারগুন বেশী বাড়বে। সারাহ কে সে কিছুতেই বোঝাতে পারবেনা। তাই সারাহ’র সমস্ত সেইফটির ব্যবস্থা করে ছোঁয়াকে পারমিশন দিলো। কিন্তু সারাহ’র সাথে সে একটি কথা ও বলছে না। ব্যাগ গোছানোর সময় সব সময় রোশান সিদ্দিকী ই তার ব্যাভ গুছিয়ে দেয়। কিন্তু আজ রোশান সিদ্দিকী স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সারাহ ভীত চোখে তাকিয়ে বারবার প্রশ্ন করছে,
” দেখুন না কোনটা নিবো? ব্যাগে কীভাবে কাপড় গোছাবো। পারছি না তো। ”
রোশান সিদ্দিকী একটা উত্তর ও দিলোনা। সারাহ দলা পাকিয়ে পাকিয়ে ব্যাগে কাপড় ভরলো। যাওয়ার সময় রোশান সিদ্দিকীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
” আমার শ্যামসুন্দর পুরুষ। আপনার অভিমান আমার ভয়াবহ ক্যান্সারের কারণ হবে। যা ভালবাসা ছাড়া নিরাময় হবেনা। ”

ড্র‍য়িং রুম থেকে ছোঁয়া ডাকছে,
” সারাহ হল?”
সারাহ রোশান সিদ্দিকী’কে ছেড়ে দিয়ে বলল,
” রওনা হচ্ছি, তবুও ফিরে তাকাবেন না।”
রোশান সিদ্দিকী তাও কোনো কথার জবাব দিলোনা। শুধু মানিব্যাগ থেকে গোছা ধরে টাকা বের করে দিলো। কত টাকা দিলো তা গোনা নেই। সারাহ টাকা নিলো। যাওয়ার সময় রোশান সিদ্দিকী’র গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
” সরি, সরি শ্যামসুন্দর পুরুষ। ”
এতক্ষণে রোশান সিদ্দিকী একটাই কথা বলল,

” সারাক্ষণ হোয়াটসএপ্স এ লাইভ লোকেশন শেয়ার রাখবেন কাইন্ডলি। পাওয়ার ব্যাংক দুইটাই নিয়ে যান।”
সারাহ অবাক চোখে রোশান সিদ্দিকীর রাগি চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। রোশান সিদ্দিকী’র রাগ সে আগে পরে দেখেনি। গম্ভীর দেখেছে কিন্তু রাগের তীব্রতা দেখেনি। আজ ই দেখল। একদিকে স্বামীর ভালবাসা আরেকদিকে বন্ধুত্ব কোনটাই বাদ দিতে পারছেনা সারাহ। ফিরে এসে রোশান সিদ্দিকী’র পায়ে ধরবে প্রয়োজনে। এসব ভেবে চিন্তে ছোঁয়ার সাথে বের হয়ে গেল। তারপর ষোলো ঘন্টা কেটেছে। ছোঁয়ার সাথে দীর্ঘ দিনের জমানো গল্প করেছে। তন্ময় আর ছোঁয়ার দেখা হয়েছে। ওদের প্রেমের ও মহামিলন ঘটেছে।

এখন সমুদ্র তীরে পা মেলে বসে আছে ছোঁয়া আর তন্ময়। ছোঁয়া বসে আছে, ওর পায়ের ওপর মাথা রেখে সুয়ে আছে তন্ময়। সামনে সমুদ্র,আকাশে চন্দ্র। দু’জন দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন সুখ দুঃখের গল্প করছে। এই মুহুর্তে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দু’জন সুখী মানুষ মন বিনিময় করছে। সমুদ্রের জলের সাঁ সাঁ শব্দ, যেন সেঁতারার মত শোনাচ্ছে ওদের কানে।
তন্ময় আচমকা ছোঁয়ার হাতটা নিজের মাথায় রেখে বলল,

” ওয়াদা কর, আমাকে আর ছেড়ে যাবিনা। ”
ছোঁয়া ওর হাতটা সরিয়ে বলল,
” ওয়াদা করতে নেই তন্ময়। যদি আল্লাহ আমাকে দুনিয়া থেকে নিয়ে যান। ”
তন্ময় ছোঁয়ার ঠোঁটে হাত চেপে ধরে বলল,
” এসব অনুক্ষণে কথা বলতে নেই। ”
” কপালের লিখন, না যায় খন্ডন। হতেই পারে। ”
তন্ময় আবার ও ছোঁয়ার হাতটা নিজের মাথায় চেপে ধরে বলল,
” ওয়াদা কর, আমাকে আর ঠকাবিনা তুই।”
ছোঁয়া তন্ময় এর মাথায় হাত রেখে বলল,

” ওয়াদা করছি তোকে কখনো ঠকাব না, কখনো ঠকাইনি। আর ঠকাব না বলেই এত দূর ছুটে এসছি। জীবন চলতে চলতে শেষ বয়সে একদিন বুঝবি কতটা গভীর ছিলো আমার প্রেম। ”
তন্ময় ছোঁয়ার ডান আঙুলের ভাজে আঙুল রাখল। মাথাটা নিচু করে ছোঁয়ার ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে মৃদু আদর দিলো। সেকেন্ডের মাঝে উষ্ণ হল দু’জনের শরীর। দু’জনেই অনুভব করল সেটা। কিন্তু কেউ প্রকাশ করল না। কিন্তু দু’জন ই বুঝতে পারছে দু’জনের মাঝে কিছু এলোমেলো হচ্ছে।
এরই মাঝে ওশান ওদের সাইড দিয়ে বারবার ঘুরছে। তন্ময় ব্যাপার টা খেয়াল করে বেশ অস্বস্তি ফিল করছে। সে ছোঁয়াকে বলল,
” ওঠোতো, জায়গা টা সেফ লাগছে না। ছেলেটা শুধু ঘোরাঘুরি করছে। মনে হচ্ছে নেশাখোর। পুলিশে কল দিতে হবে।”

ছোঁয়া তন্ময়কে থামিয়ে দিয়ে বলল,
” যা কিচ্ছু করুক না, তুই কেন ওদিকে তাকাচ্ছিস। আমাকে দেখনা।”
” এমন ওপেন প্লেসে আর কি দেখব।”
ছোঁয়া ফিসফিস করে বলল,
” আমার রুমে যাবি?”
তন্ময় কপাল টানটান করে বলল,
“কেন?”
ছোঁয়া বলল,
” আমাকে দেখতে।”
তন্ময় নেশালো কণ্ঠে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৬

“বড় অনর্থ ঘটে যাবে। এই ভদ্র ছেলেটা নিজেকে সামলাতে পারবে না।”
ছোঁয়া তন্ময়ের কলার টেনে নিজের খানিকটা কাছে নিয়ে বলল,
“সেই অনর্থ ঘটুক আমি চাই। এই ভদ্র ছেলের অভদ্র রূপ দেখার বড্ড ইচ্ছা আমার। দেখি কতটা অভদ্র হতে পারে।”
তন্ময় ছোঁয়ার হাত ধরে ছোঁয়ার রুমের দিকে রওনা হল। সামনে সমুদ্র, আকাশে চন্দ্র, তারা কি প্রেমের সুবাস ছড়ানোর সাক্ষী হবে, নাকি একটা অনর্থের সাক্ষী হবে?

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৮