একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৮
Mousumi Akter
হোটেলের ম্যানেজার ছোঁয়াকে হোটেলে প্রবেশ করতে দেখে বলল,
” দুলাভাই এর সাথে দেখা হয়েছে তাহলে?”
ছোঁয়া হেসে উত্তর দিলো,
” হ্যাঁ হয়েছে।”
হোটেলের ম্যানেজার তন্ময় এর দিকে তাকিয়ে বলল,
” দুলাভাই সত্যিই মাশাআল্লাহ আপু।”
ছোঁয়া তন্ময়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” দেখতে হবে কার জামাই।”
তন্ময় কিছু একটা বলতে যাবে তখনি ছোঁয়া তন্ময়ের হাতে জোরে চিমটি কেটে বুঝালো চুপ থাকতে হবে। তন্ময় চুপ হল বটে তবে বেশ অবাক হয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে বুঝতে পারছেনা ছোঁয়া কি করতে চাইছে। ছোঁয়ার উদ্দেশ্য কি? সে ভেবেছিলো ছোঁয়া মজা করে হোটেলে যেতে বলেছে কিন্তু সত্যি হোটেলে এলো কেন?
ছোঁয়া রুমের তালা খুলল। তন্ময় বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো। তন্ময়কে বাহিরে দাঁড়াতে দেখে ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কি সমস্যা? আসবি না।”
তন্ময় কপালের চামড়া টানটান করে বলল,
” পা-গ-ল তুই? আমি ফাইজলামি করছিলাম। সত্যি সত্যি রুমে যাবো ভাবলি কীভাবে?”
ছোঁয়া দুইটা গালি দিয়ে বলল,
” রুমে আসা মানেই কি ওইসব করা। ব্রেইনে এসব ঘোরে কেন তোদের।”
” রুমে মানুষ এসব কারণেই যায়। ”
ছোঁয়া তন্ময়ের হাত ধরে রুমে টেনে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। তন্ময় বিস্মিত হয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” এই মেয়ে কি আমাকে খু-ন করতে চায় নাকি। ”
ছোঁয়া হাসতে হাসতে বলল,
” খু-ন হতে আপত্তি আছে?”
তন্ময় মাথা নিচু করে বলল,
” গর্দান নিন এইবার। তার আগে আপনার উদ্দেশ্য টা বলুন। কেন আমাকে এখানে এনেছেন?”
ছোঁয়া ফিসফিস করে বলল,
” একটা রোমান্টিক ক্যান্ডেল নাইট কাটাতে চাই তোর সাথে। ” বলেই ছোঁয়া রুমের লাইট অফ করে কাচের জারে রাখা সুন্দর একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো। মোমবাতির হলদেটে আলোয় ছোঁয়ার হলুদ মুখখানা আরো হলুদ দেখাচ্ছে। মোমবাতির মৃদু আলো ছড়িয়ে পড়ল পুরো রুমে। ছোঁয়া একে একে রুমের চারকোণায় রাখা চারটা জারের মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো। জারের পানিতে ভাষছে গোলাপের পাপড়ি, তার ওপর আবার কালার ফুল মোমবাতি। চোখ জুড়ানো সুন্দর। ছোঁয়া টিভিতে একটা হিন্দি গান ছাড়ল। সে টিভির দিকে বিষন্ন মুখে তাকিয়ে রয়েছে। তন্ময় একটা মোমবাতি তুলল।
মোমবাতি টা নিয়ে ছোঁয়ার দিকে ক্রমশ এগোতো থাকল। ধীরে ধীরে সে ছোঁয়ার একদম কাছাকাছি চলে গেল। মোমবাতিটা ছোঁয়ার নাক বরাবর ধরতেই ছোঁয়া চোখ বন্ধ করল। বন্ধ চোখের দিকে তন্ময় মোহগ্রস্থ চোখে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষন পর তন্ময় দেখল তার ফুলের চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। ছোঁয়ার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ছোঁয়ার চোখে পানি দেখে তন্ময়ের হৃদয় বেদনার হাহাকারে আত্মচিৎকার দিয়ে উঠল। সে ছোঁয়ার দেওয়া সমস্ত যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে। কিন্তু ছোঁয়ার চোখের পানি সহ্য করতে পারেনা। হাতের মোমবাতিটা তন্ময় ফেলে দিলো। দু’ হাত ছোঁয়ালো ছোঁয়ার গালে। ছোঁয়ার গালের পানি মুছে দিয়ে বলল,
” আমি তোমাকে কোনভাবে হার্ট করে ফেলেছি। বলো আমাকে? আমি নিজেই নিজেকে শাস্তি দিবো৷ আমি সব সহ্য করতে পারব। তোমার দেওয়া সমস্ত যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারব। কিন্তু তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারব না। ”
ছোঁয়া চোখ খুলল। কাঁন্নামিশ্রিত চোখে সে তন্ময়ের দিকে তাকালো। বিদ্যুৎ বেগে যেন সে তন্ময়কে জড়িয়ে ধরল। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” শুধু তোমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে চাই আমি। দীর্ঘদিনকার তীব্র যন্ত্রণা কান্না আমার বুকে জমে আছে তন্ময়। আমি হালকা হতে চাই। বুকটা বড্ড ভারী হয়ে আছে।”
তন্ময় ছোয়ার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
” তুমি কাঁদলে তো আমার কষ্ট হয় ছোঁয়া। আমাকে অনেক শাস্তি দিয়েছো। কেঁদে আর শাস্তির তীব্রতা বাড়িও না প্লিজ!”
ছোঁয়া তন্ময়কে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” একটা জিনিস চাই। দিবে আমায়?”
তন্ময় বলল,
” চেয়েই দেখো। ”
” আমি মা হতে চাই তন্ময়। তোমার সন্তানের মা হতে চাই। ”
তন্ময়ের মাথায় যেন আকাশটা ভেঙে পড়ল। ছোঁয়া এসব কি বলছে। ও এবার এতটা সিরিয়াস কীভাবে হয়ে গেল?
তন্ময় আনন্দে মৃদু হেসে বলল,
” তাহলে তো কাজি লাগবে, সাক্ষী লাগবে। ”
ছোঁয়া বলল,
” আকাশে চাঁদ আছে, সামনে মহাসমুদ্র আছে। এর চেয়েও বড় সাক্ষী আর কি হতে পারে। তুমি আমাকে কবুল বলে দিলেই হয়ে যাবে। ”
তন্ময়ের চোখে পানি এল। এটা আনন্দ অশ্রু। থাকেনা মানুষের জীবনের কিছু কাঙ্ক্ষিত পাওয়া। যা পেলে আনন্দে মানুষ কেঁদে ফেলে। তন্ময় আজ সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পেয়ে আনন্দে কাঁদছে।
—- পরেরদিন সকাল আটটা বাজে। মৃন্ময় আর তরীর রুমের সামনে ওরা। সারাহ খুব চেতে আছে আজ। দ্বীপ বলল,
” মিসেস রোশান সিদ্দিকী চেতে আছেন ক্যা আফা?”
সারাহ খুব মেজাজের সাথে বলল,
” নিজের প্রাণেস্বর একমাত্র সোয়ামিকে ফেলে তোদের সাথে এসছি। আর তোরা কি করছিস? একজন বেলা আটটা বাজে বাসর শেষ হয়নি। আরেকজোড়া কপোত-কপোতি সারারাত রোমান্স করে ফিরে এসছে। আর তুই সারারাত মোবাইলে। এইদকে আমি এত হতভাগা হোটেলে পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছি। আমি যদি আমার সোয়ামিকে এসব না বলি আমার নাম রোশান সিদ্দিকীর একমাত্র বউ নয়। ফেইল খাবি তোরা। আমার বর তোদের সবাইকে ফেইল করাবে। ফেইল করিয়ে রিভেঞ্জ নিবে। আমি বলে দিবো তোদের ফেইল করাতে। ”
তন্ময় মাথা নিচু করে বলল,
” ভুল হয়েছে ম্যাডাম। ক্ষমা করুণ।”
সারাহ বুকে হাত বেঁধে বেশ গম্ভীর মুডে তন্ময়কে বলল,
” ক্ষমা করতে পারি, আমার বর রোশান স্যারকে এই সমুদ্র পাড়ে এনে দিবি। আমি কাপল ছবি তুলতে চাই। দৌঁড়ে গিয়ে জামাইকে জড়িয়ে ধরব এমন একটা ভিডিও বানাতে চাই। রোশান স্যার রেগে আছে আমার ওপর। সারারাত পায়ে ধরেছি রাগ কমেনা তার। এখন তোর দায়িত্ব তুই আমার বরকে এনে দিবি। আর এমন ভাবে আমার ব্যাপারে বলবি আমার বরের রাগ যেন পানি হয়ে যায়। সে যেন আমার রাগ ভাঙাতে হাজার হাজার মেসেজ করে। তুই বলবি সারাহ এসে ধরে খাচ্ছেনা, ঘুমোচ্ছেনা, এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। খুব কাঁদছে, মাঝে মাঝে বমি ও হচ্ছে। আমার মুখ শুকিয়ে গিয়েছে এসব ও বলবি। বলবি যে সারাহ কথা না বলে থাকতে পারেনা সে আজ একটা কথা ও বলেনি। ”
তন্ময়, ছোঁয়া আর দ্বীপ ফিক করে হেসে ফেলল। দ্বীপ বলল,
” আমার কি করা লাগবে?”
” মৃন্ময়ের দরজা লা- থি মেরে ভাঙ আগে। ”
দ্বীপ মৃন্ময়ের দরজায় জোরে ধাক্কা মেরে বলল,
” শালা দরজা খোল। মান সম্মান আর রাখলি না। এত বেলা করে কেউ ঘুম থেকে ওঠে। ”
মৃন্ময় কিছুক্ষণ পরে দরজা অল্প একটু খুলে উঁকি মেরে বলল,
” এই শালারা তোদের বলেছিনা, আগামি এক মাস আমি ঘরের দরজা খুলব না। আমাকে ডিস্টার্ব করছিস কেন?”
বলতে বলতেই মৃন্ময় ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
” এই কে রে? এই শালি তুই এইখানে ক্যা? বেঈমান, প্রতারক।”
ছোঁয়া হাসতে হাসতে বলল,
” ফুলসজ্জা কেমন হল তোর?”
” হি হি দাঁত বের করে দিলেই সাত খু’ ন মাপ তাইনা? তোর গলায় কি হয়েছে? কিসের দাগ?”
ছোঁয়া দ্রুত ওড়না দিয়ে গলা ঢেকে বলল,
” র’ক্তের প্লাটিলেট গাড় হওয়াতে এমন দাগ হচ্ছে প্রায় জায়গা ই। ”
” ডাক্তার দেখাস না খবরদার। মেলেদিন জিলেপি খায়নি।”
এরই মাঝে তরী রেডি হয়ে মৃন্ময়ের পাশে এসে দাঁড়াল। কেবল ই সাওয়ার নিয়েছে। বেশ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তরীকে। ছোঁয়া তরীর সাথে কুশল বিনিময় করে বলল,
” আজ থেকে আমরা তিন বান্ধবী তাইনা তরী?”
তরী বলল,
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৭
” হ্যাঁ। ”
দ্বীপ বিড়বিড় করে বলল,
” শালা আমি বাদে সবাই রোমান্স করছে।”
এরই মাঝে ওরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল। খাবার অর্ডার দিবে। ওদের ছয়জনকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। হঠাৎ ছোয়ার ফোন বেজে উঠল। ওশান নাম লেখা একটা নাম্বার থেকে ফোন আসছে। ফোন আসতেই ছোঁয়া ফোন নিয়ে উঠে গেল।