একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৩
Mousumi Akter
শ্বাশুড়ির মুখের বাজে ভাষা শুনে পিহুর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মনে পড়ছে নিজের মায়ের কথা। আজ মা থাকলে গালে তুলে খাইয়ে দিতো। মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি না গেলে নিজের মায়ের কদর বোঝেনা। পিহু চোখের পানি মুছে বিছানা ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করল। দ্বীপ মাত্র সাওয়ার নিয়ে এসে খেয়াল করে দেখল, পিহু ওঠার চেষ্টা করছে৷ দ্বীপের পরণে গামছা, হাতে ধোয়া লুঙ্গি। সে লুঙ্গিটা বারান্দার দঁড়িতে নেড়ে দিয়ে বেশ গম্ভীর গলায় বলল,
” তোমাকে না উঠতে নিষেধ করেছি আমি?”
পিহু দ্বীপের কথার কোনো উত্তর দিলোনা। সে সত্যিই বিরক্ত আর অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। দ্বীপের কথার উত্তর না দিয়ে ঘর ছেড়ে বের হতে যেতেই দ্বীপ দরজার সামনে দাঁড়ালো। হাত পেছনে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল,
” আমাকে ইগনোর করতেছো? ”
পিহু বেশ ভারী কণ্ঠে বলল,
” সরে দাঁড়ান। আমাকে যেতে দিন।”
দ্বীপ পিহুর কোমরে হাত রাখল। পিহুর কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
” কোথায় যাবে?”
পিহুর মুখ ভারী হয়ে আছে। ভারী কণ্ঠে বলল,
” রান্না করতে।”
দ্বীপ পিহুর মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। সে অভিমান আর কষ্টের রেখা দেখতে পাচ্ছে। তাই মিহি কণ্ঠে জানাল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আমিতো বলেছি তোমাকে রান্না করা লাগবেনা। আমার কথার কি কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে?”
পিহু মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। ভেতরে চাপা রাগ। মুখে অভিমান নিয়ে বলল,
“ছাড়বেন আমাকে?”
” যদি বলি নাহ।”
” কি চান আমার কাছে?”
“যা তুমি চেয়েছিলে।”
” আমার অবস্থা আজ দেখেছেন। চেয়েছিলাম তো ভালবাসা। পেয়েছি কি সেটা দেখেছেন।”
” এখন থেকে সব পাবে তুমি। ”
পিহুর অভিমানে বুক ফেঁটে যাচ্ছে। বুক ফাঁটা অভিমান নিয়ে বলল,
” এক হাজার টাকা হবে? আমাকে দিতে পারবেন?”
দ্বীপ জিজ্ঞেস করল,
” কি করবে?”
পিহু বলল,
” একটু ডাক্তারের কাছে যাবো।”
” আমিই তোমাকে নিয়ে যাবো। ”
” অন্যদিন আপনি যেয়েন,আজ কাকিমার সাথে যাবো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।”
এরই মাঝে দরজা ঠেলে দ্বীপের মা ঘরে প্রবেশ করল। ঘরে প্রবেশ করতেই দ্বীপ আর পিহু দ্রুত সরে গেল দু’জন, দু’দিকে। দ্বীপের মা আবার ও বাঁজখাই গলায় বলল,
” আমার ছেলের আগের চাকরিটা খেয়ে আমার ছেলের ঘাড়ে উঠেছো। এখন আবার নতুন একটা চাকরিতে জয়েন করেছে যেতে দিওনা। ঘরে আটকে রাখো। আগে তুমি এসে উঠেছিলে, এখন পেটে আরেকটা। এতগুলা বাড়তি মানুষ আমি কীভাবে খাওয়াবো। সে চিন্তা আছে তোমার।”
পিহু হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠল। রাজপ্রসাদ ছেড়ে এসে আজ সে ভাতের জন্য খোটা শুনছে। দ্বীপ আজ প্রথমবার রাগান্বিত গলায় বলল,
” অনেক হয়েছে আম্মু। অনেক বেশী হয়ে গিয়েছে। আমি ওকে ওর বাবার বাড়িতে রেখে আসব। তারপর আমি গ-লা-ই ফাঁস দিবো। তাহলেই হয়ত তুমি খুশী হবে। আমার ম’রা মুখ তোমাকে দেখিয়ে ছাড়ব। এটাই আমার ফাইনাল কথা।” বলেই দ্বীপ দ্রুত শার্ট প্যান্ট পরে ঘর ছেড়ে রাগে রাগে বেরিয়ে গেলো।
পিহু আর দ্বীপের আজ দু’বছর বিয়ে হয়েছে। সেদিন ছিলো পিহুর বিয়ের দিন। তিন হাজার লোকের আয়োজন ছিলো সে বিয়েতে। বিয়ের দিন পিহু দ্বীপের সাথে পালিয়ে যায়। ঘটনাটা ছিলো একটা সিনেমার মত। দ্বীপ রং নাম্বারে একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে। মেয়েটা শুধু ছবিই দিত কখনো ভিডিও কলে সামনে আসত না। মেয়েটা ছিলো অপরুপ সুন্দরী দেখতে। এরই মাঝে পিহুর বিয়ে ঠিক। মৃন্ময় বাড়ি ছাড়ার ঠিক তিন বছর পর। পিহুর বিয়ে উপলক্ষে মৃন্ময়ের বাবা মৃন্ময় আর তরীকে সম্মানের সাথে মেনে নেন। দীর্ঘ তিন বছর পর মৃন্ময়ের বাড়িতে নতুন করে আনন্দ আর খুশীর জোয়ার বইতে থাকে। বাড়িটা ভরে ওঠে আনন্দ আর খুশীতে। কিন্তু সেই আনন্দ একটা দিন ও গড়ালো না। দ্বীপ মৃন্ময়ের বোনের বিয়েতে আসেনি। ওইদিন তার দীর্ঘ তিন বছরের প্রেমিকা তার সাথে দেখা করতে আসে। দ্বীপ দুপুরের সময় একটা রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করে ফুল নিয়ে। আর ওইদিন ই পিহু লাল বেনারসি গা ভর্তি গহনা নিয়ে সেই রেস্টুরেন্টে হাজির হয়। লোকজনের মাঝে দ্বীপকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলে,
” আমি ওই ছেলেকে বিয়ে করতে চাইনা। আমি আপনাকে ভালবাসি। আপনাকে বিয়ে করতে চাই।”
দ্বীপের চোখ জোড়া কপালে ওঠে। সে কপাল কুঁচকে বলে,
” মাথা খারাপ হয়েছে তোমার। এসব কি বলছো। বাড়ি ভর্তি আত্মীস্বজন তোমার। তারা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। এখনি যাও, নইলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
পিহুর হাতে থাকে বি’ষে’র শিষি। পিহু বলে,
“আর ফিরে যাবার রাস্তা নেই। হয় আমাকে বিয়ে করুন নইলে আমি বি’ষ খাবো।”
চারদিক থেকে পাব্লিক জড় হয়। লোকজনের মাঝে দ্বীপ যদি প্রমান দেয় যে পিহু মিথ্যা বলছে তাহলে পিহুকে সবাই জু-তা ছুড়ে মা-র-বে। পিহু অনেক অপমানিত হবে।।ওকে নিয়ে নিউজ হবে। সারাজীবন পিহু মুখ দেখাতে পারবে না। পিহুর ইজ্জত বাঁচাতে দ্বীপ সব কেলেঙ্কারি ঘাড়ে নিয়ে পিহুকে বিয়ে করে। দ্বীপ হাজার বার বুঝালেও পিহুকে বাড়িতে পাঠাতে পারেনি। ওইদিন সন্ধ্যায় দ্বীপ পিহুকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যায়। দ্বীপ আর পিহুকে একসাথে দেখে মৃন্ময় জিজ্ঞেস করে,
” পিহুকে কোথায় পেলি দ্বীপ?”
পিহু মাথা নিচু করে বলে,
” আমরা বিয়ে করেছি ভাইয়া। আমি ওনাকে ছাড়া বাঁচতাম না।”
দ্বীপ জোরে একটা ধমক দিয়ে বলে,
” তুমি একটা কথাও বলবেনা আর পিহু। তুমি আজ যা করেছো। আমি মৃন্ময়কে সবটা বলতে চাই।”
মৃন্ময় দ্বীপের গালে কয়েকটা ঘু’ষি মেরে কেঁদে দিয়ে বলল,
” শালা রাজাকার। মীর জাফর। এত্ত বড় বেঈমানি করতে পারলি। তুই যদি পিহুকে বিয়ে করবি তাহলে আমাদের বলিস নি কেন? আমরাই বিয়ে দিতাম। আমার বাবা আজ কতদিন পর হাসিখুশী ছিলো। আমিও আজ তিনটা বছর পর বুকের জমানো কষ্ট গুলো হালকা করতে পেরেছি। নিজের বাবা-মা’কে কাছে পেয়েছি। আমার জীবনে অনেকদিন পর একটা আনন্দের দিন এসছিলো। ভেবেছিলাম সব কষ্টের অবসান হল। তরীকে মা-বাবা দিতে পারলাম। কিন্তু তুই? আমার সব আনন্দ নষ্ট করে দিয়েছিস। সব খুশি কেড়ে নিয়েছিস। আমার বাবা পিহু পালিয়ে যাওয়াতে হার্ট স্ট্রোক করেছেন। অবস্থা শোচনীয়। আজ থেকে তুই আমার বন্ধু না। দ্বীপ নামটা মৃন্ময় এর জীবন থেকে মুছে দিলাম। যা ভাগ, ভাগ এখান থেকে।”
দ্বীপ অনেকবার বুঝাতে চাইলেও মৃন্ময় আর বোঝেনি। আসল ঘটনা মৃন্ময়ের জানা হয়নি। সেখান থেকে মৃন্ময় আর বন্ধুত্ব ভেঙে গিয়েছে। দ্বীপ মৃন্ময়ের জন্য কত রাত কেঁদেছে। প্রিয় বন্ধুর সাথে দূরত্ব, বন্ধুমহল ভেঙে যাওয়া নিয়ে দ্বীপ অনেক ভেঙে পড়ে। সে পিহুকে মেনে নিতে পারেনি। কোনোও ভাবে মেনে নিতে পারেনি। সংসার জীবনে দু’জনের অনেক মান অভিমানের গল্প রয়েছে।
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬২
পিহুর এভাবে বিয়ে করাটা দ্বীপের আম্মু জেনে যাওয়াতে দ্বীপের আম্মু পিহুর সাথে কখনো ভালো ব্যবহার করেনি। এক জায়গা থাকতে থাকতে দু’জন মানুষের মাঝে আপনাআপনিই ভালবাসা তৈরি হয়ে যায়। দ্বীপ ও আজ পিহুকে ভালবাসে। কিন্তু পিহুর সেটা এখন শুনতে আগ্রহ কাজ করেনা। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে শারিরীক সম্পর্ক হয়েছিলো তাদের দু’মাস আগে। যার ফলাফল পিহু আজ প্রেগন্যান্ট। দ্বীপ যেমন মৃন্ময়কে চেয়েও বুঝাতে পারেনি তার দোষ নেই, পিহুও দ্বীপকে চেয়েও বুঝাতে পারেনি রং নাম্বারে তার সেই প্রেমিকাটি পিহু।