একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৪

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৪
Mousumi Akter

তন্ময় একটি বিশেষ কাজে ঢাকা এসছিলো। ঢাকা থেকে সে বিমানে করে যশোর পৌঁছাবে৷ সকাল আটটায় তার ফ্লাইট৷ এরই মাঝে একটা বাচ্চা ছেলে দেখতে রাজপুত্রের মত হবে। পরণে কালো ব্লেজার আর প্যান্ট। বাচ্চা মানুষকে এমন পোশাকে আরো রাজকীয় দেখাচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো ধনির দুলাল। বাচ্চাটা এলোমেলো ছুটছে। ছুটতে ছুটতে এসে তন্ময়ের পায়ের কাছে পড়ল। তন্ময় দ্রুত বাচ্চাটিকে ফ্লোর থেকে তুলে কোলে নিলো। বাচ্চাটা ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দিলো। বাচ্চাটির দিকে তাকিয়েই তন্ময়ের বুকের ভেতর ভয়ানক বাড়ি মেরে উঠল।এটা কীভাবে সম্ভব। বাচ্চাটি দেখতে হুবহু তন্ময়ের মত। একদম হুবহু তন্ময়ের মত দেখতে। এ যেন হুবহু তন্ময়ের কার্বনকপি। তন্ময় বাচ্চাটির থেকে চোখ সরাতে পারছে না। কেমন যেন তন্ময়ের পোশাকের সাথেও বাচ্চাটার পোশাক মিলে গিয়েছে। বুকের মাঝে এমন অস্বাভাবিক কম্পন হচ্ছে কেন তন্ময়ের। তন্ময় কাঁপা কণ্ঠে ছেলেটি জিজ্ঞেস করল,

” নাম কি তোমার পাপ্পা।”
ছেলেটা কান্না থামালো। কান্না থামিয়ে উত্তর দিলো,
” তনয়।”
তনয় শুনে তন্ময় আরো থমকে গেল। বুকের ভেতরের কম্পন আরো বেড়ে গেল। এটা কীভাবে সম্ভব? নামের মিল, চেহারার মিল। তন্ময়ের খুব জানতে ইচ্ছা হল বাচ্চাটা কার? কেনোই বা এত মিল তাদের দু’জনের। নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও কোনো মিল আছে। এরই মাঝে একটি মহিলা এসে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তনয় বাবা৷ তুমি এখানে? আমি আর তোমার মাম্মি খুঁজে হয়রান হচ্ছি। ”
তনয় মহিলাটির দিকে ঝাপিয়ে গিয়ে পড়ে বলল,
” মামনি।”
মহিলাটি তনয়’কে কোলে নিয়ে বলল,
” ছেলেটা খুব দুষ্টু হয়ে গিয়েছে। প্রথমবার বাংলাদেশে এসছে তো। এয়ারপোর্টে নেমেই ছুটে চলে এসছে।”
তন্ময় ভারী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” আপনার ছেলে।”
মহিলাটি বলল,
” হুম।”

বলেই চলে গেলো। তন্ময়ের অনেক কিছু জানার আছে। অনেক প্রশ্ন করার আছে কিছুই করল না। কেমন হতবিহম্বলের মত হয়ে আছে। মহিলাটি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে যেদিকে গেল তন্ময় এক পা দু’পা করে সেদিকেই এগোলো। মহিলাটি যখন গাড়িতে উঠল তখন গাড়িতে আরো একজন মহিলা বসা আছে। গাড়িটি যখন ছাড়ে দিলো তন্ময় দেখল, গাড়িতে অন্য যে মহিলা বসে আছে সে ছোঁয়া। তনয় ছোঁয়ার গলা জড়িয়ে ধরে আছে। তন্ময় এর পুরো পৃথিবী যেন কাঁপতে থাকল। সারা দুনিয়া নিয়ে ঘুরছে তন্ময় এর। ছোঁয়া, তার মানে ছোঁয়া এই বাচ্চার মা। তন্ময় দুঃচিন্তায় মাথার চুলে হাত বুলোলো। ছোঁয়ার বাচ্চা ওর মত কেন দেখতে হল। এটা কেমন শাস্তি। এটাও তন্ময়ের জন্য শাস্তি। এত বছর পর কেন আবার সেই পুরনো অতীত তার সামনে এলো। সে কোনদিন ছোঁয়ার মুখ দেখতে চায়নি। তাও কেন সামনে এলো। এমন একটা বাচ্চাতো তার আর ছোঁয়ার ও হতে পারত। কুয়াকাটা পাঁচ বছর আগে ছোঁয়া একটা হুজুর ডেকে এক হাজার টাকা কাবিনে বিয়ে করেছিলো তন্ময়কে। বলেছিলো কাউকে না জানাতে। সবাইকে যশোর গিয়ে সারপ্রাইজ দিবে। কুয়াকাটা সেকদিনে অনেকবার ওদের শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে। যেখানে ছোঁয়া ঘনিষ্ট হওয়ার আগে আদুরে গলায় বলত,

” আমি তোমার সন্তানের মা হতে চাই তন্ময়। একটা কিউট তন্ময় আমার ও হোক।”
সেই ভয়ানক স্মৃতি ভুলতে না পেরে ছোঁয়া ওশানকে বিয়ে করলে তন্ময় ওর মা কে পাঠিয়েছিলো। তন্ময়ের মা ছোঁয়াকে বলেছিলো,
“মা আমি তন্ময়ের মা। আমার ছেলেটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে মা। আমি জানিনা তোমার কি হয়েছে। তুমি কেনইবা আমার ছেলেকে এত বড় কষ্ট দিলে। আমি তো মা। আমার কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না, ইচ্ছা করে আমার ছেলেকে কষ্ট দিয়েছো। যাই হোক না কেন চলো মা আমার সাথে।আমার ছেলে, আমি তোমাকে হাসতে হাসতে গ্রহন করে নিবো। ”
ছোঁয়া বেশ রাগান্বিত গলায় বলল,

” বাহ আন্টি! আমার বাবার টাকা আছে দেখে ছেলেকে শাসন না করে, বড়লোকের মেয়ের পিছে লাগিয়ে দিয়েছেন। ভেবেছেন বিয়ে করলে আমার বাবার করা আলিশান বাড়িতে আপনি আপনার ছেলে আর সবাইকে নিয়ে গিয়ে উঠতে পারবেন তাই না? আপনাদের সে স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হবে না। ছেড়া কাঁথায় সুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখবেন না। এত লোভ কেন আপনাদের?”
“তুমি সত্যিই বড়লোকের মেয়ে কিনা আমি জানতাম না। তন্ময় আমাকে কখনো বলেনি তোমার বাবার কত টাকা আছে। আমি চিনি আমার তন্ময়কে। কখনো কারো সম্পদের লোভ করার মত আমার ছেলে নয়।ও শুধু তোমাকে ভালোবাসে মা। আমাকে বলেছে তোমাকে ছাড়া বাঁচবে না। আর তুমি আমাকে অনেক ভালবাসো। আমি তোমাকে আনতে গেলে আমাকে না করতে পারবে না। আমার সাথে ঠিকই আসবে। এই আশায় আমার ছেলে আমাকে পাঠিয়েছে।”

ছোঁয়া বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
“আপনি গিয়ে আপনার ছেলেকে প্লিজ বুঝান আন্টি! সব কিছুর একটা লিমিট আছে। যেহেতু তাকে না বলে দিয়েছি, বিয়ে করব না বলে দিয়েছি, সেখানে থেমে যাওয়া উচিত। এত বাড়াবাড়ি করার কি কোনো প্রয়োজন আছে? আর আপনিই বা কেমন মহিলা? আমি বিয়ে করেছি আমার স্বামীর বাড়ি এসে আপনার ছেলের সঙ্গে যেতে বলে আমার সংসার ভাঙার চেষ্টা করছেন। কীসের জন্য আন্টি? নিজে কখনো সংসার করতে পারেননি বলে অন্য কারো সংসার নিয়ে আপনার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সংসার করেন নি তো তাই বুঝবেন না।”

ছোঁয়ার কথায় তন্ময়ের মা অনেক কষ্ট পেল। অপমানে যেন পায়ের তলার মাটিটা তার সরে যাচ্ছে। তন্ময়ের মায়ের কিছু না থাকলেও খুব আত্মসম্মান ছিলো আর আছে বলেই তন্ময় কে এভাবে মানুষ করতে পেরেছে। স্বামীর অঢেল সম্পদ আছে যা অর্ধেক তন্ময়ের নামে। তবুও বিচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গে তার স্বামীর পরিচয় দিয়েছে তার স্বামী মৃত। স্বামীর একটা ভুলে স্বামীর বাড়িতে যায়নি আর কোনদিন। স্বামী একটা বিয়ে করেছিলো, পরবর্তিতে উনি সে বিয়ে ভেঙে দিতে চাইলেও মান অভিমানে তন্ময়কে নিয়ে চলে এসেছিলো। ওইযে এসছে আর যায়নি।
ছোঁয়ার কথার তীরে তন্ময়ের মায়ের বুক ছি-দ্র হয়ে গেল। তবুও একমাত্র ছেলেকে খুশি দেখার জন্য আঁচল পেতে ছোঁয়ার সামন ধরে বলল,

” যা খুশি তাই বলো মা তবুও আমার ছেলের জীবনে ফিরে চলো। আমার ছেলে হসপিটালে ভর্তি। সু- ই- সা-ইড করেছে। বাঁচবে না তোমাকে ছাড়া। ” বলেই ছোঁয়ার হাত ধরে টানাটানি করলো।
রেগে গিয়ে ছোঁয়া তন্ময়ের মা’কে ধাক্কা মেরে বলল,
” ছাড়ুন আমাকে। ”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৩

তন্ময়ের মা পড়ে যায়। খাটের কোনায় লেগে কপাল কেটে যায়। সেখানেই তন্ময়ের মা স্ট্রোক করেন। হসপিটালে নিতে নিতে মা’রা যান। মা’কে হারানোর জন্য তন্ময় বার বার নিজেকেই দায়ী করে। মা ছাড়া কে ছিলো তার জীবনে। ছোট বেলা থেকে একজন সংগ্রামী নারী হয়ে তন্ময় কে মানুষ করেছে। তন্ময়ের ভালবাসা ভীক্ষা চাইতে গিয়ে তার মা মারা গেল। পুরা হসপিটাল ভরে তন্ময় মা মা মা করে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছিলো। মা আমার ছোঁয়াকে লাগবে না। তুমি ফিরে এসো মা। আমার তোমাকে লাগবে। আমি বুঝিনি তোমার চেয়ে বেশী ভাল কেউ আমাকে বাসেনি। আব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় তন্ময়। তারপর কত যন্ত্রণা, কত নির্ঘুম রাত কেটেছে কেউ জানেনা। কেউ না।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here