একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৮

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৮
Mousumi Akter

আজ তন্ময়কে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে কেউ খেয়াল না করলেও রোশন সিদ্দিকী খেয়াল করেছেন। সবার আড্ডার মাঝে থেকে রোশান সিদ্দিকী তন্ময় কে ডেকে অফিস রুমে নিয়ে গেলেন। অফিস রুমে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“সত্যি কথা বলোতো তন্ময়।!
তন্ময় অন্য মনস্ক হয়ে বলল,
“জি স্যার বলুন। কি সত্য বলব।”
“কি নিয়ে চিন্তিত। কি ভাবছো? ছোঁয়াকে? গভীর কিছু হলে শেয়ার করলে হালকা হবে।”
তন্ময় চিন্তিত কণ্ঠে উত্তর দিলো,
“আপনাকে কি কখনো আমি মিথ্যা বলেছি। আপনি আমার আইডল স্যার।আজ আমি জিরো হয়ে যেতাম স্যার আপনি না থাকলে।”
রোশান সিদ্দিকী বললেন,

“তোমার কি ছোঁয়ার কথা মনে খুব পড়ছে?”
তন্ময় একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে বলল,
“না স্যার। জানেন তো আমি কত ঘৃণা করি তাকে। তার জন্য আমি আমার মাকে হারিয়েছি। পৃথিবীতে আমার একমাত্র অবলম্বন ছিলো আমার মা আর বন্ধুরা। ওর খারাপ আচরণের জন্য মা হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন আর আমাকে ছেড়ে চলেও গেলেন।”
রেশান সিদ্দিকী বললেন,
“কারো খারাপ আচরণে কেউ মরে না। তন্ময় তার আয়ু ওই পর্যন্ত ছিল ব্যাস। এটা বাস্তবতা। এটা তোমাকে মেনে নিতে হবে। ছোঁয়ার খারাপ আচরণে তোমার মা মরেন নি। মৃত্যুর পৃষ্টা উপরওয়ালার হাতে ছিলো।”
তন্ময় ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মনকে তো বোঝাতে পারি না স্যার। মা মারা গেল সাথে দিয়ে গিয়েছে দারুণ কষ্ট স্যার। মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয়।”
“আমি তোমাকে চিনি তন্ময়।আমার কতটুকু ভুল হয় আমি জানিনা, আজ তোমাকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তুমি ছোঁয়াকে মিস করছো। তুমি ছোঁয়ার কথা ই ভাবছো।”
তন্ময় বলল,
“না স্যার আমি ভাবছি না ওর কথা।!
রোসান সিদ্দিকী বললেন,
“এভাবে কি চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়। তন্ময় আমার চেয়েও কি তোমাকে কেউ বেশি চিনে। সত্যি করে বলোতো তন্ময় একটা কথা। এতদিনে তোমাকে আমি প্রশ্ন করিনি কিন্তু আজ করব।”
তন্ময় বলল,

“আপনার থেকে আমি কখনো কিছু লুকোয়নি স্যার, তবে আজ একটা জিনিস আমি দেখেছি যা মাথা থেকে ডিলিট করতে পারছিনা স্যার।”
রোশান সিদ্দিকী বললেন,
“শেয়ার করো হয়তো আমি একটা সুন্দর সমাধান দিলেও দিতে পারব। ”
তন্ময় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ভারী কণ্ঠে বলল,
“স্যার আজ আমি ছোয়াকে দেখেছি এয়ারপোর্টে।”
রোশান সিদ্দিকী নির্বাক চোখে তন্ময়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তন্ময়ের চোখে মুখে কষ্টগুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
রোশান সিদ্দিকী আবারো প্রশ্ন করলেন,

“তারপর।”
তন্ময় বলল,
” স্যার ওকে দেখেছি সেটা আমার উপর খুব একটা প্রভাব ফেলে নি। পৃথিবীটা গোল একই শহরের মানুষদের সাথে কোনদিন না কোনদিন দেখা হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু স্যার সাথে একটি ফুটফুটে বাচ্চা ছেলেও ছিলো।”
রোশান সিদ্দিকী বললেন,
“যে মানুষটা তোমার জীবনেই নেই তার বাচ্চা থাকলে কষ্ট পাওয়ার কথা নয়।”
“স্যার বাচ্চা নিয়ে আমি কষ্ট পাচ্ছি না কিন্তু ব্যাপার যেটা ঘটেছে সেটা হল।”
রোশান সিদ্দিকী বললেন,

” ব্যাপারটা কি?”
“স্যার ওর বাচ্চাটা হুবহু দেখতে আমার মত। বিলিভ করবেন কিনা জানিনা স্যার ছোটবেলায় আমি দেখতে যেমন ছিলাম বাচ্চাটা হুবহু দেখতে তেমন।
ও তো আপনার ভাই ওশান কে বিয়ে করেছিল তারপর ওশান কে ছেড়ে ইউএস সেটেল ছেলেকে বিয়ে করে বিদেশ চলে গিয়েছিলো। কিন্তু বাচ্চাটা আমার মত দেখতে হলো কিভাবে? ”
রোশান সিদ্দিকী বললেন,
“তুমি সিওর তোমার মতই?”
তন্ময় বলল,
” জি স্যার। আমার মতোই।শুনেছি পৃথিবীতে এক রকম দেখতে সাতজন হয়, হয়তো সেরকমই বাচ্চাটা। ”
রোশান সিদ্দিকী বললেন,

“মানুষের মত মানুষ দেখতে হয় কিছুটা। কিন্তু তাদের চেহারায় আলাদা গঠন থাকে। তোমার মত হলে সেখানে প্রশ্ন থেকেই যায়।”
তন্ময় বলল,
“কি প্রশ্ন”
রোশান সিদ্দিকী অভিজ্ঞ চোখে তাকিয়ে বললেন,
“তোমার আর ছোঁয়ার শেষ দেখা পাঁচ বছর আগেই হয়েছিলো। বাচ্চাটার বয়স ও চার পাঁচ বছর হবে। আবার দেখতেও তোমার মত। দেখো আমার সিক্স সেন্স একটা কথাই বলছে কোন ভাবে বাচ্চাটা তোমার নয়তো। কেন জানি আমার মন সেটা বলছে। আমি ফ্যাঙ্কলি বলছি কুয়াকাটা গিয়ে যদি কোনো কিছু তোমাদের মাঝে হয়ে থাকে তার ও রেজাল্ট হতে পারে।”
তন্ময় বলল,
” স্যার আমি একটা কঠিন ওয়াদা করেছিলাম। তাকে এত ঘৃণা করেও সে ওয়াদা আমি আজও ভাঙতে পারিনি। আপনি তো জানেন স্যার ওয়াদার কত মূল্য আমার কাছে।
রোশান সিদ্দিকী বললেন,
“মাঝে মাঝে কিছু সমস্যার সমাধানের জন্য ওয়াদা ভাঙতে হয়। যা ভাঙলে কারো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না সে ওয়াদা ভঙ্গ করা যায়।”

তন্ময় আবার ভারী নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“স্যার পৃথিবীর কেউ জানেনা শুধুমাত্র আমি আর সে জানে।
আমাদের বিয়ে হয়েছিল। বৌবাহিক সম্পর্ক আমাদের কয়েকবারই হয়েছে। ”
রোশান সিদ্দিকীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
তন্ময় যন্ত্রণা লুকানোর চেষ্টা করে বলল,
” আমাকে বাজে ভাবে ঠকাবে বলেই হয়ত ওয়াদা করিয়ে নিয়েছিলো। আমাকে ছেড়ে গিয়ে দু’টো বিয়ে করেছে স্যার। একজন আপনার ভাই যাকেও ঠকালো। এখন বিদেশি একজন কে বিয়ে করে বিদেশ সেটেল।”
রোশান সিদ্দিকীর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কেন যেন মন মানতে চাইছে না অনেক কিছুই। মনে উঁকি দিচ্ছে কৌতুহল। রোশান সিদ্দিকী ওভার থিংকিং করে বলল,

“আই থিঙ্ক ও আর একটাও বিয়ে করেনি। একটাও না। আমি ভুল না হলে এটাই সত্য। তোমাদের বিয়ে হয়েছিলো এই সত্যটা যদি সেদিন মানে চার বছর আগে শেয়ার করতে আজ এত প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে হতো না। সমাধান ওখানেই হয়ে যেত। ”
তন্ময় বললো,
“কীসের সমাধান স্যার?”
” মিলালে তো অনেক কিছু মিলে যায় তন্ময়। আচ্ছা ছোঁয়া তোমাকে ঠকিয়েছে এই টুকু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ব্যক্তিগত রেটিং চাইলে ছোঁয়াকে কত দিবে।”
তন্ময় বলল,
“আমার যতই রাগ থাকুক স্যার মিথ্যা রেটিং দিতে পারব না। বন্ধুত্ব বলেন ভালোবাসার মানুষ বলেন ছোঁয়া একশ তে একশ ই পেত তখন।”

রোশান সিদ্দিকী কপালে আঙুল চালাতে চালাতে বললেন,
“যে মেয়ে এতটা ভাল ছিলো সে রাতারাতি এত চেঞ্জ কীভাবে হতে পারে? কখনো প্রশ্ন জাগেনি তোমার। তাছাড়া ওশানের মত থার্ড ক্লাস একটা ছেলেকে ও কীভাবে চয়েজ করতে পারে। ওর রুচিতো এতটাও খারাপ নয়। আজ ও ওর বন্ধুমহল এর চোখে ঘৃণার পাত্রী। সত্যিই কোনো পাপ করলে এতদিনে ক্ষমা চাইতে আসত। আরো একবার দেখা করতে আসত। ও আসেনি। ছোঁয়ার বাবা আমাকে মে’ রে’ ছিলো তুমি ভেবে। আমার জায়গা তোমাকে পেলে তোমাকে মা’র’ত। এমন ও তো হতে পারে ওর বাবার কঠিন প্রেশার ছিলো।ও ওশানকে যদি বিয়ে করবে তাহলে একদিন কেন আমাদের বাড়িতে যাবে। আর তো কোনদিন যায়নি। ও যদি বিয়েই করবে তাহলে সংসার টা করল না কেন? অন্তত একমাস সংসার করে খারাপ লাগলে চলে যেতে পারত।।ব্যাপার গুলা অদ্ভুত না! তখন রাগে জিদে কেউ এসব ভাবেনি। সবাই ভেবেছে ওর চরিত্রে সমস্যা। আজ যখন ওর কোলে তোমার মত দেখতে বাচ্চা আজ সব সত্য সামনে আসার দিন এসছে তন্ময়। একে একে প্রশ্নের জট খুলবে। ”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৭

“আমি জানিনা স্যার কি করব। মন বলছে বাচ্চাটা আমার।”
“এখন ওদের খোঁজ নিবো কীভাবে?”
“স্যার ওদের ফলো করে বাসাটাও দেখে এসছি আমি। আগের বাড়িতেই আছে ওরা।”
“তুমি শুধু আমাকে একটা সন্ধান এনে দাও, বাচ্চাটা যদি কোন স্কুলে ভর্তি হয়ে থাকে তাহলে স্কুলের নামটা জেনে দাও।”
“ঠিক আছে স্যার।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here