একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৯

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৯
Mousumi Akter

সাত দিন কেটে গিয়েছে। তন্ময় খোঁজ নিয়েছে ছোঁয়া বাচ্চাকে কোন স্কুলে ভর্তি করেছে। রোশান সিদ্দিকী খোঁজ নিয়ে জানলেন সেই স্কুলের শিক্ষিকা তার বান্ধবী ছিলো। রোশান সিদ্দিকী একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। তার জন্য কাজটা একটু সহজ হবে। রোশান সিদ্দিকী সকালবেলা একটা চা খেয়ে খুব ব্যস্ততার সাথে বের হয়ে পড়ল। পেছন থেকে সারাহ ডেকে বললো,
” এই বুড়ো বয়সে কি বউ রেখে আরেকটা প্রেম করছেন?”
রোশান সিদ্দিকী পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল,
” কেন?”
” বিগত সাত দিন ধরে দেখছি আপনি ভীষণ বিজি। ”
রোশান সিদ্দিকী প্রতুত্তরে বলল,

” তুমিও তো বিজি।”
” আমি বিজি থাকার কারণ আছে। অনেকদিন পর পুরনো বন্ধু-বান্ধব মিলে এক হয়েছি। ”
” তোমার আনন্দকে আরো দ্বীগুন করা যায় কীনা সে চেষ্টাই চালাচ্ছি।”
সারাহ কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“সত্যি করে বলুন তো কি করে বেড়াচ্ছেন? কোথায় যাচ্ছেন? বিগত সাতটা দিন আপনার নাওয়া নেই, খাওয়া নেই সব সময় বিজি। প্রেমে ট্রেমে পড়েন নি তো! আচ্ছা ওই দিশা নামের মেয়েটাকে আজও ভুলেন নি তাইনা?”
রোশান সিদ্দিকী স্মিথ হেসে বলল,
“তুমি এত পাজি এখনো সে দিশাকে মনে রেখেছো ।”
” তা মনে রাখব না। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“দিশার বাবার যে পরিণতি হয়েছে। বেচারা রাস্তায় অসুস্থ অবস্থায় মাঝে মাঝে দেখি ভীক্ষা করে খাচ্ছেন। দিশা নামের মেয়েটা সমস্ত সম্পত্তি লিখে নিয়ে ভেগে গিয়েছে।”
“এটাই তো হওয়ার ছিলো। একদম ঠিক হয়েছে। ”
রোশান সিদ্দিকী সারাহ’কে একটা ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিয়ে বলল,
“আচ্ছা আসি।”
সারাহ আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,
” যাচ্ছেন টা কোথায়?”
“তোমার জন্য খুশী কিনতে। সারপ্রাইজ আছে।”
সারাহ’র কৌতুহল বাড়ল। সে কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে বলল,
“বলুন না কি সারপ্রাইজ।”
“বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ থাকবে।”
“হিন্টস দিয়ে যান।”
“মনে করো এই পৃথিবীর তোমার সবচেয়ে খুশীর কারণ।”

সারাহ মনে মনে বলল, কোনদিন যদি ছোঁয়ার ঘটানো ঘটনা গুলো মিথ্যা প্রমাণিত হত তাহলেই আমি এই পৃথিবীতে সব চেয়ে বেশী সুখী হতাম। রোশান সিদ্দিকী বাইক স্টার্ট দিলো। দেখতে দেখতে বাইকটা দূরে চলে গেল। পথেই তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে। দু’জনের বাইক ছুটে চলেছে স্কুলের দিকে। তখন এগারোটা বাজে। রোশান সিদ্দিকী আর তন্ময় স্কুলের লাইব্রেরিতে প্রবেশ করল। স্কুলের ম্যাডাম তমা রোশান সিদ্দিকীর স্কুলের বান্ধবী। রোশান সিদ্দিকী কে দেখে ভীষণ খুশী হয়ে চা কফির অর্ডার দিলো। পুরণো বন্ধুত্ত্বের কিছু আলাপ আলোচনা করে নিয়ে রোশান সিদ্দিকী বলল,
“আচ্ছা ম্যাডাম এই স্কুলে যে ছোঁয়া নামক একজন মহিলা আসছিলেন তার ছেলেকে এডমিট করাতে। আমরা কি একটু ওনার পার্সোনাল ডিটেলস জানতে পারি। সপ্তাহ খানিক ভর্তি হয়েছে।”
স্কুলের ম্যাডাম বললেন,

“কারো পার্সোনাল ডিটেইলস দেওয়া নিষিদ্ধ। তুমি যেহেতু চাইছো না দিয়ে পারছি না। তুমি কারো ক্ষতি চাইবে না জানি। কি জানতে চাও সেটা বলো।”
“ছেলেটির বাবার পরিচয় কি?”
“ছেলেটির বাবার নাম তন্ময় আহমেদ, কলেজের লেকচারার।”
“থ্যাংকিউ এতটুকুই জানার ছিলো। ”
রোশান সিদ্দিকীর চোখে মুখে ভয়ানক আনন্দ। সে আনন্দভরা মুখে তন্ময়ের দিকে তাকালো। তন্ময় এর পুরো দুনিয়াটা কেমন যেন থরথর করে কাঁপছে। শরীরটা ভারী হয়ে এলো। তনয় তার ছেলে। কথাটা শুনে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। তার মনে হাজার হাজার প্রশ্ন। এত বেশী অবাক হয়েছে যে অন্য ধ্যানে হারিয়ে গেল। রোশান সিদ্দিকী বলল,
” কনগ্রাচুলেশন তন্ময়।”
তন্ময় অবাককরা আর সন্দিহান চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“স্যার এটা কীভাবে পসিবল? হাউ?”
রোশান সিদ্দিকী বলল,

” ভালবাসলে সবই পসিবল। আজ তোমাকে আমি আমার জীবনের একটা ঘটনা খুলে বলি।
আমার বন্ধু আরিয়ান ছিলো। তখন জানতাম আরিযয়ানের একটা গার্লফ্রেন্ড ছিলো। মেয়েটির ছবি দেখালো একদিন। খুব মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখলাম ওর জিএফ কে। তারপর হুট করে যখন আমার দাদু আমার জন্য সারাহকে পছন্দ করেছিলেন আমি তখন দেখি মেয়েটা আরিয়ানের গার্লফ্রেন্ড। সরাসরি ওকে দেখে আমি এত বেশী মুগ্ধ যে চোখ সরাতে পারছিলাম না। খুব করে চাইছিলাম কোনভাবে যেন সৃষ্টিকর্তা আরিয়ানকে হারিয়ে আমাকে জিতিয়ে দেন। তবে এমন কিছু যেন হয় আমি আমার বন্ধুর মনে কষ্ট না দিই। পরে আমি আরিয়ানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোর একটা গার্লফ্রেন্ড ছিলোনা? বিয়ের দাওয়াত কবে দিচ্ছিস।

আসলে আমার জানার ইচ্ছা ছিলো ও জিএফ নিয়ে সিরিয়াস কতটুকু। তখন ও আমাকে জানায়, আমার বউ হিসেবে আমার বাড়ি থেকে ওকে মানবে না। আমি কোনদিন বিয়ে করতে পারবোনা। আমি বুঝিয়েছিলাম ফ্যামিলিকে বুঝিয়ে বিয়ে কর। কিন্তু ওর ফ্যামিলি বিসিএস ক্যাডার চেয়েছিলো। এদিকে আমার দাদু পুরণো জামানার মানুষ। সে চেয়েছিলো লেখাপড়া কম জানা সুন্দরী বাড়ির বউ। দাদুর পছন্দ আমি কখনো ফেলতে পারিনি। কিছু না ভেবেই বিয়েতে রাজি হই নিজের চেয়ে সম্পূর্ণ বিপরিত ধর্মী একটা মেয়েকে। কি অদ্ভুত ব্যাপার!মানুষ কত কিছুরে প্রেমে পড়ে আর আমি সারাহ’র বকবকানীর প্রেমে পড়েছিলাম। অথচ ছোট বেলা থেকে ম্যাচুরড মানুষ আমার পছন্দ ছিলো। অতিরিক্ত কথা বলা মেয়ে আমার পছন্দ ছিলনা। কিন্তু আজ সারাহ কথা কম বললে আমার পা-গ-ল লাগে নিজেকে। ভালবাসলে সবই সম্ভব। আরেকটু খুঁজলেই পুরাটা ক্লিয়ার হয়ে যাবো। দেখো বাচ্চাটা দেখতেও তোমার মত বাবার নাম তন্ময় এটা স্পষ্ট যে ওর বাবা তুমি।”

তন্ময় কিছুই বলল না। চোখে মুখে কোনো অনুভূতি নেই। তার সমস্ত অনুভূতি ভোতা হয়ে গেল। কি বলবে সে? কি করবে সে? এক জীবনের পুরোটাই কেটে গেলে ধোঁয়াসায়। এরই মাঝে এয়ারপোর্টের সেই মেয়েটা এসে হাজির হল। তখন স্কুল ছুটি হয়েছে। এরই মাঝে তনয় ও চলে এলো। সেদিনের মেয়েটি তনয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
” বাবু তোমাকে না বলেছি এভাবে ছুটবে না।”
তখনি তন্ময় বলল,
” আপনি কেন একটা বাচ্চাকে ধমকাচ্ছেন?”
মেয়েটি বলল,
“আমার বাচ্চাকে আমি ধমকাবো তাতে আপনার কি?”
তন্ময় বলল,
“বাচ্চাটি আপনার নয় ভালো করে জানি। বাচ্চার মা’কে ডাকুন। বলুন ওর বাবা এসছে। আর আমি জেনে গিয়েছি বাচ্চা আমার।”
মেয়েটি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,

“হঠাৎ করে সন্তানের প্রতি এত ভালোবাসা আপনার উতলে উঠতে দেখে হাসি পাচ্ছে।”
” হঠাৎ উতলে উঠছে কারণ আমি হঠাৎই জানতে পেরেছি সন্তানটি আমার। ”
” এতদিন কেন জানার চেষ্টা করেননি?”
“আপনার সাথে আমি বলতে চাইছি না। ওর মা কোথায়? ওর মা’কে ডাকুন।”
” ওর মা বাসায় আছে। ছোটবেলা থেকে আমি ওকে লালন পালন করছি। কিছু বলার হলে আমাকে বলুন।”
তন্ময় খুব চিন্তিত মুখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
” ওর মায়ের কি হয়েছে? আপনি কেন মানুষ করছেন?”
” কারণ ওর মা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলো ওর জন্মের সময়। তখন পাশে ওর বাবাকে ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। ওর বাবাতো ছিলোনা। তাই আরেকজন মা হিসাবে আমি ছিলাম। আজ যাকে সন্তান হিসাবে দাবী করছেন আপনি তার একজন অপদার্থ বাবা।”
তন্ময় প্রশ্ন ছুড়ল,

“আমি অপদার্থ?”
” আপনাকে এটা ছাড়া কি বলবো? অপদার্থ বাবা সাথে অপদার্থ প্রেমিক ও। নিজের প্রেমিকার চোখের ভাষা পড়তে পারেননি। মন বুঝতে পারেন নি। দিনের পর দিন আপনাকে একজন ভালোবেসে গেল, কষ্ট পেল, স্ট্রাগল করল, একা জীবন পার করে দিলো শুধু আপনাকে ভালবেসে।”
তন্ময় বলল,
“আপনি হয়তো আমাদের ব্যাপারে কিছুই জানেন না।”
মেয়েটি বলল,

“আপনাদের ব্যাপারে কিছু জানার প্রয়োজন নেই। যতটুকু জানি কতটুকুই আপনাকে বলেছি। আপনাকে ভালবেসে ছোঁয়া পরিবার ছাড়া একা থাকত। বাবার বিশাল অট্টলিকা থাকতেও সম্পর্ক ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে একটা কোম্পানির জব নিয়েছিলো। বাচ্চা পেটে নিয়ে টানা নয় মাস একটা কোম্পানিতে চাকরি করে। ফ্যামিলির সাথে কোনো যোগাযোগ করেনা। ওর বাবা জানতেও পারেনি তার একমাত্র মেয়ে কোথায় হারিয়ে গেল। তখন সেই একই কোম্পানিতে আমিও চাকরি করতাম। ছোঁয়ার একাকি জীবনে আমি হলাম ওর বন্ধু। ওর জীবনের দুঃখ কষ্টটা একমাত্র আমি ছাড়া কেউ দেখেনি। কারণ ওর সাথে আমি ছিলাম। আমি শুনেছিলাম ওর জীবনের ভয়ংকর ঘটনা।

হসপিটালে ওর ছেলের ডেলিভারির সময় কেউ ছিলনা একমাত্র আমিই ছিলাম। দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণায় তন্ময় করে করে কাঁদছিলো। ও হ্যাঁ সাথে আরো কয়েকটা নাম বলেছিলো
তন্ময়ের সাথে সারাহ নামটা উচ্চারণ করেছিলো বারবার। আরো আছে দ্বীপ, মৃন্ময়। ও অসুস্থ অবস্থায় সুয়েও মা বাবার নাম উচ্চারণ করেনি। আমি তন্ময়কে বহুবার কল মেসেজ করি। ছোঁয়ার নাম বলতেই ব্লক করে দেয়। সারাহ, দ্বীপ,মৃন্ময় প্রত্যকেই সেইম কাজ করে। উপায় না পেয়ে আমি সেদিন ছোঁয়ার বাবাকে কল করি। ছোঁয়ার বাবা আর মা ছুটে আসেন একমাত্র মেয়ের কাছে। ছোঁয়া বলতে গেলে মৃত্যু সাথে যুদ্ধ করছে তবুও বাবার সাথে কথা বলতে চায়নি। ওর বাবা মেয়ের কাছে অনেক মাফ চেয়ে কথা বলে। এবং প্রতিজ্ঞা করেন কোনদিন তন্ময়কে কিছু বলবে না। তাও ছোঁয়ার অভিমান কমেনা। ছোঁয়ার বাবা বলে তন্ময় আর তার মাঝে যত ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে সবকিছু ঠিক করে দিবেন। ততদিনে অনেক কিছু এলোমেলো হয়ে যায়।

তন্ময়ের মা মারা যায় যার জন্য তন্ময়ের চোখে ছোঁয়া অনেক নিকৃষ্ট হয়ে যায়। এমনকি প্রিয় বন্ধু মহলের চোখে ও বেঈমান হয়ে যায়। ছোঁয়া সবার সাথে যোগাযোগ এর চেষ্টা করে। আমি সবাইকে কল করি সবাই খুব খারাপ খারাপ কথা শোনায়। ছোঁয়া অঝরে কাঁদে। তার জীবনে সুসময় আসার আগেই বসন্ত ফুরিয়ে যায়। সবার আচরণে ততদিনে সব বুঝে গিয়েছে। ওর প্রানের বন্ধুদের মনে কোন জায়গা নেই। কিছুদিন পরেই ছোঁয়ার বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যেতে হয়। সেখানে ওর বাবা মারা যায়। কিছুদিন পরে মা ও মারা যায়। একাকি বিদেশ জীবনে আমাকে নিয়ে যায়। তন্ময় আর তার প্রিয় বন্ধুমহল কে হারিয়ে অভিমানে বিদেশ থেকে আর ফেরে না।
অতঃপর সবাই জানলো ছোঁয়া তন্ময় কে ঠকিয়ে তারপর আরেকটা বিদেশি সিটিজেন ছেলেকে বিয়ে করে বিদেশে চলে গেল। অথচ ছোঁয়া কখনোই কাউকে বিয়ে করেনি।

ছোঁয়ার জীবনটা সম্পূর্ণভাবে এলোমেলো করে দিয়েছে ওর ভিলেন বাবা। সেসময় বিভিন্ন মন্ত্রীদের সাথেও তার হাত ছিল তার থেকে ধনী ব্যক্তি যশোর জেলায় হয়তো কেউ নেই। ছোঁয়ার বাবা ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক করেছিল এক মন্ত্রীর ছেলের সাথে। ছোঁয়া রাজি হয়নি বলে আটকে রেখেছিলো।

ছোঁয়ার বাবা ছোঁয়াকে বলেন তিনি তন্ময়ের মা’কে সবার আগে মে-রে ফেলবেন। যেন তন্ময় ভীষণ কষ্ট পায়। তারপর তন্ময়কে মা’র’বে’ন একে একে রোশান সিদ্দিকী সহ বন্ধু মহলের সবাইকে মে’রে ফেলবেন। এমন কি সারাহ এবং তন্ময়ের মায়ের পিছে লোক লাগানো ছিলো। ক্রমাগত ছোঁয়ার বাবা ছোঁয়াকে ভিডিও পাঠাচ্ছিলেন যে সারাহ আর তন্ময়ের মায়ের বাসায় বো-মা ফা- টা- বেন। ছোঁয়ার বাবার পক্ষে এসব করার কোন ব্যাপার ছিল না। এমন কি বলেছিলেন ওদের মা-রতে আমি না হয় একজনের পিছে এক কোটি টাকা করে খরচ করব। তবুও তোমার জীবন থেকে ঐসব মানুষদের আমি সরিয়ে দেবো। যাদের জন্য আজ তুমি আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছো। তখন ছোঁয়া ওর বাবাকে বলে ও তন্ময় নয় ওশানকে ভালবাসে। সে ওশান কে বিয়ে করবে না তার বাবার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করবে। কিন্তু ছোঁয়া জানত না ওশান রোশান সিদ্দিকীর ভাই।

ও এক ঝামেলা থেকে বাঁচতে আরেক ঝামেলায় জড়িয়েছে। সেই সময়ে ছোঁয়া বাবার সাথে নিঁখুত অভিনয় করে। টানা তিন মাস সে তার কোনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখেনি। ফোনটা বাবার কাছে জমা দিয়ে দেয়। তার বাবা ও দেখত তার বন্ধুরা, তন্ময় যোগাযোগ এর চেষ্টায় তৃষ্ণার্ত তবুও ছোঁয়া যোগাযোগ করেনা। সে একটা স্বাভাবিক জীবন বেছে নিয়েছিলো। ছোঁয়ার বাবা তখন এনগেজমেন্ট ও সেরে ফেলে। মোটামুটি ছোঁয়ার বাবা ছোঁয়াকে তখন সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাস অর্জন করেছিলো যেন ওর বাবা ওর বন্ধুমহল কে আর কোনদিন অবিশ্বাস না করে। ছোঁয়া ওর উদ্দেশ্য সফল হয়। ছোঁয়ার মা-বাবা পাঁচ দিনের সফরে বিদেশ যান। ছোঁয়া তখন সেই সুযোগে তন্ময়ের সাথে দেখা করে কুয়াকাটা এবং বিয়ে করে। ছোঁয়া তন্ময়কে দিয়ে বিয়ের কথা এ জন্য গোপন করিয়েছিলো যেন তন্ময় কাউকে না জানায় আর ওর বাবা ও কারো ক্ষতি না করে।

ছোঁয়ার ইচ্ছা ছিলো ও তন্ময়ের বউ হবে তন্ময়ের বাচ্চার মা হবে। সে উদ্দেশ্য নিয়েই কুয়াকাটা এসছিলো। আল্লাহ তার সে উদ্দেশ্য সফল করেছেন। ওশান কে সে কখনোই পছন্দ করত না। ওশান কে বিশ লাখ টাকা দিয়ে বলেছিলো, আমি একদিনের জন্য তোমার বাড়ি বউ সেজে যাবো বিনিময়ে তোমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেবো। ওশান কে টাকা দিয়েই ওশানের বাড়িতে ছোঁয়া যায়। উদ্দেশ্য ছিলো ওর বাবাকে দেখাবে ও তন্ময় নয় অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করেছে। আর ওশান ও বিদেশ চলে যাবে ওশানের ও ক্ষতি করতে পারবে না। ছোঁয়া ওর উদ্দেশ্য সফল হয়। ওশান ভেবেই হয়ত ছোঁয়ার বাবা রোশান সিদ্দিকী -কে মা’র খাওয়ান। শুধু আপনাদের নিরাপদ রাখতেই ছোঁয়া আপনাদের জানায় যে সে ওশান কে ছেড়ে অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করে বিদেশ চলে যায়। কিন্তু এসব সত্য নয়। ও কাউকে বিয়ে করেনি। ওর জীবনে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে।

ওর জীবনে কেউ নেই আছে শুধু তো একবুক কষ্ট। ওর বন্ধুমহন নেই ওর ভালোবাসার তন্ময় নেই। খুব কাঁদে। কেঁদে কেঁদে বলে তন্ময়, তন্ময় আমার জন্য পা-গ ছিল। তুমি আজ আমাকে দেখতে পারেনা। তোমার চোখে সব চেয়ে ঘৃণিত মানুষ আমি। হয়ত কোনদিন জানবেও না আমি কত অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করেছি তুমি ছাড়া। আজ এত বছর তন্ময়ের স্মৃতি নিয়ে, বন্ধুদের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে ছোঁয়া। সেদিন এয়ারপোর্টে ছোঁয়া আপনাকে দেখেছিলো। আপনি ছোঁয়াকে ফলো করেছেন সেটাও ছোঁয়া দেখেছে। সারারাস্তা হাউমাউ করে কেঁদেছে ছোঁয়া। ওর খুব ইচ্ছা করছিলো আপনাকে ডেকে বলবে আজও তোমার জন্য বেঁচে আছি।
আপনাদের সবাইকে বাঁচাতে গিয়ে ছোঁয়া আজ সবার চোখে খারাপ। ছোঁয়া ইচ্ছাকৃত খুব বেশি খারাপ ব্যবহার করেছিলো আপনাদের সাথে। খারাপ ব্যবহার না করলে তো আপনারা ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতেন এর ফলাফল স্বরূপ ছোঁয়ার বাবা আপনাদের সন্দেহ করত। কিন্তু আফসোস আপনারা কেউ ছোঁয়াকে বোঝার চেষ্টা করেন নি। ”

মেয়েটি যখন এসব বলছিলো তখন রোশান সিদ্দিকী সারাহ’কে কল করে। সারাহ তখন ওর বন্ধুদের সাথে যশোর গদখালী। মেয়েটির ওসব কথা সারাহ আর ওর বন্ধুরা সবাই ফোনের ওপাশ হতে শোনে। সারাহ দাঁড়ানো থেকে ধপাস করে মাটিতে বসে পড়ে। চোখ দু’টো ভরে ওঠে পানিতে। লোকজনের ভেতর হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে৷ মৃন্ময় আর দ্বীপের ও চোখ ভিজে আসে। তরী হাসছে। এই দিনটা সে কত করে চেয়েছিলো। ফাইনালি তার চাওয়া পূর্ণ হতে চলেছে।
তন্ময় ছলছল চোখে তনয়কে কোলে নিয়ে চুমুতে গাল ভরিয়ে দিয়ে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬৮

” তোমার আম্মু কি আমাকে আরেকটা শেষ সুযোগ দিবে পাপ্পা?”
তনয় কিছুই বুঝল না। সে শুধু হাসছে। হাসতে হাসতে তন্ময় এর গালে চুমু বসিয়ে দিলো।
রোশান সিদ্দিকী বললেন,
” আমরা আপনার সাথে ছোঁয়ার বাসায় যেতে চাই।”
তন্ময় বলল,
” আজ আমাদের ম্যারেজ ডে স্যার। আমরা সবাই মিলে যেতে চাই।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৭০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here