এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২
তানিশা সুলতানা
একেবারে গোছল শেষ করে তোয়ালে দ্বারা চুল মুছতে মুছতে বের হয় অর্ণব। তন্নিকে খাটে মাথা ঠেকিয়ে বসে ছিলো। অর্ণবকে বের হতে দেখে সোজা হয়ে বসে। মাথার ওড়না ঠিক করে। অর্ণব অবশ্য তাকায়ও না তন্নির দিকে। সে তার মতো মতো ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আয়নার মধ্য দিয়ে এবার তাকায় তন্নির দিকে।
“কান ধরে দশ বার উঠবস করো।
অর্ণবের গম্ভীর গলার কথা শুনে আরেক দরফা চমকায় তন্নি। শুকনো ঢোক গিলে রিনরিনিয়ে বলে
” উঠবস করলে যেতে দিবেন?
অর্ণব জবাব দেয় না। তন্নি বুঝতে পারে তাকে যেতে দেওয়া হবে। তাই সে খুশি মনে দাঁড়িয়ে যায় এবং উঠবস করতে থাকে।
অর্ণব চাবির গোছা হাতে নিয়ে খুলে দেয় দরজা। তন্নি এক গাল হেসে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। দরজার বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। পেছন ফিরে তাকায় অর্ণবের দিকে। মুখ বাঁকিয়ে বলে
“দেখতো তো মাশাআল্লাহ জায়েদ খান। ব্যবহার আস্তাগফুরআল্লাহ সাকিব খানের মতো কেন ভাই?
অর্ণব তাকাতেই তন্নি ভৌ দৌড় দেয়। অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকে তন্নির চলে যাওয়ার দিকে।
বিরবির করে বলে
” হাতের কাছে পাই শুধু তারপর দেখাবো সাকিব খান আর জায়েদ খান কাকে বলে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ছেলে বাড়িতে ফিরলে আশা বেগমের কাজ দ্বিগুণ বেরে যায়। খাবে না জেনেও নানান পদের খাবার রান্না করে সে। বাড়িতে পার্মানেট কাজের লোক রাখা হয় নি। ওই একজন রাখা হয়েছে যে ঘর মুছে এবং কাপড় চোপড়া ধুয়ে চলে যায়। তাই রান্নার কাজ একা হাতেই করতে হয়। দুটো মেয়ে তার। একজনও রান্না করতে জানে না।
তন্নি অথৈয়ের রুমে ঢুকে পড়ে। অথৈ গেমস খেলছে। এই এক নেশা তার। ফাঁকা সময় পেলেই গেমস খেলতে শুরু করে।
“অথৈ কেনো ডেকেছিলি জলদি বল। বাসায় যেতে হবে আমার।
অথৈ ফোনটা রাখে। তাকায় তন্নির মুখের দিকে।
” বস পাশে। ম্যাথ বুঝতে পারছি না।
তন্নি অথৈয়ের পড়ার টেবিল হতে ম্যাথ বই এবং খাতা নিয়ে খাটের ওপর বসে। এবং বোঝাতে থাকে। মাথার ঘোমটা খুলে ফেলেছে তন্নি। হাঁটু ওবদি লম্বা চুল গুলো মুক্তো করে দিয়েছে। খাটের অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে তন্নির চুল।
পড়া বোঝানো শেষ হতেই অর্ণব ঢুকে পড়ে অথৈয়ের রুমে।
“অথৈ বো
বাকিটা বলতে পারে না। নজর আটকে যায় ঘন কালো চুলে। কপালে ভাজ পড়ে। এই চুল কার?
অর্ণবের কন্ঠ শুনতেই তন্নি নরেচরে বসে। ওড়না মাথায় তোলে।
অর্ণব নজর ফিরিয়ে নেয়। কপাল চুলকে এগিয়ে আসে। অথৈয়ের পাশে বসে। অথৈ বড়ই ব্যস্ত ম্যাথ করতে।
তন্নি মাথা নুয়িয়ে ফেলেছে।
শুকনো কাশি দেয় অর্ণব। অথৈয়ের চুল গুলো মুঠো করে ধরে। অথৈ বিরক্ত হয়।
” দাভাই বিরক্ত করিস না তো।
অর্ণব ভদ্র ছেলের মতে চুল ছেড়ে দেয় এবং বলে
“বড় চুল ওয়ালা মেয়েদের জঘন্য দেখতে লাগে কেন? মনে হয় কচুরি পানার জঙ্গল।
তন্নির কথাটা খারাপ লাগে। আসলেই কি তাকে বাজে দেখায়?
অথৈ চোখ পাকিয়ে তাকায় অর্ণবের দিকে।
” বাকিদের কথা জানি না৷ তবে আমার তন্নিকে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগে।
“তোর তন্নিকে জাস্ট শেওড়া গাছের পেতনীর মতো লাগে।
তন্নি গাল ফুলিয়ে ফেলে। অথৈ আশেপাশে কিছু খোঁজে অর্ণবকে মারতে। অর্ণব ততখনে দরজা ওবদি চলে গেছে। অথৈ রাতে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে।
তন্নি বলে
” ছাড় তো।
তোর ভাইয়ের পেছনে ইয়া বড় একটা লেজ আছে।
পেছন থেকে অর্ণব বলে ওঠে
“হ্যাঁ ওই লেজ দিয়ে তোমাকে টেনে টেনে কাছে নিয়ে আসি। আর আর চুম
বাকিটা শেষ করার আগে অথৈ পেছনে ফেরে। অর্ণব দাঁত কেলিয়ে চলে যায়। বোনকে জ্বালাতে তার দারুণ লাগে।
তন্নি মুখ বাঁকায়
“তোর ভাই বাড়িতে আসলে একদম আসবো না আমি।
বাঁদর একটা।
না খাইয়ে তন্নিকে একদম ছাড়বেন না আশা বেগম। তন্নি পড়েছে বেপাকে। খেতে বসে গেছে অথৈ আর্থি এবং অর্ণব। পরিবেশন করছে আশা বেগম। খেতে বসলে এখন অর্ণবের মুখোমুখি বসতে হবে। লোকটার সামনে খেতে বসা একদম অসম্ভব। কিন্তু আশা বেগমকেও না করতে পারছে না
অথৈ এবং আর্থিও সমানে বলে যাচ্ছে। এদিকে রাতও হয়ে যাচ্ছে।
অতঃপর তন্নি বসে পড়ে অথৈয়ের পাশে। অর্ণব এক মনে খেয়ে যাচ্ছেন। আশা বেগম তাকে মাছ বেছে দিচ্ছে এবং তন্নিকে খাবার বেরে দিচ্ছেন।
তন্নি ভাত মেখে সবেই মুখে পুরতে যাবে তখনই আশা বেগম বলে ওঠে।
” আব্বা তন্নিকে পৌঁছে দিয়ে আসবি।
বেষম খায় তন্নি। এই লোকের সাথে একা গাড়িতে যাবে সে? না জানি কখন গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।
“ওকে মাম্মাম।
তোমার কথা কি আমি ফেলতে পারি?
আশা বেগম হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
তন্নি শুকনল ঢোক গিলে বলে
“আন্টি আমি একাই যেতে পারবো।
” ও মা তাই?
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১
তুমি একা যেতে পারবে? আমরা তো জানতামই না। হাত তালি দিবো? (হাসি মুখে বলে)
ইডিয়েট
মুখে মুখে তর্ক করলে এক থাপ্পড়ে বৃন্দাবন পাঠিয়ে দিবো।
কি বলিস অথৈ?
অপমানিত হয় তন্নি। মাথা নিচু করে ফেলে। মনে মনে রাগও হয়।
অথৈ বলে
“তন্নি দাভাইয়ের সাথেই যা।
আমার ভাই আধপাগল হতে পারে কিন্তু ফুল পাগল না।