এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৩

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৩
তানিশা সুলতানা

আঁখি ভর্তি টইটুম্বুর জল নিয়ে মাথা নুয়িয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে তন্নি৷ দৃষ্টি তার জমিনে। অসয্য যন্ত্রণায় বুক পুরে যাচ্ছে। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে যেনো। সদ্য প্রেমে পড়া কিশোরীর মনে তীব্র আঘাত হেনেছে। এই আঘাতের দায় ভার কার?
অবশ্যই তন্নির নিজের। অর্ণব তো আর তাকে বলে নি প্রেমে পড়তে। বা ওর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে নি। ভালোবাসিও বলে নি। তাহলে তন্নির প্রেমে পড়াটা বোকামি নয় কি?
নিজের বোকামির জন্য নিজের কষ্ট হচ্ছে। এই দায়ভার কাউকে দেওয়া মানায় না।
অর্ণব বিলাতি নজর মেলে দেখছে তন্নিকে। দৃষ্টি সরছে না তার। প্রেয়সীর নয়নের অশ্রুকণা ঠিক উপলব্ধি করতে পেরেছে। কিন্তু কারণ ধরতে পারছে না।

অর্ণবের পাশে বসে থাকা নিধি একটু পরপরই গা ঘেসে বসছে অর্ণবের। হাসতে হাসতে গায়ের ওপরে এসে পড়ছে। সাধারণত নিধির স্বভাবই এমন। তবুও অর্ণব যথেষ্ট চেষ্টা করছে সরে বসার। কিন্তু অর্ণব যতই সরছে নিধি ততই এগোচ্ছে।
বিরক্তিতে কপালে ভাজ পড়ে অর্ণবে৷ তন্নির থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিধির দিকে তাকায়। চাপা রাগী সুরে ধমকে বলে
“সরে বসো নিধি
নিধি চমকায়। হাসি মুখখানা কালো হয়ে যায়। খানিকটা সরে বসে। আর্থি এবং অথৈ নিধির সামনে ফ্লোরে বসে ছিলো। ওরা মূলত লুডু খেলছে। সকলের দৃষ্টি পড়ে নিধির দিকে। তন্নিও স্পষ্ট শুনেছে অর্ণবের বলা কথাটা। চমকেছেও বেশ। আবার মনে মনে খুশিও হয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“অথৈ তোর তন্নিকে কি দাঁড়িয়ে থাকার জন্য ডেকেছিস?
অথৈ কপাল চাপকায়। তন্নির কথা সে বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলো। লুডু খেলায় এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে প্রাণ প্রিয় সখী এখানে উপস্থিত সেটা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।
দাঁড়িয়ে পড়ে অথৈ।
তন্নির নিকটে যায়৷ তন্নি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়। অতঃপর নাক টেনে বলে
“ আমি চলে যাবো এখন।
দুই হাতে আগলে জড়িয়ে ধরে তন্নিকে অথৈ। অকপটে মাথায় কয়েকটা চুমুও খেয়ে নেয়।
“সরি জান

তোকে আজকে যেতেই দিবো না৷ বিকেলে যাবি।
জবাব দেয় না তন্নি। অথৈ তন্নির হাত টেনে তাকে বসায় অর্ণবের পাশে৷ তন্নির কাঁধ থেকে ব্যাগ নিয়ে সেটা রেখে আসে লুকিয়ে। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না তন্নি। কেনোনা বলার আগেই দৃষ্টি পড়ে যায় অর্ণবের ওপর। লোকটা ছোট ছোট চোখ করে কেমন তাকিয়ে আছে তন্নির দিকে৷ আর্থি লুডুর গুটি সাজাতে সাজাতে বলে
“তন্নি তোমার কি আমাদের বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না?
কাচুমাচু হয়ে বসে তন্নি। মাথা নুয়িয়ে জবাব দেয়
“ লাগে

কিন্তু বাবা বলে দিয়েছে না আসতে। লুকিয়ে এসেছি আমি।
অর্ণব সকলের দৃষ্টির আড়ালে নিজের হাত খানা ঘুরিয়ে তন্নির পেছন দিয়ে সোফার হাতলে রাখে৷ ভাবখানা এমন যেনো জড়িয়ে ধরেছে। অথচ তন্নির গায়ে ছোঁয়া লাগে নি। নিধি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে নেয়। এই মেয়েকে তার একদমই পছন্দ না।
অথৈ ব্যাগ রেখে আবারও নিজের জায়গায় এসে বসে পড়ে।
“হাতে কেচ নাই বোধহয় তোমার বাপের। তাই তোমার পেছনে লাগছে।
অর্ণব অকপটে বলে দেয়।
তন্নি ঘোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলে
“মোটেও বাবা আমার পেছনে লাগছে না। সে ঠিক কারণেই আসতে বারণ করে৷ নেহাৎ অথৈকে ভালোবাসি। নাহলে কখনোই আসতাম না।

তন্নির কথাখানা অর্ণবের পছন্দ হয় না। দাঁতে দাঁত চেপে কটমট দৃষ্টিতে তাকায় মায়াবতীর মুখপানে। হাতল থেকে অতি যত্নে হাত খানা নামিয়ে তন্নির কোমরে রাখে। শিওরে ওঠে তন্নি। নয়ন যুগল বড়বড় করে তাকায় অর্ণবের পানে। চোখে চোখ পড়তেই অর্ণব চোখ রাঙায়। যেনো খেয়ে ফেলবে তাকে। শুকনো ঢোক গিলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় তন্নি। অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করতে থাকে। নিঃশ্বাস ভাড়ি হয়ে আসে।
অথৈ অর্ণবের দিকে লাল গুটি এগিয়ে দিয়ে আবদারের সুরে বলে
“দাভাই তুই ও খেলবি। তন্নি তুই আমাদের জাজ। দেখবি কে টিচিং করে।

অর্ণব মাথা দুলিয়ে সম্মতি পেষণ করে। খেলা শুরু হয়। অর্ণব বেশ এনজয় করে খেলছে। অথচ অস্বস্তিতে ভুগছে তন্নি। কয়েকবার চেষ্টা চালায় অর্ণবের হাত খানা সরানোর। কিন্তু পারে না। পাষাণ পুরুষ আরও শক্ত করে ধরে। যত সরাতে চেষ্টা করে ছোঁয়া তত গাঁড়ো হতে থাকে।
খেলার এক পর্যায়ে অর্ণব বিজয়ী হয়ে যায়। তার চারটা গুটিই কোটে চলে যায়।
এবার তিনজনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলতে থাকে। অর্ণব তন্নির দিকে কারোরই নজর নেই।
এই ফাঁকে তন্নি নিচু গলায় বলে

“হাত সরান প্লিজ।
অর্ণব তন্নির দিকে খানিকটা ঝুঁকে সুধায়
“অন্য রকম ফিলিংস হচ্ছে?
তন্নির থুতনিটা বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে। লজ্জায় হাত পা কাঁপছে। বিষয়টা অর্ণব খেয়াল করে
“জান কাঁপো না প্লিজ
চুমু টুমু খেয়ে বসবো।
কান দুটো গরম হয়ে ওঠে তন্নির। হাঁসফাঁস বেরে যায়। আসমান অথবা জমিনে চলে যেতে ইচ্ছে করে। এখানে থাকা দায়।

তখন অথৈও বিজয়ী হয়। সে লাফিয়ে ওঠে। অথৈয়ের লাফানো দেখে অর্ণব অতি সাবধানে তন্নির কোমর হতে হাত সরিয়ে আনে৷ তন্নি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে যেনো।
আশা বেগম এর রান্না করা শেষ। তিনি ডাকতে এসেছে সকলকে৷ তন্নিকে দেখে তার মুখের হাসি আরও চওড়া হয়ে ওঠে
“আম্মাজান তুমি এসেছো?
তন্নি আশা বেগমকে জড়িয়ে ধরে আদর খেয়ে নেয়। ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে তার সাথেই কিচেনে চলে যায়।
অর্ণব মাথা চুলকে বিরবির করে বলে
“ আমাকে কবে জড়িয়ে ধরবে?
নিধির বিষয়টা ভালো লাগে না। তন্নিকে কেনো আশা বেগম এতো ভালোবাসবে? এই ভালোবাসা তো নিধির পাওনা। কেনোনা সে এই পরিবারের বউ হবে?

তন্নি সবেই ভাত মেখে মুখে পুরবে ঠিক সেই মুহুর্তেই কল করেন তারেক রহমান। ফোনটা খাবার টেবিলের ওপরেই রাখা ছিলো। বাবার নামটা জ্বল জ্বল করে উঠতেই তন্নি কেঁপে ওঠে। হাতের ভাত প্লেটে নামিয়ে রাখে। তন্নিকে বিচলিত হতে দেখে আশা বেগম মোবাইল তুলে নেয়। আলতো হেসে তন্নিকে বলে
“ভয় পেয়ো না। আমি কথা বলছি।
অতঃপর তিনি ফোন নিয়ে অন্য দিকে চলে যায়। তন্নির পাশেই বসে ছিলো অর্ণব। রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে।
“তোর বাবাকে আমি দেখে নিবো
চাপা স্বরে বলে।
তন্নির আঁখিতে অশ্রু জমে। সে নরম গলায় বলে
“ আপনি কেনো মারামারি করেন? সিগারেট কেনো খান? তাই তো বাবা আপনাকে দেখতে পারেন না।
“তোকে চুমু খেতে দিবি?

পাঁচ মিনিট করে চুমু খেতে দিলেই আমি আর সিগারেট খাবো না। তোর উকিল বাপকে বলিস।
তন্নির দুই গাল বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। অর্ণবের কথা তার পছন্দ হয় নি। লোকটা কি কিছু ভাবে না? তার কি বাবার সাথে সখ্যত গড়ে তুলতে মন চায় না?
হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয় তন্নি।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১২

তখনই আশা বেগম আসে
“তন্নি ভয় নেই। ভাইজানকে আমি বুঝিয়ে বলেছি। উনি রাগ করবেন না। রাতে ফেরার পথে তোমায় নিয়ে যাবে।
মনটা ভালো হয়ে যায় তন্নির। চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৪