এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৭

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৭
তানিশা সুলতানা

সুমি বেগমের ধৈর্য্য বরাবরই কম। তার তর সইছে না। এখুনি তন্নির সাথে কথা বলতে হবে। আশা বেগমকে একা মেহমানদের আপ্যায়ন করতে দিয়ে তিনি চলে এসেছে তন্নির খোঁজে। মেয়েটার চুল এবং উচ্চতা মেপে দেখবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আদিলকেও এখুনিই দেখাবে মেয়ে। তিনি ঢেড় জানে তার ছেলের কোনো প্রেমিকা নেই। ঠিকই তন্নিকে পছন্দ করবে। তারপর মেয়ের বাবাকে সাতপাঁচ বুঝিয়ে তুলে নিয়ে যাবে মেয়েকে৷ তার সংসার পরিপূর্ণ হবে এবার।

তন্নি ঢেড় বুঝেছে সাজুগুজু করার জন্যই অর্ণব এমন রাগী রাগী গলায় কথা বলছে। ওড়নার কোণা টেনে ঠোঁটে থাকা লিপস্টিক মুছতে থাকে তন্নি। যার ফলে মাথার ঘোমটা খুলে যায়। সরু চোখে অর্ণব তন্নির কর্মকাণ্ড দেখছে শুধু।
তখনই সেখানে উপস্থিত হয় সুমি বেগম। বড় একখানা খোঁপা দেখে বলে ওঠে
“মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ অনেক ঘন চুল। মা তোমার চুল একটু খুলে দেখি?
বলতে বলতেই চুলের কাটা খুলে নেয়। পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক গুচ্ছ ঘন কালো কেশ।
সুমি বেগম বেজায় খুশি। এমনটাই আশা করেছিলেন তিনি।
তন্নি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলবে সে? বা বলা উচিত? বেশ বুঝতে পারছে সামনে থাকা লোকটা রেগে বম হয়ে আছে? কিন্তু কেনো? মহিলাটি তো ওনারই খালা লাগে। তাহলে একটু প্রশংসা করাতে এতোটা রাগ কেনো করছে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তন্নির ছোট মাথায় ঢুকে না বিষয়টা। তামিম চলে গিয়েছে আগেই। তার এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে একদমই ভালো লাগে না।
“মা তুমি চলো আমার সাথে। কথা আছে আমার।
তন্নির হাত ধরে এক পা এগোয় সুমি বেগম। তখনই অর্ণব গম্ভীর গলায় বলে ওঠে
“মামনি তুমি যাও
ওর সাথে আমার ইমপটেন্ট কথা আছে।
সুমি বেগম ভ্রু কুচকে তাকায়।
“তোর আবার ওর সাথে কি কথা?
“ পার্সোনাল কথা মামনি। তুমি যাও

অগত্য সুমি বেগম চলে যায়। যাওয়ার আগে অবশ্য তন্নিকে বলতে ভুলে না “তাড়াতাড়ি এসো”
তিনি যেতেই অর্ণব বুকে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ফর্সা মুখশ্রী বরাবরের থেকে একটু বেশিই গম্ভীর হয়ে আছে। আড়চোখে এক পলক তাকায় তন্নি।
“বড় হয়ে গেছিস?
এই প্রশ্নের জবাব কি দেবে তন্নি? বড় তো সে হয়েছেই। এভাবে প্রশ্ন করার কি আছে?
এই লোকটার সামনে আসলে তন্নির সমস্ত প্রশ্ন এলোমেলো হয়ে যায়। ফটরফটর করে কথা বলে মুখটা যেনো চুপসে যায়। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হওয়াও দায়।
তন্নির নিরবতায় অর্ণবের রাগ বাড়ে। কুচকুচে কালো লম্বা চুল গুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। চমকায় তন্নি। লজ্জাও পায় বটে।

“কেউ তোর চুলে হাত দিচ্ছে, খুলে দিচ্ছে, বিয়ের কথা বলছে। তবুও তোর মুখে কথা ফুটছে না।
বাহহহ
বিয়ের করার জন্য লাফাচ্ছিস মনে মনে? স্টুপিট
অর্ণবের ধমকে কেঁপে ওঠে তন্নি। টলমল করে ওঠে চোখ দুটো। করেছে কি সে? এভাবে ধমকানোর কোনো মানে হয়?
চুলে হালকা টান দিয়ে খানিকটা কাছাকাছি আসে অর্ণব। আঁখি পল্লব বন্ধ করে ফেলে তন্নি। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দুই ফোঁটা অশ্রু কণা।

“তোকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে আমার। হাড্ডিসহ
না থাকলো ফিগার আর না আসলো নাগর
অভিমানে বুক ভাড়ি হয়ে আসে তন্নির। অর্ণবের হাত থেকে নিজের চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। উল্টে হাতের বাঁধন আরও শক্ত হয়ে আসে।
“দাভাই তুই আমার তন্নির চুল কেনো টানছিস?
অথৈয়ের কন্ঠস্বর পেয়ে তন্নির চুল ছেড়ে দেয় অর্ণব। অথৈয়ের পেছনে সাগরও রয়েছে। তার চোখে মুখে রাগের আভাস।
অথৈ তন্নিকে জড়িয়ে নেয়। অর্ণবের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“বল

কেনো আমার তন্নিকে ব্যাথা দিয়েছিস? কাঁদছে ও।
অর্ণব বা হাতে নিজের ঝাঁকড়া চুল গুলো পেছনে ঠেলে জবাব দেয়
“দেখছিলাম চুল গুলো আসল না কি নকল।
সাগর বলে
“ দেখাই যাচ্ছে আসল। ধরে দেখার কিছু ছিলো না।
“তাই না কি?
আমি জানতামই না। এখন জেনে নিলাম

বলেই অর্ণব চলে যায়। যাওয়ার আগে তন্নিকে চোখ রাঙাতে ভোলে নি। অর্ণব যেতেই তন্নি চোখের পানি মুছে নেয়।
“আমি আর কখনো তোদের বাড়িতে আসবো না অথৈ। তোর ভাই আমাকে ধমকে শেষ করে দিয়েছে।
অথৈয়ের মন খারাপ হয়ে যায়।
“ঠিক তন্নি। একদম আসবে না অথৈদের বাড়িতে। এভাবে বান্ধবীর বাড়িতে আসা উচিত নয়।
তন্নি জবাব দেয় না। সাগর আবারও বলে ওঠে
“আইসক্রিম খাবে তন্নি? চলো আমরা আইসক্রিম খেয়ে আসি।
মূলত আইসক্রিম খাওয়ার জন্যই অথৈ আর সাগর এসেছে।

“ না না আমি একদম আইসক্রিম খাবো না। আর কোথাও যাবোও না
খানিকটা জোরে বলে ওঠে তন্নি। তন্নিকে জোরাজোরি করে অথৈ তবুও তন্নি রাজি হয় না।
বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেই পাত্র পক্ষ বিদায় নিয়েছে। তামিমকে অথৈ খায়িয়ে দিয়েছে। তন্নিও খেয়ে নিয়েছে। এবার বাড়ি যাবে ওরা। বাড়িতে দিয়ে আসার দায়িত্ব পড়েছে অর্ণবের ওপর।
সুমি বেগম আদিলকে সোজাসাপ্টা বলেছে তন্নিকে তার পছন্দ হয়েছে। আদিলেরও ভালোই লেগেছে। সুমি বেগম চাচ্ছিলো তন্নির বাবাকে এখানে ডেকে কথাবার্তা কিছুটা এগিয়ে রাখতে। কিন্তু সেটা সম্ভব হলো না আশা বেগমের জন্য।

আশা বেগম কয়েকদিন সময় নিতে বলেছেন। তারাহুরোর কাজ ভালো হয় না৷
অর্ণবের সাথে তন্নি এবং তামিম রাস্তায় বের হতেই দেখা মেলে তারেক আহমেদের। তার কোর্ট আজকে আগে আগে শেষ হয়েছে তাই তিনি ছেলেমেয়েকপ নিতে এসেছে।
বেজায় বিরক্ত অর্ণব। আজকে এতো বাঁধা আসছে কেনো?
একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে।
বাবাকে দেখে তন্নি অর্ণবকে ফিসফিস কর বলে
“আমি আর কখনো আপনার বাড়িতে আসবো না। বলে গেলাম। বজ্জাত লোক।
অর্ণবও তন্নির মতো করে ফিসফিস করে বলে
“দশ দিনের মধ্যে তোমাকে ঠোঁটে গভীর ভাবে চুমু খাবো। বলে দিলাম। ইডিয়েট
বিরবির করে অর্ণবকে কয়েকটা বকা দেয় তন্নি। অতঃপর বড়বড় পা ফেলে বাবার কাছে যায়। বাবার পাশে অটোতে বসে। তামিম কোলে বলে।

অর্ণব দাঁত কেলিয়ে তারেককে সালাম দিয়ে বলে
“ভালো আছেন তো? পেশারের ঔষধ সারাক্ষণ সাথে সাথে রাখবেন। বেশি হাইপার হবেন না বুঝলেন?
কোনো দরকার হলে আমাকে ডাকবেন।
তারেক অর্ণবের দিকে তাকায়ও না। দাঁতে দাঁত চেপে বলে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৬

“তোমাকে ঠাটিয়ে থাপ্পড় মারতে পারলে আমি শান্তি পেতাম। বেয়াদব ছেলে।
“আর আমি আপনার মেয়েকে ইচ্ছে মতো চুমু খেতে পারলে শান্তি পাবো।
অর্ণব বিরবির করে বলে। অটো চলতে শুরু করে। তন্নি আড়চোখে এক পলক দেখে অর্ণবকে।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৮