এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৩
তানিশা সুলতানা
তন্নিকে দেখতে যাওয়া এবং শুক্রবারে আংটি পড়ানোর ঘটনা পৌঁছে যায় অর্ণবের কানে। অর্ণবকে জানিয়েছে তামিম। বাড়ির সকল তথ্যই মূলত সে পাচার করে অর্ণবের কানে। তার জন্য অবশ্য মোটা অঙ্কের ঘুস পায় অর্ণবের থেকে৷ একখানা ফুলবলও হাতিয়ে নিয়েছে ইতোমধ্যে। চকলেট, আইসক্রিম, চিপস এসব তো আছেই। রোজ বিকেলে বড় ফুটবল মাঠটার পাশে তামিমের সাথে দেখা হয় অর্ণবের। দুজন খেলা দেখতে দেখতে গল্পগুজব করে। তামিম আবার বেশ চতুর। অর্ণব তন্নির নতুন ফোনের নাম্বার চাইতেই সে অর্ণবের কাছে নতুন আবদার জাহির করেছে। আবদারটা হলো শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া একটা মেয়েকে তার ভালো লেগেছে। বেশ কয়েকবার মেয়েটির সাথে ভাব জমাতে গিয়েছে। কিন্তু বলদা মেয়ে ভাব তো জমায়ই নি উল্টে তামিমকে কামড়ে দিয়েছে। এবার তামিম অর্ণবকে দায়িত্ব দিয়েছে সেই মেয়েকে পটিয়ে দিতে। অর্ণবও আশ্বাস দিয়েছে কিছু দিনের মধ্যেই পটিয়ে দিবে।
তামিম হাতের তালুতে নাম্বার আগেই লিখে রেখেছিলো। সে জানতো অর্ণব চাইবে নাম্বার। আর সে এটাও জানে অর্ণব তন্নিকে পছন্দ করে। বোনকে বসের সাথে বিয়ে দেওয়া কোনো আপত্তি নেই তামিমের। বরং বেশ ভালোই হবে। হাতে কলমে প্রেম শিখতে পারবে।
হাজার খানিক প্রেম করার পরে যখন খবরের কাগজে তামিমের ছবি বের হবে। তখন তামিম জনসম্মুখে দাঁড়িয়ে বলবে “আমাকে প্রেমে উৎসাহ দিয়েছে এবং শিখিয়েছে আমার গুরু অর্ণব চৌধুরী। নিশ্চয় অর্ণব বেশ খুশি হবে। আর গুরুকে খুশি করতে পারলেই তামিম ধন্য।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এমনিতেই মাথা গরম অর্ণবের। গাঁধাটাকে দেখার জন্য ছুটে স্কুলে গেলো কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারলো গাঁধা ঘাস খেতে ব্যস্ত। স্কুলে আসতে পারে নি। বিকেলে বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করলো কিন্তু গাঁধাটার দেখা মিললো না। অতঃপর তামিমকে দেখতে পেলো হাঁটু ওবদি প্যান্ট গড়িয়ে পড়েছে সে দৌড়াচ্ছে। তখনই তামিমের থেকে আসল খবর জানলো।
এই মুহুর্তে তন্নির দেখা পেলে অর্ণব আগে ফটাফট কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতো গালে। সাহস কতো অর্ণবের স্বপ্নে বাসর করে অন্য জনকে বিয়ে করবে? বিয়ের শখ একদম মিটিয়ে দিবে অর্ণব। এমন হাল করবে না? বাপ বাপ বলে পালাবে।
নিজ কক্ষে প্রবেশ করতেই রাগ তরতর করে বেড়ে যায় অর্ণবের। কেনোনা তারই বেডে বসে আছে আদিল।
অর্ণবকে দেখে আদিল হেসে বলে
“ব্রো এসেছো।
তোমার সাথে কথা ছিলো।
অর্ণব জবাব দেয় না। চুপচাপ গিয়ে আদিলের সামনে বসে পড়ে। দৃষ্টি তার ফ্লোরে।
আদিল একটু এগিয়ে বসে বলে
“তন্নিকে তো চিনো? মেয়ে কেমন?
“ভালো না। দেখতে ভোলাভালা ভেতরে কোলাকোলা।
“কিন্তু সবাই তো বললো খুব ভালো। ওর মতো মেয়ে হয় না।
“কেনো হয় না? ওর কি হাত তিনটে? না কি ঠোঁট চারটে?
থমথমে খেয়ে যায় আদিল। বুঝতে পারে বেশ রেগে আছে। তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বলে
“আচ্ছা বাদ দাও। কাল মা ওকে নিয়ে ঘুরতে যেতে বলেছে। তুমি যাবে? না মানে বোঝোই তো ফাস্ট টাইম।
অর্ণব চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে
“ কাল পারবো না। কাল আমি বাসর দিন।
“বাসর দিন মানে কি?
“ মানে হচ্ছে কাল একটা মেয়েকে নিয়ে দিনেই বাসর করবো। তাই বাসর দিন।
এখন যা এখান থেকে।
“হ্যাঁ যাবো
কিন্তু বিয়ে ছাড়া বাসর। এটা কেমনে ভাই?
“মনের বিয়েই বড় বিয়ে। আমি মনে মনে আর পাঁচ বছর আগে তাকে বিয়ে করে নিয়েছি। এবং মনে মনে আমি এখন তিন বাচ্চার বাপ।
সর তুই এখান থেকে। আমার মাথা গরম আছে।
আদিল আর কিছু বলে না। চুপচাপ চলে যায়। তবে মনে মনে বেশ চিন্তিত সে।
অর্ণব নিজের চুল নিজে টানতে থাকে
“স্টুপিট একটা
কাল ঘুরতে যাবে? উল্টো করে গাছে বেঁধে চুমু খাবো কাল তোর হবু বউকে। মিলিয়ে নিস আমার কথা হাঁদারাম।
তন্নি বেজায় খুশি নতুন ফোন পেয়ে। ওয়াইফাই লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। ইসস এখন ইচ্ছে মতো ফোন দেখতে পারবে। ফোন দেখবে বলে সন্ধ্যায় পড়তে বসেছিলো এক টানা দশটা ওবদি পড়েছে। একবারও ব্রেক নেয় নি। মায়ের ডাকাডাকিতে দশটায় ডিনার করে এসেছে।
এখন বিছানা ঠিক করে কানে হেডফোন ঢুকিয়ে সবেই ওয়াইফাই কানেক্টেড করেছে। তখনই ফোন বেজে ওঠে। চমকায় তন্নি। নতুন ফোন নতুন সিম নতুন হোয়াটসঅ্যাপ। তাহলে কি করে কল আসলো?
স্কিনে অর্ণবের নাম্বার। লোকটা নাম্বার কই পেলো?
জিব দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে তন্নি কল রিসিভ করে কানে তুলে। ওপাশ থেকে ভেসে আসে পুরুষালি নেশাক্ত কন্ঠস্বর।
“Jan Will You Marry Me?
আরেক দরফা চমকায় তন্নি। সাথে অবাকও হয়। লোকটা তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে? কিন্তু কেনো? সে কি তন্নিকে ভালোবাসে? না কি নেশা করেছে?
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে থেমে থেমে বলে
“ভা……ভালোবাসেন আমায়?
সাথে সাথে অর্ণব ধমকে বলে ওঠে
“ভালোবাসা বানান করতো তো ইডিয়েট। ভালোবাসা শিখেছে। সামনে থাকলে চাপকে গাল লাল করে দিতাম তোর।
অভিমানে আঁখি জিভে ওঠে তন্নির। মনে মনে পণ করে কথাই বলবে না লোকটার সাথে। খট করে কল কেটে দেয়। বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে কাঁদতে থাকে৷ কি এমন ভুল কথা বলেছে তন্নি? ধমকের জন্য সারাক্ষণ কারণ খুঁজতে থাকে। জল্লাদ লোক একটা।
অর্ণব একটার পর একটা কল দিয়ে যাচ্ছে। ফোন সাইলেন্ট বলে তন্নি বুঝতেও পারছে না।
তন্নি কতোখন কেঁদেছে জানা নেই। কিন্তু যখন কান্নার কমে আসে তখন চোখ মুছে ফোন খানা হাতে তুলে নেয়। ১২ বার কল এসেছে। তন্নি ভেংচি কেটে ফেসবুকে ঢুকে পড়ে। আর পাত্তা দিবে না লোকটাকে। বেয়াদব লোক।
বেশ কিছু খন পরে তন্নি অনুভব করে কেউ তার রুমের জানালার গ্লাস খুলছে। ভয়ে সিঁটিয়ে যায় তন্নি। ডাকাত আসলো না কি? কাচুমাচু হয়ে পেছন ঘুরে তাকায়। সাথে সাথে আঁখিপল্লব বড় বড় হয়ে যায় তন্নির। কেনোনা অর্ণব স্বয়ং দাঁড়িয়ে আছে। তারমানে জানালা দিয়ে ধুকেছে সে। হাতের ফোন ঠাস করে বিছানার ওপর পরে যায়। নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায়। তারাহুরো করে ওড়না খুঁজতে থাকে। এবং পেয়েও যায় বালিশের নিচে। ওড়না গায়ে জড়িয়ে তন্নি বিছানা থেমে নেমে অর্ণবের দিকে এগিয়ে যায়। ফিসফিস করে বলে
“আ…..আপনি এখানে?
অর্ণব জবাব দেয় না। তন্নিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দরজার কাছে যায়। খট করে দরজার সিটকেনি লাগিয়ে বিছানায় এসে বসে। তন্নি গোলগোল দৃষ্টিতে অর্ণবকে দেখছে। লোকটা ঠিক কি করতে চাচ্ছে? বাবা দেখে ফেললে রক্ষা থাকবে না। তন্নিকে তো মেরেই ফেলবে আর এই লোকটাকেও আধমরা করে ফেলবে।
ভয়ল শুকনো ঢোক গিলে তন্নি। আবারও অর্ণবের দিকে এগোতে নিলে অর্ণব বলে ওঠে
“দশ হাত দূরে থাকো।
তোমাকে দেখলে চুমু খেতে ইচ্ছে করে। থুক্কু শুধু চুমু না আরও অনেকক কিছু।
অর্ণব তন্নির ফোন খানা ইতিমধ্যেই হাতে তুলে নিয়েছে। তন্নির ফ্লট মুভি দেখছিলো। মুভিতে এই মুহুর্তে চুম্বনের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে।
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২২
অর্ণব বাঁকা হাসে।
তন্নির দিকে তাকিয়ে বলে
“বিয়ের কথা বলেছি কি না বলেছি তাতেই চুমু খাওয়ার প্যাক্টিজ করছো?
বাহহহ
তখনই তারেকের গলার স্বর শুনতে পায় তন্নি। দরজা ধাক্কাচ্ছে আর ডাকছে
“আম্মু দরজা আটকিয়েছো কেনো? দরজা খুলো।