এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৪

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৪
তানিশা সুলতানা

অর্ণব এগিয়ে যায় দরজা খুলতে। ভয়ে তন্নির আত্না শুকিয়ে যায়। সে দৌড়ে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভয়ার্তক গলায় অর্ণবকে বলে
“প্লিজজজ
অর্ণব বাঁকা হেসে এক হাত তন্নির মাথার ওপর দিয়ে দরজায় রাখে। আরেক হাত পেটের কাছ দিয়ে দেয়ালে রেখে একটু ঝুঁকে তন্নির মুখোমুখি হয় এবং বলে
” আমি যা বলবো মেনে নিতে হবে।
তন্নি চোখ বন্ধ করে ফেলে। অর্ণবের নিঃশ্বাস বাড়ি খাচ্ছে তার মুখমন্ডলে। অস্বস্তি হচ্ছে। থেমে থেমে তন্নি বলে
“ক….কি মানবো?
” যা বলবো।
ইয়েস ওর নো
বেশি তোতলানো কথা শুনলে চুমু খেতে মন চায়।
তখন আবারও তারেক ডেকে ওঠে
“তন্নি

কানে হেডফোন লাগিয়েছো?
দরজা খুলো তোমার ফোন আমি নিয়ে নিবো।
বাবার কর্কশ গলায় শব্দে তন্নি ফট করে বলে
” ঠ..ঠিক আছে। সব মানবো। এখন লুকিয়ে পড়ুন।
তন্নির মুখে ফু দিয়ে অর্ণব সরে আসে। জানালার পাশে লাগানো পর্দার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তন্নি মনে মনে বাহবা দেয় অর্ণবকে “বাহহহ বেডার বুদ্ধি আছে”
জোরে জোরে দুটো শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দেয় তন্নি। তারেক রাগী দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। তারেকের পেছনেই রয়েছে বিচ্ছু তামিম। সে গন্ধ শুকে শুকে বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
তারেক প্রথমে তামিমকে ধমক দেয়
” চুপচাপ যাও এখান থেকে। ঘুমাও গিয়ে।
তামিম মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে গিয়েও থেমে যায়। তারেক এবার তন্নিকে বলে
“এতো দেরি কেনো হলো?
” বাবা ঘুমচ্ছিলাম।
“তোমাকে না বলেছি দরজা খোলা রেখে ঘুমবে? আকাশ মেঘলা। ঝড় বৃষ্টি হবে। বিদ্যুৎ চমকালে তো আবার ভয় পাবে।
তামিম জিভ দেখিয়ে বলে

” ভীতুর ডিম একটা। বাবা বলো আমি তোমার বীর পুরুষ না?
“হ্যাঁ তুমিই তো আমার বীর পুরুষ। ওয়াশরুমে গেলেও তিন জন সাথে যেতে হয়।
তামিমের মুখ খানা চুপসে যায়। তন্নি মিটমিট করে হাসে।
” বাবা কথাটা এখানে বলেছো এখানেই যেনো থাকে। পাশের বাড়িতেই আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে। কোনোমতে ও যেনো জানতে না পারে আমি একা হিসু করতে ভয় পাই।
নাহলে ব্রেকআপ করে দিবে।
তারেক তামিমের কান টেনে ধরে
“বাঁদর ছেলে। তোর গার্লফ্রেন্ড আজকে বের করবো আমি।
তামিম বাবার হাত থেকে কান ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে
“তুমি পারবে না বাবা। কারণ ও আমার হৃদয়ের নিচে ফুসফুসের পেছনে নাড়িভুড়ির আড়ালে চুপটি করে লুকিয়ে আছে। তাকে তুমি খুঁজেই পাবে না।
তারেক তামিমের কান আরও একটু শক্ত করে চেপে ধরে চেঙ্গদোলা করে তাকে নিয়ে যায়। তন্নি কিটকিটিয়ে হেসে ওঠে।

” এতো হেসো না সোনা
চুমু খেতে ইচ্ছে করে।
তন্নি চমকে চট করে পেছনে তাকায়। অর্ণব তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তন্নি চোখ বড়বড় করে বলে
“আপনি এখানে কেনো আসলেন? বাবা দেখে ফেললে কি হবে?
অর্ণব তন্নিকে হাত ধরে টেনে রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর নরম খাটে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে বলে
” কি আর হবে? তোমার বাপ আমার চুলও ছিঁড়তে পারবে না।
তন্নি কথা বলে না। ইতোমধ্যে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। তন্নি বেশ চিন্তিত। বৃষ্টির স্রোত বাড়লে অর্ণব যাবে কি করে? আর না গেলে তন্নির কি হবে?

“ওইদিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমি যাচ্ছি না আজ।
তন্নি কাঁদো কাঁদো হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।
” আপনি এমন কেনো করেন?
অর্ণব হাতের ওপর মাথা ঠেকিয়ে তন্নির দিকে তাকিয়ে বলে
“কেমন করি?
” সারাক্ষণ আমায় মুশকিলে ফেলে দেন। আপনি না গেলে আমি ধরা খেয়ে যাবো। আর ধরা খেলে বাবা খুব বকবে।
“তুমি বলতে চাচ্ছো আমি চলে গেলে তোমার ভালো হয়?
” হ্যাঁ

অর্ণব এক লাফে উঠে বসে। তন্নিও দাঁড়িয়ে যায়। অর্ণব তন্নির হাত টেনে তাকে কোলে বসিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে।
তন্নি মাথা নুয়িয়ে ফেলে।
“কি কর
তন্নির পুরো বাক্য শেষ হওয়ার আগেই অর্ণব গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে তন্নির গলা।
দিশেহারা হয়ে ওঠে তন্নি। দুই হাতে ঠেলেও অর্ণবকে সরাতে পারে না। অতঃপর হাল ছেড়ে দুই হাতে চুল মুঠো করে ধরে অর্ণবের। চোখের কুর্নিশ বেয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
তন্নির আশকারা পেয়ে অর্ণবের পাগলামি বেয়ে যায়। গলা হতে ঠোঁট নামিয়ে নিতে যায় নিচের দিকে তখনই কিছু একটা মনে পড়ে।

তাই চট করে তন্নির গলায় রগের পাশে থাকা কালো কুচকুচে তিলটাতে কামড় দিয়ে তন্নিকে বিছানায় বসিয়ে সরে আসে।
তন্নি গলায় হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে।
” বলদ একটা
পাগল করে ছাড়বে আমায়।
তন্নির মাথায় চাটি দিয়ে জানালা হতে লাফ দিয়ে চলে যায় অর্ণব। চোখের সামনে হতে অর্ণব বিলিন হয়ে যেতেই অনুভূতির জোয়ার থেকে বেরিয়ে আসে তন্নি। চট করে উঠে জানালার কাছে যায়। ততক্ষণে গাড়ির কাছে চলে গিয়েছে অর্ণব। কালো রংয়ের গাড়ির সাদা লাইট জ্বলে ওঠে। সেই লাইটের আলোতে একটুখানি দেখা মেলে অর্ণবের।
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে তন্নির।
আজকে সে একদম শিওর “ওই বিলাই চোখ ওয়ালা সুদর্শন পুরুষটি তাকে পছন্দ করে”

স্কুলের গেইটের সামনেই দেখা মেলে অর্ণবের। অথৈকেও দেখা যাচ্ছে অর্ণবের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির ভেতরে আর্থি। তন্নিকে দেখেই অথৈ দৌড়ে এগিয়ে আসে
“তন্নি চল চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
” কিন্তু কোথায় যাবো?
“সারপ্রাইজ চল তো
” ক্লাস করবো না?
“না

অথৈ টেনেটুনে তন্নিকে গাড়িতে বসায়। অর্ণব ড্রাইভিং সিটে বসে গেছে। তন্নির দিকে ভুল করেও তাকাচ্ছে না। তন্নি আড়চোখে তাকিয়েছে কয়েকবার।
মিনিট বিশেকের মধ্যে গাড়ি থেমে যায়। কাজি অফিস সাইন বোর্ড টাঙানো। তন্নি চিন্তায় পড়ে বিয়েটা কার?
ফের অথৈ তাকে টেনেটুনে নিয়ে যায় ভেতরে। বসিয়ে দেয় অর্ণবের পাশে। হুজুর লোকটা অনবরত কলম চালিয়ে কিছু লিখে চলেছে। এখানে অথৈ আর্থি ব্যতিত রয়েছে সোহাগ আর আশিক। তারা ফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তন্নি বুঝে উঠতে পারছে না ঠিক কি হচ্ছে?

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৩

” তোর আর আমার বিয়ে হচ্ছে গাঁধা
অর্ণব চাপা স্বরে বলে। তন্নি চমকায়। সাথে একটু ঘোরের মধ্যে চলে যায়।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৫