এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪
তানিশা সুলতানা

ইটের দেয়াল এবং টিনের চাল দেওয়া ছোট্ট বাড়ি তন্নিদের। তন্নির বাবা তারেক আহমেদ একজন এডভোকেট। খুব নাম ডাক নেই তার। সাধারণ। এক ছেলে এবং এক মেয়ে তার। ছেলেটা ছোট সবে ৭ বছর বয়স। আর মেয়েটা ক্লাস নাইনে পড়ছে।
তারেক আহমেদ এর প্রথম স্ত্রী মায়া মারা গিয়েছে তন্নিকে জন্ম দিতে গিয়ে। অতঃপর তন্নির নানা বাড়ির সকলে মায়ার ছোট ইতির সাথে তারেকের বিয়ে দিয়েছে। খুব সাধারণ কিন্তু খুবই সুখী পরিবার তাদের। ইতি তন্নিকে ঠিক ভালেবাসে না কি বাসে না এটা তন্নি বুঝতে পারে না৷ তবে সারাক্ষণ বাবা মায়ের কড়া স্বাশনে বেড়ে উঠেছে তন্নি।
বাড়ির সামনে বাঁশের তৈরি ছোট গেইট রয়েছে। গেইটের ওপর দিয়ে নাম না জানা ফুলের গাছ লতাপাতার মতো পেঁচিয়ে আছে

তন্নি গেইটের ভেতরে প্রবেশ করে দাঁড়িয়ে যায়। মন বলছে একবার পেছন ফিরে তাকাতে। লোকটাকে দেখতে। তন্নি বেশ জানে লোকটা এখনো তাকিয়ে আছে তার দিকে।
শুকনো ঢোক গিলে তন্নি৷ সামান্য ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় লোকটার পানে।
বাঁকা হাসে অর্ণব। ধমকে বলে ওঠে
“যাও ভেতরে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তন্নি হুরমুরিয়ে দৌড় দেয়। এক দৌড়ে বাড়ির ভেতরে।
ইতি বেগম উঠোনে বারান্দায় বসে পড়াচ্ছিলো তামিমকে৷ মূলত এখানে বসার কারণ হচ্ছে তন্নি। এতো রাত হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা ফিরছে না চিন্তা হচ্ছিলো বিধায় বসেছিলো বারান্দায়।
তন্নিকে দেখেই তিনি মুখখানা গম্ভীর করে ফেলে। তন্নি মাথা নিচু করে। মনে মনপ বকা খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু তন্নিকে অবাক করে দিয়ে ইতি বলে ওঠেন
“হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসো। বাবা না আসা ওবদি একজনও বই রেখে উঠবা না।
কড়া গলা ইতির। তন্নি মাথা নেরে নিজের রুমে চলে যায়। বসে পড়ে বই নিয়ে। পড়তে থাকে ইংরেজি বই।

শক্তপোক্ত, লম্বাচওড়া বিশাল দেহী সুদর্শন পুরুষ অর্ণব চৌধুরী। ঝাঁকড়া চুল এবং চাপ দাঁড়ি তার সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
মাস্টার্স শেষ করেছে কিছুদিন হলো। আপাতত গোপালগঞ্জ মামার সাথে বিজনেস শুরু করেছে। অর্ণবের মামা খালা ফুপু কারোই ছেলে নেই। দুটো ফুপির চারটা মেয়ে। একটা মামার দুটো মেয়ে এবং একটা খালার একটা মেয়ে।
তাই সকলের খুব আদরের অর্ণব।
রাতে ভালো ঘুম হয় নি অর্ণবের। বিয়ে করার বয়স। সাতাইশ বছর পেরিয়ে আঠাশ বছরে পা রাখবে দুই মাস বাদেই। পাক্কা বিয়ের বয়স চলছে। কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না। ঘুম হবে কি করে?
ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ফোনে গেমস খেলছে অর্ণব। তাকে খাইয়ে দিচ্ছে অথৈ।

আনোয়ার চৌধুরী অফিসের জন্য তৈরি হয়ে এসেছেন ব্রেকফাস্ট করতে। অফিসে বেরতে হবে তার। বিশাল নামি-দামি কোম্পানির মালিক তিনি। একা হাতে সামলাতে হয় সব কিছু। ছেলেকে ব্যবসায়ের দায়িত্ব দিতে সাহস করে না তিনি। কারণ বড় বদমাইশ ছেলে তার। রাজনীতির প্রতি বেশ ঝোঁক। এলাকার ছেলেদের সাথে মিলে দাদাগীরি করে বেড়ায়। সেই জন্যই একমাত্র কলিজার টুকরো কে গোপালগঞ্জ রাখতে বাধ্য হয়েছে।
ছেলের দিকে এক পলক তাকিয়ে খাবার টেবিলে বসে আনোয়ার। অথৈ অর্ণবের মুখে শেষ লোকমা খাবার পুরে দিয়ে চলে যায় বাবাকে খাবার বেরে দিতে।

“পাপা আমি বিয়ে করবো।
সবেই এক লোকমা খাবার মুখে তুলতে যাচ্ছিলেন আনোয়ার চৌধুরী। ছেলের কথায় খাবার রেখে তাকায় তার দিকে।
খানিকটা বিরক্ত হয় আনোয়ার। কোনো ছেলে কখনো তার বাবাকে এভাবে বিয়ের কথা বলতে পারে?
” তোমার লজ্জা করে না বাবা?
অর্ণব হাত থেকে ফোনটা নামিয়ে সোজা হয়ে বসে।
“লজ্জা কেনো করবে? বিয়ে হচ্ছে একটা শুভ কাজ। তুমি বিয়ে করে ৩ বাচ্চার বাবা হয়ে গিয়েছো তাতে লজ্জা পাও না। আর আমি বিয়ে না করেই লজ্জা পাবো?
থমথমে খেয়ে যায় আনোয়ার। লজ্জাও পায়। অথৈ মুখ টিপে হাসে। আনোয়ার আড় চোখে মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে

” তোমার সাথে মেয়ে দিবে কে?
অর্ণব ঠোঁটে আঙুল দিয়ে কিছু একটা চিন্তা। এডভোকেট তারেক আহমেদ কখনোই তার মেয়েকে অর্ণবের হাতে দেবে না৷ এটা শিওর অর্ণব।
“কেউ স্বইচ্ছায় দিবে না মেয়ে। কিডন্যাপ করে বিয়ে করবো। মেয়ে ঠিক করে ফেলেছি। এবার তুমি হ্যাঁ বললেই দুজন মিলে যাবো কিডন্যাপ করতে।
বেষম খায় আনোয়ার। ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়। অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” লেজ ছাড়া বাঁদর একটা।

অর্ণব মুখ বাঁকায়৷ আবারও গেমস খেলায় মনোযোগ দিয়ে বলে
“তোমার বার্থডের আগের দিন মেয়ে তুলে আনবো। এবং রাত বারোটায় বিয়ে করে তোমায় বার্থডে গিফট দিবো।
অর্ণবের কথায় পাত্তা দেয় না আনোয়ার। নিজের খাওয়াতে মনোযোগ দেয়।
অথৈ চুপিচুপি অর্ণবের পাশে এসে বসে।
” দাভাই
তন্নিকে সত্যি তুলে আনবি?
অর্ণব মাথা দিয়ে অথৈয়ের মাথায় গুতো দিয়ে বলে
“নাহহহ
তোর তন্নির নানিকে তুলে আনবো।
অথৈ গাল ফুলায়। অর্ণবের চুল টেনে দিয়ে চলে যায় রান্নাঘরে।

বাজারে পাশে পুকুর পাড়ে মারামারি লেগেছে। চেয়ারম্যান এর ছেলেকে বেদম মারছে অর্ণব৷ কেউ থামাতে পারছে না তাকে। তামিম এতোখন মারামারি দেখছিলো। অতঃপর তার মনে হলো একা কেনো দেখবে? সকলকে ডেকে আনা প্রয়োজন। এমনিতে অর্ণব তার বস। আইডল মানে তাকে। অর্ণব কেমন ফাইট করে বন্ধুদের দেখানো দরকার। তাই সে দৌড়ে চলে যায় বন্ধুদের ডাকতে। সকল বন্ধুদের খবর দেওয়া শেষে বাড়িতে যায়। তার আপিকেও খবর দেওয়া উচিত। কেনোনা তন্নি সারাক্ষণ অর্ণবকে পঁচায় তামিমের সামনে।
তন্নি মায়ের সাথে মিলে রান্না করছিলে। তামিম হাঁপাতে হাঁপাতে বলে

” আপি বস চেয়ারম্যান এর চেংড়া পোলারে বিদম পিটানি দিচ্ছে।
তন্নি চমকায়। ভীতু হয়ল আসে চোখ মুখ। ইতি বেগম চোখ পাকিয়ে তাকায় ছেলের দিকে। তাতেও তামিমের থামাথামির নাম নেয়।
“আপি তুমি চিনতে পারছো না? ওই চেংড়াটা যে ফোন নাম্বার কাগজে লিখে আমাকে দিয়েছিলো তোমাকে দিতে।
ইতি বেগম তেঁতে ওঠে
” মারুক। ওই ছেলের মাইর খাওয়াই উচিত।
তামিম তন্নির হাত ধরে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩

“আম্মু ঠিক বলেছো। ওর মাইর খাওয়া উচিত আর আমাদের দেখা। আপি চলো দেখবে আর হাত তালি দিবে।
বলতে বলতে কয়েক টুকরো ভাজা আলু হাতে তুলে নেয়।
” খাবার ছাড়া সিনেমা জমে না কি?
বলেই তন্নিকে টেনে নিয়ে যায়।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৫