এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৪

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৪
তানিশা সুলতানা

রাত বারোটা বেজে পাঁচ মিনিট। নতুন পরিবেশে ঘুম আসে না তন্নির৷ তারওপর মাথার মধ্যে জাপ্টে জড়িয়ে আছে অন্য চিন্তা। ভীষণ বাজে একটা রোগ প্রতিনিয়ত গ্রাসস করে নিচ্ছে তন্নিকে। চোখ বন্ধ করলেই অর্ণব নামক বাজে লোকটার কথা মনে পড়ছে। লোকটা কি কোনোমতেই শান্তি দিবে না তন্নিকে? সব সময় জ্বালিয়ে মারবে? স্বপ্ন কিংবা বাস্তব সব জায়গায় সে। অসয্য লাগে। বসার ঘরে সকলেই আড্ডা দিচ্ছে। ক্ষণে ক্ষণে হাসির শব্দে মুখরিত হচ্ছে গোটা কক্ষ। এতে তন্নির বিরক্ত আরও বেড়ে যাচ্ছে। তাদের উচ্চ শব্দ দূষণ তন্নির কানে লাগে বেশ। মনে হচ্ছে কান ফাঁটবে। রাতের মধ্য প্রহর এদের আড্ডা দেওয়ার সময়? কাল সকালেও তো গল্প করতে পারবে।

তন্নির মামাতো ভাই বাসায় এসেছে। সে চিটাগং চাকরি করে। কয়েকবার তন্নির মামি ডেকে গিয়েছে তন্নিকে। ওদের আড্ডায় সামিল হতে বলেছে। মাথা ব্যাথার দোহায় দিয়ে এড়িয়েছে তন্নি। একা কক্ষে বসে থাকার চেয়ে ওদের আড্ডায় সামিল হওয়া ঢেড় ভালো ছিলো। কিন্তু তন্নি কোনোমতেই যাবে না। তারও একটা যথাযথ কারণ রয়েছে। তন্নির মামাতো ভাই ইমন গত বছরই প্রপোজ করেছিলো তাকে। যে পুরুষ প্রেমের প্রস্তাব পাঠায় সেই পুরুষের সামনে যাওয়া তন্নির কাছে অস্বস্তিকর ব্যাপার। দৃষ্টি কটুর লাগে। তাছাড়া ইয়াশ সর্বক্ষণ তাকিয়ে থাকে তন্নির পানে৷ যেটা একেবারে অসয্যনীয় লাগে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হঠাৎ তন্নির কানে পরিচিত একটা কন্ঠস্বরের উচ্চ হাসির শব্দ ভেসে আসে। মুহুর্তেই এক লাফে বসে পড়ে। সঠিক শুনলো কি? অবশ্যই সঠিক শুনে নি। লোকটার কথা সর্বক্ষণ চিন্তা করা হয় বিধায় মনে হচ্ছে “তিনি হাসছে”
বাস্তব ঘটনা হচ্ছে তিনি এই বাড়ি চিনবে না। কখনো আসবেও না। ফোঁস করে শ্বাস টানে তন্নি। নিজের মাথায় নিজেই দুটো থা প্প ড় মা রে। বিরবির করে বলে
“তন্নি তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস। তোর পাবনা ভর্তি হওয়া দরকার।
“অর্ণব ভাই ইউ আর জোশশ
ইভানের কথায় আরেকদরফা চমকায় তন্নি। অর্ণব ভাই কেনো বললো?
নামটাও কি কাকতালীয় ভাবে মিলতে পারে? এবারেও ভুল শুনলো? আশ্চর্য ব্যাপার সেপার। মাথা মুন্ডু সব কি গোল্লায় যাচ্ছে?

” আমি বিয়ে করবো। একটা মেয়ে খুঁজে দিয়ে নানি।
তন্নি কান খাঁড়া করেই ছিলো। এবার একদম শিওর হয়ে যায় ওই বেয়াদবই এসেছে এখানে। খোঁজটা পেলো কি করে? আজকে ইচ্ছে মতো কিছু কথা শোনানো দরকার তাকে।
তিনি কি কোনোদিনও মানুষ হবে না? বাঁদর বাঁদরই থাকবে?
বয়স হয়েছে ২৯। সঠিক সময়ে বিয়ে করলে থুক্কু ফুলসজ্জা করলে এক বাচ্চার বাবা হয়ে যেতো। তার বাঁদরামি মানা যায়?
মনোয়ারা হেসে বলে

“আমার হাতেই রয়েছে পাঁচ ছয়টা মেয়ে। একসময় ঘটকালি করতাম। কতশত ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়েছি আমার এই হাতে। এখন বয়স হয়েছে তোমার নানা চলে গিয়েছে। তাই বাদ দিয়েছিলাম।
তবে তোমার জন্য আবার শুরু করতেই পারি।
ইয়াশ বলে
“কোন হাতে রেখেছো পাঁচ ছয়টা মেয়ে?
অথৈ ভাইয়ের পাশে চুপটি করে বসে ছিলো। এবার তার হাসি পেলো।
মনোয়ারা মুখ বাঁকিয়ে বলে
” কথায় ভুল ধরবি না একদম।
তন্নি দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে এদের। অথৈকেও দেখেছে। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে
“অথৈ

চমকায় অথৈ। চটজলদি পেছন ফিরে তাকায়। তন্নিকে দেখে আশ্চর্য হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। পরপর দৌড়ে গিয়ে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে। বাকি সবাই নিরব দর্শক।
” কোথায় ছিলি তন্নি? আমি তোকে কতো খুঁজেছি জানিস? কতো মিস করেছি তোকে। সেইদিন না তোকে দেখেছিলাম আমি। পেছন পেছনও এসেছিলাম৷ তুই আমায় দেখিস নি। আমি কতোবার তোকে কল করি জানিস? কিন্তু তোর ফোন বন্ধ। তোর বাবার কাছেও কল করেছিলাম৷ তিনি তোর সাথে কথা বলিয়ে দেয় নি।
তন্নি অথৈয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়
“রিলাক্স

আছি তো আমি। সব কথা শুনবো আস্তেধীরে বল।
অথৈ ছেড়ে দেয় তন্নি। চোখে হাসে। অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। দেখতেও একদম অর্ণবের মতো হয়েছে।
ইয়াশ জিজ্ঞেস করে
” অর্ণব তোরা তন্নিকে চিনিস?
অর্ণব বা হাতে চুল ঠিক করতে করতে বলে
“আমি তো চিনি না। অথৈ তুই চিনিস কি করে?
তন্নির হাসি মুখ খানা চুপসে যায়। কঠিন দৃষ্টিতে তাকায় অর্ণবের পানে। সাথে সাথেই অর্ণব চোখ টিপ দেয়। তন্নি ঠিক বুঝতে পারে হনুমানটা তাকে জ্বালাতে এমন বলছে।
অথৈ বলে

” দাভাই তুই ভুলে গিয়েছিস?
ও তন্নি
অথৈকে থামিয়ে তন্নি বলে
“আরেহহ অথৈ থাক ছেড়ে দে। ভাব নিচ্ছে চিনে না৷ বোঝাতে চাচ্ছে তার মস্তিষ্কে গোবর ভরা৷ কিছুই মনে রাখতে পারে না। মাঝেমধ্যে নিজের নামটাও ভুলে যায়।
অর্ণব ছোট ছোট নয়নে তাকায় তন্নির পানে। অথৈ মুখ টিপে হাসে। ঠিক হয়েছে।
ইভান বলে
” অর্ণব ভাইয়া। তোমার মাথায় গোবর ভরা?
অর্ণব চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে

“ওহহ হো তুমি ওই তন্নি? যার কাছে নাম জিজ্ঞেস করলেই প্যাঁচ প্যাঁচ করে কেঁদে ফেলতো আর নাকে সর্দি জমতো?
সকলেই হেসে ওঠে অর্ণবের কথায়। তন্নিও থেমে যাওয়ার পাত্রী নয়। সে মেকি হেসে বলে
“যাহহহ ভাইয়া
বারবার কেনো প্রমাণ দিচ্ছেন মাথায় গোবর নিয়ে ঘুরেন? আমার নাকে কখনো সর্দি থাকতো না। নানু বলো
ইয়াশ ভাইয়া বলুন
অথৈ তুইও বল।

সকলেই সম্মতি জানায় তন্নির নাকে সর্দি থাকতো না। এবার জিতে গেলো তন্নি। একটু ভাব নিয়ে বলে
” বুড়ো হয়ে গেলেন এখনো বুদ্ধি হাঁটুর নিচে রয়ে গেলো। আপনার যে কি হবে ভাইয়া। বউ টিকবে না আপনার। হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে চলে যাবে। একটু চালাক চতুর হন।
বলেই অথৈয়ের হাত টেনে চলে যায়। আজকে সারারাত গল্প করবে অথৈয়ের সাথে। কতো কথা জমে আছে। কতো আলাপ করা বাকি।
তন্নি যেতেই অর্ণব বিরবির করে বলে

“বউ আমায় খাঁড়ার ওপর অপমান করে গেলো। এই অপমানের জবাব দেওয়া প্রয়োজন অতিদ্রুত।
অর্ণব সিদ্ধান্ত নিলো আজকের রাতটা এখানেই থাকবে। অবশ্যই মনে মনে থাকার আশা নিয়েই এসেছে। ইয়াশ অর্ণবের বন্ধু। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে ইয়াশ একজন। আজকে ইয়াশ বাসায় ফিরবে বলে ইভান আগেই অর্ণবকে আসতে বলেছে। অর্ণব ভেবেছিলো কাল আসবে। কিন্তু যখনই তন্নির কন্ঠস্বর শুনলো তখনই সিদ্ধান্ত বদলে ফেললো। আরও একটা রাত বউয়ের আশেপাশে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। হাত ছাড়া কেনো করবে?
রাত একটা বেজে দশ মিনিটে তাদের আড্ডার সমাপ্তি ঘটে। এর মধ্যে বিলকিস বেগম পকোড়া নুডলস কফি এসব বানিয়েও খাইয়েছে। ইয়াশের সাথে ঘুমবে অর্ণব।

ইয়াশকে রুমে যেতে বলে অর্ণব চলে আসে তন্নির কক্ষের সামনে। দুবার দরজায় টুকা দেয়।
অথৈ এবং তন্নির গল্পের সমাপ্তি ঘটেছে কিছুক্ষণ আগেই। অথৈ ঘুমিয়েও পড়েছে। ঘুম নেই তন্নির চোখে। তন্নি ঠিক জানতো অর্ণব আসবে।
চটজলদি শোয়া থেকে উঠে গায়ে ওড়না জড়িয়ে নেয়। রুমের লাইট বন্ধ করে আস্তে করে দরজা খুলে। এবং অর্ণবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলে ওই
” এখানে কেনো এসেছেন?
অর্ণব হেসে জবাব দেয়

“তোমার নানিকে বিয়ে করবো। হবু বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করতে এসেছি। তোমার কোনো প্রবলেম?
তন্নি অর্ণবের চুল গুলো মুঠো করে ধরে টেনে দেয়। রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে
” আপনার মুখ দেখতেও ইচ্ছে করে না।
অর্ণব নিজের চুলে হাত বুলায়। এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘোরাতে ঘোরাতে হবে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৩

“দেখতে ইচ্ছে করে না তাতেই বিড়ালের মতো তাকিয়ে থাকো। বাই এনি চান্স যদি দেখতে ইচ্ছে করতো। তাহলে কি করতে?
তন্নি অর্ণবের বুকে ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
” বাঁদর ছেলে কোথাকার”

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৫