এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৬
তানিশা সুলতানা
আনোয়ার চৌধুরীর দাদা ছিলেন গ্রামের সাধারণ একজন কৃষক। তবে তার ছেলেকে কৃষি কাজ করতে দেয় নি। স্কুলে পাঠিয়েছে। পড়ালেখা শিখিয়েছিলেন। সেই ফলস্বরূপ আনোয়ার চৌধুর বাবা শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছিলেন। এলাকার সুনামধন্য শিক্ষক খ্যাতি লাভ করেছিলেন। ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে এলাকার বাজারে দিয়েছিলেন কাপড়ের দোকান। দুজন টেইলর্স রেখেছিলেন সেই সাথে। লোকজন দোকান থেকে কাপড় কিনে সেখানেই টেইলার্সের কাছে বানাতে দিতো পোশাক।
ততদিনে আনোয়ার চৌধুরীও স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে পা রেখেছিলেন কলেজে। পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে ব্যবসায়।
এখন ঢাকার শহরে গড়ে তুলেছেন আট তালা বিশিষ্ট গার্মেন্টস। সেখানে শতশত কর্মচারী কাজ করেন।
অর্ণব ঘুরে ঘুরে দেখছিলো সকলের কাজ। এটাই মূলত তার কাজ। সে ব্যবসায়ের কিছু বোঝে না। টাকার হিসেবও ঠিকঠাক করতে জানে না।
সেইদিক আনোয়ার চৌধুরি একাই সামলায়৷
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বয়স পনেরো কি ষোল হবে একটা মেয়ে মনোযোগ দিয়ে সেলাই মেশিনে গাউন বানানোর চেষ্টা করছে এবং বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে আছে মেয়েটি মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার পানে।
পারে না তো কঠিন কাজ করতে কেনো গিয়েছে সেটাই মাথায় ঢুকছে না অর্ণবের। অন্য কোনো কাজ নিতে পারতো।
নয়বার চেষ্টা করার পরে মেয়েটা গাউন এর গলার ডিজাইন সঠিক ভাবে করতে পারে। চোখে মুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তির হাসি। অর্ণবের ঠোঁটের কোণেও হাসির রেখা ফুটে ওঠে। পকেটে হাত পুরে ধীর গতিতে এগিয়ে আসে মেয়েটার পানে। সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে
“হোয়াট ইজ ইওর নেইম?
মেয়েটা চমকায়। ভয়ার্তক দৃষ্টিতে অর্ণবের পানে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। পরপরই মাথা নুয়িয়ে ফেলে। শ্যাম বর্ণ গায়ের রং মেয়েটার। কমদামি গোলাপি রংয়ের সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আছে। কপাল ওবদি ঘোমটা টেনেছে টকটকে গোলাপি রংয়ের ওড়না দ্বারা।
অর্ণব ভ্রু কুচকে ফেলে। গাউন খানা তুলে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ফের প্রশ্ন করে
“নাম কি তোমার?
মেয়েটা এবার সাথে সাথেই জবাব দেয়
“সাথী।
“আচ্ছা
কাজ করো
সাথী মাথা নারিয়ে বসে পড়ে। আবারও সেলাই মেশিনে মনোযোগ দেয়।
আকাশ ফাইল হাতে অর্ণবের দিকেই আসছিলো। সাথীর সামনে অর্ণবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দ্রুত পা চালিয়ে এগোয়। অর্ণবের বাহু ধরে টেনে খানিকটা দূরে নিয়ে বলে
” মেয়েটাকে ভাবি পাঠিয়েছে।
অবাকের অষ্টম পর্যায়ে চলে যায় অর্ণব। তন্নি কি করে চিনলো একে? আর কেনোই বা পাঠালো?
আশিক ফের বলতে শুরু করে
“মেয়েটার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। মেয়েটিকে এবং তার মাকে তাড়িয়ে দিয়েছে বাড়ি থেকে। মাথা গোঁজার ঠায় ছিলো না। তখন তন্নির সাথে ওদের দেখা হয়। তোর বউ ওনাদের ঘটনা শুনে তখুনি আমাকে কল করে। এবং আমার থেকে তোমার বাবার নাম্বার নেয়। দেন আংকেল ওদের থাকার জায়গা দিয়েছে এবং এখানে চাকরি দিয়েছেন।
ঠোঁট কামড়ে হাসে অর্ণব। কতো দিন হলো মায়াবতীকে দেখা হয় না? চোদ্দ দিন হয়ে গেলো। কলও দেয় না পঁচা মেয়েটা।
অর্ণব সুযোগ খুঁজছিলো কি করে মেয়েটার দেখা পাবে। এবার কোনো ভুল করবে না৷ একটু প্রাইভেসি পেলেই বাসর সেরে ফেলবে। তারপর প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবে মায়াবতী। ময়না একবার উদরে জায়গা করে নিলে মায়াবতী লাফালাফি করতে পারবে না। তাকে ধরা দিতেই হবে অর্ণবের নিকটে।
” আশিক তুই কাল বিয়ে করবি সাথীকে।
আশিক বড়বড় নয়নে তাকায় অর্ণবের পানে। অর্ণব আশিকের গাল টেনে দিয়ে বলে
“মেয়েটা সুন্দর। তোকে চোরের মতো দেখায়। এমনিতেও মেয়ে পেতিস না।
আশিক শুকনো ঢোক গিলে মিনমিন করে বলে
” ভাই আমি বিয়ে করবো না।
“সেটা আমি আর আন্টি ডিসাইড করে নিবো। তুই জাস্ট মায়াবতীকে খবর দিবি কাল বিয়ে করছিস।
” ভাই বোঝার চেষ্টা কর। আমার
বাকিটা বলতে না দিয়ে অর্ণব বলে ওঠে
“তোর মেশিন দুর্বল? ঠিকঠাক সার্ভিস দিতে পারবি না? ডোন্টওরি আমি কলিকাতা হারবালের ব্যবস্থা করছি।
নাক মুখ কুঁচকে ফেলে আশিক।
” ভাই তিন দিন পরে আর্থির গায়ে হলুদ৷
“কাল তোর বাসর। কোথা থেকে শুরু করবি সেটা ভাব।
আশিক ফোঁস করে শ্বাস টানে। তাকায় সাথীর পানে। এই মেয়েকে বিয়ে করতে হবে? দেখতে খারাপ না৷ কিন্তু এতো দ্রুত বিয়ে?
” শোন আশিক। কাল দুটো বাসর সাজাস।
আশিক ভেংচি কাটে
“শা লা তুই জীবনেও বাসর করতে পারবি না। ওইবার পাঁচ হাজার টাকার ফুল নষ্ট করেছিস।
” এই বার নষ্ট করবো না। ফুলের দাম না ওঠা ওবদি দরজা খুলবো না৷ অর্ণব চৌধুরী প্রতিজ্ঞা করলো।
গাড়ি নিয়ে আসে নি আজকে অর্ণব। চার চাকা গাড়িতে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না ও। অফিসের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে৷ সূর্য্যি মামা ডুবে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ হলো। চন্দ্র তারায় আসমান ভরপুর।
ফুটপাতের চারিধারের তারার মতে গিজগিজ করছে মানুষ।
অর্ণবের ভালে লাগে। সামনেই দেখা যাচ্ছে হাইকোর্ট। তার পাশে সরকারি কলেজ। দুটোই বন্ধ। এই রাতের বেলায় অবশ্য খোলা থাকার কথা না। কোর্টের সামনে চায়ের দোকানে তারেক রহমান চা পান করছে। অর্ণব হাতে। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। লোকটার সাথে বেয়াদবি করতে ভালোই লাগে। অল্পতেই মাথা গরম করে ফেলে। এবং রেগে গেলে কি করবে না করবে ভেবে পায় না। এই দৃশ্যটাই অর্ণবের মজা লাগে।
কপালে ছড়িয়ে পড়া বড়বড় চুল গুলো বা হাতে পেছনে ঠেলে পা বাড়ায় তারেক রহমানের দিকে।
না দেখার ভান করে বসে পড়ে পাশপ এবং চা ওয়ালাকে আদেশ করে
“এক কাপ দুধ চা দিন চাচা।
তারেক রহমান আড়চোখে পাশ ফিরে তাকায়। অর্ণবের মুখশ্রী দেখেই নাক মুখ কুঁচকে ফেলে। মনে মনে বেশ কয়েকবার বেয়াদব শব্দটাও আওড়িয়ে ফেলেছে।
অর্ণবও তাকায় তারেক রহমানের পানে৷ চোখাচোখি হয়ে যয দুজনের। অর্ণব আশ্চর্য হওয়ার ভান ধরক বলে
” আরেককক শশুর মশাই যে। ভালো আছেন? আমার শাশুড়ী মা ভালো আছে তো?
ফোঁস করে শ্বাস টানে তারেক। জবাব দেবে না বলে পণ করেছে। মুখ ঘুরিয়ে চায়ের কাপে মনোযোগ দেয়। অর্ণব উত্তরের আশায় এখনো তাকিয়ে আছে। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিতেই তারেকের কিছু মনে পড়ে। সে চায়ের কাপ রেখে অর্ণবের দিকে ঘুরে। ততক্ষণে অর্ণবের চায়ের কাপ হাতে চলে এসেছে৷ ক্ষণে ক্ষণে চুমুক দিচ্ছে।
“শোনো ছেলে।
কিছু কথা ছিলো।
অর্ণব হাসি মুখে বলে
” বলুন শশুর মশাই।
“আমার মেয়ে হ
তারেক কথা শেষ করার আগেই
অর্ণব কপাল কুঁচকে উচ্চস্বরে বলে ওঠে
” শশুর মশাই বুড়ো বয়সে আবার মেয়ে হয়েছে আপনার?
আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ
আমি খুশি হয়েছি। কিন্তু আপনি না আইনের লোক। সরকার যে বড়বড় অক্ষরে লিখে দিয়েছে “দুটো সন্তানের বেশি নয়৷ একটি হলে ভালো হয়”
তারেক হতদম্ভ হয়ে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে থাকে। অর্ণব আবারও বলে
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৫
“সরকারের কথা শুনলেন না?
ভাড়ি অন্যায়।
আমার সাথেও অন্যায় করছেন। আমার আপন বউকে আমায় দিচ্ছেন না। বউ ছাড়া রাত কাটানো কতো কষ্ট আপনি তো জানেনই।
রোমান্টির মুভি দেখে আর কতোকাল…………………..
মুভি বানানোর বয়স এটা।
আরেক কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।