এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৯

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৯
তানিশা সুলতানা

আর্থির মেহেদী আজকে। গোটা বাড়ি সাজানো হচ্ছে। আজানের পরপরই ডেকোরেশনের লোকজন চলে এসেছে। এবং এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক বাড়ি সাজিয়ে ফেলেছে। তামিম সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে। অবশ্য ওঠে নি। মানুষের সোরগোলে ঘুম ভেঙে গিয়েছে। অথৈয়ের সাহায্যে দাঁত ব্রাশ করেই ছুটেছে লাবিবাকে দেখার উদ্দেশ্যে। সকালটা যদি শুরু হয় লাবিবাকে জ্বালিয়ে। দিনটা ভালো যাবেই যাবে।
লাবিবা তার নানার সাথে হাঁটতে বেরিয়েছিলো। তামিম খানিকক্ষণ লাবিবার বাড়িতে উঁকিঝুঁকি মেরে রাস্তায় যায়৷ ভেবে রেখেছে কয়েকটা ঢিল ছুঁড়ে মারবে লাবিবার জানালায়।
রাস্তায় বের হয়ে ঢিল খুঁজতে গিয়ে দেখতে পায় দূর হতে লাবিবা আসছে একটা বুড়ো লোকের হাত ধরে। একটু জ্যেলাস হয় তামিম। কেনো হাত ধরবে বুড়োটার? হাত ধরতে ইচ্ছে হলে তামিমের হাত ধরুক। দুঃখে কষ্টপ সুর তুলে গান ধরে

“ও লাবিবা তুমি কবে ঘুরবে আমার সাথে
বুইড়া নানার চান্দি ফাটিয়ে ফেলে দিবে খাঁদে
লাবিবার কানে অবশ্যই পৌঁছায় না এই গান। কারণ সে অনেকটা দূরে। পরনের রাতের সেই ফ্রকটি। হঠাৎ লাবিবার নানা লাবিবার হাত ছেড়ে দিয়ে এগোতে বলে। এবং সে রাস্তার ধারে হিসু করতে বসে।
তামিম দৌড়ে এসে বলে
” মুরব্বি উহু উহু উহু
এটা রাস্তা পরিবেশ দুষণ হচ্ছে।
লোকটা চমকায় এবং সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে পড়ে। বড়বড় নয়নে তাকায় তামিমের পানে। লাবিবা তেড়ে এসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তামিম ফের বলে
“সোনামনি কথা বলবে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চুপ করে যায় লাবিবা। ফঁস ফঁস করে শ্বাস টানতে থাকে। লাবিবার নানা তামিমকে বলে
” এই ছেলে তুমি কে?
“আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খালাতো বোনের আপন চাচির মামার বন্ধুর ফুপুর ননদের ভাইয়ের দাদার শশুরের মেয়ের জামাই এর ছেলে। আমার নাম শেখ তামিম মন্ত্রী।
বলতে পারেন শেখ হাসিনার খুবই কাছের আত্নীয়। রাস্তা ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব শেখ হাসিনা নিজ হাতে তুলে দিয়েছে আমার হাতে।
লোকটি ভাবনায় পড়ে যায়। কি বললো ঠিক? সত্যিই কি তাই? হতেও পারে। তবে ছেলেটা ভালোই।
লাবিবা বলে

” নানাভাই ও একটা পাগল। খালি কথা বলে
তামিম ফোড়ন কেটে বলে
“লাবিবার পাগল আমি। কথা বলি না তো সোনামনি। ভালোবাসার বুলি আওড়াই।
লাবিবার নানা হতদম্ভ হয়ে যায়৷ এই টুকু ছেলে বলে কি? আবার ধমক দিতেও ভয় পাচ্ছে। দেখে শুনে বড়লোকই মনে হচ্ছে। আবার প্রধানমন্ত্রীর আত্নীয়। বলা বাহুল্য শেখ হাসিনা তার ক্রাশ। যুবক বয়স থেকেই তার প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। বন্ধুদের কাছে কতো চাপাবাজী করেছে ” একদিন শেখ হাসিনাকে আমি বিয়ে করবো” যদিও শেখ হাসিনা তার চেয়ে বড় হবে বয়সে।
ক্রাশের আত্নীয়কে ধমক দেওয়া ঠিক হবে না। তাই নরম স্বরে বলে
” বেড়াতে যেয়ো আমাদের বাসায়।
“এখনই চলুন। বেড়িয়ে আসি। পরে আবার আপনার মনে নাও থাকতে পারে।
লোকটি আর না করতে পারে না। তামিমকে নিয়েই বাড়িতে যায়।

ঘড়ির কাটায় নয়টা বেজে দশ মিনিট। তন্নির ঘুম ভেঙেছে অনেকক্ষণ আগেই। তবুও উঠতে পারে নি। তাকে সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে ঘুমচ্ছে অর্ণব। ইতোমধ্যে কয়েকবার ডেকেছে তন্নি। কোনো সাড়াশব্দ নেই। থাকার কথাও না। ফজরের আজানের পরপরই ঘুমিয়েছে। তন্নিরও ঘুম হয় নি। একটু চোখ লেগে এসেছিলো বাইরে থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ পেয়ে ঘুম ছুটে গিয়েছে। তারপর থেকেই ডেকে চলেছে অর্ণবকে। শয়তান লোকটা শুনছেই না। বেজায় বিরক্ত তন্নি। সারা শরীর ব্যাথা। আজানের সময় গোসল করেছে। চুল গুলোও ভেজা। শুকনো প্রয়োজন।
এবার আর কষ্ট করে ডাকে অর্ণবকে। তার ঝাঁকড়া চুল গুলো শক্ত করে মুঠো করে ধরে। বোধহয় কাজ হলো। অর্ণব নরেচরে কপাল কুঁচকে তাকায় তন্নির মুখ পানে৷ এই সুযোগে তন্নি চুল ছেড়ে বলে

” উঠতে হবে। প্রায় দশটা বেজে গেছে৷
অর্ণব ফের মুখ গুঁজে তন্নির গলায়৷ ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে
“আর একটু থাকো।
তন্নি ছাড়ানোর চেষ্টা চালায়। এবং বলে
” থাকবো না ছাড়ুন।
“আর একবার কাঁদাই তোমায়?
মর্নিং কান্না। অল্পই কাঁদাবো৷
তন্নি চিমটি কাটে অর্ণবের বাহুতে। দাঁত কটমট করে বলে
“আর কাঁদবো না আমি।
” পাক্কা?

তন্নি বুঝতে পারে লোকটা পাগল হয়ে গিয়েছে। তাই এবার অনুনয়ের সুরে বলে
“ছাড়ুন
” ছাড়তে ইচ্ছে করে না তো।
“খিধে পেয়েছে আমার।
” এতো আদর খেয়েও পেট ভরে নি? তোমার পেটে কি হাতির বসবাস?
লজ্জায় গাল লাল হয়ে ওঠে তন্নির৷ এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। অর্ণব ছেড়ে দেয়। তন্নি যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। চটজলদি বিছানা ছাড়ে। নবাব জাদা পূণরায় কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তন্নি ভেংচি কাটে। ঢং দেখে বাঁচা যায় না।

অথৈ সাজুগুজু করে তৈরি হয়েছে। এখনই প্রোগ্রাম শুরু হবে না। বিকেলের দিকে আসবে মেহেদী আর্টিস্ট। তবুও সে আগে আগে সেজেছে। অবশ্য বিকেলে আবার নতুন ড্রেস পড়বে।
এবার অথৈ অপেক্ষা করছে তন্নির জন্য। কেনো উঠছে না মেয়েটা? এতো কিসের ঘুম? একবার ভাবে গিয়ে ডাকবে। পরবর্তীতে ভাবে এটা ঠিক হবে না। যে বজ্জাত ভাই তার।
ভাবনার মাঝেই তন্নি বের হয়। অথৈয়ের খুশি আর দেখে কে। সে মুহুর্তেই তন্নির হাত ধরে টেনে তাকে রুমে নিয়ে যায়। প্রথমে একটু বিচলিত হয় তন্নি পরমুহূর্তেই আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
“ওরেহহ তন্নি কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করছি আমি। সত্যি করে বল তো এতো বেলা কেনো হলো? কি করছিলি তোরা?

কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে বলে অথৈ। আমতা আমতা করে তন্নি। দৃষ্টি নত করে ফেলে। কি জবাব দিবে সে এখন?
” কি হলো বল? এমনিতে তো সকাল সকাল উঠিস৷
তারপর অথৈয়ের নজর পড়ে তন্নির ঠোঁটের পানে। কেমন ফোলা ফোলা লাগছে
“এই তোর ঠোঁট ফুললো কি করে? কি হয়েছে?
এবার তন্নির ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁক করে ভেতরে ঢুকে পড়তে। এই লজ্জার হাত থেকে বাঁচবে কি করে? অথৈ বুঝে ফেলে আসলে কি হয়েছে। নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়। থতমত খেয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে
” তন্নি আজকে আমি সাগর ভাইকে প্রপোজ করতে চাচ্ছি। তুই হেল্প করবি আমায়?
তন্নি একটু হাসার চেষ্টা করে বলে

“অবশ্যই করবো।
বল কি করতে হবে।
অথৈ পুরো প্ল্যানিংটা বলে তন্নিকে। তন্নিও সায় জানায়।
ইতোমধ্যেই মেহমান চলে এসেছে। মেহেদীর পার্টিতে ছেলে পক্ষের সকলেই থাকবে। দুপুরের মধ্যেই তারা চলে আসবে।
তন্নি তামিমের খোঁজ করে। এবং পেয়েও যায় গেইটের কাছে। লাবিবার সাথে কথা বলছে। তন্নি এগিয়ে যায়। তন্নিকে দেখে লাবিবা বলে
“আপু আপনার ভাই ভীষণ খারাপ। আমার আম্মু তাকে এতো আদর যত্ন করে খাওয়ালো। আর সে এখন আমাকে মেরেছে।
তন্নি চোখ পাকিয়ে তাকায় তামিমের পানে। তামিম তাতে একটুও ভয় পেলো না। বরং ভেংচি কেটে বলে

” বউদের ছোট ছেলেই মা র তে হয়। মা ইরের তালে না রাখলে বউ মানুষ হয় না।
কপাল চাপকায় তন্নি। ভাই তার এতো বজ্জাত কি করে হলো? ঠিক যেনো অর্ণবের ফটোকপি। লাবিবাকে স্যরি বলে তামিমকে নিয়ে ভেতরে আসে তন্নি। অথৈয়ের ফোন দেয় তামিমের হাতে। যাতে ফোন দেখে আর বাইরে না যায়।
এবার তন্নি এবং অথৈ খেতে বসেছে। এক চোট বকা দিয়েছে আশা বেগম। এটা খাওয়ার সময়? বেলা বাজে প্রায় এগারোটা। এখনো অর্ণব উঠে নি৷ আশা অবশ্য তন্নিকে বলেছিলো ডেকে আনতে। কিন্তু তন্নি যায় নি৷ যে বজ্জাত ছেলে তার তন্নি গেলে দেখা গেলো তন্নিকেই আর আসতে দিলো না।
খাওয়া দাওয়া শেষে অথৈ আর তন্নি সাজুগুজু করতে বসে। চলে এসেছে নয়না নিধিসহ তাদের বাড়ির লোকজন। নয়না চলে আসে অথৈয়ের কক্ষে। তন্নিকে দেখে একটু রাগই হয় তবুও কিছু বলে না। চুপচাপ অথৈদের সাজুগুজু দেখতে থাকে।
অথৈ প্রথমে তন্নিকে সাজিয়ে দেয়।

তন্নির মনটা খচখচ করছে। নিধিও এসেছে নিশ্চয়। সে কি অর্ণবের রুমে গেলো?
“অথৈ তুই সাজ। আমি যাবো আর আসবো।
অথৈকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে যায় তন্নি৷ যা ভেবেছিলো তাই। অর্ণবের কক্ষে নিধি। অর্ণব ফোন টিপছে আর নিধির কথা শুনছে। তন্নি গাল ফুলিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
অর্ণবের সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” মা খেতে ডাকছে আপনাকে।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৮

অর্ণব ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তন্নির পানে তাকায়। নিধি বিরক্ত গলায় বলে
“তোমার মা ওকে কেনো ডাকবে?
” আমার মা না। ওনার মা ই ডাকছে ওনাকে।
“ওর মা কে তুমি কেনো মা ডাকছো?
” কারণ আমি ওনার বউ তাই।
চমকালো নিধি। খানিকটা চিৎকার করে বলে
“বউ মানে?
“কেনো আপনি জানেন না?আপনার গুণোধর বন্ধু বিয়ে করেছে?

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৫০