এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৮
তানিশা সুলতানা
এই বাড়ির কিছুই চেনা না তন্নি। মানুষ গুলোকেও প্রথমবার দেখছে। ভীষণ আনইজি লাগছে তার। গলা দিয়ে পানি টুকুও নামছে না। গ্লুকোজ বরাবরই অপছন্দ তন্নির। কিন্তু অর্ণবের মামি হাতে ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছে। এবং বলেছে পুরোটা শেষ করতে। তন্নি নাক মুখ কুঁচকে এক চুমুক দেয়। তাতেই ভেতরের নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসার উপক্রম। পুরোটা খাবে কি করে? আর না খেলেই বা কি করে হবে?
মনে মনে অর্ণবকে হাজার খানি গালি দেয় তন্নি৷ লোকটা এতোটা বদ কেনো?
তার মধ্যে কি এতোটুকুও ভালো নেই?
অর্ণবকে বকতে বকতে গ্লাসে দেয় এক চুমুক। এবং পুরোটা সাবার করে ফেলে। তারপর নাক চেপে বেসিনে চলে যায়। জোর করে খেলে এই এক সমস্যা হয় তন্নির৷ ভেতরের সব বেরিয়ে আসে। তবে ভাগ্য ভালো ছিলো বিধায় আজকে আর বমি হয় না।
তন্নি চোখে মুখে পানি দিয়ে যেই ঘুরতে যাবে তখনই ৮-৯ বছরের একটা বাচ্চা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে তন্নিকে।
ভাবি তুমি এসেছো?
ঘাবড়ে যায় তন্নি। বাচ্চাটা পড়ে যাবে ভেবে দুই হাতে আগলে ধরে। ললাটে ভাজ ফেলে রিনরিনিয়ে প্রশ্ন করে
“ভাবি কে?
বাচ্চাটা ছেড়ে দেয় তন্নিকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” তুমিই তো ভাবি। দাভাই পিকচার দেখিয়েছিলো তোমার। বলেছে তুমিই আমাদের ভাবি।
লজ্জায় লাল হয়ে যায় তন্নি। এইটুকুনি বাচ্চার কাছেও বলেছে এসব? কেমন পাঁজি লোক।
“ভাবি একটু নিচু হও তো
বাচ্চাটা লাফিয়ে লাফিয়ে তন্নির গাল ছুঁতে গিয়ে যখন ব্যর্থ হয় তখন বলে ওঠে।
তন্নি ভ্রু কুচকে বলে
” কেনো?
“আরেহহ হও না একটু।
তন্নি নিচু হয়৷ বাচ্চা মেয়েটা তন্নির দুই গাল টেনে দেয়।
” আহহহহ দাভাই ঠিকই বলেছিলো৷ তোমার গাল দুটো কি সফট। দুধের ছানা অনেকখন মাখলে যেমন হয় ঠিক তেমন।
খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
থমথমে খেয়ে যায় তন্নি। লজ্জায় লাল ভাড়ি হয়ে ওঠে। কান দিয়ে ধোঁয়া বেরতে শুরু করে।
“ভাবি তুমি কিন্তু পুরোটা দাভাইকে খেতে দিও না। আমার জন্য একটু রাখিও৷ মিষ্টির ছানা আমার খুব প্রিয়।
শুকনো কাশি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে তন্নি। বাচ্চাটা দেখতে বেশ মিষ্টি। কিন্তু কথা পাকনা পাকনা।
” ভাবি দাভাই তোমাকে যেতে বলেছে। যাও যাও
একদম কিন্তু বলবে না আমি তোমার গাল টেনেছি। তাহলে আমাকে চান্দে পাঠিয়ে দিবে।
বলেই যেভাবে দৌড়ে এসেছিলো। সেভাবে দৌড়ে চলে যায়৷ তন্নি নিজের কপালে নিজেই কয়েকটা চাপড় মারে।
তন্নি ভেবে নেয় মামির কাছে যাবে। তার পাশে গিয়ে চুপটি করে বসে থাকবে। অর্ণবকে একদম বিশ্বাস নেই। লোকটা বদমাইশ।
গুটিগুটি পায়ে রান্না ঘরের দিকে এগোতে থাকে তন্নি তখনই অর্ণব ডেকে ওঠে তাকে। তবুও যদি তন্নি বলে ডাকতো। ডেকেছে কি বলে “অথৈয়ের তন্নি এদিকে আসো। কতোখন ওয়েট করবো?”
যেনো তার ঘরের বউ।
তন্নি বিরবির করতে করতে অর্ণবের রুমের দিকে যায়।
দরজা ওবদি গিয়ে থেমে যায়৷ দরজা বন্ধ। তন্নি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে হালকা করে দরজা ধাক্কা দেয়। একটুখানি খুলে যায়৷ সেই টুকুতেই নিজের মাথা ঢুকিয়ে দেয় তন্নি। উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে বজ্জাতটা আসলে কি করছে?
অর্ণব হাঁটু ওবদি প্যান্ট এবং হাতা কাটা স্যান্ডু গেঞ্জি পড়ে ফ্লোরে মাথা রেখে খাটের ওপর পা দিয়ে শুয়ে শুয়ে ফোন দেখছে।
বুক কেঁপে ওঠে তন্নির৷ ফর্সা পায়ের কালো লোমগুলো তন্নির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমিয়ে দিয়েছে। দৃষ্টি ফেরানো দায় হয়ে পড়েছে।
তখনই অর্ণব আবার ডেকে ওঠে
“মায়াবতী আসছো না কেনো?
তন্নি চমকে ওঠে। যেনো হুশ ফিরলো। দরজা পুরোপুরি খুলে মাথা নিচু করে ঢুকে পড়ে।
” এ….এসেছি আমি।
অর্ণব এক লাফে বসে পড়ে। বালিশ ফ্লোর থেকে খাটে রেখে নিজেও খাটে বসে।
“এসো এখানে বসো।
তন্নি চুপচাপ এসে বসে।
অর্ণব ফোন রাখে।
” উঠে গোল হয়ে বসো।
তন্নি মাথা নিচু করে প্রশ্ন করে
“কেনো?
” আমি বলছি তাই। জলদি।
খানিকটা ধমকের সুরে বলে অর্ণব। তন্নি গোল হয়ে বসে। সাথে সাথে অর্ণব তন্নির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। ঘাবড়ায় তন্নি। তবে কিছু বলে না। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।
“চুল টেনে দাও
তন্নি বাধ্য মেয়ের মতো চুল টানতে থাকে। আরামে গুঙিয়ে ওঠে অর্ণব। ভয় পায় তন্নি। চোখ মেলে তাকায়৷ হাত থেমে যায়৷ অর্ণব তাকিয়ে ছিলে বিধায় চোখ-চোখি হয়ে যায়। তন্নি চোখ নামিয়ে নেয়।
” থেমো না।
আকুলতা ছিলো এই কন্ঠস্বরে। আবারও চুল টানতে থাকে তন্নি।
“আমি তোমাকে বলবো তুমি কি চাও?
তুমি জবাব দিবে আপনাকে চাই। ঠিক আছে?
” কিন্তু কেনো?
“কাল তোমার বার্থডে। আর তোমার বার্থডেতে আমি আমাকে গিফট করবো তোমায়।
” কিন্তু আপনাকে দিয়ে আমি কি করবো?
অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয়
“বছরে বছরে বাচ্চা জন্ম দিবে ইডিয়েট।
লজ্জা পায় তন্নি৷ লজ্জায় ফর্সা গাল দুটো লালচে রং ধারণ করে।
” বুঝেছো
তন্নি জবাব দেয় না।
গাল ফুলিয়ে ফেলে। অর্ণব উঠে বসে। ছোট ছোট চোখ করে তন্নিকে দেখে বলে
“আমার সামনে এতো ঘোমটা টেনে থাকো কেনো?
খেয়ে ফেলবো না কি তোমায়?
তন্নি এবারেও জবাব দেয় না। কি জবাব দেবে সে?
অর্ণব নিজের ঝাঁকড়া চুলে হাত বুলিয়ে বলে
” পৃথিবীতে আসার আর সময় পাও নি? মানে ভ্যালেনটাইন ডে তেই আসতে হলো? একটা দিন পরে আসতে পারতে। ইডিয়েট কোথাকার।
চোখে পানি চলে আসে তন্নির। সে কি ইচ্ছে করে এসেছে না কি? আল্লাহ পাঠিয়েছে তাকে।
এটা নিয়েও লোকটার হম্বিতম্বি।
তন্নি নাক টেনে বলে
“বাড়ি যাবো আমি।
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৭
অর্ণব টোকা দেয় তন্নির কপালে। এবার তন্নি শব্দ করে কেঁদে ওঠে। মূলত সে ব্যাথা পেয়েছে।
অর্ণব বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে
” কাঁদতে থাক।
তিন দিন কাঁদবি। চোখের পানি ফুরাবে তারপর বাড়ি দিয়ে আসবো।