এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১০
তানিশা সুলতানা
ঘুম থেকে উঠে বালিশের পাশে ফোন পেতেই তন্নির মনটা খুশিতে নেচে ওঠে। সে অতি দ্রুত ডায়াল করে বাবার নাম্বারে। রিং হওয়ার সাথে সাথেই রিসিভ করেন তিনি। এবং ধমক দেয় তন্নিকে। গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে
“আমার পারমিশন ছাড়া তুমি যাওয়ার সাহস পাও কোথায়?
ব্যাস এতেই তন্নির চোখ ভিজে ওঠে। বাবাকে কিছু বলতে যায় কিন্তু কান্নার জন্য বলতে পারে না। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
” দুপুরের আগে তোমাকে বাড়িতে দেখতে চাই।
বলেই কল কাটে তারেক। তন্নি ফোন খানা বুকে জড়িয়ে হাঁটুতে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকে।
অর্ণব তন্নির হাতে ফোন দেখেই বুঝতে পারে শশুর মশাই ধমকেছে তার মায়াবতীকে। রাগ ওঠে অর্ণবের। চোয়াল শক্ত করে ফেলে। বা হাতে ঝাঁকড়া চুল গুলো পেছনে ঠেলে তন্নির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
অর্ণবের অস্তিত্ব টের পেয়ে তন্নি মুখ তুলে। ঠোঁট উল্টে বলে
“আমাকে এখুনি বাসায় দিয়ে আসুন। আব্বু ধমকে শেষ করে দিলো আমায়।
” আমার বউকে উনি কেনো ধমকাবে? সাহস দিয়েছে কে ওনাকে?
টাকলু উকিল। ওনার টাক আমি ফাঁটিয়ে দিবো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মুহুর্তেই তন্নির কান্না থেমে যায়। তার বাবাকে টাকলু বললো? হ্যাঁ মাথায় চুল কম। কিন্তু একেবারেই টাকলু না। চোখ মুখ খিঁচে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে তন্নি৷ অতঃপর ঘোর প্রতিবাদের সুরে বলে
“মোটেও আমার আব্বু টাকলু না। যথেষ্ট চুল আছে তার মাথায়।
অর্ণব বাঁকা হেসে বলে
” তুমি আমার বউ না কি?
থমথমে খেয়ে যায় তন্নি। এদিক ওদিকে দৃষ্টি ফেরায়।
“বলো?
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে।
” সত্যিই বাসায় যেতে হবে আমাকে। আমার বার্থডে আজকে। আমার আব্বু আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
অর্ণব মুখ বাঁকায়। মনে মনে কঠিন কিছু গালি দেয় শশুর মশাইকে। একটু শান্তিতে সময় কাটাতেও দিচ্ছে না। অর্ণব পরিকল্পনা করে ফেলে। সামনের বছরই বিয়ে করে ফেলবে। পরের বছর বাচ্চা নিয়ে নিবে। তন্নিকে জোর করে জমচ কলা খাওয়াবে। তাই তাদের জমচ বাচ্চা হবে।
সেই বাচ্চাদের ট্রেনিং দিয়ে আস্ত বদমাইশ বানাবে। তারপর শশুরের কাছে রেখে আসবে। শশুর শাশুড়ীর মাঝখানে ঘুমতে বলবে। আর প্রচুর জ্বালাবে টাকলু শশুরকে।
তাতে কি হবে?
শশুর মশাই রোমাঞ্চ করতে পারবে না।
নিজের বুদ্ধি দেখে নিজেই মুগ্ধ হয় অর্ণব।
কিন্তু কথা হলো
বাচ্চা তো হলো নাম কি রাখবে?
এখনই তো ঠিক করে ফেলতে হবে নাম।
তন্নি বিছানা থেকে নামতে যাচ্ছিলো। অর্ণব এক লাফে তন্নির সামনে বসে পড়ে।
“এই মায়াবতী
আমাদের বাচ্চার নাম কি রাখবো?
তন্নি খানিকটা ভয় পেয়ে যায়৷ দৃষ্টি বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে অর্ণবের মুখের দিকে। তন্নির ছোট্ট মাথায় এটাই ঢুকছে না বাচ্চা আসলো কোথা থেকে?
তন্নি বোকার মতো প্রশ্ন করে ফেলে
“ বাচ্চা আসবে কোথা থেকে?
অর্ণব দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। টাকলু বাপের বলদ মেয়ে। বুঝিয়ে লাভ নাই।
“ যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। বাসায় নিয়ে যাবো।
তন্নি খুশি হয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে।
অর্ণব চিন্তিত। কিছুতেই বিকেলের আগে তন্নিকে নিয়ে যেতো না সে। কিন্তু যেতে হচ্ছে। সাগর কল করেছিলো তাকে। কলেজে একটা ঝামেলা বেঁধেছে। অর্ণব ছাড়া ঝামেলা সামাল দেওয়া সহজ হবে না।
তন্নির মনটা একটু আনচান করছে। তন্নি ঠিক জানে মানুষটার সাথে আজকের পর আর খুব সহজেই দেখা হবে না।
কোথায় থাকবে সেটাও জানবে না। অথৈ বা পরিবারের সবার সাথে খুব সহজে কথা বলবে না। অথৈ মন খারাপ করবে। তন্নির কাছে দুঃখ প্রকাশ করবে।
তন্নিরও খারাপ লাগবে।
অর্ণবের গাড়ি মানিকগঞ্জ শহরে ঢুকে পড়েছে। আর একটু সময়ের মাঝেই বাড়ির সামনে গাড়ি থেমে যাবে। তন্নি আড়চোখে তাকায় অর্ণবের মুখ পানে। কেমন গম্ভীর করে রেখেছে আদলখানা।
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে বলে মিনমিন করে প্রশ্ন করে
“ চলে যাবেন আজকে?
“নাহহ তোমার সাথে বাসর করবো। করবে?
থমথমে খায় তন্নি। মনে মনে নিজেকেই নিজে বকে। কি দরকার ছিলো এর সাথে কথা বলার? আস্ত একটা ঠোঁট কাটা।
তখনই গাড়ি থেমে যায়। তন্নি তারাহুরো করে সিটবেল্ট খুলে ফেলে। গাড়ির দরজা খুলতে চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। অর্ণব সরু চোখে তন্নির তারাহুরো দেখছে। তন্নিও এবার অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। বোঝাতে চায় “খুলতে পারছি না”
তন্নির সাথে দৃষ্টি মিলতেই অর্ণব দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। গাড়ির পেছনের সিট থেকে বড় একটা প্যাকেট নিয়ে তন্নির দিকে এগিয়ে দেয়
“হ্যাপি বার্থডে মায়াবতী।
দেখো জ্যেলাসি ঠেলার মতো মানুষ আমি নই। তোমার কোনো বন্ধু থাকবে না। স্কুলে রিজভী নামের একটা ছেলের সাথে মোটামুটি কথা বলো। নেক্সট টাইম বলবে না। আমি তোমার ওপর নজর রাখি। কোথায় কি করো জানতে পারি।
সো বিকেয়ারফুল
ভুল ক্ষমা করবো না আমি। যাও
তন্নি প্যাকেট হাতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। অর্ণব দরজা খুলে দেয়। এক লাফে নেমে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে তন্নি। পেছনে ফিরে এক পলক অর্ণবকে দেখে নিতে ভুলে না।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাতের প্যাকেট দরজার কাছে রাখে। আঙুলে থাকা আংটি খুলে জামার আড়ালে সালোয়ারের রবার্টের ভাজে ফেলে দেখে নেয় বোঝা যাচ্ছে কি না।
অতঃপর শুকনো ঢোক গিলে অতি সাবধানে দরজায় টোকা দেয়।
বড় প্যাকেটে একটা চকলেট কেক কিছু চকলেট একটা টেডি কিছু গোলাপ ছিলো। যা তন্নি ভেতরে ঢোকার সাথে সাথেই ইতি বেগম খুলে দেখেন। মেয়ের প্রতি বেজায় অসন্তুষ্ট সে। এসব দেখলে তার স্বামী খুব রাগ করবে। তবুও মেয়েটা কেনো আনলো?
তন্নি মাথা নিচু করে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছে একটু পরপরই।
ইতি বেগম চাচ্ছিলো একটা ধমক দিতে। পরে মন পরিবর্তন করে ঠান্ডা গলায় বলে
“ভয় পাস তো এমন কাজ করিস কেনো?
আসুক তোর বাবা। লঙ্কা কান্ড বাঁধাবে আজকে।
মায়ের কথায় তন্নির ভয় আরও বাড়ে।
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৯
“যা ফ্রেশ হয়ে বই নিয়ে বসে থাক। বাবা ফিরলে সরি বলবি কয়েকবার।
তন্নি মাথা নেরে ঘরে ঢুকে। দরজা চাপিয়ে সালোয়ার থেকে আংটি বের করে। অতি যত্নে “অপেক্ষা” উপন্যাসের পাতার ভাজে রেখে বইটা আলমারির মধ্যে জামাকাপড়ের তলে লুকিয়ে ফেলে। মনে মনে অর্ণবকেও একটু বকে নেয়।
“লোকটা খালি বকা খাওয়ায় তন্নিকে।