এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৯

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৯
কাফাতুন নেছা কবিতা

তামীম চলে যাওয়ার সাথে সাথে সুবহার মনের ভয় আরো বাড়িয়ে দিয়ে গেলো। এতোদিন যেই ভয়টা নিজের মনের মধ্যে নিয়ে ঘুরছিলো,, আজকে ঠিক সেটায় হলো। জেনে গেলো সুবহার বাবা-মা সব কিছু।
সুবহার মা দেওয়ালে হেলায় দিয়ে দাড়িয়ে পরলেন,, আর সুবহার বাবা চুপচাপ যেয়ে নিজের মেয়ের পাশে বসে পরে। আর হাতটা ভালো ভাবে দেখতে থাকেন। কতটা কেটে পু’ড়ে গেছে। প্রায় হাতের বেশির ভাগই ব্যান্ডেজ করা!
সুবহা মাথা নিচু করে বসে রইলো। বাবা-মার সামনে মুখ তুলে তাকানোর সাহস টুকু পাচ্ছে না সে।
সুবহার বাবা খুব শান্ত ভাবে তাকে জিজ্ঞেস করে…

” কতদিন ধরে তামীম সরকার তোর পিছনে লেগেছে? ”
সুবহা মাথা নিচু করেই রাখে….
” ২৬ শে মার্চের কলেজ প্রোগ্রামের দিন থেকে!”
সুবহার বাবা নিজ হাতে মেয়ের চোখের পানি মুছে দেন।বাবার এমন আচরণে খানিকটা সুবহা ও বোকা বনে যায়। কারণ সে কখনোই এতো ঠান্ডা আচরণ আশা করেনি তার বাবার থেকে। ছোটোবেলা থেকে সে তার বাবাকে খুব রাগি হিসেবেই জেনে আসছে।
” এতোদিন কেন বলিস নি বোকা মেয়ে। নিজে নিজে এতো কিছু সহ্য করে গেলি!”
বাবার কথা শুনে সুবহা অঝোরে কান্না শুরু করে দেয়।
” আমি… আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন আব্বু!”
” আমি আমার মেয়েকে চিনি। তার দ্বারা এমন কোনো কাজ হবে না যেটাতে আমার সম্মান যাবে!”
সুবহার মা এসে দাড়ায় তাদের সামনে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তামীম সরকার কতটা ভয়ংকর জানো না তুমি? কীভাবে বাঁচাবে মেয়েকে? পাতালে লুকিয়ে রাখলে ও খুঁজে বের করবে!”
কথা গুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে সুবহার মা!
” এটা কান্নার সময় না সুবহার মা! পরে অনেক সময় পাবে কান্নার!! ”
” তাহলে কী করতে বলছো তুমি? মেয়েকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিবো?”
সুবহার বাবা কিছু বলে। সোজা উঠে বাইরে বেরিয়ে যায়।আর সুবহার মা তার মেয়ের পাশে বসে পড়ে।
“তুই কী তামীম কে..?”
” নাহহহ! বাসি না মা!”
সুবহার কথা শুনে তার মা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু যার ভয়ে আরশি নগর থেকে শুরু করে পুরো দেশ ভয়ে থাকে তাঁর হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবে নিজের মেয়েকে। তামীম এতোটায় ভয়ংকর যে তার বিরুদ্ধে আজ অব্দি কেউ আওয়াজ তুলেনি। সরকারের ছেলের বিরুদ্ধে যাবে এমন লোক খুব কমই আছে। বরং নেই বললেই চলে।

হসপিটাল থেকে বেরিয়ে তামীম আর তার পঞ্চ পান্ডব জীপ নিয়ে সরকার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
” ভাই কামডা কী ঠিক হইলো?”
” কোন কামের কথা কস সাকিব?”
” ভাই আপনি হয়লেন তামীম সরকার, আপনার ব্যাপাটায় ঝাক্কাস! ”
” সোজা পয়েন্টে আয়!”
” মানে ভাই! এতো সাধাসিধা ভাবে ভাবিসাপরে বিয়ার জন্য কয়লেন! একটু অন্য রকম ভাবে কয়লে হয়তো না!”
” এখন কী ব্যান্ড-পাটি নিয়ে যাবো বিয়ের প্রপোজাল দিতে!”
” মন্দ হয় না ভাই!”
তামীম খুব রাগি দৃষ্টিতে তাকায় সাকিবের দিকে। পরক্ষণেই তার মুখের নকশা পরিবর্তন হয়ে যায়। তামীম এবং তার মনোভাব কেউ সহজে বুঝতে পারে না। আর না কারো বুঝার স্বার্ধ আছে।

—-শিকদার বাড়ি——–
সুবহার বাবা তাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। আর সুবহাকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে তার মাথার কাছে। যতক্ষণ না সে ঘুমিয়ে পরে। সুবহা ঘুমিয়ে পড়ার পর তার বাবা-মা তাদের রুমে যে যার মতো গালে হাত দিয়ে বসে পড়ে।
” সুবহার পাসপোর্ট টা কোথায় সুবহার মা!”
” আলমারিতে আছে!”
” দাও!”
“এতো রাতে পাসপোর্ট দিয়ে কী করবে তুমি?”
” ভিসার জন্য এপলাই করবো। ওকে ওর ফুপির কাছে পাঠিয়ে দিবো! ”
” শুক্রবারে তামীম সুবহাকে বিয়ে করতে চায়, আর এই পাঁচ দিনের মধ্যে ভিসা কীভাবে পাবে তুমি?”
সুবহার মায়ের কথা শুনে মঈনউদ্দীন শিকদার ও কিছু টা টেনশনে পরে যান। সত্যিই তো।৷ কীভাবে পাবে উনি এতো তাড়াতাড়ি ভিসা। কিন্তু কিছু একটা তো করতেই হবে। এভাবে নিজের হাতে মেয়েকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারবে না উনি।

সরকার বাড়িতে ফিরে এসে তামীম সোজা হল রুমে চলে যায়। তানভির সরকার তখন ও নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিটিং এ ব্যস্ত। তামীম হল রুমে পা রাখতেই নেতারা যে যার মুখে তাকায়, আর ভয়ে তাদের ঘাম ছুটতে থাকে। কারণ তামীম আসবে আর খু*ন খারাবি হবে না।এটা কখনোই সম্ভব নয়।
” আব্বাজান! ”
” জ্বী বাবাজান!”
” আমি বিয়া করতে চায়!”
তামীমের হঠাৎ বিয়ের কথা শুনে উপস্থিত সকলের মুখে একটু অন্য রকম চিন্তা চলে আসে। কী-জানি কোন মেয়ের কপাল পুড়লো যে তামীমের মতো ভয়ংকর লোক তাকে বিয়ে করতে চায়!
” আলহামদুলিল্লাহ! তা বাবাজান মেয়ে কে,?”
তামীম তার আব্বাজানের পায়ের কাছে বসে পড়ে।
” আগে বলেন আপনি খুশি তো?”

তানভির সরকার ছেলের কথা শুনে একটু মুচকি হাসেন।আর মাথায় হাত বুলাতে থাকেন!
” ছেলের বিয়েতে বাবা খুশি হবপ না? কবে করতে চান বলেন। আমি নিজে আপনার বর যাত্রা নিয়ে বর হবো!”
তানভির সরকারের কথা শুনে তামীম তার পায়ে চু’মু খায়।
” আব্বাজান আপনি আমার জীবন! আপনি খুশি হয়ছেন মানে আমার আর কিছু লাগবে না!”
তামীম উঠে দাড়ায় নেতাদের সামনে। কিন্তু আজকে তাদের কিছু না বলে সোজা উপরে চলে যায় সে। তামীমের এমন পরিবর্তনে তানভির সরকার নিজে ও কিছুটা অবাক হন। যাক অবশেষে তার ছেলেটা খু*ন খারাবি থেকে বের হলো।
তামীম উপরে যেয়ে সোজা সুবহাকে কল দেয়। কিন্তু কড়া মেডিসিনের কারনে সে কল রিসিভ করতে পারে না। আজকে সুবহা কল ধরাতে তামীম তেমন একটা প্রতিক্রিয়া দেখালো না। হয়তো মেয়েটা ঘুমাচ্ছে। এতোদিন পর দেখা হলো তাও তাকে হসপিটালে পাঠিয়ে ছাড়লো।

———পরেরদিন ————–
সারাদিনে একটু স্বাভাবিক হয় সুবহা। হাতের টনটন ভাবটি ও একটু কমেছে তার।
রুমের মধ্যে চুপচাপ বসে ছিলো সুবহা। ঠিক তখনই তার মা ভিতরে আসে।মুখে তার হতাশার চিহ্ন।
” সুবহা!”
” জ্বী মা?”
” তামীম সরকার গাড়ি পাঠিয়েছে!”
তামীমের নাম শুনতেই সুবহার শরীরে ভয়ের ঢেউ খেলে যায়! সুবহা অসহায়ের দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঠিক তখনই তার ফোনে টেক্সট আসে।
” ১৫ মিনিটের মধ্যে আসো, না-হলে আমি আসতাছি নিতে!”
তামীমের টেক্সট দেখে সুবহার মুখ আরো ফ্যাকাসে হয়ে যায়। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরে।
সুবহা উঠে রেডি হতে থাকে, ঠিক তখনই আরেকটা টেক্সট আসে!

” হিজাব পড়ার দরকার নেই, নরমালি আসো!”
যেই হিজাবের জন্য এতো কিছু হলো আজকে তাকে সেটায় পরতে বারং করছে তামীম। সুবহা একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রেডি হতে থাকে। তারপর নিচে নেমে আসে।
সুবহার মা তখন হল রুমে বসা! সুবহাকে নামতে দেখে উনি তার কাছে যায়।
” সাবধানে যাস! ”
” হুম!”
সুবহা বাইরে এসে সোজা তামীমের পাঠানো গাড়িতে বসে পরে। সে জানে না তার গন্তব্য কোথায়। আদোও কী তার এই যন্ত্রণাময় গন্তব্য শেষ হবে কখনোও?

গাড়ি আজকে পোড়া বাড়ির জায়গায় বিশাল একটি রিসোর্টে যায়। অবশ্য জঙ্গলের ভিতরে যে এমন কোনো কিছু ছিলো বা থাকতে পারে সেটা জানা ছিলো না সুবহার। সে নেমে চারপাশে এক পলকে চোখ ঘুড়িয়ে নেই।
সুবহা নামতেই কয়জন লেডি সার্ভেন্ট এসে তাকে সামনের দিকে নিয়ে যায়। সুসজ্জিত একটি মাঠের মাঝখানে দাড় করায় তাকে।
সুবহা তখন ও চারপাশটা দেখতে ব্যস্ত। কোনো মানুষ নেই। আর না আছে তামীম। তাকে এখানেই বা কেন আনলো সেটা ও জানে না সে। চুপচাপ মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে রইলো সুবহা।
কিছু ক্ষণ পর সুবহা খুব জোরে জোরে কিছু একটা আসার শব্দ পেতে লাগলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো তেমন কিছু নেই। তাহলে শব্দ কোথায় থেকে আসলো।
ঠিক সেই সময়ই সুবহা উপরে তাকালো। প্রায় ৫-৬ টা হেলিকপ্টার তার মাথার উপরে গোল করে ঘুরতে লাগলো।
সুবহা কিছু বুঝে উঠার আগেই তার উপরে ভারি গোলাপ ফুলের বর্ষণ শুরু হলো। আর বিভিন্ন রং দিয়ে আকাশে ৭-৮ টি ফাইটার প্লেন দিয়ে লেখা হচ্ছে।

” আমার বউ হবা?”
ঠিক তখনই একটি কালো চপার সুবহার থেকে একটু দূরে দাড়ায়, আর তার ভিতর থেকে কালো পাঞ্জাবি পরিহিত তামীম নেমে সুবহার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। হাতে তার একগুচ্ছ গোলাপ। তামীমের হাতে তার গোল্ডেন চাপাতি’র জায়গায় গোলাপ বিষয়টি কেমন যেনো ভূতের মুখে দোয়া কালামের মতো!”
তামীম এসে সোজা সুবহার সামনে আর তার হাতে গোলাপ গুলো দিয়ে দেয়।
” আমার বউ হবা?!”
সুবহা মনে মনে না না করতে থাকে কিন্তু মুখ ফুটে সেটা বলার সাহস টুকু হয় না তার!
” কী হলো হ্যাঁ বলো!”
তামীমের ধমক শুনে সুবহা সাথে সাথে মাথা নাড়ায়।
” জ্বী! ”
” গুড!”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ১৮

তামীম নিজের পকেট থেকে একটি হীরার আংটি বের করে আর সুবহাকে সেটা পরিয়ে দেয়। ঠিক তখনই আবার ও আকাশ থেকে গোলাপের পাপড়ির ভারি বর্ষণ হতে থাকে। আর হেলিকপ্টা গুলো থেকে তার পঞ্চ পান্ডবদের আনন্দ উল্লাস ভেসে আসে।
” তোমাকে একটু জড়ায় ধরি, কিছু মনে কয়রো না!”
তামীম আলতো করে সুবহাকে জড়িয়ে ধরে। আর আকাশে বাজি ফুটতে থাকে। গোলাপের পাপড়ির বর্ষভ ও চলতেই থাকে। এ যেন এক রুপকথার কাল্পনিক চিত্র।

এমপি তামিম সরকার পর্ব ২০