এমপি তামিম সরকার পর্ব ২২
কাফাতুন নেছা কবিতা
” সুবহা!”
” জ্বী!”
” আমারে ঠকাইয়ো না! না-হলে নিজের হাতে তোমাকে মা’রতে খুব কষ্ট হবে আমার!”
তামিম চোখ বন্ধ করেই ঠান্ডা মস্তিষ্কে সুবহাকে থ্রে’ট দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, আর সুবহা চুপচাপ বসে থাকে। এভাবে প্রায় অনেক ক্ষণ ধরে তামিম নিজের চোখ বন্ধ রাখে। সুবহা ভেবেছিলো হয়তো তামিম ঘুমিয়ে গেছে, তাই সে মাথায় হাত বুলানো বন্ধ করে দেয়।
” স্বামীর সেবা করা স্ত্রীর দ্বায়িত্ব সুবহা!”
সুবহা আমতা আমতা করে বলে,,
” আমি ভেবেছি আপনি ঘুমিয়ে গেছেন!”
তামিম চোখ খুলে ঠোঁটের কিনারায় হাসি এনে সুবহার দিকে তাকায়!
” স্বামী হিসেবে মানো তাহলে আমাকে?”
তামিমের কথায় সুবহা কিছুটা লজ্জাবোধ করে আর অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেই। আসলেই তো, তামিম তো বলেছে স্বামীর সেবা করা স্ত্রী দ্বায়িত্ব! সে তো সুবহাকে নিজের স্ত্রী বা সে সুবহার স্বামী এমন কিছু তো বলেনি।
নিজেই নিজের খামখেয়ালির জন্য মনে মনে খুব লজ্জা বোধ করে সুবহা। কীভাবে তামিমের চোখে চোখ রাখবে বুঝতে পারে না!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অবশ্য এর আগে ও যে সুবহা তামিমের চোখে চোখ রেখে কথা বলতো বিষয়টি এমন না! কিন্তু আজকের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা! সুবহার লজ্জা পাওয়া দেখে তামিম মুডে চলে আসে।
সুবহার এই খুঁটি নাটি বিষয়গুলো তামিম খুব পছন্দ করে।তাই তার সমস্ত বিষয় খুব মনোযোগ সহকারে দেখে তামিম। সুবহার মাথায় কয়টা চুল আছে হয়তো সেটা ও তামিম বলে বলে।
তামিম সুবহার হাত নিয়ে তার বুকে রাখে! তামিমের এমন কান্ডে হঠাৎ করেই তামিমের দিকে চোখ যায় সুবহার। দু-জনের চোখ একে অপরের দিকে পরে।
” মেয়ে মানুষ লজ্জা পেলে তার সৌন্দর্য আরো তিনগুন বেড়ে যায় সুবহা!”
তামিম সুবহার চোখে চোখ রেখে খুব আবেগ দিয়ে কথাটি বলে!
” কিন্তু রাতের বেলা মেয়েদের নির্জল্য হতে হয়, না-হলে স্বামী আরেক বেডির কাছে যায়”!”
তামিমের এমন লাগামহীন কথা শুনে সুবহা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে হালকা হেসে দেয়!
সুবহাকে হাসতে দেখে তামিমের নির্দয় মনের প্রেমিক পুরুষ যেনো মন খুলে বের হয়ে আসতে চায়!
” যাক আলহামদুলিল্লাহ! আমার বউ সবই বুঝে। ন্যাকা বিহীন বাক প্রতিব’ন্ধ! ”
সুবহাকে বাক প্রতি’বন্ধ বলায় সে বমভোলার মতো মুখ করে ফেলে! আর বোকাদের মতো বলে বসে…
” আমি বাক প্রতি’বন্ধ? ”
সুবহার মুখ থেকে প্রথবার কোনো প্রশ্ন শুনতে পেরে তামিম একটু হলে ও নরম হয়!
তামিম সুবহার কোল থেকে মাথা সরিয়ে উঠে বসে। আর সুবহার হাত ধরে টেনে তাকে নিজের কো’লে বসায়!
” সারা দিনে চারটা ও তো কথা বলো না আমার সাথে, কিন্তু কিছু বললেই মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকাও! ঘাড়ের রগে কী সমস্যা আছে? বার বার মুখ ফিরিয়ে নাও!”
তামিমের কথা শুনে সুবহা আবার মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে দেয়!
” যেই লাউ, সেই কদু!”
তামিমের হঠাৎ করে সুবহাকে টেনে নিজের কোলে বসানোতে সুবহার অস্বস্তির মাত্রা বেড়ে যায়। তামিম ও খুব শক্ত করেই সুবহাকে ধরে। তারপর হঠাৎ করে সুবহার পিঠে হাত দেয়!
” দেখি তোমার ঘাড়ের রগ আসলেই বাঁকা কি-না! ”
সুবহা সুবহার চুল সরিয়ে তার গলার রগ দেখতে যায়! আর সুবহা দু-হাতে ঠেলে ও তামিমকে সরাতে পারে না। আজকে তামিম সুবহার গলার রগ দেখতেই ছাড়বে। কিন্তু এতে করে যে তামিম সুবহা নিজেদের অজান্তে এতো কাছে চলে এসেছে তা তামিমের ও খেয়ালের বাইরে ছিলো।
জানালা দিয়ে খুব জোরে বাতাস এসে সুবহার চুলগুলো তামিমের সারা মুখে উড়তে থাকে। তখন তামিমের ধ্যান ফিরে যে, সে সুবহার খুব কাছে চলে এসেছে।সুবহার নিঃশ্বাস তামিমের মুখে পড়ে।
শুকনো ঢোক গিলে তামিম। যেভাবে কন্ট্রোললেস হয়ে মানুষ খু*ন করে তামিম! ঠিক সেভাবেই কন্ট্রোললেস হয়ে নিজেই সুবহার ভালোবাসার বেড়াজালে খু*ন হয়ে যাচ্ছে তামিম।
তামিম নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে সুবহার গাল ধরে তার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসে, ঠোঁ’টে ঠোঁট বসাতেই আবার তাড়াতাড়ি করে সুবহা দূরে সরিয়ে দেয় তামিম!
” এতো রাত অব্দি মেয়ে মানুষের বাইরে থাকা ঠিক নয় সুবহা! চলো বাড়ি চলো!”
তামিম উঠে সুবহার হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতে থাকে। তামিম রুম থেকে বের হতেই তার পঞ্চ পান্ডব ও সাথে সাথে বের হয়! তামিম খুব তাড়াতাড়ি সুবহার হাত ধরে হেঁটে যেতে থাকে। বিষয়টি তার পঞ্চ পান্ডবের নজরে ও আসে!
” ভাইরে এমনে নামতে দেখে আমার কিন্তু টেনশন লাগতাছেরে শা*লার ভাইরা!”
মাহিরের কথা শুনে সাকিব নিজের পকেট থেকে একটি বি*ড়ি বের করে, আর তার সামনে দেয়!
” যখনই থাকবি টেনশনে, মারবি টান ব্যানসনে!”
সাকিবের কথা শুনে বাকিরা হাসতে যেয়ে ও পারলো না! তামিম ভালো মুডে এসে আবার এমন তাড়াতাড়ি করে সুবহার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে! বিষয়টি খুব হালকা ভাবে তারা নিতে পারে না!
তামিম সরকার ভয় পাওয়ার মতো লোক নয়! কিন্তু আজকে সে একটু হলে ও ঘামছে। এটা কী ভয় না-কি অন্য কিছু? তারা চুপচাপ তামিমের পিছু পিছু আসতে থাকে।
তামিম সুবহাকে গাড়িতে বসিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। সুবহা ও চুপচাপ বসে পরে। যাক এবার সে বাড়ি যেতে পারবে।
কিন্তু তামিমের এমন কাজে সুবহা খুব রেগে যায়। কেন তামিম বার বার নিজের গন্ডি পেরিয়ে সুবহার কাছে আসতে চায়! এই বিষয় গুলো সুন্দর স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না সে!
দরজার লাগানোর পর তামিম গাড়ির গেট ধরেই দাড়িয়ে থাকে কিন্তু ক্ষণ! আবার কিছু একটা মনে করে দরজা খুলে সুবহার হাত ধরে তাকে নিয়ে খোলা গার্ডেনে নিয়ে যায়।
তামিম যে আসলে কী চায় সেটা বুঝা কারো সাধি নয়! তামিম সুবহাকে নিয়ে গার্ডেনে গেলে ও বাকিরা যায় না। তামিম সুবহা কাছাকাছি থাকলে তাদের দিকে কেউ ভুল বশত ও তাকায় না!
তামিম সুবহাকে নিজের সামনে দাড় করায়!সুবহা মাথা নিচু করে থাকে। কিন্তু তার মুখ কিছুটা যে গম্ভীর সেটা তাকে দেখলেই বুঝা যায়!
” মেয়ে মানুষ সম্মানের জাত সুবহা! তাদের সম্মান দিয়েই রাখা উচিত! বিয়ের আগে আমি এমন কিছু করবো না যেটা দ্বারা তোমার অসম্মান হয়!”
সুবহা খুব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তামিমের দিকে! তামিমের মুখে এমন কথা শোনা ও কিছুটা অবাক করার মতো!
” আমি চাইলে তোমাকে কাছে পাওয়া কোনো ব্যাপারই না সুবহা! এতোদিনে তোমার সারা শরী’রে আমার কাম’ড়ের দাগ থাকতো!”
মাঝে মাঝে তামিমের কথা শুনে সুবহার মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শুদ্ধতম পুরুষ তামিম! কিন্তু তার কাজ গুলো দেখলে সুবহার এই চিন্তা পরিবর্তন হতে দু- সেকেন্ড ও সময় লাগে না!
তামিম সুবহা দু-জনেই চুপচাপ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। না তাদের মুখে কোনো হাসি আছে না তাদের মুখে কোনো কিছু চিন্তার ছাপ আছে। এ যেনো এক নিদারুণ চাহনি তাদের!
” বাড়ি যাও সুবহা! আমি বেশিক্ষণ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না!”
সুবহা চুপচাপ চলে যেতে থাকে গাড়ির কাছে! কিছু দূর যাওয়ার পর তামিম আবার সুবহাকে জোরে ডাকে!
” এই সুবহাআআআআ!”
তামিমের ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকায় সুবহা!
” কিছু না, বাড়ি যাও!”
সুবহা খুব জোরে হেঁটে হেঁটে যেতে থাকে। আর তামিম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুবহার চলে যাওয়ার দিকে।
সুবহার গাড়ি চলে যাওয়ার পর তামিম গার্ডেনের ঘাসেই শুয়ে পরে! তামিমকে ঘাসের উপরে শুয়ে পড়তে দেখে তার পঞ্চ পান্ডবরা ও এসে চারপাশে শুয়ে পরে তাকে ঘিরে!
” ওই প্রেম যে করে সে জানে! হুমম! কী জাদু করলি সুবহারে!”
তামিম খুব জোরে জোরে গান গেয়ে সুবহার নাম নিয়ে তলব করতে থাকে।
তামিমের এমন প্রেমিক পুরুষ দিকটা তার পঞ্চ পান্ডবের কাছে খুবই নতুন! র’ক্ত নিয়ে খেলা তামিম সরকার আজকে একটা মেয়ের জন্য প্রলাপ বকছে!
” নয়া নয়া প্রেরেমে এমনই হয়!”
সাকিবের কথা শুনে তামিম আকাশের দিকে তাকিয়ে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলে….
” এই শা*লারে চুবা পানিতে!”
তামিমের নির্দেশ শুনে বাকিরা তাড়াতাড়ি করে উঠে সাকিবের হাত পা ধরে তাকে চ্যানডোলা করে সুইমিংপুলে ফেলে দেয়! তারপর তামিম এসে নিজে ও পুলে নেমে পড়ে । তামিমকে নামতে দেখে বাকিরা ও নেমে পড়ে।
” প্রেরেম মানুষরে এই রাতের বেলা পানিতে ও ফেলাইয়া দেয়!”
সাকিব আবার নিজের মুখ ফসকে কথা বলার জন্য তামিমের টার্গেটে চলে আসে!
” তোরে এখন আমি ড্রেনে চুবামু শা*লা!”
” ভাই আমরা ওরে ধরতাছি! ”
বাকি চারজন সাকিবকে ধরার জন্য গোল হয়ে তার কাছে যেতে থাকে।
” ভাবির কমস ভাই! আমারে মাফ কয়রা দেন!”
এমপি তামিম সরকার পর্ব ২১
সুবহার কসম শুনে তামিম হাত দিয়ে ইশারা করে বাকিদের থামতে বলে।
” শা*লা বহুত বদজ্জাত আছোস তুই!”
এভাবেই তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব পানিতে ডুবে থাকে। তামিম নিজের থেকে ও বেশি তার এই পাঁচ জন সঙ্গীকে ভালোবাসে। তাদের কিছু বলা আর তামিমের সাথে পাঙ্গা নেওয়া একই কথা! অবশ্য এই আরশি নগর বা পুরো দেশে তামিমের সাথে পাঙ্গা নেওয়ার মতো লোক এখন ও জন্মই নেই নি।