এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৭
কাফাতুন নেছা কবিতা
” হার্ট অ্যাটাক আম্মা! ”
” হ্যা?”
” হঠাৎ মাথা চক্কর দিয়ে উঠছে আম্মা!”
আয়েশা বেগম তামিমের এমন কান্ড কারখানার পিছনের রহস্য খুব তাড়াতাড়ি ধরতে পারে!
” বাপের মতোই হয়ছে!”
সুবহা ও বাঁকা চোখে তাকিয়ে থাকে তামিমের দিকে! তামিম যে হঠাৎ এমন করে বসবে সেটা অবিশ্বাস্য! সুবহা ও বুঝতে পারে তামিমের হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার বিষয়টি!
” আমাকে নাটক কমিয়ে দেখতে বলে, আর অন্য দিকে সব থেকে বড় নাটক বাজতো নিজেই!”
সুবহা মনে মনেই কথা গুলো বলতে থাকে! তামিম ভদ্র ছেলের মতো চুপচাপ হেঁটে সুবহার পাশে যেয়ে বসে! এতো মহিলা মন্ডলী যে তার আশেপাশে সেটা যেনো তামিমের চোখেই পড়ছে না, তার চোখ জুড়ে এখন শুধুই সুবহা! তামিম বেসরমের মতো একদম সুবহার গা ঘেসে বসে! তামিম ঘা ঘেসে বসতেই সুবহা একটু নড়েচড়ে উঠে, আর হালকা সরে বসে। সুবহা সরতেই তামিম আবার ও সুবহার শরীর ঘেসে বসে। আর তার হাত ধরে ফেলে!
” আজ অব্দি কোনো মাইয়া আমার হাত ধরলো না!”
” তোর হাত ধরার লগে লগে তো মাইয়ার হাতে বো’ম ব্লাস্ট হইবো, ধরবো কেমন?”
” কাললললললাাাাা!”
” বো’মমমাাাাা”!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তামিম সুবহার এমন মুহুর্ত দেখে সাকিব খুবই আফসোস করে! কিন্তু তার আফসোসের উপরে এক বালতি পানি ঢেলে দেয় কালা মানিক! তাদের পঞ্চ পান্ডবের একটাই নীতি! কেউ কাউকে ছাড়া প্রেমে পড়তে পারবে না! যেহেতু সবাই সিঙ্গেল, তাই যদি কেউ প্রেমে পড়ে সেটা হবে সব থেকে বড় অন্যায়!
তামিম আর সুবহাকে এতো ঘনিষ্ঠ দেখে ছন্দা খুবই জ্বলতে থাকে! আর সে হতে চেয়েছিলো তামিম সরকারের বউ! আরশি নগরে বউ রানি! কিন্তু মাঝ থেকে সুবহা উড়ে এসে জুড়ে বসলো! তাই ছন্দা একদমই সহ্য করতে পারে না! তামিমকে দেখে ভয় পেতে সে ও, কিন্তু তামিমের পাওয়ার তার খুবই ভালো লাগতো! সবার তামিমকে ভয় পাওয়া, কোথাও যাওয়ার আগেই কাজ হয়ে যাওয়া, ছোটোবেলা থেকেই ছন্দাকে তামিমের এই পারসোনালিটি খুবই আর্কষণ করে! কিন্তু আজকে তামিমকে সুবহার সাথে এতো ফ্রী হতে দেখে তার সমস্ত স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়!
” আম্মা আমি একটু আসতেছি?!”
” এই তো এলি!”
” জরুরি কাজ আছে আম্মা!”
তামিম উঠে হনহনিয়ে কোথায় যেনো বেরিয়ে যায়! তামিমের সাথে সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও চলে যায়! তামিমের মাথায় যে কী চলে না চলে সেটা তামিমই ভালো বলতে পারবে!
সুবহাকে ও উপড়ে যেতে বলে আয়েশা বেগম, এতোক্ষণ ধরে নিচে বসে আছে নিশ্চয়ই অনেক ক্লান্ত! আয়েশা বেগম সুবহাকে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিতে বলে!
সুবহা উপরে এসে তার ভাইয়ের রুমে চলে যায়! এই নিয়ে সকাল থেকে তিনবার এসেছে সুবহা তার ভাইয়ের কাছে! পৃথিবীতে এখন আপন বলতে সুবহার শুধু তার ভাই আছে! নিজের বাবা থেকে ও নেই! এতো ধাক্কা সামাল দেওয়া খুবই কষ্টকর!
সুবহা এসে তার ভাইয়ের কাছে বসে। মাথায় হাত রাখে!
” এখন কেমন আছে ও ডাক্তার!”
” মোটামুটি ভালো! অনেক স্ট্রং আপনার ভাই মেডাম, খুব তাড়াতাড়ি রিকোভার করছে!”
সুবহা তার ভাইয়ের কপালে চু’মু দেয়! আর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়!
” এখন আমার লোকাল গার্জিয়ান ও! স্ট্রং তো হতেই হবে!”
সুবহা উঠে চুপচাপ চলে যেতে থাকে তামিমের রুমে! এখন তার একটু একা থাকা উচিত! এতো কম বয়সে এতো বড় বড় ধাক্কা সামলানো চারটে খানি কথা নয়!
” বাহ! বেশ ভালোই তো দেখতে তুমি! ”
মাঝ পথে হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠ কানে আসতে থমকে যায় সুবহা! পিছনে ফিরে তাকায়!
” মানতেই হবে খুব রূপবতী তুমি!”
” ধন্যবাদ! ”
” হুমমম! তা এই রুপ দিয়েই কী তামিম ভাইকে পটিয়েছো না-কি? ”
হঠাৎ এমন কথায় সুবহা একটু থমকে যায়!
” অবশ্য তোমাদের মতো ছোটো পরিবারের মেয়েরা তো নিজের রুপই কাজে লাগায় বড় লোক ছেলেদের পটাতে! আর তুমি তো ডাইরেক্ট মন্ত্রীর ছেলেকে পটালে। ছোটো’লোক মেয়েরা মনে হয় এভাবেই বিয়ে বসে!”।।
” আপনি মনে হয় নিজের সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন! মুখে পানি দিন ধ্যান ফিরে আসবে!”
সুবহার কাটকাট কথাতে বেশ বিরক্ত হয় ছন্দা!তেড়ে আসে সুবহার দিকে! ছন্দা তেড়ে আসতেই সুবহা হাত ভাজ করে দাড়িয়ে পড়ে! যেনো কিছুই হয়নি তার এই ভাবমূর্তি দেখে!
” তোর সাহস তো কম না মেয়ে! আমাকে কথা শুনাস!”
” তামিম সরকারের বউয়ের সাহস থাকবে না তো কার সাহস থাকবে!”
পিছন থেকে তামিমের কন্ঠ ভেসে আসতেই সুবহা এবং ছন্দা দু-জনেই ভুত দেখার মতো তাকায়!
তামিম চোখ মুখ শক্ত করে সামনে আসতে থাকে!
তামিমকে সামনে আসতে দেখে ছন্দার কলিজার পানি শুকিয়ে যায়! সাথে সাথে সে তামিমের হাতের দিকে তাকায়! না গোল্ডেন চাপাতি নেই! এই যাত্রায় তাহলে বেঁচে যাবে সে। কিন্তু পিছনে তার পঞ্চ পান্ডবকে দেখে আবার ও ভয় পায় ছন্দা! কারণ তাদের কাছেই থাকে তামিমের চাপাতি!
তামিম এসে সোজা সুবহার পিছনে দাড়ায়, তারপর সুবহার হাত ধরে খুব জোরে ছন্দার গালে কষিয়ে চ’ড় মারে!।।
তামিম যে এমন কিছু করবে সেটা উপস্থিত কেউ টের পায়নি!
” মেয়ে মানুষ মায়ের জাত! তাদের গায়ে আমি হাত দেয় না! কিন্তু আমার বউকে কিছু বললে জাত পরে মা’রই আগে! জে’ন্ডার দেখবো না!”
তামিমের চোখ রাঙ্গানি দেখে ছন্দা নিজের গালে হাত দিয়ে খুব জোড়ে জোড়ে চলে আসে। আর পিছনে ফিরে তাকায় না! তাকানোর সাহস নেই তার! জীবনের ভয় কার না থাকে!
ছন্দা চলে যেতেই তামিম সুবহার হাত ধরে তাকে নিয়ে রুমে আসে সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও! তারা কয়েকটা বক্স ভেতরে রেখেই চলে যায়! তারা যেতেই তামিম দরজা লক করে দেয়!
তামিমের দরজা লক করা দেখেই সুবহা শুকনো ঢোক গিলে!
তামিম সুবহার কাছে এসে তার হাত ধরে তাকে বেডে বসায়! তার বক্স গুলো থেকে এক এক করে ৩৬৫ টি লাল শাড়ি বের করে দেয় সুবহার হাতে! এতো গুলো শাড়ির মাঝে বসে নিজেকে শাড়ি বিক্রেতা মনে হয় সুবহার!
তামিম সুবহার পায়ের কাছে তার কোলে ভর দিয়ে বসে!
” খোদার কসম সুবহা! তোকে দেখে আজকে আমি হার্ট অ্যাটাক করতে করতে বেচে গেছি! এই লাল রং মনে হয় তোর জন্য তৈরি! ”
তামিম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুবহার দিকে! তারপর তার চোখ থেকে কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে কাজল এনে সুবহার কানের লতির নিচে দিয়ে দেয়!
” নজর না লাগে যেনো চান্দের ও গায়!”
তামিম সুবহার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে! চোখের পলক ও পড়ছে না তার!
এক পর্যায়ে তামিম সুবহার হাত টান দিয়ে তাকে নিজের উপরে ফেলে দেয়, হঠাৎ এমন টানে তাল সামলাতে না পেরে সুবহা তামিমের গলা ধরে তার উপরে পড়ে যায়! তামিম খুব শক্ত করে সুবহার কোমর জা’প্টে ধরে!
” তুই আমার না হলে, তোকে পরপা’রে পাঠাতে ও হাত কাঁপবে না আমার সুবহা!”
তামিম খুব জোরে সুবহার কাঁধে চু’মু দেই! তামিমের এতো কাছে আসাটা খুব অস্বস্তি দেয় সুবহাকে! সে তামিমের হাত ছাড়িয়ে উপরে উঠে বসে!
” আর কতো সময় নিবি আমার হতে?”
” জানি না!”
” জোড় করি তাহলে?”
” এছাড়া আপনি কিছু পারেন ও না! ”
তামিম উঠে দাড়ায়!
” এখানে ৩৬৫ টা লাল শাড়ি আছে! আগামী এক বছর আমার সামনে লাল শাড়ি পড়েই থাকবি! না-হলে শাড়ি পড়ার জন্য তোর শ’রীর থাকবে না সুবহা!’
তামিম উঠে চলে যায় দরজার কাছে! আর সুবহা ও চুপচাপ বসে থাকে! তামিমের ভয়ংকর রুপ নতুন কিছু না সুবহার জন্য! বরং ঠান্ডা রূপই আঁতকের কারণ হয়ে দাড়ায় সুবহার জন্য! ঠান্ডা মস্তিষ্কে তামিম কতটা ভয়ংকর! সেটা সুবহার থেকে ভালো আর কেউ জানে না!
তামিম যেয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে লক খুলে ও বের হয় না! আবার সুবহার দিকে ফিরে তাকায়!
” আমাকে ভয়ংকর হতে বাধ্য করিস না সুবহা! দু-দিন চুপচাপ আছি বলে এটা ভাবিস না তোর বেইমানীর কথা ভুলে গেছি!”
কথায় আছে না, খা’ল কেটে কুমির আনা! তেমনি ঠান্ডা মস্তিষ্কের ভয়ংকর তামিমকে ও জাগিয়ে তুললো সুবহা! তামিম সরকার যে কেমন লোক দু- দিনের ব্যবহারে প্রায় ভুলেই গেছিলে সুবহা!
” তামিম সরকার হিসাব তুলে রাখার লোক না! আমাকে ঠকানোর ফল তো তুই পাবি! ভাই অসুস্থ্য, মা মৃত! তাই ৪০ দিনের শোক পালন করতে থাক! তারপর সারাজীবনের শোক পালন আমি করাবো তোকে!”
তামিম নিজের কালো চশমা পড়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে! আর দরজা লক করে দিয়ে যায়!
তামিম যাওয়ার পর পরই খুব শব্দ করে কেঁদে উঠে সুবহা!
” যাকে ভয় পায় তাকে ভালোবাসবো কীভাবে খোদা?এতো ভয়ংকর লোককে কীভাবে ভালোবাসবো? ”
তামিম রেগেমেগে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায় জীপে! তামিম বের হওয়ার সাথে সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও এসে হাজির হয়! গাড়ি সোজা পার্টি অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেই!
পার্টি অফিসে যেয়ে তামিম তার দলের লোকদের নিচে একত্রিত হতে বলে!
তামিম নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে প্রায় ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে হাজারের বেশি তার ছেলেপেলে নিচে হাজির হয়! আবার কিছু ভিডিও কলে জয়েন হয়!
তামিমের পঞ্চ পান্ডব ও বুঝে না হঠাৎ এতো লোক হাজির করার কারণ কী!
সকলে আসার পর তামিম একটা মাইক নিয়ে সকলের সামনে হাজির হয়!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৩৬
” আজকের পর থেকে আরশিনগর বা এই দেশের সকলের জন্য লাল রং নিষিদ্ধ! ”
পঞ্চ পান্ডব যে যার মুখের দিকে তাকায়! হঠাৎ হলো টা কি! লাল রং কেন নিষিদ্ধ হবে সারা দেশে!
” রাষ্ট্রপতী রাতে ডিক্লার দেওয়ার সাথে সাথে সব জায়গায় পোস্টার লাগানো যেন শেষ হয়ে যায়! পুরো দেশে লাল রং নিষিদ্ধ! এই রং শুধু আমার বউয়ের জন্য! ”
তামিমের নিজের বউয়ের জন্য পুরো দেশে লাল রং নিষিদ্ধ করার সাথে সাথে সকলে হাত তালি দিয়ে মেতে উঠে! আহা কী প্রেম! শখের নারীর জন্য পুরো দেশে লাল রংই নিষিদ্ধ করে দিলো এমপি তামিম সরকার!