এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫০
কাফাতুন নেছা কবিতা
” ইশ্বর কী তোমার, আমার মিলন লিখতে পারতো না?”
১ মাস ১৩ দিন পর সুইজারল্যান্ডের মাটিতে হাসি-খুশি সুবহাকে দেখে নিজের অজান্তেই গানের লাইন গেয়ে উঠে তামিম! সুবহাকে এতোটাই খুশি দেখাচ্ছিল যে তার জীবনে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেলো না তামিম! কিন্তু তামিম সরকার তো হেরে যায় না! হারিয়ে বাজিমাত করে!
যাকে প্রথমবার দেখার পর থেকে কখনো চোখের আড়াল হতে দেয়নি তামিম তাকে ছেড়ে এতোগুলো দিন থাকা জাহান্নামের সমান না হলে ও ঠিক তেমনই অনুভূতি হয় তামিমের! কিন্তু তামিম তখনই সুবহার কাছে যায়নি! কারণ তাকে খোঁজার জন্য দুদিন আগে ও গুনে গুনে ৬ জনকে পরপারে টিকিট ধরিয়ে দিয়েছে তামিম! এখন সুবহার কাছে গেলে তামিমের এই মাসের ৭ নং খু’নের লিস্টে সুবহার নাম ও চলে আসবে এইটা তে তামিম শতভাগ সিউর! তাই সুবহার উপরে কড়া নজরদারি করে তামিম!
দুই-দিন আগে
রাত ১:৪৫ মিনিট!
দোতারাটি থুয়ে তামিম ঘড়ি দেখে! ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে রাতের মধ্য ভাগ চলছে! তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব উঠে পোড়া-বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা আরশি নগরের পশ্চিম থানায় চলে আসে! আজকে আবার সেই ভয়ংকর তামিমকে দেখবে আরশি নগরের বাতাস! আজকে আবার আরশি নগরের মাটি পানির জায়গায় র’ক্তে রঞ্জিত হবে!
তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব থানায় উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে কো’পা শাসমু বাইরে চলে আসে! জানান দেই সব কিছু ঠিক আছে, শুধু কাজ শুরু হওয়া বাকি!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তামিম থানায় ঢুকে সোজা ১২ নং সেলের ভেতরে চলে যায়! যেখানে সালাউদ্দীন হক, মঈন উদ্দিন, এবং তাদের আরো ৪ জন সঙ্গী রয়েছে! নাহ! কেউ ঘুমাইনি! কো’পা শাসমুকে দেখে সালাউদ্দীন আগেই ধারনা করেছিলো আজকে কিছু একটা হতে যাচ্ছে! হলো ও তাই! ঠিক মধ্য রাতে তামিম তাদের সেলে প্রবেশ করলো! তামিম প্রবেশ করার সাথে সাথে সালাউদ্দীন একটু উচ্চস্বরে হেসে উঠে!
” পালাইছে রে পালাইছে…তামিম সরকারের বউ পালাইছে!”
খুব ব্যঙ্গ করে কথা গুলো বলতে থাকে সালাউদ্দীন! তামিম কোনো রিয়েকশন না দিয়ে তাদের সামনে রাখা চেয়ারে পায়ের উপরে পা তুলে বসে!
” ১…২…৩…৪?”
” সালাউদ্দীনরে ধইরা মা’র! ”
তামিমের পঞ্চ পান্ডব একসাথে বলে উঠে! আর হাসতে থাকে! তামিমের মুখে ও একটা রহস্যময়ি হাসি ফুটে উঠে! তাদের মুখে এমন ভাবহীন হাসি দেখে উপস্থিত ৬ জন বুঝে যায় আজকে তাদের জীবনের শেষ রাত হতে চলছে!
” মাহির…!”
” এই লন ভাই!”
তামিম নিজের গোল্ডেন চাপা’তিটি নিয়ে হাত দিয়ে পরিষ্কার করতে থাকে! তারপর চোশমা খুলে উপস্থিত ৬ জনের দিকে তাকায়!
” তো, বল! কে আগে আজাইরালের সাথে সাক্ষাৎ করবি?”
তামিমের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলে উপস্থিত সকলে!
” জেলের মধ্যে ৬ জনরে মা’রবি আর তুই কী বেঁচে যাবি তামিম?”
তামিম খুব জোরে জোরে হাসতে থাকে!
” রাজনীতিতে একটা প্রবাদ আছে… শত্রুর শত্রু বন্ধু!”
তামিমের কথার আগামাথা বুঝলো না কেউ!! এখানে কে কার বন্ধ?
” কাদের? ”
তামিম ডাকা মাত্র তাদের সেলে কান কাটা কাদের প্রবেশ করে! যাকে সালাউদ্দীন হক মিথ্যা মামলায় ফাঁসির আসামি বানিয়েছিলো!
কাদের কে দেখার পর সালাউদ্দীন হক ও একটু ভয় পেয়ে যায়! আর তামিমের প্লান ও বুঝে যায়! কাদের তো এমনিতেই তার বানানো ফাঁসির আসামি! সে যদি আরো ৬ টা খু’ন ও করে ঝুলবে তো সেই একবারই ফাঁ’সিতে!
তামিমের ব্রেন যে শতভাগ চলে এটা সালাউদ্দীন জানতো! কিন্তু বউয়ের চলে যাওয়ার পর যে ১০০০ বারের ও বেশি ব্রেন চলবে এটা কেউ কল্পনা ও করেনি!
” কয়জন কে মা’রতে পারবি?”
” ভাই ৬ জনরে একসাথে! ”
” ওকে!”
তামিম উঠে বাইরে যেতে লাগলেই সুবহার বাবা তামিমকে ডেকে উঠে!
” আমি বলছি, সুবহা কোথায়!”
তামিম পিছনে ঘুরে তাকায়!
” সুবহা সুইজারল্যান্ড ওর ফুফির বাড়ি আছে! আর তাকে বাংলাদেশ থেকে ওর ফুফিই নিয়ে যায় এতো গুলো জায়গায় যেনো আপনি তাকে খুজে কোথাও না পান! আর এর সব কিছুর মুলে ছিলো এই সালাউদ্দীন! সে বাইরে তার লোক দ্বারা সব করাই! আপনাদের ডির্ভোসের পেপার ও সে বানিয়ে সুবহার কাছে পৌঁছে দেই! আর নির্বাচনের দিন সুবহা বাড়ি যায় নিজের পাসপোর্ট আনতে! সেখানে ওর ফুফি ও ছিলো! সেই টিকিট কেটে রাখে আগে থেকে! ”
তামিম সুবহার বাবার কাছে এসে তার অর্ধ টাক মাথায় চু’মু খায়!
” নিজের শশুর না হলে ও হারা’মিতে আপনি আমার কাতারেই আছেন! তা আপনার পাতানো মাইয়া এতো সুন্দর অভিনয় কীভাবে করলো? ওর নিজের বাপ কী জী বাংলায় নাটক করতো না-কি? ”
তামিমের কথায় চুপসে যায় সুবহার বাবা! কথায় আছে না খাল কেটে কুমির আনা! তাদের সাথে হয়েছিলো ও ঠিক তাই! বিয়ের পর শান্ত তামিমকে দেখে তার অতীতের ঘুমন্ত তামিমের কথা ভুলে গেছিলো!
” আমার গোল্ডেন চাপা’তির মতো তোদের জন্য ও একটা গোল্ডেন অফার আছে! ”
তামিমের অফারের কথা শুনে সকলে তার দিকে তাকিয়ে থাকে!
” তোদের ৬ জনের মধ্যে যে কেউ একজন আজকে বাঁচতে পারবি! কিন্তু শর্ত একটাই! ”
” কী শর্ত?”
সকলে একসাথে বলে উঠে….!
তামিম তার চোশমা খুলে ফু দিয়ে আবার পরে ফেলে!
” বাকি ৫ জন যে আর সকালের মুখ না দেখতে পারে!”
তামিমের কথা শুনে উপস্থিত ৬ জনই বুঝে যায় তাদের কী করতে হবে! বাঁচতে হলে বাকি ৫ জনকে মা’রতে হবে!
তামিম একটা চেয়ার নিয়ে সামনে বসে পরে! আর তার লোকেরা পিছনে দাড়িয়ে পড়ে!
তামিম বসতে দেরি কিন্তু ৬ জনের একজন আরেকজনের উপরে হাম’লা করতে দেরি নেই! প্রায় রাত ৩ টা অব্দি চলে তাদের এই হিংস্রতা! আর তামিম খুব উপভোগ করে তাদের করুন দৃশ্য! শেষ রাতে আর কেউ বেঁচে থাকে না!
তামিম ও সুন্দর মতো উঠে আড়মোড়া দেয়!
” মাহির…?”
” ওল ওকে ভাই! একটু পরই মিডিয়ার লোকেরা আইবো!”
” মানিক?”
” এখনই সব ক্লিয়ার করতাছি ভাই!”
তামিম সুন্দর মতো বাইরে চলে যায়!
” তোদের হাতে ৯ মিনিট আছে! এর এক মিনিট ও বেশি লাগলে ৭ নং লা’শটা তোদের মধ্যে কেউ হবে!”
তামিম বাইরে যেয়ে সুন্দর মতো সিগা’রের ধোয়া উড়াতে থাকে! আর ঘড়ি দেখতে থাকে! সাথে বাকি তিনজন আর কো’পা শাসমু!
” ভাই অনেক দিন হয়ছে কাউরে উড়ায় না!”
” উড়াবি সাকিব! উড়াবি! বো’ম বানাইতে থাক! ”
সাকিব খুব খুশি হয়ে যায়! আজ প্রায় ১ মাস পর তার আবার উড়ানোর সুযোগ আসছে!
৮ মিনিটের মধ্যে সিসিটিভির ফুটেজ সহ বাকি সব কিছু সরিয়ে তামিমের লোকেরা বাইরে চলে আসে!
” ভাই সব ডান!”
তামিম ইশারা করে তাদের গাড়িতে বসতে বলে!
” ভাই পরবর্তী পদক্ষেপ? ”
মাহিরের কথা শুনে তামিমের মুখে আবার সেই চিরচেনা ভয়ংকর হাসি দেখা দেয়!
” এবার আমার পলাতক বউয়ের পালা!”
বর্তমান
রকির হাত ধরে সুবহা আর্ট ক্লাসে প্রবেশ করে!আর দূর থেকে সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার হাত ধরার দিকে তাকিয়ে থাকে তামিম!
আর্ট ক্লাসে মোট ২৩ জন স্টুডেন্ট! বাঙ্গালী, অবাঙালী, ফ্রান্স, ইউকে মিলিত মোট ২৩ জন! আর শিক্ষক ৩ জন! দু-জন মধ্য বয়সি মহিলা, এবং একজন যুবক বয়সী পুরুষ! তারা তিনজনই সুইজারল্যান্ডের নাগরিক!
সুবহা এবং রিক এসে যে যার জায়গা মতো বসে আকাঁ শুরু করে দেই! প্রত্যেকের ডেস্ক একটু আলাদা আলাদা! বিশাল অডিটোরিয়াম, তাই তাদের মধ্যে গ্যাপ ভালোই আছে বলে চলে!
আঁকতে আঁকতে এক পর্যায়ে সুবহার হাত থেমে যায়! সে রং কিছুতেই স্মুথ করতে পারে না ছবিতে! চেষ্টার কোনো অবকাশ নেই! কিন্তু আজকে যেনো সুবহার হাত চলছেই না!
হঠাৎ সুবহার হাতের উপরে হাত পরে একজনের! খুব শক্ত করেই ধরে সে সুবহার হাত! হাতে মোটামুটি ব্যাথা অনুভব হয় সুবহার। কিন্তু পিছনে ঘোরার মতো সাহস টুকু পায় না সে! চিরচেনা সেই পারফিউমের ঘ্রাণ সুবহার সারা শরীরে বিচরণ করছে! তাহলে কী তামিম? জড়বস্তু মতো চুপসে যায় সুবহা! এক হাতে সুবহার তুলিটা শক্ত করে ধরে আরেক হাতে সুবহার মেদ হীন কোমর জাপ্টে ধরে পিছনে থাকা লোকটি! কোনো দূরত্ব নেই তাদের মাঝে!
ভয়ে সুবহার সারা শরীর তীর তীর করে কাঁপতে থাকে!
” তুমি আমার এমনই একজন…. যারে এক জনমে ভালোবাসে ভরবে না এ মন!”
পরিচিত কন্ঠ কানে ভাসতেই জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে সুবহা! সেন্সলেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায় সে!
মুখে পানির ঝাপটা পড়তেই পিট পিট করে চোখ খুলতে থাকে সুবহা! সকলেই এক কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে!
” ওয়াট হ্যাপেন্ড শুবভা!!”
আর্ট মাস্টার মাইকেল নিজের ভাঙ্গা গলাতে ঠিকমতো সুবহার নাম উচ্চরণ করতে গিয়ে ও করতে পারলো না! সুবহা ইশারা করে বুঝাই সে ঠিক আছে! কিন্তু তার পানির প্রয়োজন!পানি হাতে পেয়েই ঢক ঢক করে সম্পূর্ণ পানি পান করে ফেলে সুবহা! তারপর সবাই আর্টে মনোযোগী হয় আর সুবহা চুপচাপ কিছু ক্ষণ বসে থাকে!
না এসব স্বপ্ন হতেই পারে না! যেই অতীত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সুবহা, সেই অতীতই কী তাকে আবার তাড়া করছে?
ভয়ে ঠান্ডা শিহরন বয়ে চলে সুবহার শরীরে। সুবহা বাইরে চলে যায়! একটু ফ্রেশ হাওয়ার দরকার আছে তার!
সুবহা বাইরে বের হতেই দেখে সেই বিকেলের গাড়িটি এখনো ও সেখানেই রাখা! এতো দামি গাড়ি কেউ অযত্নে রাখে?
পরক্ষণেই চোখ গেলো সেই কুকুরের দিকে। ক্লাসে যেতে যেতে সুবহা শুনেছিলো এই কুকুরটি বিশ্বের সব থেকে ভয়ানক প্রজাতির কুকুর! ভালুকের সাথে ও লড়াই করার ক্ষমতা রয়েছে এই কুকুরের! ভয়ে সুবহা আবার ভিতরে চলে আসে!
নাহ! আজকে আর আঁকাআকি হবে না তার দ্বারা! তাই সব কিছু গুছিয়ে ফেলে সুবহা!তামিম যে তার পিছনে ছিলো এটাতে সুবহা শতভাগ সিউর! কিন্তু এখনই কোনো রিয়েকশন দিলে চলবে না! এটা দেশ নয়! বাইরের দেশ! এখানে সকলে তামিম সরকার আর তানভীর সরকারের কথায় চলবে না এটাতে সুবহা শতভাগ সিউর!
সন্ধ্যা ৭ টার দিকে রকি, সুবহা, রোজ তাদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়!
পথে যেতে যেতে সুবহার বার বার মনে হয়েছিলো তাকে কেউ ফলো করছে! কিন্তু না পিছনে ফিরে ও কাউকে দেখতে পায়নি সে!
সুবহারা বাড়ি এসে যে যার মতো রুমে চলে যায়, আর ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে চলে আসে! খুশ গল্পে মেতে উঠে সকলে! এটা এখন প্রায় প্রতিদিনের সিন! খাবার খাওয়ার সময় খুশ গল্পে মেতে উঠা!
খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে কলিং বেল বেজে উঠে! সুবহা নিজে তার ফুফিকে বসতে বলে উঠে দরজায় আসে! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সে দরজায় কাউকে দেখে না! পরক্ষনেই সুবহার চোখ যায় নিচে রাখা বক্সের উপরে! সাধারণ ভাবে মাঝারি সাইজের বক্স নিচে রাখা! ঢাকনা একটু খোলা! সুবহা বক্সটি হাতে নিতেই ঢাকনা খুলে পড়ে যায়! তারপর বক্সের ভেতরে রাখা জিনিস দেখে সুবহার পুরো শরীর কাঁপতে থাকে!
কাফনের কাপড়!! সুন্দর করে বক্সে কেউ কাফনের কাপড় পাঠিয়েছে তাদের বাসায়! সাথে একটা ছোটো চিরকুট ও রাখা!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৪৯
সুবহা কাঁপা কাঁপা হাতে চিরকুটি খোলে…
” তোকে নিজের হাতে মা’রতে খুব কষ্ট হবে আমার!”
সুবহার কাজটি ফেলে দরজা বন্ধ করে দেই! সুবহা বুঝে যায় এটা কার কাজ!
তামিম বার বার তাকে বলতো, সে যদি তাকে ঠকায় তাহলে তাকে নিজের হাতে মা’রতে খুব কষ্ট হবে তামিমের! তাহলে কী তামিম তার আশেপাশেই আছে??
Aktu taratari den please 🙏