এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫২
কাফাতুন নেছা কবিতা
মুখের বাঁধন আলগা হতেই চাতক পাখির মতো পানির গ্লাসের দিকে তাকিয়ে রইলো সুবহা। হাতের নাগালে থাকার পর ও পানি নিয়ে পান করতে পারছে না সে। হাত দুটো এতোটায় শক্ত করে বাঁধা যে, যেকোনো সময় রক্ত বের হয়ে আসার উপক্রম হয়ে উঠেছে। থেকে থেকে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে উঠছে সে। গাল দুটো এতোটাই যন্ত্রণা করছিলো যে নিঃশ্বাস নিতে ও কষ্ট হচ্ছিল তার! চোখ, মুখ ও ফুলে গেছে বেশ অনেকটাই! বাম পাশের দাঁত ভেঙে মাড়িতে ঢুকে গেছে প্রায়! গুনে গুনে ৪৫ টি থাপ্প’ড় হজম করা সহজ নয়! আর সাধারণ মানুষের পক্ষে তো আরো বেশি নয়! সুবহা প্রথমে মুখ শক্ত করে তামিমের বিপক্ষে শক্ত হয়ে দাড়ালে ও তামিমের হাতের জোরের কাছে হেরে যায়!
ব্যাথার মাত্রা এতোটাই তীব্র হতে লাগলো যে সুবহার মনে হচ্ছিল যদি ম’রে যেতো তাহলে বোধ হয় কষ্ট একটু কম হতো!
প্রায় ১-১:৩০ ঘন্টার মতো হবে সুবহা গুদাম ঘরে বন্দী!
কিছু ক্ষণ আগে
——” এই ৪৫ দিন যেই নরকের যন্ত্রণা আমি সহ্য করছি তোর জন্য, আগামী ৪৫ বছর ও তার শাস্তি দিলে কম হয়ে যাবে পরী!”
ঙ্গানহীন সুবহাকে খুব শক্ত করে নিজের বুকে ধরে কথাগুলো বলতে থাকে তামিম! তামিমের চোখ দিয়ে ও টপ টপ করে পানি পড়তে থাকে! সুবহার সারা শরীরের ভর তার উপরে! একহাতে সুবহার কোমর ধরে আরেক হাত দিয়ে সুবহার মুখটা নিজের মুখের মুখের সামনে ধরে! সুবহার গালের বিভিন্ন জায়গায় তামিমের হাতের দাগগুলো স্পষ্ট! ঠোঁটের সাইটে হালকা রক্ত কণিকা ও দেখা যাচ্ছে! তামিম সুবহার রক্তগুলো মুছতে মুছতে সুবহার বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে তাকায়!
তারপর নিজের মাথা সুবহার মাথার সাথে চেপে ধরে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” অস্তিত্বের সাথে মিশে গেলে তাকে ছাড়া কীভাবে থাকে সকাল? ”
হঠাৎ করেই তামিমের ভিতরের নরপিশাচ টা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে! আবার ও সেই চিরচেনা তামিমের রুপটি ভেসে উঠে!
” স্বেচ্ছায় যেহেতু আমার সাথে থাকবি না, বন্দী করেই সারাজীবন রাখবো! ”
তামিম সুবহার ঠোঁ’টে ঠোঁ’ট বসিয়ে দেই! আর খুব শক্ত করে চেপে ধরে চু’মু দেয় সুবহাকে! তারপর তাকে কাঁধে তুলে গুদাম ঘরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রাখে!
” বাবা, আমাদের উপরে একটু তো দয়া করো, একটু তো নিজের আবেগ, বিবেক কাজে লাগাও!”
”’ তোর আবেগের উপরে আমি মু*তি!”
সুবহার ফুফার সামনে একটি গুলি মে’রে গর্জে উঠে তামিম! থর থর করে সুবহার ফুফা, ফুফি আর কাজিনরা কাঁপতে থাকে! তামিম সরকার ভয়ংকর এটা তারা জানতো! কিন্তু সুবহার খোঁজে যে একদম সুইজারল্যান্ডে চলে এসে তাদের ব্যান্ড বাজাবে এটা তারা কেউ কল্পনা ও করতে পারেনি!
” তোর বউয়ের জন্য তো আমি বউ হারা হতাম বুড়া!”
” তামিম…!”
” চুপপপপ! মহিলা মানুষের গায়ে আমি হাত তুলি না, কিন্তু নিজের বউয়ের জন্য জেন্ডার দেখবো না! ডাইরেক্ট পরপারে টিকিট ধরিয়ে দিবো!”
পাশে দাড়িয়ে পঞ্চ পান্ডব একজন আরেকজনের দিকে তাকায়! তামিম সরকার মহিলার গায়ে হাত তোলে না! কিন্তু নিজের বউকে ৪৫ টি থাপ্প’ড় মা’রে শুধু!
” ভাইরে দেখলে শয়তান ও কনফিউজড হইবো!”
” চুপ কর বেডা! সিরিয়াস মোমেন্টে কমেডি করিস না! ভাই আমাগো ও উড়ায় দিবো! ”
মাহির আর সাকিব নিজেদের মধ্যে কথা বলেই আবার চুপ হয়ে যায়! এই মুহুর্তে আর একটি কথা বেশি বললেই তামিম তাদের ও অবস্থা খারাপ করে দিবে!
” তো! আপনি মুখ খুলবেন না-কি থেরাপি দিতে হবে? দর্শক অপেক্ষা করতাছে আপনার কুকর্ম শোনার জন্য!”
সুবহার ফুফি শুকানো ঢোক গিলে! যদি মিথ্যা বলে তাতে ও সমস্যা আর সত্যি বললে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিয়ুক! কিছু ক্ষণ মুখ বন্ধ রাখে সুবহার ফুফি! কিন্তু তামিমকে উঠে দাড়াতে দেখেই ভয়ে সব বলা শুরু করে!
” ব…বলছি বাবা! সব বলছি!”
” জ্বলদি! আপনার ভাতিজীর সাথে অনেক কাজ বাকি আমার!”
” আমি সুবহার আসল ফুফি না! আমার বাবার আগের ঘরের সন্তান সুবহার বাবা! বাবা তার সব সম্পত্তি ভাইজানকে দিয়ে আমাদের দুই ভাই-বোনকে কিছুই দেয়নি! সেই রাগ ছিলো অনেক আমাদের! তারপর সুবহা আর সৌরভ হলো! সম্পত্তিতে অংশীদার বেড়ে যাবে ভেবে একদিন সুবহার বাবাকে আমি আর মইন…..! ”
একটু দম নেই লাকি বেগম! এতো বছরের পুরনো পাপ যে এই ভাবে বের হয়ে আসবে সেটা সে কল্পনা ও করেনি!
” জানি!!”
তামিমের এই এক লাইনের কথায় আকাশ থেকে পরে লাকি বেগম! তামিম সব জানতো? তাহলে কেন তাকে সব বলতে বললো? কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে তামিমের দিকে! তামিম ইশারা করে আবার বলতে বলে!
” রাতের বেলা আমি আর মইন সুবহার বাবাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে দূর্ঘটনার রূপ দেই! তারপর ছলেবলে মইন সুবহার মা-কে বিয়ে করে! সন্তানদের দিকে তাকিয়ে সুবহার মা ও রাজি হয়ে যায়! সবই ঠিকঠাক চলছিলো, ওর ২০ বছর হলে সব সম্পত্তির মালিক সুবহা হতো, আর ওর সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিয়ে সব আমরা ভাগাভাগি করে নিতাম! কিন্তু….! ”
” কিন্তু মাঝখান দিয়ে আমি হাজির হলাম…! ভাইরে ভাইরে… আপনি তো ঘসেটি বেগমকে ও ছাড়িয়ে গেছেন সামনে! ”
খুব জোরে জোরে হাসতে থাকে তামিম! আর লাকি বেগম শুকনো ঢোক গিলে!
” কতো টাকার মালকিন আমার বউ?”
” ৩ কোটি!”
তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব আবার ও হাসিতে ফেটে পড়ে!
” আমি কয় কোটির মালিক?”
সুবহার ফুফি মনে মনে তামিমের সম্পত্তির হিসাব করতে থাকে! যেহেতু তার বাবা ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী, তার উপরে বড় বংশের ছেলে! আর মা পুরান ঢাকার বড় বংশের মেয়ে, আর তামিম নিজে ও এমপি, সেই অনুযায়ী তামিমের সম্পত্তির হিসাব যে করা মুশকিল সেটা একটু হলে ও লাকি বেগম বুঝে গিয়েছিলো! কিছু না বলে শুধু তামিমের দিকে তাকায় লাকি বেগম!
” আমার জুতার দাম দিয়ে আপনার পরিবার ভালো মতো চলে যাবে, সেখানে এই টাকার জন্য মানুষ খু*ন!”
” ছোটোলোকদের ছোটো ছোটো ব্যাপার ভাই!”
” জীবনের প্রথম বার একটা সঠিক কথা বলছোস তুই মানিক! আয় তোকে চু’ম্মা দেই! ”
মানিক আবেগে গদগদ হয়ে যায়! এই প্রথম বার তামিম তার তারিফ করলো!
” মাহির…?”
” এই লন ভাই!”
তামিম তার গোল্ডেন চাপা’তি নিয়ে রকির সামনে হাজির হয়! তারপর তাট বাম হাতের দিকে তাকায়!
” আমার বউ তোর এই হাত ধরছে! আই ফিল সো জেলাস!”
তামিম এক কো’পে রকির হাত কেটে ফেলে দেই! নিজের কা’টা হাত ধরে মাটিতে ছটফট করতে থাকে রকি! রকির এই ছটফট করা দেখে তামিম খুব শান্তি পাই!
” আমার বউ ৪০ জনের হাত ধরুক সমস্যা নাই! খালি হাত গুলো আস্ত থাকবো না এই যা!”
ছেলের এমন করুন দৃশ্য দেখে লাকি বেগম তামিমের কাছে খুব আকুতি মিনতি করে হসপিটালে ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য! কিন্তু তামিমের মনে দয়ার ছিটাফোঁটা ও লক্ষ্য করা গেলো না!
” সাকিব……!”
” এখনই উড়া’য় দিতাছি ভাই! ”
” মানিক…?”
” সব ক্লিয়ার করতাছি ভাই!”
তামিম নিজের চশমা খুলে ফু দিয়ে আবার পড়ে ফেলে! তারপর বাইরে চলে যায়, যেখানে সুবহাকে রেখে এসেছি!
বর্তমান
প্রায় দেড় ঘন্টা পর ঘরটিতে প্রবেশ করে তামিম। চোখের কালো সান গ্লাসটি খুলে ফুঁ দিয়ে আবার পড়ে ফেলে সে। পড়ে সুবহার সামনে দাড়ায়। তামিম সামনে আসা মাত্র কলিজার পানি শুকিয়ে যায় সুবহার।
” তো! পরী! কী খবর বলেন আপনার?”
সুবহা ভয়ে নিজের মাথা নিচু করে রাখে সুবহা! আর থর থর করে কাঁপতে থাকে।চোখে চোখ দিয়ে কথা বলার মতো সাহস টুকু নেই তার তামিমের সামনে।
সুবহার ভয় পাওয়া মুখ খানা দেখে তামিমের ঠোঁটের কোনে রহস্য জনক হাসি ফুটে উঠে।
” পানি খাবে?”
সুবহা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বাচক সম্মতি জানায়! তামিম সামনে থাকা পানির গ্লাসটি নিয়ে সুবহার সামনে ধরে আর মুখ থেকে কাপড় খুলতে যায়। কিন্তু কাপড় না খুলে গ্লাসের পানিগুলো সুবহার মাথায় ঢেলে দেয়।
” পানি তো দূরে থাক পরী ! আজকে থেকে তোর কী কী অবস্থা করবো তুই নিজে ও জানিস না!”
সুবহার চুল ধরে নিজের মুখের কাছে আনে তামিম!
” হানিমুনে সুইজারল্যান্ডে আসতে চাস এটা আগে বলতি আমাকে! নিজের প্রাইভেট জেট দিয়ে নিয়ে আসতাম! এতো হয়রানি কেন করলি? ”
তামিমের হাতের গতি আরো শক্ত হয়! সুবহার মাথার পিছনের দিকের চুল মনে হ’চ্ছিল ছিঁ’ড়ে আসবে এবার!
” মৃত্যুর আগ অব্দি আমার থেকে তোর নিস্তার নেই মাই ডিয়ার শখের বউ! তোকে চলার মতো অবস্থায় রাখবো না আমি!”
ভয়ে আঁতকে উঠে সুবহা। পালানোর প্রায় সব পথই বন্ধ তার। চোখ দিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে যদি কেউ এসে সাহায্য করে তাকে।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।আজকে কেউ আসলো না সুবহাকে বাঁচাতে। এতো দিন যেই ফুফি তাকে এতো ভালোবাসা দেখালো সে ও আসলো না তাকে বাঁচাতে! আবশ্য আসবে কীভাবে? তার নিজের অবস্থায় তো না বাঁচা!
তামিম সুবহাকে বাধা অবস্থায় কাঁধে তুলে নেই । আর খুব জোড়ে জোড়ে পা বাড়ায় সামনের দিকে।
” আজকে থেকে তোর প্রতিটি রাতই হবে অমাবস্যা রাতের মতোই অন্ধকার। প্রতিটি দিন হবে মরুভূমির মতো খা খা। নিজেই নিজেকে শেষ করতে চাইবি তুই। কিন্তু পারবি না। আমি হতে দিবো না। তিলে তিলে শেষ হবি তুই।”
তামিমের কথা গুলো শুনে আরো দ্বিগুন ভয় বেড়ে যায় সুবহার।
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা গাড়িতে ছুড়ে মারে আর গন্তব্য স্থানে পাড়ি জমায়। না এতো সহজে সুবহাকে ছাড়বে না সে। এতো গুলো দেশে পাগলের মতো খুঁজে বের করে সে সুবহাকে।সুবহা প্রাণপনে চেষ্টা করে পালানোর। কিন্তু তামিমের পাওয়ারের কাছে সে হার মানতে বাধ্য।
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫১
তামিম ডোর খুলে পাশে বসে পরে, আর সুবহাকে টেনে নিজের কোলে বসায়! পঞ্চ পান্ডব ও যে যার মতো বিশাল বড় গাড়িতে বসে পরে!
প্রচন্ড ব্যাথায় সুবহার প্রাণ যায় যায় অবস্থা! সুবহা শুনেছিলো দাঁতের ব্যাথা অত্যান্ত মারাত্মক ব্যাথা! কিন্তু আজকে যে নিজে সেই ব্যাথা অনুভব করবে সেটা সে কল্পনা ও করেনি! প্রচন্ড ব্যাথায় চোখ বন্ধ হয়ে যায় সুবহার! তামিমের বুকে ঢোলে পরে! তামিম ও চুপচাপ বসে থাকে! আজকে কোনো মায়া হচ্ছে না তার শখের বউয়ের প্রতি!