এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৪

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৪
কাফাতুন নেছা কবিতা

একটা মানুষ এতোটা ভয়ংকর কীভাবে হতে পারে?সামনে তাকাতেই সুবহার শরীরে লোম গুলো দাড়িয়ে যায়! শুধু দাড়িয়ে যায় বললে ভুল হবে। প্রচন্ড ভয়ে মানুষের শরীরে যেমন ঠান্ডা শ্রোত বয়ে চলে ঠিক সে-রকম হলো সুবহার সাথে! সে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়! সুবহা বুঝতে পারে আজকের রাতটি তার জন্য ভয়ংকর রাত হতে চলছে!
তামিম হাটু পেরে সুবহার পাশে বসে, আর তার চুলের গোড়ালি ধরে মুখ নিজের কাছে নিয়ে আসে….!

” তোর বয়সের থেকে আমার খু’নের সংখ্যা বেশি! আর তুই দুইদিনের মেয়ে আমাকে ঠকালি?’ হুমমমমম!”
তামিম উঠে দাড়িয়ে সুবহার হাতের বাহু ধরে তাকে ও দাড় করায়!
ভয়ে সুবহার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়। কপালে ঘাম জমে উঠেছে, ঠোঁট শুকিয়ে কাঠ। তামিমের চোখের দিকে তাকাতে ও সাহস হচ্ছে না তার! বার বার মনে হচ্ছে যদি এখান থেকে পালানো যেতো!
চোখের কোণ দিয়ে সুবহা আবারও চারপাশে তাকায় কোথাও কি ফাঁকা আছে? কিন্তু না! চারপাশে কেবল তামিমের লোক, কালো পোশাক, শীতল মুখ, আর অদ্ভুত নীরবতা।
” অনেক কষ্ট দিলি রে সুবহা তুই আমাকে! অনেক কষ্ট হয়ছে আমার তোকে ছাড়া থাকতে! কিন্তু আমি তো মানুষ ভালো না! এতো দিন পর তোকে কাছে পেয়ে আদর কম মাটিতে পুঁ’তে ফেলতে মন বেশি চাইতাছে! ”
সুবহা কিছু না বলে শুধু অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেই! যেনো সে তামিমকে সহ্যই করতে পারছে না! সুবহার এমন আচরণ তামিমের ভেতরের রাগ আরো বাড়িয়ে দেই!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আজকে তোর এই তেজ গিলে ফেলবো আমি!”
তামিম পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে সুবহার সামনে ধরে! ফোনটি দেখার সাথে সাথে সুবহার আত্মা বের হয়ে আসে! সরকার বাড়িতে তার ভাই অবচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে, আর তার গলার উপরে বড় তলো’য়ার ধরা, যে তারা কারো আদেশের অপেক্ষায় আছে! আদেশ দেওয়া মাত্র সুবহার ভাইয়ের গলায় চলবে সে তলো’য়ার! সুবহার চোখ ভর্তি পানি চলে আসে! আর তামিমের দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে!
” মে’রে দেই? ”
” নাহহহহ! তামিম প্লিজ! ”
” আমি ও তো অনেকবার বলেছিলাম, আমাকে ঠকাতে না, তুই তো আমার কথা শুনলি না! আমি কেন শুনবো?”
সুবহা কিছু না বলে সোজা তামিমের পা জাপ্টে ধরে আর প্রচন্ড কান্নায় ভেঙে পরে!

” তামিম প্লিজ! আ…আমার…ভাই ছাড়া আর কেউ নেই ! ওকে ছেড়ে দিন প্লিজ! ”
” খুব কষ্ট লাগলো রে সকাল তোর কান্না দেখে! কিন্তু তামিম সরকার তো হিসাব বরাবর রাখার লোক! ”
তামিম সুবহার হাত ধরে টেনে তুলে! আর মুখের এলোমেলো চুল গুলো সরাতে থাকে….!
” এই লাভা হেঁটে পার করতে পারলেই তোর ভাই বেঁ’চে যাবে!”
সুবহা জলন্ত আগু’নের লাভা রাখা দেখেই বুঝেছিলো এটা তার জন্য তৈরি করা! ফিল্মে হিরো হিরোইনদের ইমপ্রেস করার জন্য এইভাবে হেঁটে যেতো। কত কত সিনেমার হিট সিন আছে এমন! কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হয়ে যে তাকে ও এইভাবে হাঁটতে হবে এটা কল্পনা ও করেনি সুবহা!
তামিম সুবহার এই অসহায় দৃশ্য দেখে বেশ আনন্দিত হয়!
” তোকে বুকে রাখতে চেয়েছিলাম! থাকলি না! এখন বোঝ!”
তামিম সুবহার হাত ছেড়ে দিয়ে চেয়ার নিয়ে সুবহার থেকে ৫ কদম দূরে বসে, সুবহার করুন দৃশ্যের আনন্দ উপভোগ করতে থাকে!

” হাঁটতে থাক সকাল!”
এতো রাতে ও তামিম কালো চশমা পড়তে ভুলেনি! তামিম সরকার তো বরাবরই এমন! চোখে কালো চশমা পড়ে, গোল্ডেন চাপা’তি দিয়ে কতো জনকে পরপারে পাঠিয়েছে! আজকে হয়তো সুবহার পালা! কিন্তু শুধু চাপা’তিটাই তামিমের হাতে নেই!
সুবহার সারা শরীর অসার হয়ে আসতে থাকে।সামনে পা বাড়ানোর মতো সাহস টুকু নেই তার! একজন মানুষের পক্ষে তো কখনোই সম্ভব নয় লাভা দিয়ে হাঁটা! পুরো শরীর পু’রে ছাই হয়ে যাবে।সেখানে সুবহা কীভাবে হাঁটবে? তামিমের কী আজকে একটু ও মায়া হচ্ছে না তার পরীর জন্য? আজকে সেই প্রেম পুরুষ তামিম সরকারের জায়গায় বোধ হয় চিরচেনা ভয়ংকর তামিম সরকার বসে আছে!

” জলদি হাট! বেঁচে থাকলে তোর সাথে সংসার করবো, না-হলে এইখানেই মাটি চা’পা দিয়ে যাবো!”
সুবহার কান্নার গতি আরো বেড়ে যায় তামিমের কথা শুনে! তামিমের এক একটু ও মায়া নেই?
৪৫ দিন পর নিজের শখের নারীকে খুজে পেয়ে আগু’নের লাভাতে হাটাবে সে? এতোটাই ভয়ংকর তামিম সরকার?
সুবহা সাহস করে এক পা সামনে বাড়িয়ে ও আবার পিছিয়ে নেই! আগু’নের তাপ তার পায়ে অনুভব হচ্ছে কাছাকাছি নিতেই! তামিম সুন্দর মতো কে-ড্রামার ভিলেন দের মতো বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুবহার দিকে!
সুবহা পিছনে তাকিয়ে দেখে তামিম তাকে ইশারা করছে হাঁটার জন্য!

সুবহা সাহস করে এক পা নিচে রাখতেই আবার মাটিতে বসে পরে পা ধরে! পা পুরো জ্ব’লে গেছে তার! একজন মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব না আগু’নে হাঁটা! হলো ও তাই! সুবহা এক কদম রেখেই আর পরের কদম দিতে পারেনি! বরং পা ধরে মাটিতে বসে জোরে জোরে শব্দ করে কান্না করতে থাকে! সুবহার কান্নার শব্দে বোধ হয় তার চিরশত্রুর ও মন গলে যাবে।কিন্তু তামিমের গললো না! দাঁত ব্যাথা তার উপরে পা পুড়ে যাওয়া, এর থেকে ভালো হতো তামিম যদি সুবহাকে বি’ষ এনে দিতো তাহলে! সুবহা খুশি খুশি খেয়ে ফেলতো!
তামিম হুট করে এসে সুবহার হাত ধরে তাকে কোলে তুলে নেই! আর সামনে পা বাড়ায়! দু-কদম যেতেই তামিম সুবহাকে হিম শীতল করা ঠান্ডা বরফের পানির ট্যাবে ফেলে দেই! শেষ রাতের দিকে এমনিতেই সুইজারল্যান্ডে বেশ ভালোই শীত অনুভব হয়, তার উপরে এই ঠান্ডা বরফের পানি! সুবহা তাড়াতাড়ি করে উঠতে চাইলে তামিম সুবহার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে ট্যাবের এক সাইটে লক করে দেই!

একটু আগে যে তামিম তার ভাইকে মা’রার ভয় দেখিয়েছিলো, সেগুলো সুবহার মনে নেই! এখন শুধু সুবহা নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে! কিন্তু অসফল হয়! থর থর করে কাঁপতে থাকে সুবহার পুরো শরীর!
” তোকে তো বলেছিলাম, নিজের হাতে মা’রতে খুব কষ্ট হবে আমার!”
তামিমের কোনো কথায় সুবহার কান অব্দি পৌঁছায় না!
তামিম সরকার কখনো মেয়েদের গায়ে হাত তোলে না, কিন্তু আজকে যেটা করলো সেটা নারী নি’র্যাতনের থেকে কম ও না! সুবহা প্রথম দিন থেকে এই ভয়ংকর তামিম সরকারকেই ঘৃণা করে! যার মনে মায়া, দয়া ভালোবাসা কোনো কিছুই নেই!

তখন সুবহা সপ্তম শ্রেণীতে পড়তো, যখন সে প্রথম বার তামিম সরকারের নৃংশসতার কথা শোনে সহপাঠিদের থেকে! আরশি নগরের সবাই রিতীমত ভয়ে থাকতো তামিমের জন্য!
নির্বাচনের প্রচারণার জন্য তামিম যতবার সুবহার পরিচিত জায়গা যেতো, সুবহা ছোটো বেলা থেকেই সেই জায়গা গুলো এড়িয়ে চলতো! মনের মধ্যে কোথাও যেনো তামিম সরকারের একটা ভয় ঢুকে গেছিলো সুবহার!
সুবহা সব সময় চাইতো, আর যায় হোক এই তামিম সরকারের সাথে যেনো তার কোনোদিন ও দেখা না হয়!কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিনতির শিকার হয় সুবহা ২৬ শে মার্চের সেই কলেজ প্রোগ্রামে! এতো মেয়ের ভিড়ে ও যে তামিম তাকে পছন্দ করবে আর সরাসরি তার পাশে যদি কেউ ঘোড়ে তাদের কাফ নের কাপড় কিনতে বলবে এটা সুবহা কল্পনা ও করেনি! সেই ছিলো সুবহার জীবনের কালো অধ্যায়ের শুরু!
ছোটোবেলা থেকে যাকে ভয় পেয়ে আসলো, যার নাম শুনলে ও ঘৃণা হতো সুবহার, সেই তামিম সরকারই শেষমেশ সুবহার স্বামী হলো!

তামিম সুবহার মুখ বরাবর চেয়ার নিয়ে আরাম করে বসে! সুবহা নিজকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে, কিন্তু না! হাত দিয়ে র’ক্ত বের হয়! পুরো বাথ ট্যাবের পানি সুবহার রক্তে হালকা লাল হয়ে যায়! সুবহা বার বার তামিমের দিকে তাকাচ্ছিলো! যদি একটু দয়া হয় তার! না তামিমের দয়া তো দূরে থাক! মুখের তৃপ্তির হাসি দেখে সুবহার শেষ আশা টুকু ও নিভে যায়!
এভাবে প্রায় ১৫ মিনিট সুবহা হিম শীতল ঠান্ডা পানিতে ছটফট করতে থাকে! তার পর আস্তে আস্তে সুবহার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে! নেতিয়ে পড়ে ট্যাবে! ধীরে ধীরে সুবহার পুরো শরীর পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে!

” ওপারে ভালো থাকিস সকাল!”
তামিমের এই কথাটি বোধ হয় একটু একটু কানে বাজলো সুবহার! চোখ পুরোপুরি বন্ধ করে তলিয়ে গেলো সুবহা! নিউজ রিপোর্টে কতো শুনতো স্বামীর হাতে স্ত্রী খু’ন! তখন সুবহা ভাবতো কীভাবে পারে মানুষ নিজের জীবন সঙ্গীর সাথে এমন করতে! আজকে নিজের দষা দেখে পুরোটা ক্লিয়ার হলো সুবহা! আহারে, মেয়েগুলোর নাজি কতোই কষ্ট হতো, যুগ যুগ ধরে তো এটাই হয়ে এসেছে! টাকার কাছে প্রান বিক্রি! তামিম সরকারের মতো লোকরা টাকা দিয়ে নিজেদের অপকর্ম গুলোকে ও দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে পারে!

মুখে হালকা আলোর ছিটেফোঁটা আসতেই ঘুম আলগা হয়ে আসে সুবহার! পিট পিট করে চোখ খুলতে থাকে সে! শরীরটা বেশ ক্লান্ত! মাথাটা প্রচন্ড ভার! বেশ কয়েকদিন শুয়ে থাকলে মাথা যেমন ভার হয়, ঠিক সেরকমই ভার হয়েছে সুবহার মাথা! পুরো চোখ খুলতেই দেখে ডিভানের এক পাশে সে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে, আর তামিম পুরো শরীর এলিয়ে দিয়ে তার খুব কাছেই বসে আছে উপরে মুখ করে! তামিমকে দেখা মাত্র সুবহার রাতের সমস্ত কথা মনে পড়তে থাকে! তামিমকে মানুষ রূপি জানো’য়ার ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না সুবহার!ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে সুবহা! সুবহা উঠতেই তামিম তার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে!
” আজরাইলের সাথে দেখা হলো?”

তামিমের কথা শুনে সুবহার গা ঘিন ঘিন করে উঠে! তামিম সুবহার হাত ধরতে গেলেই সে উঠে দাড়িয়ে পড়ে তামিমের থেকে দূরে! তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে দরজা দেখতে পায়! ক্লান্ত শরীর নিয়েই দরজার কাছে ছুটে চলে যায় সুবহা! তারপর দরজা খোলার চেষ্টা করে, কিন্তু নাহ! দরজা খোলে না! এটা ও লক করা সিস্টেম! সুবহা খুব জোরে দরজা ধাক্কা দিতে থাকে, যদি দরজা খুলে যায়!
” প্লিজ কেউ দরজাটা খোলো! কেউ আছে???”
সুবহা এভাবে বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কা দিতে থাকে! কিন্তু দরজা তো খোলে না! তামিম এসে সুবহার পিঠ বরাবর দাড়িয়ে একহাত দরজা দিয়ে হেলান দিয়ে দাড়ায়!
” কেউ দরজা খুললো না বউ? আমি হেল্প করি!”
তামিমের একহাত সুবহার কো’মরে যেতে, সুবহা জোরে ধাক্কা দিয়ে তামিম দূরে সরিয়ে দেই, আর ফুল দানি হাতে নিয়ে নেই!

” আর এক পা সামনে এগিয়ে আসবেন তো মে’রে ফেলবো আপনাকে! ”
তামিম হালকা হেসে সুবহার হাত ধরে তাকে উল্টো দিক করে ঘুরিয়ে নেই!
” লিখবো….তোমার..হাতে…আমি.. আমার…মরণ!”
” আমি ঘৃণা করি আপনাকে!”
” তোর ঘৃণার মাত্র আরো এক ধাপ বেড়ে যাবে রে সকাল! ”
তামিম সুবহাকে হালকা উচু করে কোলে তুলে নেই বর বিছানায় বসে পরে! সুবহাকে নিজের কো’লে খুব শক্ত করে চেপে ধরে! তারপর ড্রয়ার থেকে কাগজ বের করে সামনে ধরে!
” কোন হাত দিয়ে তুই ডির্ভোস পেপারে সাইন করেছিলি?”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৩

সুবহা বুঝতে পারে, এখন আবারো ঝড় আসতে চলেছে! পালিয়ে এসেছিলো তাতেই তামিম ৪৫ দিন পর তাকে খুঁজে পেয়ে জলন্ত আগু’নের লাভাতে হাটালো আবার বরফের পানিতে ডুবিয়ে রাখলে, সেখানে ডির্ভোসের জন্য যে কী করবে এটা ভাবতেই সুবহার শরীর হিম হয়ে আসে!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৫৫