এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৫
কাফাতুন নেছা কবিতা
পিট পিট করে চোখের পাতা খুলতে থাকে সুবহা! হাতে স্যালাইন প্রায় শেষের পথে! পাশে নার্স তার ঔষধ গুলো ঠিক করতে থাকে!! পাশে তাকিয়ে ঘড়িতে দেখতে পায় সকাল ১০:৩৩ মিনিট!!
সুবহাকে চোখ খুলতে দেখে নার্স তাকে ধরে বসায়! সুবহা ইশারা করে স্যালাইন দেখায়! শেষের পথে! নার্স স্যালাইন খুলতে থাকে আর মিটমিট করে হাসতে থাকে!
নার্সের এই মিটমিট করে হাসতে থাকা সুবহার ও চোখে পড়ে! লজ্জায় মাটিতে ঢুকে যেতে মন চাইছে তার!!
কেবিনের ভিতরে হালকা ছায়া মুর্তির আবছা আবছা ভাব দেখা যাচ্ছে! সুবহা খুব রাগি চোখে তাকিয়ে থাকে সে-দিকে! আর আশেপাশে কিছু খুঁজতে থাকে!! হাতের কাছে তেমন কিছু না পেয়ে দূরে ফুলদানিটি সুবহার চোখে পড়ে!!
” সিস্টার, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, ক্যান ইউ প্লিজ গিভ মি দ্যাট ফ্লাওয়ার বাজ?”
” ওহহ! সিউর! ”
নার্স ফুলদানিটি সুবহার হাতে দিয়ে দেয়!
” ইউ ক্যান গো নাও!”
নার্স সব কিছু ঠিকঠাক করে বাইরে চলে যেতে থাকে! যাওয়ার সময় দরজার কাছে যেতেই নার্স আবারো মিটমিট করে হেসে উঠে! সুবহা বুঝতে পারে কাকে দেখে নার্স হেঁসেছে!
সুবহা চুপচাপ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে! আর তার হাতে ফুলদানি ও শক্ত করে ধরে রাখে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— ভাই, ভিতরে যাননা ক্যালা?”
” তোদের ভাবি-মা আমার পিন্ডি চটকাইবো ভিতরে গেলে! ”
” ভাই, আপনি কিন্তু তামিম সরকার! আপনার ভয়ে বড় বড় নেতারা হি’সু করে!”
” ও গো অভিশাপেই এমন ডাইনি বউ পাইছি আমি!কিছু কইলেই মা’রে! ”
সাকিব আর তামিমকে কোনো প্রশ্ন করলো না! বরং টেডিবিয়ার দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিজের হাসিটা তামিমের থেকে লুকানোর চেষ্টা করলো!!
টাকলা মফিস চকলেটের বক্স হাসে তামিম পিছু দাড়ান!
” ভাই, আপনে এই ফুলের তোড়া নিয়ে গেলে ভাবি-মা দেইখাই খুশিতে গদগদ হয়ে আপনারে চু’ম্মা দিবো!”
” হো ভাই! মাইয়া মানুষ ফুল পছন্দ করে! আর আমাগো ভাবি মা তো ফুলের মতোই সুন্দর!”
মাহির আর মফিস তামিমকে প্রচুর সাহস যোগায় ভিতরে যাওয়ার জন্য! কিন্তু তাও তামিমের সাহস হয় না! সে কখনো কল্পনায় করতে পারেনি, এতো কিছু হয়ে যাবে!!
রাতের বেলা
” তামিম…প্লিজ….!”
” নো…বেবি! ফিল মাই লাভ! ”
” তামিমমম…!”
সুবহা তামিমকে থামানোর চেষ্টা করতে থাকে! কিন্তু কোনো লাভ হয় না! তামিম এতোটাই সুবহার প্রতি মহোনিত হয় পড়ে যে, তামিম আর নিজের মধ্যেই থাকে নাহ! সে রীতিমতো ভালোবাসা কম সুবহাকে যন্ত্রণা দেওয়া শুরু করে দেয়!!
— ”কিন্তু তুই মই কই পাইলে রে সাকিব?”
” সাকিব পারে না, এমন কোনো কাম নাই শা’লার ভাই ! ”
সাকিব একটা মই নিয়ে তামিমের জানালা অব্দি দাড় করায়! সে আজকে ডার্ক রোমান্স দেখেই ছাড়বে!! সাথে চার বলদ ও তাল মিলাতে থাকে!! সাকিব প্রথমে উঠে আর দু-জন শক্ত করে মইটি ধরে!! মাহির আর মানিক সাকিবের পিছু যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে!!
সাকিব একটু উঠে নিচে তাকায়!
” ভাই_ভাবি ঝগড়া লাগছে রে! ভাবি জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতাছে! ”
মাহির হালকা করে জিহ্বা বের দাঁতে কাটে!
” শা’লা জ্বলদি নিচে নাম!”
” ক্যান?”
” আরে নাম!”
” আরে কবি তো ক্যান?”
” মদনার ঘরে মদনা.. নাম রে!”
রীতিমতো জোড় করেই মাহির সাকিবকে নিচে নামায়! ধরতে গেলে সাকিব এই পঞ্চ পান্ডবের মধ্যে একটু বলদ! বো’ম দিয়ে উড়ানো ছাড়া বাকি সব কিছুতেই সে টেপু!
সাকিব নিচে নেমে খুবই রাগ দেখায় মাহিরের সাথে! কিন্তু তারপর নিজেই লজ্জিত হয়! ডার্ক রোমান্স যে বা’সরের আরেক পার্ট এটা সাকিবের অজানা ছিলো!!
” শোন! ভাইরে কেউ কইস না! না-হলে আমার কিডনি লিভার আলাদা করে ফেলবো!”
পাঁচ বলদই নিজেদের মধ্যে কথা দিয়ে রাখে, তারা এই কুকর্মের কথা কাউকে বলবে না!
——রাত তখন প্রায় শেষের দিকে! তামিম অবশেষে নিজের মধ্যে ফিরে আসে! তামিম লক্ষ্য করে সুবহার নড়াচড়া একদমই বন্ধ!! এক অজানা ভয় কাজ করে তামিমের মধ্যে! সে আবেগের বশে বিবেগ হারিয়ে নিজের বউকে পরপারে না পাঠিয়ে দিলো! তামিম তাড়াতাড়ি করে উঠে লাইট অন করে!
সুবহার অবস্থা দেখে তামিম শুকনো ঢোক গিলে! ডার্ক রোমান্স কম সুবহার উপরে মতো নি’র্যাতন করেছে বেশি!
খুব বেশি দেরি না করে সুবহাকে নিয়ে হসপিটালে চলে যায়!!
———-বর্তমান
তামিম ফ্লাওয়ার বুকে নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে সুবহার কেবিনে প্রবেশ করে! তামিম আসতেই সুবহা হাতে থাকা ফুলদানিরি তার মাথা বরাবর ছুড়ে মা’রে!
” ওরে মা_রেরররর! গেছে রে গেছে…! আমি চান্দি গেছে! ”
সুবহা নিজের মুখে হাত দেয়! তামিম যে সরে যাবে এটা সুবহা কল্পনা ও করতে পারেনি! আর পিছনে থাকা টাকলা মফিসের মাথা যে অকালে তার দ্বারা ফাটবে এটা ও ভাবেনি সুবহা!!
” সরি! সরি! সরি! ও টাকলা! আপনি ঠিক আছেন?”
টাকলা মফিস নিজের মাথা ধরে নিচে বসে থাকে!
” শুনছিলাম, বাপ_মা যেখানে মা’রে সেই জায়গা না-কি বেহেশতে যায়! কিন্তু আপনে যে আমার টাকটারে বেহেশতে পাঠানোর ব্যবস্তা করতাছেন বুঝতে পারি নাইক্কা ভাবি-মা! ”
মফিসের কথা শুনে সুবহার ভিষণ অনুশোচনা হলে ও বাকিরা খুব কষ্টে নিজেদের ৩২ পাটি ঢেকে রাখে!! পরক্ষণেই সুবহা তামিমের দিকে তাকায়!
” সব হয়েছে এই শয়তান সরকারের জন্য! ”
” আমি কী করলাম বউ!”
” এই খবরদার! একদম না! দূরেই থাকুন আপনি! শয়তান বেডা মানুষ! ”
সুবহা বারণ করার পর ও তামিম ঠিকই সুবহার কাছে চলে যায়! আর তাকে খুব জোড়ে জড়িয়ে ধরে!
সুবহা কিছু ক্ষণ তামিমকে নিজের থেকে সরানোর চেষ্টা করলে ও, কিছু ক্ষণ পর সে ও চুপ হয়ে যায়!! বাকিরা মফিসকে নিয়ে চলে যায় তার টাক মাথায় ব্যান্ডেজ করতে!
” সরি পরী!”
” জু’তো মেরে গরু দান! আপনি তো রেকর্ড তৈরি করেছেন! ডার্ক রোমান্স করতে যেয়ে বউকে সোজা হসপিটালে পাঠিয়েছেন!”
” পরী!”
”—–”
” ও পরী!”
”—-”
” পরী রে!”
” কীহহহ!”
” সরি তো! জীবনের প্রথম কোনো মেয়ের এতো কাছে গেছি তো! চরিত্র ঠিক রাখতে পারি নাই সরি!”
” তামিম?”
” আমি যদি আপনাকে আমার কাছে আসতে না করি, তাহলে কী জোড় করবেন?”
” তোমার পাশে থাকার অনুমতি দিলেই হবে পরী!”
সুবহা তামিমের কানের লতিতে কি’স করে!
” আচ্ছা আমি যদি ম’রে যেতাম!”
” তাহলে আরেক ইতিহাস তৈরি হতো!”
” মানে?”
” ডার্ক রোমান্স করতে যেয়ে বউকে পরপারে টিকিট ধরিয়ে দিলো তামিম সরকার! ”
সুবহা খুব জোড়ে তামিমের হাতে চিমটি কাটে!
” কিছু কইলেই মা’রে!”
” শয়তান সরকার! ”
” শয়তান ছেমরি! ”
তামিম উঠে সুবহাকে কোলে তুলে নেই!
” তামিম! হসপিটালের ড্রেস পরা তো!”
” বাড়ি যেয়ে চেঞ্জ করে দিবো!”
সুবহা তামিমকে আর কিছু বলে না! কারণ তামিম যে তার কথা শুনবে না এটা সুবহা ভালো মতোই জানে!
তামিম সুবহাকে নিয়ে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়! আর বাকিরা মফিজের সাথে থাকে!
মফিসকে যখন ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হচ্ছিল, তখন তিন বলদ লক্ষ করে কালা মানিক এক দৃষ্টিতে নার্সের দিকে তাকিয়ে থাকে! যেনো তার চোখের পলক ও পড়ছে না!
নার্স ব্যান্ডেজ করে চলে যাওয়ার পরপরই তারা মানিকের চোখের সামনে হাত ঝাপটা দেয়! কিন্তু কোনো লাভ হয়না! মানিক দরজার দিকেই তাকিয়ে থাকে! এক পর্যায়ে মাহির, মানিকের কানের কাছে জোড়ে উল্লু উল্লু করে উঠে! চমকে যায় মানিক!
” কী-রে কালা! কী হয়ছে তোর?”
” তোগো ভাবি পাইছি রে! ”
পাঁচ জনই একসাথে বলদের মতো তাকিয়ে থাকে মানিকের দিকে!
” কই!”
রফিকের কথা শুনে দরজার দিকে ইশারা করে মানিক!
” এই ধলা নার্সে আমার বউ বানামু রে!”
মানিকের কথা শুনে পাঁচ জনই খুব উচ্চ স্বরে হেসে উঠে!
” শা’লা! লুই’চ্চার ঘরে লুই’চ্চা তুই কী মেয়ে দেখলেই তারে নিজের বউ মনে করোস?”
” নারে সাকিব! এইডা রিয়াল লাভ! একবার চিন্তা কর! এই ধলা ছেমরি আমার বউ হইলে, আমাগো বাচ্চা কতো কালারফুল হইবো! ”
” হো! সাদা-কালা!”
” তোরে ওই ছেমরি নিজের বাড়ির দারোয়ান ও রাখতো না! আবার জামাই! মানইষের শখ ও!”
সাকিব আর মাহিরের কথা শুনে কালা মানিক রাগে ফুলতে থাকে! তার থেকে ও বেশি রাগে ফুলতে থাকে মফিস! তার মাথার সাড়ে সর্বনাশ হয়ে গেছে! আর চার বলদ মেয়ে নিয়ে পড়েছে আবার!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৪
সকলে মফিসের দিকে তাকিয়ে একদম চুপ হয়ে যায়! আর মফিসের হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতে থাকে!
” আমার ধলা বউ! তুমি চিন্তা কইরা না! আমি বাংলাদেশ থেকে খুব তাড়াতাড়ি আইসা তোমারে নিয়া যামু!”
” হই! ততদিনে বেডির বাচ্চা তোরে মামা ডাকবো!”
” সাকিবের বাচ্চা! ”