এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৭

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৭
কাফাতুন নেছা কবিতা

”TBI ? ”
” হুমমম!”
মানে কী ভাই?”
” ব্রেনের সমস্যা! ”
খুব জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে উপরের দিকে তাকায় তামিম! নিজেকে খুব অসহায় লাগছে তার! চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে তামিমের! যেই তামিম সরকারের ভয়ে ৮-৮০ সকলে ভয়ে কাঁপতে থাকে, সেই তামিম সরকার ও একটি মেয়ের জন্য ভেঙে-পুড়ে তছনছ হয়ে যাচ্ছে! তার মনে ও ভয় বাসা বেঁধেছে? তামিম সরকার ও প্রিয়জন হারানোর ভয় পায়?

পঞ্চ পান্ডব কী বলবে বুঝতে পারে না! অবশ্য তারা ও সুবহার এই পরিবর্তন গুলো লক্ষ্য করেছিলো! এতো ঠান্ডা, শান্ত স্বভাবের মেয়েটার হঠাৎ পরিবর্তন ছিলো তাদের ও সন্দেহের কারণ!! কিন্তু কেউ তখন ও কিছু বুঝে উঠেনি! সবাই ভেবেছিলো হয়তো তামিমের সাথে সুবহা খুব বেশি হালকা হয়ে গেছে! তাদের সম্পর্কের টানাপোড়ন শেষ হয়ে গেছে! তাই হয়তো সুবহার এই পরিবর্তন! হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাওয়া, তামিমের গায়ে হাত তোলা, তাকে বকাঝকা করা, সব কিছুই তারা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়ে ছিলো! কিন্তু হসপিটালে তামিমের দিকে ফুলদানি ছুড়ে মা’রার পর থেকে একটু একটু তাদের মনে ও সন্দেহ হয়! সুবহা ফ্রী হলে ও তামিমের সাথে সারাদিন ঝগড়া করলে ও তাকে আঘাত কখনো করবে না এটা তাদের ও বিশ্বাস ছিলো!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহো ভাতিজি আহো!”
” আর এক পা সামনে বাড়ালে, সানডে মান্ডে ক্লোজ কইরা দিবো!”
” শা*লার জিন্দেগী! ”
তামিমের কথা শুনে সুবহা হাসতে থাকে! কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে পড়ে তামিমের ধুম’পান করার বিষয়টি! তামিম কথা দিয়েছিলো সে আর এসব ধরবে ও না! কিন্তু আজকে ঠিকই সুবহার কথা অমান্য করেছে! রাখেনি তার প্রমিস!!
চোখ মুখ শক্ত করে ভিতরে চলে যায় সুবহা! তTTBও সুবহার পিছু পিছু যেয়ে তাকে জাপ্টে ধরে পিছন থেকে!
” ও বউ! আমার নায়িকার মতো বউ! এতো নাটক করো কেন?”
সুবহা তামিমের হাত এক ঝটকায় সরিয়ে ফেলে!
” নায়িকার মতো বউ চান, আর নাটক করলেই দোষ! ”
তামিম কোনো রিয়েকশন না দিয়ে আবারো সুবহাকে জড়িয়ে ধরে!

” তামিম ছাড়ুন,! ”
” না! ”
” কেন?”
” ম’রে যাবো!”
” আপনার আগে যদি আমি মরে যায়?”
তামিম চোখ বন্ধ করে ফেলে! আর খুব শক্ত করে সুবহাকে জড়িয়ে ধরে! সুবহা বুঝতে পারে সে একটু বেশিই বলে ফেলেছে! তামিমের সব থেকে দূর্বল জায়গা যে সুবহা নিজেই এটা ও তার অজানা নয়!
” তামিম?”
” হুম!”
” আমি কী ইদানীং আপনার সাথে খুব বেশি বা’জে ব্যবহার করছি? ”
” কই না তো পরী! তোমার কেন এমন মনে হলো?”
” জানি না! হঠাৎ করেই আপনাকে মা’রতে ইচ্ছে করে, খুব রাগারাগি করতে ইচ্ছে করে! আবার একটু পরে না মন ও খারাপ হয়ে যায়! ! ”
” কারণ তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো পরী! ”
” সত্যি? ”
” তিন সত্যি! ”
” মুসলমানের এক কথা!

সুবহা খুব খুশি মনে তামিমকে জড়িয়ে ধরে! তামিম ও সুবহাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে!
একটু পর তামিম সুবহাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়, আর নিজে ও তাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে থাকে! সুবহা প্রচুর কথা বলতে থাকে তামিমের সাথে! তামিম ও মনোযোগ সহকারে সুবহার সমস্ত কথা শুনতে থাকে! তামিম লক্ষ্য করে সুবহা তার কথার মাঝেই রেগে যাচ্ছে, তো আবার নিজেই ভুলে যাচ্ছে আগে কি বলেছে! তামিম তেমন কোনো রিয়েকশন না দিয়ে সুবহার হ্যাঁ-তে হ্যাঁ এবং না-তে না বলে যায়! এক সময় সুবহা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরে!
তামিম সুবহার শরীরে কম্ফোর্টার দিয়ে নিজে বাইরে চলে যায়!
তামিমকে আসতে দেখে তার পঞ্চ পান্ডব তার কাছে যায়! তামিম তেমন কোনো রিয়েকশন না দিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে! তামিমের সাথে সাথে তারা ও বসে পরে! তাদের মুখ দেখেই তামিম বুঝতে পারে সকলে কিছু বলতে চাই! কিন্তু তামিমের ভয়ে বলতে পারছে না!

” আমি মনের কথা পড়তে পারি না! কী বলবি মুখে বল!”
তামিমের এই ঠান্ডা কথার ধার বুঝতে পেরে সাকিব সাহস নিয়ে বলেই ফেলে!
” ভাবির শরীরে আপনার আত্মা আর আপনার শরীরে ভাবির আত্মা পার হয়ছে ভাই!”
” তোর এমন কেন মনে হলো?”
‘ আছলে ভাই, আপনারে তো মা’ইর দিতে দেখছি, খাইতে না, আর ভাবি তো এমন রাগি ছিলো না!”
তামিম কিছু চুপচাপ হয়ে বসে থাকে! তাদের প্রশ্নের উত্তর যে খুব কঠিন!!
” তোদের ভাবি ঠিক নাই রে!”
” মানে ভাই?”
” TBI’
‘TB?’
‘ হুম’

বর্তমান
সব থেকে হিংস্র মানুষটি ও কারো না কারো কাছে খুবই দূর্বল! তামিমের এতোদিন দূর্বলতা ছিলো তার পরিবার! কিন্তু এখন সুবহা!
দুনিয়ার সব থেকে অসহায় মানুষটি বোধ হয় তামিম সরকার নিজেই! ১৭ বছর বয়সে নিজের ভাইকে হারানো, জে’ল খাটা, বাবাকে বাঁচাতে অ’স্রহাতে নেওয়া, চোখের সামনে মায়ের অস’ম্মান হতে দেখা, এই সকল কিছুই তামিমকে মানুষ থেকে প’শুতে রূপান্তরিত করেছিলো!
জীবন ছিলো অর্থহীন! না ছিলো সুখ আর না ছিলো ভালোবাসা! তামিম সব সময় নিজের আব্বা আম্মার ঢাল হয়ে বেঁচে ছিলো! জীবনের মূল্য ছিলো অর্থহীন! কিন্তু এখন তামিম সরকার ও ভয় পায়! খুব ভয় পায়!
যদি তার কিছু হয়ে যায়? তখন তার পরীর কি হবে? তার পরীকে কে দেখবে?

সুবহাকে দেখার পর থেকে তামিম প্রায় সুবহাকে জোড় করত দেখা করার জন্য! কারণ এই একটি মুখই ছিলো যাকে দেখলে তামিমের মনে শান্তি লাগতো! কিন্তু তামিম তখন ও সুবহাকে নিজের জীবন সঙ্গী করতে চাইতো না! যতবার সুবহা আসতো তাকে পোড়া থেকে আবার শিকদার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো! খুব বেশি একটা সময় তামিম সুবহার সাথে থাকতে চাই তো না! কিন্তু তামিম ও প্রেমে পড়ে সুবহার! খুব বা’জে ভাবে পড়ে! তারপর থেকেই ভয় শুরু! পরীকে হারানোর ভয়! এই জন্য তামিম তাড়াতাড়ি করে সুবহাকে বিয়ে করে সরকার বাড়িতে বন্দী করতে চাইতো!
তামিমের ভয় আরো একধাপ বেড়ে যায় গতকাল রাতে ! সুবহা অবচেতন থাকা অবস্থায় তামিম যখন তাকে ফ্রেশ করতে যায় তখন সে লক্ষ্য করে সুবহার হাতে ইনজে’কশনের দাগ! মোট ৯ টি ছিলো! তামিম সেদিনই লক্ষ্য করে ভালোভাবে সুবহাকে!

সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সুবহাকে দেখতে থাকে! এই কয়দিনের এতো ঘটনায় তামিম তেমন ভাবে কোনো কিছু লক্ষ্য করেনি! কিন্তু সুবহা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর তামিম সুবহার মাথা থেকে পায়ের নখ অব্দি দেখতে থাকে! পিঠে ও তিনটে ইন’জেকশন পুশ করা! মোট ১২ টি ইনজে’কশনের দাগ ছিলো সুবহার শরীরে!
সুবহার শরীরে এতো ইনজেক’শনের দাগ দেখে তামিমের মস্তিষ্ক প্রায় কাজ করা বন্ধ করে ফেলে! সে সকাল অব্দি অপেক্ষা না করে অজ্ঞান থাকা অবস্থায় সুবহাকে নিয়ে হসপিটালে চলে যায়! পুরো সুক্ষ্মভাবে চলে সুবহার ট্রিটমেন্ট! সকাল ৮:৩০ টার সময় তামিম জানতে পারে আসলে কী হয়েছে সুবহার! কিন্তু তামিম ঠিক করে সে সুবহাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে না! নিজ থেকে সব বের করবে! হয়তো আরো ভয়ংকর অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিল সুবহা! কিন্তু তামিম যখন সুবহাকে ৪৫ দিন পর সুইজারল্যান্ডে দেখেছিলো, তখন তাকে বেশ হাসি খুশি দেখেছিলো! তামিম কল্পনা ও করতে পারেনি সুবহার সাথে আরো অনেক কিছু হয়ে গেছে!!
তামিম শুধু নিজের মনকে শক্ত রাখে! আর খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে সুবহার সামনে।

—মাহির তামিমের পায়ের কাছে গিয়ে বসে!
” ভাবি কী কোনোদিন ও ঠিক হইবো না ভাই?”
” হবে! ১-২ মাসের মতো সময় লাগবে! ”
তামিম আবার ও চুপ হয়ে যায়! সাকিব ও এবার আর চুপ থাকতে পারে না! সাহস করে তামিমকে জিজ্ঞেস করেই ফেলে!

” ভাবি_মার হঠাৎ এমন রোগ হইলো কেমনে ভাই?!”
সাকিবের প্রশ্ন শুনে তামিম কিছু ক্ষণের জন্য চুপ হয়ে পরে! আজকে তার নিজের জন্যই সুবহা মানুষিক রোগী! পুরোপুরি না হলে ও একটু একটু মানুষিক রোগী বলা চলে তাকে! তামিম নিজের হাতের দিকে তাকায়! তারপর কাচের টি-টেবিলে খুব জোড়ে হাত বা’রি মে’রে নিজের হাতের বারোটা বাজিয়ে ফেলে!
তামিমের হঠাৎ নিজের উপরে এমন আক্রমণে, ভয়ে কেঁপে উঠে তার পঞ্চ পান্ডব! তারা তাড়াতাড়ি করে এসে তামিমের হাত ধরে ব্যান্ডেজ করতে থাকে! তামিম কিছু না বলে শুধু চুপচাপ বসে থাকে! নিজেকে শাস্তি দিয়ে যে খুব আনন্দ পেলো সে!

সুবহার এই অবস্থার জন্য তামিম নিজে ও দ্বায়ি! হয়তো সুবহা ১-২ মাসের মধ্যে ঠিক ও হয়ে যাবে! বা তার আগে ও! কিন্তু তার উপরে যে অত্যা’চার চলেছে এটা তামিম কিছুতেই সহ্য করতে পারে না! তামিম নিজে ও কিছুটা দ্বায়ি! সেদিন রাগের বসে তামিম সুবহাকে ৪৫ টি থাপ্প’ড় মা’রে! যার ফলে সুবহার আরো ক্ষতি হয়!! তামিম যদি নিজের রাগ পুরোপুরি কন্ট্রোল করতো তাহলে হয়তো আজকে আর এতো কষ্ট হতো না! সুবহা_যে পুরোপুরি পাগল হয়ে যায়নি বা নিজের মস্তিষ্ক ঠিক রাখতে পেরেছে এটাই তামিমের ভাগ্য ছিলো! সে নিজের হাতে নিজের প্রিয়ার ক্ষতি করেছে! চরম ক্ষতি!

” ভাই, আপনি শান্ত হন!”
তামিম আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না!
” আমি কেমনে শান্ত হমু সাকিব, কেমনে? ওর এই অবস্থার জন্য তো আমি ও দায়ি! নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারি নাই! কতো অত্যাচার করছি ওর উপরে!”
” কিন্তু ভাই, ভাবির সাথে এগুলো কীভাবে হইলো?”
তামিম একটু চুপচাপ থেকে উঠে দাড়ায়!
” সুবহা যতদিন নিজ থেকে সব না বলে, ওকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করবি না!”
তামিম চুপচাপ সুবহার কাছে যেতে থাকে! পরক্ষণেই আবার পিছনে ফিরে তাকায়!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৬

” শোন! আমার বউ যদি তোগো সাথে রাগারাগি করে কিছু মনে করিস না! ওর মন খুব ভালো! ফুলের মতো নরম মন আমার বউয়ের! ”
একটা মানুষ ঠিক কতটা অসহায় হলে এভাবে বলে সঠিক জানা নেই!
তামিমের কথা শুনে তার পঞ্চ পান্ডবের চোখে পানি চলে আসে! আজকের মতো অসহায় তামিমকে কখনো দেখেনি তারা!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৮