এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৯
কাফাতুন নেছা কবিতা
” বুড়ো কাকে বললেন গিন্নি?”
” বাড়িতে অনেক আয়না আছে কর্তা, যেকোনো একটাই যেয়ে নিজের থোবড়া দেখে আসুন!”
সকলের সামনে আয়েশা সরকার তানভীর সরকারের ইজ্জতের ফালুদা করে দেয়! অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়! সেই যুবক বয়স থেকে তানভীর সরকার বরাবরই আয়েশা সরকারের কাছে অপমানিত হয়ে আসছে! পুরান ঢাকার মেয়ে হওয়ার ফলে আয়েশা সরকারের কলিজা যেনো একটু বেশিই বড়! কাউকে পরোয়া করা যেন তার ডিকশিনারিতেই নেই!! তানভীর সরকার ও তার সামনে কিছু বলতে পারে না!
” আমি প্রধানমন্ত্রী গিন্নি! ”
” এখন কী নাচবো? সাইটে দাঁড়ান!”
আয়েশা সরকার সুবহাকে নিয়ে ভিতরে যেতে থাকে! আর তামিম এবং তানভীর সরকার বাইরেই দাড়িয়ে থাকে!! যেনো তাদের কোনো পাত্তায় নেই এ বাড়িতে!
সদর দরজায় যেয়ে আয়েশা সরকার আবার ও পিছু ফিরে তাকায়,
” ভিতরে আসার জন্য কী ইনভিটেশন পাঠাইতে হবে কর্তা?”
আয়েশা সরকারের কড়া চোখের চাহনি দেখে তানভীর সরকার কোনো কথা না বলে ছেলের হাত ধরে ভিতরে আসতে থাকে!
” আব্বা জান! ধন্যবাদ! ”
তানভীর সরকার তামিমের কাঁধে হাত দেয়!
” সুবহা আমার ও মেয়ে! মেয়ের জন্য এতো টুকু করাই যায়! ”
মুহুর্তে মধ্যে তামিম যেনো স্বত্বি খুজে পেলো! তার আব্বা তার সাথে আছে! আর কী চাই? তামিম হঠাৎ করে দাড়িয়ে পড়ে! তামিমকে দাড়াতে দেখে তানভীর সরকার ও দাড়িয়ে পড়ে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তামিম কিছু না বলে তানভীর সরকারকে জড়িয়ে ধরে! তানভীর সরকার ও ছেলের মনের অনুভূতি বুঝতে পারে! ছেলে মেয়ে বড় হলে তার সব থেকে বড় বন্ধু হয় তার মা-বাবা! তানভীর সরকার ও তামিমের সব থেকে বড় বন্ধু বলা চলে! তানভির সরকার বুঝতে পারে নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর করুন দৃশ্য দেখা কোনো স্বামীই সহ্য করতে পারে না! আর সে যদি হয় তামিমের মতো বউ পাগল মানুষ, তাহলে তো আরোই নয়! তামিম এতোক্ষণ একদম সিংহের মতো থাকলে ও তার আব্বার সামনে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না!
তানভীর সরকার চোখ বন্ধ করে ফেলে! দীর্ঘ ১১ বছর পর আজকে আবার ও তার কাঁধ ভিজে যাচ্ছে তামিমের চোখের পানিতে! সেই ১১ বছর আগে শেষ বার যখন তামিম কেঁদেছিলো, তখন তানভীর সরকার ছিলো অচল, শুধু অনুভব করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিলো না! কিন্তু আজকে তানভীর সরকার সচল! সে সুস্থ! আজকে আর তামিম একা নয়! তার আব্বাজান আছে তার সাথে!
দীর্ঘ ১১ টি বছর পর তানভীর সরকার তার ছেলেকে কাঁদতে দেখলো! বুকে যেমন হাহাকার ছিলো ঠিক তেমনই স্বস্তি ও বয়ে চলছিলো! সুবহা চলে যাওয়ার পর ও তামিম কেঁদে ছিলো, কিন্তু সেটা তানভীর সরকারের আড়ালে! আজকে তামিম আবার ও কাদলো, কিন্তু আজ আর আড়ালে নয়!
তানভীর সরকার মন শক্ত করে ফেলে! তামিমকে সে আর কাঁদতে দিবে না! এক চুল পরিমাণের ও নয়!
” বাবাজান, আপনি আমার সিংহ! এমন নেতিয়ে পড়া স্বভাব আপনার সাথ যায় না!”
তামিম তার আব্বাজানকে ছেড়ে নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে! তানভীর সরকার তামিমের কপালে চু’মু দেয়! আর কাঁধে হাত রেখে তাকে বুঝায়, সে সব সবয় তার সাথে আছে!
” ১১ বছর আগে আমি ছিলাম না আপনার সাথে, সেটার আক্ষেপ আমার সারাজীবন থাকবে! কিন্তু এখন আমি আছি! আপনার আব্বাজান আছে আপনার সাথে! ”
তামিম তার আব্বাজানের হাত ধরে খুব শক্ত করে!
” আব্বাজান, আমি আজকে আপনার ছেলে নয়, সুবহার স্বামী হিসেবে বলতাছি, কাউকে ছাড়বো না!”
তানভীর সরকার তামিমের হাতে চু’মু দেয়! আর তার হাত ধরে ভিতরে যেতে থাকে! কিন্তু তার মন আবার ও অশান্ত হয়ে যায়! তামিম যে আবার ও তার চিরচেনা ভয়ংকর রূপে ফিরবে এটা সে আগেই আন্দাজ করে ফেলেছিলো! যখন তামিম আসার আগেই সুবহার হেল্থ কন্ডিশন তানভীর সরকারকে জানিয়েছিলো!
সুবহার হুটহাট করে রেগে যাওয়া, জিনিসপত্র ছুড়ে মা-রা, পথ ভুলে যাওয়া, কোনো কিছু ঠিক মতো মন রাখতে না পারা এ সবই তার রোগের লক্ষ্যণ!
এখন তেমন একটা সমস্যা না হলে ও ইনজে’কশনের প্রভাব কে’টে যাওয়ার পরপরই সুবহার অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে ডাক্তার আগে থেকেই তামিমকে জানিয়ে রাখে! শরীরের কোষ গুলোর অবশ হওয়া ভাব কে’টে গেলেই সুবহা বুঝতে পারবে তার ভিতরে কী রকম যন্ত্রণা হচ্ছে!
শরীরে অসহ্য ব্যাথা হবে, একটু আগে কী বলেছে সেটা ও ভুলার সম্ভবনা থাকবে। কিন্তু এই সমস্যা গুলো খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না! ঠিকমতো ট্রিটমেন্ট আর মেডিসিন চললেই ২ থেকে আড়াই মাসের মতো সময় লাগবে সুবহার পুরোপুরি সুস্থ হতে!
তামিম পুরো বিষয়টি তার আব্বাকে জানালে উনি তাদের বাংলাদেশে আসার জন্য তাড়া লাগাই! তাই তামিম সোজা হসপিটাল থেকে কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে সুবহাকে নিয়ে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়!
১৫-২০ মিনিট পর তামিম আর তানভীর সরকার ভিতরে এসে দেখে আয়েশা বেগম চুপচাপ বসে আছে! তার চোখ দুটো মোটামুটি লাল! সুবহা নেই পাশে! তামিম মনে মনে ধারণা করে সুবহা আবার কিছু করলো কী-না!
তামিমকে দাড়িয়ে যেতে দেখে তানভীর সরকার তার কাঁধে হাত রাখে! চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে, ভয়ের কিছু নেই!
তামিম আয়েশা সরকারের কাছে যেতেই আয়েশা সরকারের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে! তামিম হাঁটু পেরে তার মায়ের সামনে বসে!
” আম্মাজান…!”
আয়েশা সরকার তামিমের হাত দুটু শক্ত করে ধরে ফেলে!
” আমার মেয়েটার এমন অবস্থা কীভাবে হলো বাপ? আর গালে এতো দাগ কীসের? ”
তামিম চোখ বন্ধ করে ফেলে! বলার মতো কোনো ভাষা নেই তার কাছে! আর গালের দাগ গুলো তো তারই দেওয়া! এতো সহজে তো যাওয়ার নয়!
” আম্মা…দাগ গুলো আমার দেওয়া!”
তামিম আয়েশা সরকারের কোলে মাথা রেখে বসে পড়ে!
” এতো বড় দামড়া ছেলে যদি কাঁদিস, আমার মান থাকবে? আয়েশা সরকারের পোলা কাঁদে না, কাঁদায়! ”
” আমি তো ওর দিক বুঝি নাই আম্মা! ও যদি সুস্থ হয়ে আমাকে ছেড়ে চলে যায়? কখন ও যদি মনে হয় ওর এই অবস্থার জন্য আমি ও দায়ি?”
” তখন আমি ভার্সিটিতে পড়তাম, তোর বাপ ১৩ টা থাপ্প’ড় দিছিলো আমাকে! ”
আয়েশা সরকারের কথা শুনে তামিম মাথা উঁচু করে তাকায় তার দিকে!
” জাও’রামিতে পিএইচডি করা ছিলো তোর বাপ! অবশ্য আমার হাতে ও ১৭ টা খা’ইছে, কই আমি তো তারে ছাইড়া যায় নাই, সে ও আমারে ছাড়ে নাই! আর সুবহা ও তোরে ছাড়তো না! ভালোবাসে খুব!”
তামিম নিজের মাথা নিচু করে ফেলে! মায়ের মুখে নিজের আর তার বউয়ের ভালোবাসার কথা শুনতে ও কেমন যেনো লাগে তার! বিষয়টি আয়েশা সরকার ও বুঝতে পেরে হেঁসে উঠে!
” তুই আয়েশা সরকারের পোলা! বাঘিনীর পেট থেকে জন্ম তোর! এই ভাবে কাঁদলে হবে না বাপ! লোকে বলে ছেলেরা তার বাবার মতো হয়! কিন্তু তুই ৬০% আমার মতো আর ২০% তোর বাপের মতো হইছোস!”
আয়েশা সরকারের কথা শুনে তানভীর সরকার তার পাশে বসে!
” বাকি ২০% কার মতো হয়ছে গিন্নি?”
” বলতে পারি না কর্তা! খোঁজ নিতে হবে!”
” গিন্নিনননন!”
তানভীর সরকার মুখ ভারি করে তাকায় আয়েশা সরকারের দিকে! আয়েশা সরকার ও বেশ মজা নেই এই বিষয়টির! তামিমের মন ও একটু হালকা হয়!
লোকে ঠিকই বলে মা-বাবা যখন সন্তানের পাশে থাকে তখন আর কোনো কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না!
” সুবহা রুমে আছে! যা! আমি খাবার পাঠাচ্ছি! ”
” জ্বি আম্মা!”
তামিম উপরে উঠে যায়! আর তার পঞ্চ পান্ডব যে যার রুমে! নিচে শুধু তানভীর সরকার আর আয়েশা সরকার ছিলো! আয়েশা সরকার উঠে কিচেনে যেতে থাকে! ঠিক তখনই হাতে টান পড়ে!
” আয়েশা..!”
” জ্বি কর্তা!”
” আপনি এখন ও বাঘিনীই আছেন!”
” চীতা বাঘের বউ বাঘিনী, বিষয়টা কেমন অদ্ভুত না কর্তা?!”
তানভীর সরকার মুচকি হেসে উঠে! আয়েশা সরকার কিচেনে যেতে থাকে! তানভীর সরকার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আয়েশা সরকারের যাওয়ার দিকে!
” আমি তানভীর সরকার, এক কালে ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রা’সীরা আমার পায়ে থাকতো, মাফি’য়াদের গড ফাদার ছিলাম আমি,
এখন বউয়ের জন্য ভেজা বেড়াল হয়ে গেছি, তামিম তো সেখানে আমারও অংশ, সে ও ঠিক ঠান্ডা হবে!”
কথাটি বলেই তানভীর সরকার তার ফ্রেম ওয়ালা মোটা চশমাটি খুলে ফুঁ দিয়ে আবার ও পড়ে ফেলে!
তামিম রুমে এসে দেখে, সুবহা কোথাও নেই! হয়তো ওয়াশরুমে! তামিম ডোর লক করে ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে সেখানে সুবহা নেই!
তামিম বাইরে এসে সোজা বারান্দায় চলে যায়! সেখানে গিয়ে তার প্রাণে প্রাণ ফিরে আসে!
সুবহা চুপচাপ ফ্লোরে অন্ধকার বারান্দায় নাইট সুট পড়ে বসে আছে! আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে!
তামিম যেয়ে সোজা সুবহার পিছনে আর তার কোমর ধরে তাকে কলে বসিয়ে দেয়!
” তামিম…!”
” হুমম!”
” সকাল থেকে কোথায় ছিলেন? পাত্তাই দিলেন না আজকে!”
তামিম সুবহার কথা শুনে বুঝতে পারে ইনজেকশনের প্রভাব কেটে যাচ্ছে! সুবহা তামিমের সাথে আছে ৩ দিন যাবত! আর এই তিন দিনে কোনো ইনজেকশন পু’শ করা হয়নি তার শরীরে! এখন ধীরে ধীরে শরীরের কোষ গুলো সচল হয়ে উঠবে! তামিম চুপচাপ বসে থাকে! কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না! সুবহা যে ১:৩০ ঘন্টা আগে বাংলাদেশে তামিমের সাথে এসেছে সেটা ও তার মনে নেই! সবটাই গতকালকের ঘটনা তার কাছে!
তামিমকে চুপ থাকতে দেখে সুবহা আবার বলে উঠে,,
” বিয়ের আগে কতো পিছু পিছু ঘুরতেন, এখনতো পাত্তাই দেয় না! ”
” মুরগি ধরার আগে শেয়াল ওসব করেই!”
সুবহা তামিমের শরীরে সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে বসে!
” শেয়াল যদি এতো হ’ট হয়, মুরগি হতে সমস্যা কোথায়?”
” শা’লার জিন্দেগী..! তোর সাথে কথায় পারা যাবে না!”
” আপনার থেকেই ট্রেনিং প্রাপ্ত!”
তামিম কিছু না বলে সুবহাকে উত্তপ্ত করা শুরু করে!
” তামিম…প্লিজ না…!”
” তুমিই শুরু করছে বেইবি!”
” শয়তান সরকার! ”
” শয়তান ছেমরি! রুমে চলো!”
” নাহহহ!”
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬৮
তামিম সুবহাকে কোলে নিয়েই রুমে চলে যায়! সুবহা হাত_পা ছোটাছুটি করলে ও তামিম শুনে না তার কথা!
” তামিম…! ”
” কথা কম, কাজ বেশি!”
” মানে?”
” ১৯/২০ ”

eita amr pora best ekta golpo chilo ,onk funny ekta golpo ,hashte hashte amr pet betha Hoye gese 🤣🤣🤣