এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭১
কাফাতুন নেছা কবিতা
” আজকে না-হয় ব্রেনে হালকা সমস্যা হয়েছে, কাল যে পুরোপুরি পাগল হয়ে যাবে না তার গ্যারান্টি কী ভাইজান? আর তামিমের বয়স কত? ২৮ বছর মাত্র! একটা চাল_চুলো হীন, অভিভাবক বিহীন পাগল….!”
পুরো কথাটি শেষ করার আগেই পরপর দুটি গু’লি চলার ফলে উপরের বিশাল ঝাড়বাতিটি ফ্লোরে আঁচড়ে পড়ে! উপস্থিত সকলের মাঝে ভয় বাসা বাঁধে!
সকলে বুঝে যায় এখন কে আসতে চলেছে ভিতরে! তন্বী বেগম শুকনো ঢোক গিলে!
সদর দরজা দিয়ে হাতে লাইসেন্স ধারি পি’স্তল নিয়ে চোখে চশমা দিয়ে ভিতরে আসতে থাকে তামিম! সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও! তামিমের হাঁটার গতি বলে দিচ্ছে আজকে আবার ও আরশিনগরে র’ক্তের বন্যা বইবে! তন্বী বেগম কল্পনা ও করতে পারেনি এখন তামিম আসবে!
তামিম এসে সোজা তন্বী বেগমের সামনে দাড়ায়!
” আমি তামিম সরকার, আইন মানি না! আইন তৈরি করি! আর আমার আইন এটাই বলে, যেই আঙ্গুল আমার বউয়ের দিকে উঠছে, সেই আঙ্গুল কে’টে কু’ত্তা দিয়ে খাওয়াতে হবে!”
তামিমের কথা শুনে তন্বী বেগম মোটামুটি ভয় পেয়ে যায়! কারণ তন্বী বেগম খুব ভালোমতোই জানেন তামিম কখনো বয়স বা আত্মীয়ত্বার খাতিরে কাউকে ছেড়ে দেয় না! আর সুবহার ব্যাপারে হলে তো আরো আগেই নয়! কিন্তু তামিম তো কখনো কোনো মেয়ের গায়ে হাত তো’লে না! আর যায় করুক নিজের ফুপিকে তো আর মে’রে ফেলবে না!
পরক্ষণেই তন্বী বেগম তানভীর সরকারের দিকে তাকায়! নাহ! কোনো ভয় নেই! তামিম আর যায় করুক তার ভাইয়ের সামনে তো আর কিছু করার সাহস পাবে না! আর এই সুযোগে যদি একবার বাপ_ছেলের মধ্যে আগু’ন লাগানো যায়, তাহলে তো কোনো কথায় নেই!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” দেখেছেন ভাই জান! শেষ মেষ একটা মেয়ের জন্য…! ”
” সে শুধু একটা মেয়ে না ! আমার আমানত! আমিই ওর অভিভাবক! ”
খুব জোড়ে গর্জে উঠে তামিম! এতোদিন পর আবার ও সেই চিরচেনা তামিমের দেখা মিললো!
তামিম রাগান্বিত হয়ে নিজের কক্ষে যাওয়ার জন্য সামনে পা বাড়ায়! সিড়ির কাছে যেতেই আবার ও তন্বী বেগমের কথা তার কানে ভেসে আসে!
” শেষ মেষ একটা পাগলের সাথে সংসার করবি তুই তামিম!”
সুবহাকে পাগল বলায় রাগে তামিমের কপালের রগ গুলো দাড়িয়ে যায়! সিড়ির পাশে রাখা বড় ফুলদানিটি হল রুমের বিশাল টি_টেবিলে ছুড়ে মা’রে! তন্বী বেগম ভয়ে, ভাইয়ের একদম পিছনে চলে যায়! খুব জোড়ে হুংকার দিয়ে উঠে তামিম!
” চুপপপপপপ! একদম চুপপপপ! আমার বউ পাগল হোক, লুলা হোক, লেংড়া হোক, প্রতিবন্ধী হক, আমি ওকে নিয়েই সংসার করবো!”
” এখন কী জান দিবি ওর জন্য তুই তামিম!”
তামিম তন্বী বেগমের একদম সামনে এসে দাড়ায়!
” বউয়ের জন্য জান দিতে ও পারি, বউয়ের জন্য জান নিতে পারি! ”
তামিমের কথায় এবার পুরোপুরি চুপ হয়ে তন্বী বেগম! তামিম চোখ মুখ শক্ত করে আবার উপরে যেতে থাকে! যাওয়ার সময় আবার ও পিছনে ফিরে তাকায়!
” আপনাকে কবে মা’রতে হবে বইলেন ফুপি! আমি সুন্দর মতো আপনাকে পরপারে টিকিট ধরাইয়া দিবো!”
তামিমের ঠান্ডা মস্তিষ্কের ভয়ংকর হুমকি শুনে আর কিছু বলার মতো সাহস হয়ে উঠে না তন্বী বেগমের! তামিম মাঝ সিঁড়িতে যেতেই আবার ও ডাক পড়ে তার!
” তামিম!”
তানভীর সরকারের ডাক শুনে তামিম পিছনে ফিরে তাকায়! মুখে হাসি ফুটে উঠে তন্বী বেগমের! নাহ! সে
এবার আর হেরে যায়নি! এখনই বাপ ছেলের মধ্যে যু’দ্ধ লাগলো বলে!
” জ্বি আব্বাজান!”
” সুবহা মা আপনার মায়ের রুমে আছে, সেখানে যান আপনি!”
তামিম মাথা নেড়ে উপরে উঠতে থাকে! কিন্তু এক অদ্ভুত রকমের শান্তি বয়ে চলে তার মনে! পৃথিবী এইদিক থেকে ওই দিক গেলে ও তামিমের আব্বা জান তার সাথে আছে এটাই হলো সব থেকে বড় বিষয়!
তামিম উপরে উঠে আবার ও পিছনে ফিরে তাকায়!
” আব্বা জান!”
তানভির সরকার উপরে একটা হাসি দিয়ে উপরে তাকায়!
” আই লাভ ইউ ফ্রম সুবহার স্বামী! ”
ছেলের কথা শুনে তানভীর সরকারের হাসি আরো বেড়ে যায়!
” আই লাভ ইউ টু ফ্রম আয়েশার স্বামী! ”
তামিম একটা উড়ন্ত চু’মু তার আব্বা জানকে দিয়ে সুবহার উদ্দেশ্যে যেতে থাকে! তানভীর সরকার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তামিমের যাওয়ার দিকে! আজকে তানভীর সরকার খুব খুশি! কারণ তার ছেলে একজন প্রকৃত স্বামী হতে পেরেছে! যেমনটা সে নিজে ছিলো তার যুবক বয়সে! তানভীর সরকারের দাপটে আয়েশা সরকারকে যেমন কেউ কিছু বলতে পারতো না! ঠিক তেমন এখন তামিমের জন্য ও সুবহাকে কেউ কিছু বলতে পারে না! গর্বে তানভীর সরকারের বুক ভরে যায়!
———-একটু আগের কথা…..
তামিম দুপুর অব্দি বাসায় থাকে সুবহার সাথে! তাকে খুব নজরে নজরে রাখে তামিম! কারণ ডাক্তার বলেছিলো, ইনফেকশনের প্রভাব কে’টে যাওয়ার পর থেকেই সুবহার শরীরের অবশ ভাব ও কে’টে যাবে! অসহ্য ব্যাথা হবে সারা শরীরে! কোষ সজাগ হওয়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কে চলবে অসহ্য ব্যাথা, আর ভুলে যাওয়ার প্রভাব!
তামিম ঠিক করে সে নিজ থেকে ডাক্তারের কাছে যাবে! সুবহাকে ও সাথে নিবে না! যতদিন লুকাতে পারে সে সুবহার থেকে, ততদিন লুকিয়ে রাখবে! পরে সুবহা জানলে ও মোটামুটি সুস্থ হয়ে যাবে!
তামিম সারা সকাল সুবহার সাথে থেকে দুপুরের দিকে বের হয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে! সেখান থেকে সোজা পার্টি অফিসে!
তামিম সুবহাকে সারা দুপুর ঘুমিয়ে থাকতে বলে যায়! যতক্ষণ সুবহা ঘুমিয়ে থাকবে, ততক্ষণে তামিমের কাজ শেষ হয়ে যাবে! আর সে ও তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারবে!
কিন্তু বিপত্তি বাঁধে তামিমের ফুপিকে নিয়ে! এমনিতেই সুবহার সাথে তামিমের বিয়ের ফলে তার এতোদিনের স্বপ্ন শেষ! তার উপরে তামিম সুবহাকে চোখে হারায়! সে এতো কিছু করে ও নিজের মেয়ের সাথে তামিমের বিয়ে দিতে পারলো না!
তামিম নাম করা একজন নিউরোলজি প্রফেসরের সাথে কথা বলতে যায়! সুবহার সমস্ত দিক নিয়ে সে খুব সুক্ষ ভাবে পদক্ষেপ ফেলতে চায়! তামিম চাইলেই ডাক্তারকে তুলে এনে সব কিছু করতে পারতো! কিন্তু তামিম আর পাঁচ টা সাধারণ স্বামীর মতোই তার বউয়ের জন্য পরিশ্রম করতে চায়! তামিম অনুভব করতে চায়, অন্যান্য স্বামীরা কীভাবে তাদের বউয়ের অসুস্থতার সময় পরিশ্রম করে!
সব কিছুই যখন ঠিক চলছিলো, তখন হুট করে সুবহার কাল হয়ে দু’জন বাড়িতে আসে! তানভীর সরকারের বোনের মেয়ে, আর পানি মন্ত্রীর মেয়ে!
————সরকার বাড়ি_____
” তোমরা এই ভর দুপুরবেলা!”
” আসলে মামি, এই দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তো, তাই ভাবলাম ঘুরে আসি! ‘
” তা, ভালো করেছিস! বস, তুমি ও বসো! ”
” জ্বি আন্টি! ”
আয়েশা বেগম ছন্দা, আর মনিকাকে বসতে বলে সার্ভেন্টদের কিচেনে যেতে বলে! আর নিজে ও তানভীর সরকারের কাছে চলে যায়, তার কাগজ গুলো দিতে!
আয়েশা বেগম উপরে যাওয়ার ১০-১২ মিনিট পর সুবহা নিচে নেমে আসতে থাকে! সারাক্ষণ রুমে থাকা যায় না-কি! সুবহা নিচে নামতেই তারা দু-জন একজন আরেকজনকে চোখাচোখি করে!
” ভাবি? ”
ছন্দার ডাকে সুবহা হল রুমের দিকে তাকায়! সেদিনের এতো কিছুর পর যে ছন্দা সুবহাকে এতো সুন্দর করে ডাকবে সে কল্পনা ও করেনি!
সুবহা সাতপাঁচ না ভেবে খুশি মনে চলে যায় হল রুমে!
সুবহা যেতেই ছন্দা তাকে জড়িয়ে ধরে! কিছুটা বিব্রত হয় সুবহা! ছন্দা তাকে হঠাৎ কটে জড়িয়ে ধরবে এটা সে কল্পনা ও করেনি! কিন্তু সুবহা তাকে কোনো সন্দেহ করে না! মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল! পরিবর্তন হতেই পারে! সুবহা ও খুশি মনে তাকে জড়িয়ে ধরে!
” ভাবি, তুমি কিছু মনে করোনি তো আমার সেদিনের ব্যবহারের জন্য? ”
সুবহা মুখে হালকা হাসি টেনে বলে…!
” নাহ! আমি কিছু মনে করিনি!”
” কিন্তু আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে তুমি আমাকে পছন্দ করো৷ না!
” না! না! এমনটা নয়!”
” তাহলে এই চকলেট টা নাও! ”
ছন্দা হুট করে সুবহার মুখের সামনে চকলেট ধরে! সুবহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুরো চকলেটটি সুবহার মুখের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়! সুবহা খানিকটা অবাক হয়! এভাবে হুট করে চকলেট দিয়ে কে সরি বলে? তারপর ও মনে কিছু সন্দেহ রাখে না! এক এক জনের পারসোনালিটি এক এক রকম! তাই সবাইকে নিজের সাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না!
” ভাবি পরিচয় করিয়ে দেই, ও আমার ফ্রেন্ড মনিকা! ”
মনিকা নিজ থেকে এসে সুবহার সাথে হাত মেলায়! সুবহা ও খুশি মনে তার সাথে হাত মেলায়! কিছু ক্ষণ পর সুবহা অনুভব করে তার মাথা কেমন যেনো করছে, ঠিক বলতে পারছে না সে! পরক্ষণেই মনিকা জেদ ধরে সুবহার হাতে চা খাবে! সুবহার হাতের রান্নার প্রসংশা সে না-কি অনেক শুনেছে! সুবহা মনিকার কথা শুনে একটু চিন্তায় পড়ে যায়! ধরতে গেলে সে তেমন কিছু তো রান্নায় করেনি! তাহলে তার রান্নার প্রসংশা হলো কীভাবে? হয়তো তামিমই আগ বাড়িয়ে সবাইকে জানিয়েছে! সুবহা হালকা হেসে কিচেনে চলে যায়!
” আমার থেকে তামিমকে কেড়ে নেওয়ার ফল আজকে এই ছোটোলো’কের মেয়ে বুঝবে!”
মনিকার কথা শুনে ছন্দা তার দিকে তাকায়! আর একটু হাসার চেষ্টা করে! সত্যি তো এটাই যে ছন্দা নিজে ও তামিমের বউ হতে চেয়ে হয়নি! এখন মনিকাই তার একমাত্র ভরসা!
সুবহা কিচেনে যেয়ে সার্ভেন্টদের বলে নাস্তা দিতে আর সে নিজে চা বানাবে! সার্ভেন্টরা প্রথমে না না করলে ও পরে সুবহার জোরাজোরি তে রাজি হয়ে যায়! কিন্তু তাদের মনে ও ভয় ছিলো যদি তামিম জানে? তাহলে তাদের আর শেষ রক্ষা হবে না! সুবহা ৫ জনকেই বের করে দেয়! নিজের মন মতো কাজ করতে থাকে!
” ভাবি?”
” তোমরা এখানে এলে যে? কিছু দরকার ছিলো? সার্ভেন্টদের বলতে! ”
” আসলে ভাবি আমরা একটু একান্তে সময় কাটাতে এসেছি!”
সুবহা তাদের কথায় একটু আনইজি ফিল করে! কিচেনে একান্তে সময় কে কাঁ’টায়? তারপর ও হালকা হাসি দিয়ে নিজের মনের অবস্থা আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যায়!
” ভাবি, চা তো হয়ে এসেছে দাও আমি হেল্প করি!”
” নাহ! নাহ! আমি করছি! ”
ছন্দা রীতিমতো জোড়জোড়ি লাগায় সুবহার সাথে, কিন্তু সুবহা তার কথাই সাই দেয় না! সে নিজ থেকে ক্যাপে চা ঢেলে মনিকাকে দিতে যায়!
” এই নিন! ”
” দিন ভাবি!”
মনিকা ক্যাপটি না ধরে ছেড়ে দেয়, আর তার ড্রেসে কিছুটা চা পড়ে যায়! সুবহা একটু ভয় পেয়ে যায়! হঠাৎ চায়ের কাপটি পড়ে যাওয়াতে!
” সরি আমি…..!’ আহহহহহহহ!”
খুব স্ব জড়ে সুবহার গালে চ’ড় বসিয়ে দেয় মনিকা! তাল সামলাতে না পেরে গরম চায়ের কেটলির উপরে হাত পড়ে সুবহা! প্রায় অর্ধেক অব্দি হাতে চা পড়ে যায় সুবহার!
” ছোটো’লোকের বাচ্চা, আমার এতো দামি ড্রেস নষ্ট করে দিলি!”
মনিকা ইচ্ছে করে চায়ের পুরো কেটলিটা সুবহার গায়ে ফেলে দেয়! পরক্ষণেই ছন্দা মনিকাকে ইশারা করে, আর তারা দু’জনেই ফ্লোরে পড়ে যায়!
” ভাবি সরি আমাদের কিছু বলো না!”
” সরি ভাবি! ”
মনিকা আর ছন্দা দক্ষ অভিনেত্রীদের মতো নাটক শুরু করে দেয়! কারণ আয়েশা সরকার আর তানভীর সরকার কিচেনের দিকে আসছিলো! তাদের দেখে তারা দু-জনই ফ্লোরে পড়ে যায়! অপর দিকে সুবহা নিজের হাত ধরে কাঁদতে থাকে জোড়ে জোড়ে!
” কী হয়েছে? এসব কী? সুবহা মা!”
আয়েশা বেগম তাড়াতাড়ি করে সুবহার কাছে চলে যায়! মনিকা আর ছন্দাকে তেমন একটা পাত্তা দেয় না উনি!
আয়েশা বেগম তাড়াতাড়ি করে সুবহার হাত পানিতে ধরে! সুবহা প্রচুর কাঁদতে থাকে! সার্ভেন্টরা বরফ এনে দেয়! আয়েশা বেগম সুবহার হাতে বরফ ধরে! তাও জ্বলা কিছুতেই কমে না! অন্য দিকে মনিকা আর ছন্দার নাটক ও থামে না! তারা পুরো বাড়িতে জানিয়ে দেয় যে সুবহা রাগের বসে তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে, আর নিজের হাতে ও গরম চা ইচ্ছে করে ফেলেছে! তাদের ভাষ্যমতে সুবহা পুরোপুরি নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে!
আয়েশা বেগম তাদের তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে সুবহাকে নিয়ে রুমে চলে যায়! আর তারা দু’জন নিচেই নিজেদের নাটক চালিয়ে যায় তানভীর সরকারের সামনে! তাদের এই নাটক আরো জমজমাট করতে তালে তাল মিলাতে হাজির হয় তন্বী বেগম!
বর্তমান
তামিম সোজা তার মায়ের কক্ষের সামনে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ে! যেহেতু তার মায়ের ঘর অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা উচিত হবে না তার! তামিম কখনোই তার মা-বাবার কক্ষে অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করেনি!
দুই_তিনবার কড়া নাড়তেই ভিতর থেকে আয়েশা বেগম তামিমকে আসতে বলে! তামিম এক আকাশ পরিমাণ সংশয় মনে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে! তামিমের জন্য সব থেকে কষ্টের দিক হলো সুবহার চোখে পানি! তামিম এক দমই সহ্য করতে পারে না সুবহা কাঁদবে কোনো কিছুর জন্য!
তামিম ভেতরে ঢুকতেই তার বুকটা ভারি হয়ে আসে! আয়েশা বেগম ইশারা করে চুপ থাকতে বলে তামিমকে! সুবহা ঘুমিয়ে মাত্র কিছু ক্ষণ হয়েছে! একটু ঘুমালে হাতের জ্বালা ও কমবে!
তামিম এসে সোজা ফ্লোরে সুবহার মুখ বরাবর বসে! খুব কেঁদেছে হয়তো সে! মুখ কেমন ফোলা ফোলা হয়ে গেছে! চুল দিয়ে হালকা মুখ ঢাকা, তামিম চুল গুলো সরাতেই সুবহার গালের থাপ্প’ড়ের দাগ চোখে পড়ে তার! এই কয়দিনে তো তার দেওয়া থাপ্প’ড়ের দাগ গুলো কমেছে, আজকে আবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! তামিম খুব শান্ত ভাবে কিছু ক্ষণ বসে থাকে! তারপর সুবহাকে কোলে তুলে নেয়!
” বেয়াদবি নিয়েন না আম্মা! আপনার সামনে বউকে কোলে তুলছি!”
আয়েশা বেগম তামিমকে ইশারা করে বুঝায় সব ঠিক আছে! কোনো সমস্যা নেই! কোনো কথায় যেন মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না তার! চোখ গুলো ও ফুলে গেছে! হয়তো সুবহার আর্তনাদ একটু বেশিই ছিলো তাই নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি উনি!
তামিম সুবহাকে নিয়ে নিজেদের কক্ষে চলে যায়! বিছানায় শুইয়ে দেয় সুবহাকে! আর চুপচাপ তার পাশে বসে থাকে!
তামিম সুবহার পুরো শরীর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করা শুরু করে! তার অবর্তমানে সুবহা কোথায় কোথায় আঘাত পেয়েছে সেটাই দেখা শুরু করে তামিম! গালে একটা দাগ স্পষ্ট! তারপর গলায় দেখে, না কোনো চিহ্ন নেই! পরক্ষণেই তামিমের চোখ যায় হাতে! তামিম শুনেছিলো সুবহার হাত হালকা পু’ড়েছে ! কিন্তু এতো বড় হাত যে পুড়ে গেছে এটা সে জানতো না! হাতের অর্ধেক অংশ লাল! খুব লেগেছে হয়তো তার! সুবহার হয়তো অনেক কষ্ট হয়েছে!
নিজের অজান্তেই তামিমের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে! আর চোয়াল গুলো শক্ত হয়ে আসে! কিছু ক্ষণ পর তামিমের ফোনে দুপুরের সিসিটিভি ফুটেজ পাঠানো হয়! তামিম চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে যায়! এখানে ভিডিও অন করলে সুবহার কষ্ট দেখে সে নিজেকে ঠিক রাখতে না পারলে সুবহার ঘুম ও আলগা হয়ে আসবে!
তামিম ওয়াশরুমে গিয়ে ফুটেজ অন করে দেখতে থাকে! সারা দুপুরের পুরো ঘটনাতার সামনে চলে আসে! তামিম নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে! কিছু ক্ষণ পর বেসিনের আয়নাতে খুব জোড়ে ঘু’সি মারে! রাগে ফুলতে থাকে তামিম!
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭০
” মাহির!”
” জ্বী ভাই?”
” আমার রঙ্গমঞ্চ খানা খোলার সময় হয়ে গেছে! ”
তামিম ফোন কেটে দিয়ে চুপচাপ বাইরে এসে সুবহার সামনে বসে! আর তার হাত ধরে!
” তোরে ছুঁইয়া কথা দিতাছি বউ! স্বামী তামিম সরকার কতটা ভয়ংকর এটা পুরো আরশিনগর দেখবে! ”