এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৪

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৪
কাফাতুন নেছা কবিতা

আজ থেকে ১১ বছর আগের কথা, ২৭ শে জানুয়ারি ২০১৪ সাল! আয়েশা সরকারের জন্য একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা! ! শুনতে শুধু একটা তারিখ বা বছর মনে হলে ও, এই তারিখ টায় ছিলো আয়েশা সরকারের সর্বনাশের তারিখ! তিনি একাধারে হারিয়ে ছিলেন নিজের ছোট ছেলে তাসনিক সরকারকে এবং বড় ছেলে তামিম সরকারের সুন্দর ভবিষ্যত!

সেই ১১ বছর আগে তিনি নিজের ১৭ বছরের ছেলেকে খু’নির খাতায় নাম লিখাতে দেখেন! ছোটো ছেলেকে কাফনের কাপড়ে দেখেন, তাও হাফ লাশ! পুরো শ’রীর পাওয়া যায় নি! স্বামীকে মৃত্যুর সাথে লড়তে দেখেন, আর সব থেকে ভয়াবহ যেটা ছিলো একটুর জন্য নিজের সম্মান হারাতে বসে ও হারান নি!
সব হারিয়ে আয়েশা সরকার যখন ছিলো নিঃস্ব তখন তিনি সব থেকে মূল্য বান জিনিস যেটা হারিয়েছিলেন সেটা ছিলো নিজের জন্মদাতা পিতা! এখন ও আয়েশা সরকারের গা শিউরে ওঠে!
আয়েশা সরকার এখন ও সেই দিনটার কথা ভুলতে পারেনি! যেদিন তার ১৭ বছরের তামিম থানায় অত্যা’চারের শিকার হয়েছিল! তামিমের একটা কথায় বার বার আয়েশা সরকারের কানে ভাসে
” আম্মা তারা আমাকে পানি খাইতে দেয় নাই! ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেদিন আয়েশা সরকারের বুকটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিল! ১৮ বছরের নিচে সকলে তো কিশোর! তাদের তো মা’রার অধিকার পুলিশের নেই! কিশোর আদালতে বিচার হওয়া ছাড়া! কিন্তু তামিম মা’র খেয়েছিলো! নির্মমভাবে! তার ন’খ উপরে ফেলা হয়েছিল! কারেন্টের শক! আরো কতো কী!
তারপর থেকে শান্ত স্বভাবের তামিম হয়ে যায়, অশান্ত! খু’নি! যাকে দেখলে সকলে ভয় পায়!
সেই দিন থেকে এই অব্দি তামিম তার মায়ের কোলে মাথা রাখেনি! কিন্তু আজকে রাখলো! তামিম আজকে তার মায়ের কোলে মাথা রাখলো!
সারা রাস্তা তামিম আয়েশা সরকারের কোলে মাথা দিয়ে অর্ধ শোয়া হয়ে থাকে! আর আয়েশা তামিমের মাথায় হাত বুলাতে থাকে!
আয়েশা সরকারের চোখ দিয়ে টলমলিয়ে পানি পড়তে থাকে! এক ফোঁটা তামিমের কপালে ও! তামিম বুঝতে পারে তার মায়ের অনুভূতি! তামিম কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে থাকে!

” বাপ! ”
” জ্বি আম্মা!”
” কত বছর পর আমার কোলে মাথা রাখলি?”
” ১১ বছর ২২ দিন, ১৩ ঘন্টা ৩৭ মিনিট পর আম্মা! ”
আয়েশা সরকার চোখ বন্ধ করে ফেলে! তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে! তামিম আয়েশার মুখ বরাবর তাকায়, আর হাত দিয়ে চোখের পানি মুখে দেয়!
” আম্মা! আপনার চোখে পানি বড্ড বেমানান! ”
” এইটা সুখের পানি বাপ! তুই বুঝবি না!”
” জানি আম্মা! ”
” এতোদিন মায়ের থেকে দূরে থেকে কী পেলি তামিম?”
” দূরে কই? কাছেই তো ছিলাম আম্মা! ”
” কই বাপ? তুই তো ছিলি না! ”
তামিম উঠে আয়েশা সরকারের চোখের পানি মুখে দেয়!
” আম্মা, আমি প্রতিটা মিনিট গুনে রাখছি আপনার থেকে দূরে থাকার! যখনই আপনার কাছে যাইতে চাইতাম, তখনই….! ”

” ভুলে যা তামিম! সেদিনের কথা ভুলে যা!”
” সম্ভব না আম্মা! ”
আয়েশা সরকার ছলছল নয়নে তার ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে! তার ছোটো ছেলেটা কবে এতো বড় হলো? এখন সে মায়ের কষ্ট বুঝে! তামিম তানভীর সরকারের সাথে যতটা মিশে থাকতো, ঠিক ততটাই দূরে থাকতো আয়েশা সরকারের থেকে! খুব বেশি একটা মিলমিশ ছিলো না তাদের!
আয়েশা সরকার ছেলে বলতে ছিলেন অজ্ঞান! সব সময় ছেলের আশে পাশে থাকলে ও, কোথাও না কোথাও খালি লাগতো তার! তার কোল ফাঁকা লাগতো সব সময়! কিন্তু আজকে সুবহার জন্য তার ছেলে আবার ও তার কোলে মাথা রাখলো!

” তুই ঠিক আছিস বাপ?”
তামিম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে গ্লাসের দিকে তাকায়!
” ভালোবাসা হচ্ছে ক্যান্সারের মতো আম্মা! আমি ছাড়তে চাইলে ও, সে আমারে ছাড়বো না!”
আয়েশা সরকার বুঝতে পারে ছেলের মনের কথা! সুবহার অসুস্থতা, তার শরীরে ইনজেকশন, এসবের সঠিক উত্তর তামিম যতদিন না পাচ্ছে, ততদিন সে শান্তি পাবে না! আর না সুবহাকে সরাসরি কিছু বলতে পারছে! একটা দ্বিধার মধ্যে পড়ে আছে তামিম!
” কতটা ভালোবাসিস সুবহা?”
” যতটা বাসলে ২৪ ঘন্টা ও কম লাগে!”

আয়েশা সরকার তামিমের দিকে খুব অবাক চোখে তাকায়! এটা কী সেই তামিম? যে কথায় কথায় গলা কাট’তে বের হতো? যার রাগ ছিলো পর্বত চূড়ার মতো উচু! না ছিলো আবেগ, আর না ছিলো কোনো ভালোবাসা! সেই তামিম সরকার ও আজকে একটা মেয়ের জন্য এতো উন্মাদ হয়ে গেলো! আয়েশা সরকার চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায়! অবশেষে তার ছেলে মানুষের কাতারে নাম লেখালো! সে ও আবেগি হলো!
” তামিম! যদি কখনো শুনিস, সুবহার সাথে খারাপ কিছু হয়েছে! তুই কী ওকে ছেড়ে দিবি?”
তামিম তার মায়ের দিকে তাকায় একজন নিঃস্ব মানুষের মতো!
” তামিম সরকার বউ ছাড়ার লোক না আম্মা!”
আয়েশা তামিমের হাত শক্ত করে ধরে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করে, তামিম একদম ঠিক পথে আছে!
” সুবহা আমার কাছে ঠিক ততটাই পবিত্র, যতটা বৃষ্টির পানি হয়!”

” কারা আপনারা? এভাবে এগোচ্ছেন কেন?”
এক পা এক পা করে পিছিয়ে যেতে যেতে কথা গুলো বলতে থাকে সুবহা!
” দেখুন প্লিজ! এগোবেন না! প্লিজ! এ কী! না প্লিজ! আপনি আমার হাত ধরছেন কেন! তামিমমমমমম!”
খুব জোড়ে জোড়ে চেঁচাতে থাকে সুবহা! কিন্তু তার ডাক শোনার মতো কেউ নেই আশেপাশে!! এই গুদাম ঘরে সুবহার চিৎকার শোনার মতো কেউ নেই!
৩ জন লোক খুব লালসার দৃষ্টিতে সুবহার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে! তাদের মুখের আকৃতি বলে দিচ্ছে কতোটা লালসা তাদের মনে!
সুবহা ভয় আর আতঙ্কে প্রায় শেষ! কোনো মেয়েই এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না! সে যতই সাহসী হোক না কেন!
সুবহা মনে মনে নিজেকে দোষারূপ করতে থাকে! কেন সে এমন বালদামি করলো? আজ নিজের বোকামির জন্য এতো বড় বিপদে পড়লো সে!

২৩ মিনিট পর তামিমের গাড়ি ঢুকে সরকার বাড়িতে!আয়েশা সরকার এবং তামিম একসাথে নেমে ভিতরে চলে যায়! আয়েশা সোজা কিচেনে চলে যায়, কারণ তানভীর সরকার আসলেই তাকে কফি দিতে হবে! আর তার হাতের ছাড়া সে খাবে ও না! যে-কোনো সময় তানভীর সরকার আসতে পারে! আয়েশা কিচেনে চলে যায় আর তামিম তার রুমে!
রুমে যেয়ে তামিম সুবহাকে কোথাও পায় না! ওয়াশরুম, বেলকনি কোথাও নেই সুবহা! তামিম নিচে চলে আসে সুবহাকে খোঁজার জন্য! কিছু সার্ভেন্ট দের ও বলে সুবহাকে দেখলে তাকে যেন বলে তামিম এসেছে!
তামিম নিচে এসে ও সুবহাকে কোথাও পায় না!

” ছোটো কর্তা!?”
” বলুন কাকা!”
” সুবহা মা যাওয়ার সময় তার ফোন টা ফেলে গেছে নিচে!”
শমসের তামিমের দিকে সুবহার ফোন ফেরত দিতে দিতে বলে!
” কোথায় গেছে সুবহা?”
” ওই যে আপনি যেতে বললেন যে!”
” আমি বলেছি?”
” হ্যাঁ! গাড়ি পাঠালেন যে!”
শমসেরের কথা শুনে তামিমের চোখ কপালে উঠে যায়! সে কখন গাড়ি পাঠালো? আর সুবহাই বা গেলো কার সাথে?
তামিম গভীর চিন্তায় পড়ে যায়! তার পঞ্চ পান্ডব ও এসে হাজির হয়!
তামিম দেরি না করে তাড়াতাড়ি কন্ট্রোল রুমে চলে যায়! সিসিটিভি ফুটেজ চেক করার জন্য! সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও যায়!

তামিম দুপুরের পরের ফুটেজ চেক করে! সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটা কালো বড় গাড়ি এসে সরকার বাড়ির ভিতরে ঢুকে! সচারাচর আইডি কার্ড বা ভিতর থেকে কনর্ফমেশন না পাওয়া অব্দি কেউ সরকার বাড়িতে ঢুকে না! কিন্তু তারা খুব সহজেই ঢুকলো! আর লোকদের ও কিছু একটা বললো! তার কিছু ক্ষণ পর সুবহা নিচে চলে এলো! দু’জন লোক তাকে কিছু একটা বললো! আর সুবহা তাদের সাথে গাড়িতে চলে গেলো! তামিম মেইন গেটের সিসিটিভি ফুটেজ অন করে! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সিসিটিভির ফুটেজ ছিলো না!
” ফুটেজ কই?”
” স্যার..! শামীম ভাই ফুটেজের দ্বায়িত্বে!”
” ডাকে তাকে!”
” ওকে স্যার!”

গার্ডরা শামীম কে খুঁজতে যায়! আর তামিম ভালো মতো ফুটেজ গুলো দেখতে থাকে! কিছু ক্ষণ পর গার্ডরা এসে জানায়, শামীম কোথাও নেই! তার ফোন ও বন্ধ! তামিমের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে!
তামিম সাথে সাথে পুলিশের ডিআইজি কে কল করে! আর তাকে কোনো স্বড় গোল না করে সুবহাকে খুঁজতে বলে! পরক্ষণেই তামিমের মনে পড়ে গেটের কথা! যেখানে কোনো চেকআপ ছাড়াই গাড়িটি ঢুকে ছিলো! তামিম গার্ডদের বলে চেকপোস্টে থাকা ৬ জনকে ভিতরে আনতে!
কিন্তু তাদের মধ্যে শুধু চার জনই ভিতরে আসে! আর বাকি দু-জনের কোনো হুদিস পাওয়া যায় নি! ফোন ও বন্ধ!
তামিম বুঝে যায় খুব ঠান্ডা মাথায় সুক্ষভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে! তামিম হল রুমে চলে আসে! সেখানে তানভীর সরকার ও উপস্থিত ছিলো! তিনি এসেছেন মাত্র মিনিট পাচেক হবে! তামিম হন্তদন্ত হয়ে তার কাছে চলে আসে!

” পুরো শহরে কারফিউ জারি করে দেন আব্বা! বউ খুঁজতে হবে আমার!”
তানভীর সরকার কোনো কথা না বলে সাথে সাথে রাষ্ট্রপতীকে কল দেয়! আর কারফিউ জারি করতে বলে! কারণ হিসেবে গ্রে’নেড হাম’লা হওয়ার ভুয়া নিউজ চারপাশে ছড়িয়ে দেয়! বাস, ট্রাক, সমস্ত কিছুতে চেকপোস্ট বসাতে বলে! আর আর্মিদের ও কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়! একজন প্রধান মন্ত্রী চাইলে আর্মি কেন? সেনা বাহিনি এবং সকল পেশায় নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীদের মিনিটের মধ্যে কাজে লাগাতে পারেন! আজকে হলে ও তাই! একটা মিথ্যা নিউজ চারপাশে ছড়িয়ে গোপনে গোপনে সুবহাকে খোঁজার চেষ্টা শুরু করে দেয়!

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৩

বাঙালি হলো আবেগি জাতি! চিলে কান নিয়ে গেছে শুনলে আগে চিলের পিছনে দৌড়ায়! তারপর কানে হাত দিয়ে দেখে, কান আছে কি-না! ঠিক তেমনই, গ্রে’নেড হাম’লার মিথ্যা নিউজ ফে’সবুকে এতো পরিমানের ছড়িয়ে যায় যে সকলের মনে ভয় বাসা বেঁধে যায়! কেউ তার অবস্থান থেকে নড়ে না!
পুরো শহরে কারফিউ জারি করে তামিম সরকার তার বউকে খুঁজতে বের হয়!আজকে র’ক্তের বন্যা বয়ে চলবে আরশিনগরে!
তামিম নিজের পাঞ্জাবির হাতা উপরে উঠাতে উঠাতে বের হতে থাকে!
” মাহিরররর!৷ চা-পাতি দে! ”

এমপি তামিম সরকার পর্ব ৭৫