এলিজা পর্ব ১২

এলিজা পর্ব ১২
Dayna

তিলকনগর————-
জয়তুন বারান্দায় বসে ভাঙা গলায় বললো,এত এত ভিরের মধ্যে ও নিরার মৃত্যু টার রহস্য মন থেকে বের ই করতে পারছি না। কি থেকে কি হয়ে গেলো।
রমজান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,সেসব বলে কি আর হবে কপাল মন্দ থাকলে যা হয়।
জয়তুন :পাখি মা তোর কাকির কাছে যা দেখ সে কি করে। হয়তো একা একা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
রমজান: আমগো এলিজা কে আনতে যাইতে হইবো কে কে যাইবো ?
জয়তুন:তুমি বলে আসো, জয়নাল, আসিম, আর শ্যামলি কে। বিয়ের দিন থাকতে পারলো না, শ্যামলি!অন্তত ফিরে আনতে তো যেতে পারবে।বলে দেখো কি বলে।
ঢাকা স্টামফোর্ড কলেজ__

ক্লাসে যেন মন বসছে না শায়ানের। আজকে তিন তিনটা ক্লাস করলাম শুধু অস্থির লাগছে। এরকম অনুভুতি কেন হচ্ছে?সবকিছু যেন অন্ধকার লাগছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতি যেন বার বার
থমকে যাচ্ছে। কেন আজ এরকম অনুভুতি হচ্ছে।
মা বাবা ঠিক আছেন তো?তাদের কিছু হয়নি তো?
না তাদের কিছু হলে , চিঠি আসতো । তবে কি এলিজার কিছু হলো। মনটা কেন জানি কুহ গাইছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভারী একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেললো শায়ান।
ক্যাম্পাসের ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে শায়ান। চোখ মুখে তার ভিষন্নতা।
তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় মিরা।
মিরা বললো,স্যার আপনি আজকে ক্লাস না করে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন।
কিছু হয়েছে??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শায়ান :আপনি এখানে?
মিরা : আপনাকে ক্লাসে, খুঁজলাম।
, লাইব্রেরী তে দেখলাম,কোথাও নেই।
ভাবলাম ছাদেই আছেন।
শায়ান :শরীর টা ভালো নেই, তাই ক্লাসে যায়নি।
মিরা ঠিক বুঝতে পারছে শায়ান এর চোখমুখে চিন্তার ছাপ, অস্থিরতা ‌। কিছু হয়েছে তবে বলছে না।
মিরা :স্যার চলেন নিচে যাই।
সেদিনের শায়ান আর আজকের শায়ান এর মধ্যে অনেক পার্থক্য। মিরা ভাবনা উপেক্ষা করে বললো,
মিরা :আপনি চাইলে আপনার মন ভালো করার জন্য, আমরা বিকেলে অচিন পাহাড়ে যেতে পারি।
শায়ান মিরার প্রস্তাব গ্রহণ করলো‌।
ভাবলো,
হয়তো আকারনেই আমার মন উতালা। যদি বাহিরে বের হই হয়তো মনটা শান্ত হবে।
মিরার কথায় রাজি হয়।

চৌধুরী বাড়ি _গতকাল রাতের বাকি অংশ_
একজন প্রতিবেশী বললো,
তোর ছেলেকে তো কোথাও দেখছি না।
বউ কি আমাদের জন্য ই আনছে নাকি।
বউকে রেখে সেই যে , চললো এখন পর্যন্ত খবর নেই।

এলিজা ভাবলো,এনারা কি বলছেন! পুলিশ বাবু কোথায়, কি হয়েছে তার। সবাই এখানে অঁচেনা। আমাকে এভাবে রেখেই উনি চলে গেলেন।

জাহাঙ্গীর -কর্কট মেজাজে বলে উঠলো,বিয়ে করছে দেখে কি, ছেলে কাজ কর্ম, দায়িত্ব ভুলে যাবে। বলেই একটা সিগার টানতে টানতে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে।
এলিজার খুব অদ্ভুত লাগল, বিয়ের প্রথম দিনে ই এরকম কথা শুনতে হচ্ছে।
রিনা বললো,অপূর্ব হয়তো থানাতে গেছে জরুরি কাজ হইবো। নতুন বউরে নিয়া খাবার দাও।সবাই খেয়ে নাও।
রিনার কথা মত সবাই তাই করলো।
কেউ ই অপূর্বর জন্য অপেক্ষা করলো না। সবাই যে যার মনে খেয়ে নিলো।
কিন্তু খেতে পারলো না এলিজা। আহত চোখ দুটো চারদিকে অপূর্ব কে খুঁজছে!

আজকে তো কাল রাত তা বউকে কোন ঘরে রাখবে?বললো মমতাজ- অপূর্বর ছোট চাচী।
অর্পা :বউমনি আমার ঘরে থাকবে।
মমতাজ -: না আমার ঘরে থাকবো।
জয়া-: কোন ঘরে না। বাসর ঘর সাজানো হয়েছে। সেখানে ই থাকবে অপূর্বর সাথে।
অর্পা এলিজা কে নিয়ে যায় অপূর্বর ঘরে চলে যায় । ফুল মাখানো ঘরটা দিয়ে সুগন্ধর বন্যা বইছে। অদ্ভুত অনুভূতি। প্রতিটা মানুষের জীবনে বাসর রাত নিয়ে ঝল্পনা কল্পনা থাকে।
খাটের উপরে বসে আছে এলিজা।
ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অর্পা, চাঁদনি যায়নি।
চাঁদনী কিছুক্ষণ এলিজা কে পরোখ করে।বললো,
এই দুনিয়াতে ভাগ্যবান মানুষ কারা জানো?যারা অন্য কারো প্রিয় মানুষ টা কে বেদনা, কষ্ট,হাহা’কার ছাড়াই পেয়ে যায়।

তুমি সেই ভাগ্যবতী নারী। যে কিনা ,অন্য কারো প্রিয় মানুষ টাকে যন্ত্রনা ছাড়াই পেয়ে গেছো। নিজের প্রিয় মানুষ টাকে অন্য কারো সাথে দেখার মত মূহূর্ত কারো জীবনে না আসুক। এলিজা চাঁদনীর কথার মানে বুঝলো না।তবুও কোন প্রশ্ন করলো না। চাঁদনী বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, অপেক্ষা করো অপূর্ব চলে আসবে। বলেই চলে যায়।
এলিজা – ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে থাকে। প্রহরের পর প্রহর কেটে যায়।
পথ চেয়ে থাকে অপূর্বর । তার আসার কোন নামগন্ধ নেই।
এলিজা ভাবছে,

নিজেকে আজ বড্ড অসহায় লাগছে, জানি না কেন।
ঘরের জানালা থেকে আকাশের চাঁদ গুলো দেখা যাচ্ছে।
লাল বেনারশী , ভারি গহনায় পূরো শরীর টা ওজনের আড়ন্নে একাকার। এলিজা আনমনে তারা দেখছে ।বিড়বিড় করে বলছে,
আজকাল নিজেকে নিয়ে বড্ড আ’ফসোস হয়,কোথায় থাকার কথা ছিলো রঙিন স্বপ্ন নিয়ে,অথচ কেউ কেউ জীবনে এসে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে,হৃদয় ভা’ঙচুর করে শূ’ন্যে বিলীন করে দিচ্ছে।
আমি ভীষণ অ:বহেলিত একটা মানুষ, যে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই অ’বহেলায় মু’ড়িয়ে রাখছে,অথচ কেউ বুঝতেই চাচ্ছে না আমিও একটা মানুষ,আমারও নি:শ্বাস নিতে হয়,প্রাণ খুলে বাঁ’চার স্বাদ জাগে।
আমি কি সেই ভাগ্যবতী? যার , জীবনের বিশেষ দিনেও চোঁখের পানি ফেলতে হয়।

সাদিক মেঝেতে পরে অঝরে কান্না শুরু করে। অপূর্ব দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।
সাদিক কাপা কন্ঠে বললো,
আমরা ব্যার্থ , পারিনি আমরা আমাদের বন্ধু কে বাঁচাতে। বাঁধন আজ ছিন্ন হয়ে গেলো।
কি করে ভুলে যাবো, ওর, স্মৃতি গুলো, ছোটবেলা কাটানো দিন গুলি। একসাথে পথ চলা। জীবনের সুখ দুঃখ গুলো ভাগ করে নেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আজ ও নিঃস্ব দেহে পরে আছে মর্গে।
এসব শুনতেই অপূর্ব , দেয়ালে কয়েকটা ঘুষি মেরে, হাত লাল করে ফেলে।
অপূর্ব বললো,আমি কথা দিয়েও কথা রাখতে পারিনি।
পেছন থেকে কারো পায়ের, আওয়াজ । কেউ আসছে ।
অপূর্ব পেছন ঘুরতেই দেখে সূর্য।
জ্বলজ্বল চোখে, তাকিয়ে আছে। আঝাপটা মেরে জড়িয়ে ধরে অপূর্ব ও সাদিক কে।
ভাঙা গলায় বললো,কি থেকে কি হয়ে গেলো। কখনো ভাবতে পারিনি ওকে এভাবে হারাতে হবে।
চারদিক থমকে যাচ্ছে। সন্ধা মাখা রাতে নিমিষেই কালো ছায়া নেমে আসে। প্রকৃতি ও বন্ধু হারানোর বেদনায় চাপসে যাচ্ছে।

সাদিক মনে মনে ভাবতে থাকলো,এটা কি করছি। এক বন্ধুর জন্য আরেক বন্ধুর জীবনের বিশেষ দিন টাকে মাটি করে দিচ্ছি। ভুলেই তো গিয়েছি আজকে অপূর্বর বিয়ে , বাসর রাত। , আর আমরা ওকে …
না এটা কি করে হয়। একজনের জন্য অন্য জনের আনন্দ মাটি করতে পারি না।
সাদিক চোখ মুখ মুছে এমন হাব ভাব করলো যেন। কিছু ই হয়নি।
সাদিক সূর্য কে কিছু একটা ইশারা করলো। সূর্য বুঝতে পারলো,যে সাদিক কি বলতে চাইছে।
সাদিক অপূর্বর দু কাঁদে শান্তনা মূলক হাত রেখে বললো, মানুষ মূলত মৃত্যু পথযাত্রী। আজ হোক বা কাল পরপারে যেতেই হবে। তার জন্য সবকিছু ভুলে গিয়ে শুধু তাকে নিয়ে থাকলেই তো হবে না।
দেখ আমার দিকে। আজ না তোর বাসর রাত । এলিজা যে তোর জন্য পথ চেয়ে বসে আছে ।ওকি সব ছেড়ে তোর অবহেলা পেতে এসেছে বল। শক্ত কর নিজেকে। ওর কাছে যা। আমরা ওদিকটা সামলে নিচ্ছি। অপূর্ব কে অনেকক্ষন বোঝানোর পর। হ্যাঁ সুচন মাথা নাড়ে।

অপূর্ব কে জোড় পূর্বক ঘরের দিকে পাঠায় ।যা বলছি না আমরা সামলে নিবো ।
অপূর্ব অশ্রু মাখা চোখে ঘরের ভেতরে যায়। সাদিক আর সূর্য মর্গে,,র উদ্দেশ্য , বের হতেই কেউ একজন সাদিকের হাত টা পেছন থেকে ধরে ফেললো।
সাদিক পেছন ঘুরে দেখলো, অপূর্ব।
অপূর্ব সাদিক সূর্য কে আঝাপটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
অপূর্ব ভেজা কন্ঠে বললো,
তোরা কি মনে করিস তোরাই শুধু বন্ধুত্বের মূল্য দিতে পারিস ।আমি পারি না।
সব বন্ধুদের হৃদয় কষ্টে মাখা। আর আমি কি না বাসর করবো?
বলেই অঝরে কান্না শুরু করে অপূর্ব।

তিনজন মিলে হাসপাতালের ম,র্গের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
সাদিক :এক মিনিট ، তুই এই শেরওয়ানি পরেই মর্গে যাবি!
অপূর্ব :এখন পাল্টাতে গেলে ঘরের মানুষ দেখে ফেলবে।
গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে। হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।হাসপাতালের সামনে যেতেই। কনস্টেবল দের ভির।
লাশ কোথায়?
স্যার মর্গেই আছে।
আশেপাশের সমস্ত মানুষ দেখছে কেউ বিয়ের আশর থেকে তার বন্ধুর জন্য হাসপাতালে ছুটে এসছে।
মর্গে,র রুমে — হিমেল, আকাশ, মিদুল
সবাই এসে অপূর্ব কে জড়িয়ে ধরে।
এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।
লা,শ টা বের করো!

স্টাপ রায়হানের মৃত লা,শ টি বের করে।
স্টাপ রায়হানের লাশটা বের করেই দূরে সরে যায়।
অপূর্ব ঝাঁপিয়ে পরে লাশের উপর।কান্না জরিত কন্ঠে বলতে থাকলো ,,
রায়হান ভাই আমার চোখ খোল দেখ আমরা এসেছি। আমরা জানি তু তু -তুই ছোট বেলার খেলা খেলছিস।মনে আছে তুই সবসময় বলতি , আমি লুকিয়ে যাবো, মরে যাবো তারপর দেখবো , কারা কারা আমাকে ভালোবাসে ।
তুই সেই খেলা এখনো খেলছিস। , জিতে গেছিস ভাই তুই জিতে গেছিস,‌। এবার তো উঠ , উঠনা রায়হান উঠ‌।
একবার চারদিকে দেখ, সবাই তোর জন্য কাঁদছে।হিমেল,আকাশ,মিদুল, সূর্য, সাদিক সবাই, কাঁদছে সবাই,। তুই আজকে জিতে গেছিস আমরা হেরে গেছি,।

হাসপাতালের চারদিকে কান্নার আহা,জারি বসছে। ,,,,,
মর্গে,র মৃত লা,শ গুলোও কাঁদছে, নিস্তব্ধ হয়ে যায় চারদিক।
বুকের ভেতর জড়িয়ে নেয় , রায়হান এর দেহখানি, অপূর্ব ‌‌।
স্টাপ– চেয়ে চেয়ে দেখছে।
তার ও চোখ থেকে ও অঝরে পানি পরছে মনের অজান্তেই।এটাই কি তাহলে ছেলেদের বন্ধুত্ব। যে কিনা বিয়ের মত সূবর্ন বিশেষ দিনকে ফেলে রেখে তার বন্ধুর জন্য চলে আসছে।
নিশ্চয়ই, মৃত ছেলেটি অধিক ভাগ্যবান।

এলিজা পর্ব ১১

( ভাবলো স্টাপ)
অপূর্ব কাপা কন্ঠে বলতেই থাকলো।
তুই উঠবি না তাইনা ভালো লাগছে খুব তোর। আমাদের এভাবে দেখে।
বুকের মধ্যে আগলে ধরে। — অপূর্বর চোখ গুলো লাল হয়ে যায়। এই আমি তোকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করছি, তোকে যে বা যারা মেরেছে তাদের আমি কাউকে ছারবো না কাউকে না। , …… অপূর্ব কে সবাই সরিয়ে নেয়।লা,শ দাফন এর জন্য নিয়ে যাবে তার আগে কিছু নিয়ম পালন করতে হবে। একজন পুলিশ অফিসার মারা গেলে যা করতে হয়। সমস্ত মানুষ দেখছে, শেরওয়ানি পরে কেউ হাসপাতালে।
সবাই অপলক দৃষ্টিতে দেখছে।কেউ কেউ বলছে পুরুষের বন্ধুত্ব সত্যি ই ভয়াবহ……

এলিজা পর্ব ১৩