এলিজা পর্ব ১৩

এলিজা পর্ব ১৩
Dayna

এক হৃদয়হীন বন্ধু শুয়ে আছে ম,র্গে।
চারদিক আজ নিঃস্ব। বুকের ভেতরে হাহা’কার। আমি আমার বন্ধুকে হারিয়ে ফেললাম। স্বার্থপর আমি। থমকে যাচ্ছে চারদিক। অপূর্ব বিড়বিড় করে বললো, এরকম টা না হলেও পারতো।
সাদিক অপূর্বর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো,বাড়িতে চল এবার না করিস না।
অপূর্ব উৎকৃষ্ট হয়ে বললো,আজ নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।
রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে ।

সূর্য, সাদিক, দুজনে অপূর্ব কে বাড়িতে নিয়ে আসে।
সাদিক গাড়িতে বসে অপূর্ব কে বললো,এলিজা কে তো তুই ভালোবাসিস।তাই না?মেয়েটা কি দোষ করেছে বল , নিজেকে শক্ত কর।
শেরওয়ানি তে র,,ক্ত লেগে আছে।
কাপড় চোপড় পাল্টে ওর সামনে যাবি। এই আমি বলে রাখলাম।
অপূর্ব হ্যা সুচক মাথা নেড়ে ঘরের ভেতর চলে যায়। ভেতরে যেতেই পেছন থেকে সাদিক কাঁপা কন্ঠে ডাকে। অপূর্ব ঘুরে তাকায়। সাদিক বললো,বেলিফুল এলিজার পছন্দ – বাঁসর ঘর বেলিফুল দিয়ে সাজিয়েছিস??
অপূর্ব বললো,সমস্ত পরিকল্পনা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো ।অন্য কোনদিন বেলিফুলের আশরে সাজিয়ে দেবো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দরজায় কড়া নাড়ছে। অবশেষে এলিজার অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো।
দরজা খোলাই ছিল। অপূর্ব ভেতরে আসলো।
লাল বেনারশী পরা স্বর্গীও , হুর আমার ঘর আলোকিত করে কারো অপেক্ষায় বসে আছে।জোসনারাও যেন আজ লজ্জা পাবে।
অপূর্বর উপর থেকে এত ধ”কল গেলো তা মনেই হচ্ছে না। স্বর্গপরী- এলিজাকে দেখা মাত্র ই অপূর্ব কোন এক জগতে হারিয়ে যায়। সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

অপূর্ব খাটের উপর বসলো। এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো,
,দুঃখিত আমার রানি। তোমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে।
এলিজা বললো, আপনার জন্য শুধু সারারাত নয়- জনম জনম ধরেও অপেক্ষা করতে রাজি।
বলেই অপূর্বর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে গেলে অপূর্ব বুকে জড়িয়ে নেয়।
অপূর্ব :তোমার স্থান আমার পায়ে নয় বুকে,।বধুবেসে তোমাকে আজ অনেক অপূরুপ দেখাচ্ছে। সমস্ত পরীদের স্বর্দারীনি মনে হচ্ছে।
খুব বেশি বলছেন না তো?
অপূর্ব :যত বলছি কম ই মনে হচ্ছে।
এলিজাকে হঠাৎ করে পাজা কোলে করে অপূর্ব হাঁটতে শুরু করলো।
এলিজা :একি- কি করছেন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
চুপ করে থাকো।
ছাদের উপর নিয়ে এলো এলিজাকে।
চারদিক চাঁদনি আলোয় আলোকিত হয়ে আছে‌।

তারা রা ঘর পাল্টাচ্ছে।
এলিজা পেছনে দাঁড়ানো।
অপূর্ব সামনে কয়েক কদম এগিয়ে। দু হাত দুদিকে ছেড়ে বললো,
এই যে চাঁদ,লক্ষ লক্ষ তারা হ্যাঁ তোমাদের ই বলছি। আজ তোমাদের অহংকার শেষ।
সমস্ত চাঁদ তারাদের স্বর্দারীনি কে আমি আমার ঘরে নিয়ে এসেছি। চাঁদের আলোতে রাতের নৈসর্গিক পরিবেশ যেমন দৃষ্টিনন্দন, চিত্তাকর্ষক উপভােগ্য হয়ে ওঠে । তেমনি আমার মহারানি কে দেখলে আমি নৈসর্গিক শুখ পাই। আমার অন্তরতম অন্তরে, যেখানে আমি একেবারে একা, সেখানে তোমার ঝর্ণাধারা কখনও শুকোবার নয়। এলিজা মিঁটি মিঁটি হাসছে।
কি অপূরূপ লাগছে অপূর্ব কে দেখতে। সাদা পাঞ্জাবি, সাদা পাজামা, চুল গুলো দমকা হাওয়া তে,,উড়ছে সাথে জোড়াশয় ভ্রু। এলিজা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো।
অপূর্ব এলিজার সামনে হাঁটুঘেরে বসে পরে।
এলিজার পা’টা নিজের হাঁটুর উপরে তুলে নেয়। পায়ে চুমু খায়। এলিজার পূরো শরীরে শিরশিরানি হয়ে ওঠে।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,আমার কাছে এই সৌন্দর্য কোনদিন শেষ হবে না ।

অপূর্ব পকেট থেকে – রুশরাজ্যে পাওয়া
নূপুর টি বের করে পায়ে পরিয়ে দেয়। এলিজা কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায়। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারেনি।
পায়ে পরিয়ে দিয়ে আবার চুমু খেয়ে – দাড়িয়ে বললো , কোনদিন একা করে ছেড়ে যাবে না তো ?
এলিজা :আমার শরীরে যতক্ষন প্রান থাকবে,ততক্ষন আপনাকে ভেবেই থাকবো।
অপূর্ব বললো,আজকে চাঁদ তারা গুলো সত্যি ই লজ্জা পেয়েছে। আজকে রাত টা আমাদের জন্য স্বরনীয় হয়ে থাক।
। কিছুক্ষণ মন মহনে- আকাশ দেখলো দুজন মিলে।

এলিজ বললো,ভারি বেনারশী, আর অলংকার এ আমি ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছি।
ওফফ তুমি যে বেনারশী তে আমি খেয়াল ই করিনি। চলো পাল্টে নিবে।
এলিজাকে পাজা কোলে নিতেই ,এলিজা বললো, আমি হেঁটে যেতে পারবো।
হুসসসস-কোন কথা নয় আমি থাকতে আপনি কেন কষ্ট করবেন মহারানি।
অপূর্বর ঘরের দরজা খুলতেই যা দেখলো তার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।
পূরো ঘরটা বেলিফুল দিয়ে সাজানো। চারদিক বেলিফুল এর গন্ধে বিভোর হয়ে আছে।
এলিজা মুখে হাত অবাক দৃষ্টিতে অপূর্ব কে দেখলো।
বললো,আমার বেলিফুল পছন্দ। তাই আপনি পূরো ঘরটা এত সুন্দর করে সাজিয়েছেন?এখন আমি বুঝতে পেরেছি। কেন মাঝ রাতে ছাদে নিয়ে গেলেন যাতে আমাকে অবাক করতে পারেন। সত্যি স্বামী হিসেবে আপনার তুলনা হয়না।

অপূর্ব আমতা আমতা করে বললো ,
আমার মহারানির জন্য এতটুকু করতে পারবো না।আমি আগেই অর্পা কে বলেছিলাম।ওই হয়তো সাজিয়েছে।
বলেই এলিজার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ধুতনি টা এলিজার কাদের উপর রাখলো। চাপ দাড়ি গুলো এলিজার শরীর -রে লাগছে।
অপূর্ব : এভাবেই সারাজীবন আপনাকে আগলে ধরে রাখতে চাই ম্যাডাম।
ম্যাডাম ডাকটা যেন এলিজার হৃদয় কাপিয়ে তুললো।
চুমু খায় এলিজার কাদের উপর। এলিজা কে পাজা কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

এলিজা ঘুমিয়ে পরলেও অপূর্ব চিন্তায় পরে যায় কে এই রুম টা সাজালো।
এলিজার বেলিফুল পছন্দ তা অন্য কেউ কি করে জানবে। বিছানার এপাশ ওপাশ করতেই বালিশের মধ্যে কিছু একটা- আচ করে।বালিশের মধ্যে কিছু একটা-আছে।
অধির আগ্রহ নিয়ে বের করে দেখে একটা চিরকুট।
চিরকুট টা খুললো।আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলো।
প্রিয়_
কি ভাবছিস কে বেলিফুল দিয়ে ঘর সাজিয়েছে? ধারনাই করতে পারছিস না। এলিজার বেলিফুল পছন্দ সেটা তুই ছাড়া অন্য কেউ কি করে জানবে। তাই তো?

,,, এলিজার যা পছন্দ তা তুই জানিস। তোর যা পছন্দ তা আমরা জানি।
এলিজার পছন্দ,, বেলিফুল। ,, তোর পছন্দ এলিজার মুখের হাঁসি। আর আমাদের পছন্দ তোর মুখের হাঁসি। আজ এত ক্লান্তি তে ,, ভুলেই গিয়েছিস, বেলিফুল এর আশর এর কথা। কিন্তু ভুলেনি আমরা।
তুই যখন এলিজাকে নিয়ে ছাদে যাস।সেই সুযোগ কাজে লাগাই।তখনই আমরা ঘরটা সাজাই। ফুল এনে আগেই রেখেছিলাম। বিকেলে,ঘর সাজাবো বলে।আর ঠিক তখনই খবর পাই,, রায়হান কে পাওয়া গেছে।
রক্তের চেয়েও আপন হয়, বন্ধু, ছুরি’র থেকে ও ধারা’লো এই বন্ধন। বন্ধুত্ব মানে শক্তি। আর শক্তি দিয়েই, জয়ী হবো।

,,,, আমরা খুজে বের করবো ,, রায়হান এর হ,ত্যা কারীকে-।
দাম্পত্য জীবনে শুখি হ””’
—————- ইতি ,,, সাদিক ,, সূর্য ।,,,
——–পরদিন সকালে- ———-
বাড়ি ভর্তি অতিথি,,, কেউ নাচ করছে কেউ গান গাইছে।
মেয়েরা সাজগোজ করে চারদিকে ঘোরাফেরা করছে।
ছোট ছোট বাঁচ্চারা দৌড়ে এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে।
আজকে বৌভাত।
পাড়া-প্রতিবেশিরা এসেছে বউ দেখতে,,,
,, কিছুক্ষণ পর ই হাজির হয়,,
রমজান,পাখি, জয়নুল,, শহিদুল,,আর শ্যামলি।
জাহাঙ্গীর অপূর্ব তাদের ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়।
,, পাখি , শ্যামলি চলে যায়। এলিজার কাছে। পাখি,, শ্যামলি কে দেখে এলিজা আকাশের চাঁদ পায়,একদিনেই যেন হাজারো কথা জমে আছে। কখন তারা তা ভাগ করবে অস্থিরতায় যেন মুখথুলি ওয়ে ওঠে।

অপূর্ব :ওদিকের খবর কি।।
সাদিক : সব ঠিক ঠাক।
কালকে রাতেই জানাজা হয়।দাফন করা হয়।
চৌধুরী বাড়ি ঢাকা তে হলেও। বাড়িটা ,, গ্রামের দিকে।
বাড়ি ভর্তি অতিথি,,,,

অপূর্ব , সাদিক ,, কো’লাহল থেকে বেড়িয়ে,বাড়ির পেছনের দিকে হাটতে বের হয়।
কিছুদূর হেঁটে যেতেই অপূর্বর চোখ পরে, একজন মৌলভির দিকে।
অপূর্বর মনে হলো,মৌলভি অপূর্ব কে দেখেই খুব দ্রুত হেঁটে উল্টো দিকে যাচ্ছে। ,, অপূর্ব,র সন্দেহ হলো। পুলিশের মন সবসময় সন্দেহে ভরা থাকে।
পেছন পেছন, অপূর্ব ও সাদিক দৌড়াতে থাকে।

এলিজা পর্ব ১২

অপূর্ব সাদিক দেখে অবাক, এতো তিলকনগর এর সেই মৌলভী সাহেব।
অপূর্ব:মৌলবি সাহেব,, আপনি এখানে,,?? মৌলবির চোখ মুখে আ’তংকে ভরে উঠে।
সাদিক –হ্যাঁ আপনি ই তো সেই ,যে তিলকনগর-এর রাস্তা দেখিয়ে ছিলেন।
আপনি এখানে কি করছেন??
আমাদের দেখেই বা পালাচ্ছিলেন কেন?? ………

এলিজা পর্ব ১৪