এলিজা পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯

এলিজা পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯
Dayna

সূর্যর দর্পনে নিয়ে হাজির হলো নতুন একটি দিন। অপূর্ব অফিসে চলে যায়।অর্পা পরিক্ষা দিতে গিয়েছে।
মনোরা রান্না করছে।মনজুরা বাড়িতে নেই। না বলে বলেই হুটহাট অদৃশ্য হয় বলতে গেলে। কাউকে কিছু না বলেই চলে যায়।

মমতাজ সকাল থেকে গম্ভীর মুখে বসে আছে। ভেতরটা তার কাঁদছে। শ্রাবন তার একমাত্র ছেলে।কত আনন্দেই না ছিল ছেলেটা ‌। সারাদিন হইহই করে বেড়াতো।গান গাইতো‌। কিন্তু গতকাল এর পর থেকেই ছেলেটা নিশ্চুপ।ঘর থেকে এখন পর্যন্ত বের হয়নি।ছেলের এমন অবস্থা যেন আমাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
আমার হাসিখুশি ছেলেটার মুখ থেকে যে হাঁসি কেড়ে নিয়েছে আল্লাহ যেন ওর জীবন থেকে ও সুখ কেড়ে নেয়।
বলেই ভারি একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে মমতাজ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জয়া : আমার কোথাও গড়মিল মনে হচ্ছে।পাখি মেয়েটা খারাপ নয়। এলিজা যেমন ভদ্র,নম্র সৎ তেমনি পাখিও। অপূর্বর কাছে শুনেছি পাখি , শ্রাবন এর জন্য পাগল ছিল ।কিন্তু হঠাৎ এমন করলো ,বিষয়টা মাথায় আসছে না।
মমতাজ কর্কট মেজাজে বললো,পাখি একটা কালনাগিনী। আমার ছেলেটার জীবন থেকে হাঁসি কেড়ে নিলো‌।
শ্রাবন ঘর থেকে বের ই হচ্ছে না। সকালের খাবার দরজার সামনে পরে আছে।
সিগারেট টানতে টানতে উপরের দিক ধোঁয়া ছেড়ে কাঁপা কন্ঠে বললো, ঐ পিচ্চি বেয়ান, তোমার ঐ বিষা’ক্ত ছোবলে আমি সত্যি ই মরে যাচ্ছি।কতটা নিষ্ঠুর তুমি। আমি এতটা বোকা।যে,আমি তোমাকে চিনতে পারলাম না। বলেই অশান্ত মন নিয়ে হেঁসে দেয়।
তোমার ঐ শরীরের ঘ্রাণ যখন অন্য পুরুষ শুকবে তখনই কেন আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হলো না।
শ্রাবন এর আর্তনাদ এ যেন চারদিক একাকার। শ্রাবন এর দর্পনে সব নিস্তার।ওর দীর্ঘশ্বাস এর আগুনে যেন সব পুড়ে যাচ্ছে।

তিলকনগর —–
রমজান জয়তুন কে উদ্দেশ্য করে বললো,আমরা যা শ্রাবন ছেলেটার সাথে করেছি তা কি ঠিক করেছি।
জয়তুন পান বানাতে বানাতে উত্তর দিলো,আমরা কি করতাম পাখির সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিলো!!যা হবার হয়েছে।
রমজান আতংক স্বরে ফিস ফিস করে বললো, শুনেছো আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি!
কি হয়েছে আবার?
রমজান: শ্যামলী আজ অনেকদিন ধরে বাড়িতে নেই। কোথায় যেন যায়।দুদিন পর পর আবার ফিরে আসে। কিন্তু এবার অনেক থেকে ই দেখছি না।
জয়তুন: তা দিয়ে আমাদের দরকার কি! বাদ দেও।শ্যামলী কেমন আমরা তো জানি। উল্টো পাল্টা কিছু বলার দরকার নেই।

রমজান,শান্ত স্বরে বলল, এলিজা কোথায়?
জয়তুন বললো- শুনেছি এনজিও তে কারা এসেছে। তাদের নিয়ে দূরে মিটিং হবে। সেখানে হয়তো।
ঢাকা–
অপূর্ব থানাতে একটা কেস নিয়ে ঘাটছে।ঠিক তখনই একজন মহিলা কনস্টেবল তার কাছে আসে।
অপূর্বর পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরোখ করে।কত সুদর্শন পুরুষ।লম্বাটে শরীর,হাতে লোম,জোড় ব্রু,চোখ গুলো সবসময় লাল হয়ে থাকে‌।দেখে মনে হয় নেশা’ক্ত চোখ । কত বুদ্ধিমত্তা অপূর্ব।তার নামের মতই দেখতে অপূর্ব।
অপূর্ব খেয়াল করলো, কনস্টেবল রুমা তার দিকে আড় চোঁখে তাকিয়ে আছে।
অপূর্ব না তাকালেও বুঝতে পারলো।
অপূর্ব বললো,
কিছু বলবেন?

রুমার চট করে যেন জ্ঞান ফিরে। এতক্ষণ জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিলো‌।
আমতা আমতা করে রুমা বললো, একটা প্রশ্ন করবো?
অপূর্ব মনোভাব নিয়ে বললো, প্রশ্ন করতেই তো এসেছেন। বলেন কি বলবেন?
রুমা,বললো,শুনেছি বিয়ে করেছেন। কিন্তু আপনার সহধর্মিণী কে দেখার সৌভাগ্য হলো না।তিনি দেখতে কেমন?
অপূর্ব এলিজার কথা শুনতেই বুকের ভেতর ধুকবুকানি শুরু হয়। এলিজার ভাবনায় গহীন হয়ে, মৃদু হেসে বললো
তার রূপের কোন বর্ননা হয়না। তার রুপের ঝলকানিতে অন্ধকার রাত আলোকিত হয়ে যায়। সে যে , নিখুঁত। দাগহীন ত্বক , ভি,আকার ধুতনী,টানা চোখ,সেই চোখ যতবারই আমার দিকে পরোখ করে, ততবার ই আমি নতুন পথ দেখতে পাই।

রুমা কিছুটা অবাক হয়ে বললো, আপনি ও কম সুদর্শন না।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,তার সৌন্দর্যর কাছে আমার মত হাজার টা পুরুষ হার মানতে বাধ্য।
রুমা : তাকে কি কখনো দেখতে পারবো?
অপূর্ব বললো, দাওয়াত রইল কোন একদিন আসবেন। আমার ম্যাডাম কে দেখতে।
বলেই অপূর্ব থানা থেকে বের হয়।
এরকম প্রেমিক পুরুষ আমি আর দেখিনি।যে কিনা সামনে থাকা কোন নারীর দিকে ও দেখে না। এতক্ষণ কথা বললো অথচ আমার দিকে একবার দেখলোই না।
অহংকার অনেক।
বলেই মুখ কুঁচকে দেয় রুমা।

সন্ধ্যা হয়ে যায়। অপূর্ব বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হবে ঠিক তখনই মনে পরে। হিমেল এর কথা। হিমেল কে কিছুদিন আগে চীপস ডুপিয়ালির সাথে দেখেছি।কি করছিলো ওরা আমাকে জানতে হবে‌। অপূর্ব গাড়ি ঘুরিয়ে হিমেল দের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। অপূর্বর হঠাৎ সমস্ত রহস্যর সূত্রের কথা মনে পরে।
ভাবলো, আমি হয়তো আমার বন্ধুদের সন্দেহ রে ভুল করছি। অন্য কেউ এসবের সাথে জড়িত।
ভাবতে ভাবতে অপূর্বর গাড়ি থামে হিমেল দের ঘরের সামনে।
দরজায় কড়া নাড়লে হিমেলের মা দরজা খোলে।আমি জিজ্ঞেস করলাম হিমেল কোথায়। হিমেলের মা শান্ত স্বরে বললো, হিমেল তো ওর মামা বাড়িতে। তুমি কি জানো না?
অপূর্ব কিছুটা অবাক হয়। তবে যে আমাকে বলেছে টুরে গেছে।
অপূর্ব বললো,ও হা মনে ছিলো না।বলেই চলে যায়।

কিছুদূর আসতেই মনে পরে সূর্যর কথা। সূর্য কোথায় গেলো। ওর যে কোন খবর নেই। ভাবতে ভাবতে অপূর্ব রওনা হয় সূর্যের বাড়ির উদ্দেশ্যে। অপূর্বর বুকের ভেতর যেন ধুকবুকানি টা হঠাৎ বেড়ে যায়। কোন অজানা কারনে ভয় হয়। এসে পৌঁছায় সূর্যর বাড়ির সামনে।কিছুটা শ্মুনশান ‌। অপূর্ব ভেতরে প্রবেশ করে। কাউকে দেখলো না। অদ্ভুত বিষয় হলো ঘরের দরজাটা খোলা ছিলো।
অপূর্ব ধৈর্য হারা হয়ে,ডাকতে শুরু করে।
সূর্যর মা আসে।

কি হয়েছে অপূর্ব তুমি এখানে? সূর্য আসেনি?
অপূর্ব অবাক হয়ে বললো, সূর্য তো আমার কাছে আসেনি।আজ অনেক দিন দেখা হয়নি। সূর্যর মা অবাক হয়ে বলল,
আমিতো জানি ও তোমাদের সাথে তিলকনগর।
অপূর্ব থমকে যায়। চোখে রক্ত উঠে যায়।কি শুনছি এ আমি। অপূর্ব কোন কথার জবাব না দিয়ে দ্রুত পায়ে সূর্যর বাড়ি থেকে চলে আসে।
সূর্য তারমানে আমাকে মিথ্যা বলেছে। কিন্তু কেন? সূর্য কি লুকিয়েছে ।আর কেনোই বা লুকিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে অপূর্ব গাড়ি নিয়ে রওনা হয় তিলকনগর। কিন্তু হঠাৎ ই দেখে রাস্তা বন্ধ। সামনে কিছু গাছ পরে আছে।

অপূর্ব গাড়ি রেখেই তিলকনগর এর উদ্দেশ্য হাটা শুরু করে।
হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে যায়।
রাত প্রাই ১০ টা —
চারদিক নিশ্চুপ। একদমই নিরব।কোথাও কেউ নেই।এই তিলকনগর রাতে কেউ বের হয়না। কিন্তু কেন তা অজানা।
অপূর্ব মনে মনে চিন্তা করতে থাকে আজকেই এই রহস্য বের করতে হবে।
আর এই সূর্য ই বা কোথায়।

অপূর্ব অন্ধকার রাতে উত্তপ্ত হয়ে হাঁটছে, রঞ্জনার কব,রের উদ্দেশ্যে। হয়তো সূর্য ওখানে থাকতে পারে।
চারদিক থেকে শেয়াল এর ডাক আসছে।বাদুর উড়ে যাচ্ছে।গা ঝিমঝিম।তবুও যে সামনে এগোতেই হবে।
হঠাৎ সামনে এগোতো যা দেখলাম তা দেখার জন্য যেন অপূর্ব মোটেই প্রস্তুত ছিলো না।
অপূর্ব পুরোপুরি থম মেরে যায়।গা থেকে অঝোরে ঘাম ঝরছে।বুকের ভেতর ধুকবুকানি পরিস্কার শোনা যাচ্ছে।
আমার ভাবনাই সঠিক, সূর্য, রঞ্জনার কব,রের কাছে কিন্তু সূর্য একা নয় সাথে রেখা। নিজের চোখ কে যেন অবিশ্বাস করতে পারছি না।আমি গাছের আড়ালে লুকিয়ে পরলাম।

ওরা দুজন কোন কিছু নিয়ে পরিকল্পনা করলো।বেশ কিছুক্ষণ পর ওরা দুজন উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে।
আজ এর শেষ আমাকে দেখতেই হবে। আমি ওদের পিছু নিলাম। ওরা যেতে যেতে পৌছে যায় রুশরাজ্যে। আমি থমকে যাই। সেদিনের মত আজকেও দিগন্ত নদীর তীরে একটা বোড আসে। এবং রেখা উঠে যায়। সূর্য গেলো না। সূর্য কে খুব অদ্ভুত দেখাচ্ছে। সেদিনের মত কালো,জ্যাকেট,গলায় চেন,।ভাব ভঙ্গি মা একদমই ভিন্ন। সূর্য রেখাকে স্পিড বোডে উঠিয়ে দিয়ে। রুশরাজ্যের ঝোপঝাড়ের দিকে হাঁটতে শুরু করে।
অপূর্ব পিস্তল টা বের করে পিছু নিতে থাকে সূর্যের।

হেঁটে অনেক দূর গেলো।
গিয়ে থামলো ঝোপঝাড় এর ভেতরে।তবে কোন আস্তানা দেখতে পাচ্ছি না।
হঠাৎ কোথা থেকে বেড়িয়ে আসলো মুখোশধারী দুটো লোক। কিছু বলছে‌ সূর্যের সাথে।
আমি শুনতে পেলাম না।
এভাবে অনেকক্ষন ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকলাম। সূর্যর সাথে থাকা লোক দুটো কথা শেষ করে উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করে।

অপূর্ব মনস্থির করলো এই সুযোগ, এবার সূর্য কে সত্যিটা বলতেই হবে।
সূর্য অনুভব করলো ওর পিছনে পায়ের চপর চপর আওয়াজ। সূর্য থমকে যায়। সূর্য পিস্তল টা বের করলো।বুঝতে পারলো পেছনে কেউ আছে। সূর্য তৎখানিক বন্ধুকটা তাক করে পেছনে ঘুরতেই দেখে অপূর্ব।
অপূর্ব পিস্তল টা সূর্যর দিকে তাক করে রেখেছে।
সূর্যর হাত থেকে ধপাস করে পিস্তল টা পরে যায়। সূর্য থমকে যায়। কপাল থেকে ঘাম ঝরতে থাকে। অপূর্বর উপস্থিতি সূর্য কে নাড়ালো।
অপূর্ব কর্কট কন্ঠে বললো,

কি করছিস তুই? এখানে কেন? কি লুকোচ্ছিস? রেখার সাথে তোর কি? বল আমাকে।
সূর্য শান্ত স্বরে বললো যেতে দে আমাকে।বলেই নিচ থেকে পিস্তল টা তুলে নিজের আয়ত্তে নেয়।
অপূর্ব কে এড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলেই , অপূর্ব সূর্যর বা কাঁদে হাত দিয়ে আটকে দেয়।
সূর্য আবারো থমকে দাঁড়ায়।
অপূর্ব বললো, সত্যিটা বল কি লুকোচ্ছিস?
সূর্য ভয়ংকর ভঙ্গিতে বললো,যেতে দে আটকাস না।
অপূর্ব ধৈর্য হারিয়ে বলে উঠলো,সত্যিটা বল নয় সুট করে দেবো।
সূর্য এক ভয়ংকর হাঁসি দিয়ে বলে উঠলো,
আমাকে মারবি ? আমাকে? আমি তো অনেক আগেই মরে গেছি আর এটাতো একটা দেহ মাত্র ‌।
অপূর্ব সূর্যর কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।

অপূর্ব মেজাজ দেখিয়ে বললো, কি বলতে চাইছিস ? হেয়ালি না করে বল?
সূর্য ভয়ংকর ভঙ্গিতে বললো, যেতে দে আমাকে।আমি বন্ধুদের মাঝে র’ক্তা”রক্তি পছন্দ করি না।
অপূর্ব কাট গলায় বললো তুই খু’নি।
কথাটা শুনেই সূর্য থমকে গিয়ে,হাহাহাহা করে এক ভয়ংকর হাঁসি দিয়ে উঠে।এই হাসি দেখলে যে কেউ ভয় পাবে।
অপূর্ব ভেজা কন্ঠে বললো,
সূর্য বলনা ভাই কি করছিস তুই? কি লুকোচ্ছিস? তোর এই রূপ আমাকে ভেতর থেকে মেরে ফেলছে!!
সূর্য কিছুক্ষন থম মেরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,সত্যিটা জানতে চাস? জানতে চাস সত্যিটা?,তবে শোন,আমি আমার রঞ্জনা কে বাঁচাতে পারিনি।আমি আমার রঞ্জনা কে বাঁচাতে পারিনি,আমি আমার প্রেয়সী কি বাঁচাতে পারিনি,আমি যে নিষ্ঠুর।

বলেই হাটু ঘেরে বসে পরে।
অপূর্ব থমকে যায়।কি বলছে সূর্য। রঞ্জনা তো দুর্ঘটনায় মারা গেছে‌।তবে ও কি বলছে।
সূর্য হাঁটু গেড়ে বসে অদ্ভুত রকম কান্না শুরু করে।
অপূর্ব আতংকিত হয়ে বললো,
কি বলছিস? রঞ্জনা তো দুর্ঘটনায় নি,হত হয়েছে।তবে….
সূর্য মাথার চুল গুলো টেনে কর্কট মেজাজে বললো, আমার রঞ্জনা দুর্ঘটনায় মারা যায়নি।
আমার রঞ্জনা কে মেরে ফেলা হয়েছে। হায়,না গুলো আমার রঞ্জনা কে বাঁচতে দেয়নি।
অপূর্ব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে সূর্য কে।সমস্ত পৃথিবী আজ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। অপূর্ব চোখগুলো ছানাবড়া হয়ে গেছে।

হাতের পিস্তল টা ধব করে পরে যায়। পেছনে লতায় মোড়ানোর হেলানো গাছের উপর বসে পরে।
পূরো আকাশ নিঃস্ব। চারদিক নিশ্চুপ।পাশেই বয়ে গেছে দিগন্ত নদী। শান্ত দিগন্ত নদী। কিন্তু অশান্ত তাঁরা দুজন।
কি বলছে আর কি হচ্ছে সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
অপূর্ব হেলানে গাছের এক কোনে বসে আছে। অপর প্রান্তে সূর্য ‌।
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর।
অপূর্ব বলল ,সেদিন তাহলে মিথ্যা বললি কেন? যে ও দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে?
সূর্য ভারি একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, বলতে চাইনি সত্যিটা।
বলেই চুপ হয়ে যায়।

অপূর্ব , আতংক স্বরে বলল,
রঞ্জনা কে ? ওর আসল পরিচয় কি ছিল? কারা মেরেছে? তোর সাথে রেখার সম্পর্ক কি ? তবে ওদিন কেন মিথ্যা বললি? কি লুকিয়ে আছে? এই ভরাকান্ত সত্যিটা কি
রঞ্জনা কে কারা মেরেছে কেন??

নিঝুম রাতের আঁধারে দুজন হতাশায় নিস্তেজ মানুষ বসে আছে।। চারদিকে ঝোপঝাড়।লতা পাতায় আচ্ছন্ন। ভ,য়ংকর এক পরিবেশে নিশ্চুপ দু’জন মানুষ।
অপূর্ব এই পর্যন্ত হাজার বার প্রশ্ন করেছে। কিন্তু সূর্য নিশ্চুপ।কি যেন কি ভাবছে।
সূর্যর হঠাৎ এরকম আচরণ অপূর্ব কে ভেতর থেকে ভাবনার আগুনে জ্বলিয়ে দিচ্ছে ।ইচ্ছে করছে সূর্যর ভেতরে কি লুকিয়ে আছে।সেটা ওর বুকটা ছিরে দেখি।
হঠাৎ সূর্য শান্ত স্বরে বলে উঠলো, আজ থেকে ১০ বছর আগে।
১০ বছর আগের ঘটনা————–

(অতীত)
শষ্য শ্যামল,ক্ষেত ভরা ধান, মিষ্টি মধুর বাতাস। ছোট ছোট বাঁচ্চারা দলবেঁধে স্কুলে যাচ্ছে। কৃষকরা মনের শুখে গান গাইছে আর ক্ষেত বনছে।
চারদিকের জমজমাট আমেজে ভরপুর হয়ে আছে বাবর রাজ্য।
সত্যিকার অর্থে কোন রাজাদের রাজত্ব নয়।তবে এই মোহত পূর্ণ,ভুবন ভরা গ্রামকে নাম দিয়েছে বাবর রাজ্য।
চারদিক থেকে মাইকিং এর শব্দ ভেসে আসছে।
সু – খবর সু – খবর বলতেই কৃষকরা কাজ ফেলে মাইকিং করে কি বলা হচ্ছে সেদিকে কান খাড়া করে রেখেছে।সবাই উত্তেজিত। মাইকিং এ বলা হচ্ছে, আগামীকাল গ্রামের গরিব অসহায়দের মাঝে বাবর সিকদার ত্রাণ বিতরণ করবে। তবে এটা নতুন কিছু নয়।বাবর সিকদার গ্রামের সবাইকে, কিছুদিন পর পর,ত্রান বিতরণ করে, অসহায় মানুষের পাশে থাকে,।যারা ভূমিহীন তাদের নিজের জমি দিয়ে চাষাবাদ করার সুযোগ দেয়।বিদ্যালয়ের খরচ তিনি বহন করেন।

বাবর সিকদার অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয়না,তিনি অন্যায় করেন ও না। ভালো কাজে তিনি মহান। কিন্তু খারাপ চোখের সামনে পরলে হিং,স্র হয়ে ওঠে। গ্রামের সবাই তাকে ভরসা করে।
মাইকিং করা মাত্রই সবাই খুশিতে আপ্লুত হয়ে ওঠেছে।
– বাবর সিকদার এর স্ত্রী,তার মা,ভাই, এবং তার চার সন্তান নিয়ে এক আনন্দময় শুখি সংসার।
“মালকিন কেউ এসেছে,আপনারে ডাক পারে,( বললো মিনারা বেগম বাড়ির মহিলা।
উপর থেকে নিচে আসলো কল্যানি সিকদারীনি,বাবরের স্ত্রী।
কল্যানি : কে এসেছে।ডাকলে কেন? ছোট মেয়েটা খুমোচ্ছে। তারমধ্যে চেঁচামেচি।
আসসালামুয়ালাইকুম,
আমিই আপনাকে ডেকেছি! ( বললো একজন ঘটক)
কল্যানি শান্ত স্বরে বলল,
ঘটক সাহেব আপনি? এখানে কেন ? আমরা তো ডেকে পাঠায়নি!
ঘটক সাহেব আমতা আমতা করে বললো, না আমিই আসছি। আপনার তো ঘরে দু দুটো জওয়ান মেয়ে।বিয়ে দিবেন না!

কল্যানি পানের পিক ফেলে বললো,মেয়ে আমার হলেও সিদ্ধান্ত ওদের বাবার। তিনি চাননা এত তাড়াতাড়ি কোন সমন্ধ্য করতে।
ঘটক সাহেব একটু হেয়ালি করে বললো, মেয়ে মানুষ তারাতাড়ি বিয়ে দেওয়াই ভালো কখন কি দুর্ঘটনা ঘটায়।
” কে আমার মেয়েদের নিয়ে বাজে কথা বলে!কে আসছে সম্বন্ধ নিয়ে!
(পেছন থেকে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে কর্কট মেজাজে বললো বাবর সিকদার)
ঘটক সাহেব চট করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বাবর সিকদার বাড়ি আছে জানলে উনি আসতেন না।কারন বাবার সিকদার তার মেয়েদের দূরে করতে চাননা।বিয়ের কথা শুনলেই তার মাথায় রক্ত উঠে যায়।
বাবর শান্ত স্বরে বললো,শুনুন ঘটক সাহেব, আমার মেয়েরা অন্য দশটা মেয়েদের মত না।যে দূর্ঘটনা ঘটাবে।আর যদি করেও কিছু তা দিয়ে আপনাদের সমস্যা কি।মেয়ে আমার বিয়ে দিবো আমি,খরচা হলে আমার হবে,ঘরে রাখলেও তা আমাকে বহন করতে হবে। পারা প্রতিবেশীদের তো তা নিয়ে ভাবতে বলিনি।
আমার মেয়েরা পরাশুনা করবে অনেক বড় হবে। এটাই আমার স্বপ্ন।

আপনি এখন আসতে পারেন।
ঘটকটি দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায়।
বিক্রমপুর রেলওয়ে স্টেশন
তারেক,বাবু,শাওন সবাই ঘুমে। ট্রেন এসে পৌঁছেছে সেই কখন। বাবররাজ্য,এসেছে ছুটি কাটাতে।
তারেকের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
বাবু ও শাওন কে ঘুম থেকে উঠায়। কিন্তু ঘুম থেকে দেখে দুর্জয় নেই।
এদিক সেদিক খুঁজতে লাগলো।
এই দূর্জয় টা কোথায় যে যায়।হুটহাট উধাও।
প্যান্টের চেন আটকাতে আটকাতে আসলো দূর্জয়।বললো,তোরা কি আমার খোঁজ করছিলিস? তোদের জন্য কি ওয়াশরুমেও যাওয়া যাবে না।

তারেক : তা কি আমরা বলেছি‌।চল এখন নেমে পরি।
দূর্জয় : আরে এত তারা কিসের ধিরে ধিরে যাই।
দূর্জয় এর হঠাৎ চোখ পরে ডান দিকের কিছুটা দূরে সরিষা ক্ষেত।
তাকাতেই দেখে কয়েকটা মেয়ে দৌড়াচ্ছে।খিল খিল করে হাসছে‌। দূর্জয় আগ্রহ নিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। দৌড়াচ্ছে কেন। সামনে তাকাতেই দেখে।একটা মেয়ে পরনে,লাল স্কার্ট,চুল গুলো অনেক টা বড়, হাসছে আর দৌড়াচ্ছে।কি অপূরুপ মোহময় দেখাচ্ছ।দূর্জয় চোখ গুলো বড় বড় দেখতেই,ব্যগটা নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে মেয়েটাকে দেখার উদ্দেশ্যে তাদের পেছন পেছন দৌড়াতে থাকে।
তারেক : আরে ও আমাদের রেখে কোথায় যাচ্ছে। পাগল হয়ে গেলো নাকি।চল ওর সাথে।
বলেই দূর্জয় এর পেছন দৌড়াতে থাকে।
মেয়েরা থেমে যায়।

সবাই একসাথে বলাবলি করছে।ছেলে গুলো কারা আমাদের দিকেই আসছে।
হয়তো এখানে নতুন।
দূর্জয় ওর বন্ধুরা এসে মেয়ে গুলোর সামনে দাড়ায়।
দূর্জয় আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,দূরে যে মেয়েটি দাড়িয়ে আছে,ও কে??
কর্কট মেজাজে, একজন বলে উঠল, আমাদের রাজ্যর মেয়ের দিকে একদম নজর দিবে না।
দূর্জয় মুখ কুঁচকে বললো,
হুম, এখানে তোমাদের নাম লেখা আছে। সরে যাও সামনে থেকে। আমিই দেখে নিচ্ছি কে।
কি অসভ্য ছেলেরে বাবা ( বলল তিলকা)
দূর্জয় বলে উঠলো,

দিবো একটা কানের নিচে।
ওমনি পাশ থেকে একজন, মেয়ে
বলে উঠলো, এই রঞ্জনা দেখ আমাদের সাথে কেমন আচরণ করছে।
দূর্জয় থম মেরে যায়। তারমানে মেয়েটার নাম রঞ্জনা। অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে উল্টো ঘুরে দাড়ানো রঞ্জনার দিকে। রঞ্জনা চুল গুলো পেছনে আঝাপটা মেরে ঘুরে তাকায়।
দূর্জয় সহ বাকি বন্ধুরা হা করে তাকিয়ে থাকে।এ যে এক ভুবনমোহিনী সুন্দরী নারী। যার চাহনি ই যথেষ্ট একটা ছেলেকে কাবু করার জন্য।
রঞ্জনা দৌড়ে কাছে এসে বলতে শুরু করলো, আমাদের রাজ্যে এসে আমাদের ই কথা শোনানো হচ্ছে।খুব সাহস আপনাদের তাইনা। আপনি জানেন আমার বাবা কে!!
আঙুল দেখিয়ে দেখিয়ে রঞ্জনা কথা গুলো বলছে। কিন্তু সেদিকে দূর্জয় এর কোন হুশ ই নেই ‌। রঞ্জনার রুপের ঝলকে সে হারিয়ে গেছে।

কিছুক্ষণ বক বক করার পর রঞ্জনা হাতে তুরি মেরে দূর্জয় এর ধ্যান ভাঙ্গিয়ে দেয়।
রঞ্জনা অহংকারী স্বরে বলল,আর যেন আমাদের পেছন পরতে না দেখি। বলেই হাত দিয়ে সতর্ক ইঙ্গিত দিয়ে উল্টো দিকে চলে যায়।
দূর্জয় ও ওর বন্ধুরা থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।
দূর্জয় বললো,
এত সুন্দরী মেয়ে আর কোনদিন দেখিনি।
বাবু: এরকম সুন্দরীর পেছনে হাজার টা ছেলেরা ঘুরে।তুই পাত্তা পাবি না।চল যাওয়া যাক।
দূর্জয় বললো, কোথায় যাবো‌। আমার মামা বাড়ি এখানেই। কাউকে জিজ্ঞেস করলেই পাবো চল।
রঞ্জনা যা করে দৌড়ে দৌড়ে। ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস। ভারী চঞ্চল।
বাবরের ডাক পরেছে। দৌড়ে বাবার ঘরে আসতেই।
বাবর : আহ পরে গিয়ে আঘাত লাগবে তো মা, সবসময় এত তোরঝোপ কেন করিস,তোর যদি কিছু হয়ে যায়।( বললো আদুরে গলায়)

রঞ্জনা: বাবা, তুমি থাকতে আমার কিছু হবে না।বাবা মানেই তো ছায়া তাই না তাইনা।পরে গেলে হাত ধরে তোলার জন্য যে তুমি সর্বদা আছো।
বাবর বললো,
বোস এখানে আমি তোর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছি।
পাশ থেকে কল্যানি বলে উঠলো, আল্লাদ দিয়ে দিয়ে মেয়ে টাকে মাথায় উঠিয়ে রেখেছো।বলি আরো তো তিনজন আছে ওদের দিকে তো দেখো।
বাবর মৃদু হেসে বলল, আমি আমার ৪ সন্তান কেই ভালোবাসি।অন্তিম তো বড় হয়েছে । দায়িত্ববান হয়েছে।
প্রিয়া এখনো বাচ্চা। বাকি থাকলো মালাইকা।মালাইকা তো সারাদিন পরাশুনা নিয়েই থাকে।
কল্যানি উঠে বেড়িয়ে যায়। বাড়িতে অনেকে কাজ করে তাদের প্রতিদিন বকশিশ দেয়। এটা বাবর সিকদার এর নিয়ম।

রঞ্জনার মাথায় তেল দিতে দিতে বাবর উপদেশ স্বরে বললো,
জানিস মা জীবন টা অতি ক্ষুদ্র তম। তবে তা সবসময় না। যখন দেখবি জীবনে দুঃখ গ্রা,স করেছে,তখন মনে হবে জীবনের সময় যেন যাচ্ছে না।
আর যখন জীবনে সুখ চলে আসে,তখন দেখবি সময় খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে।
রঞ্জনা অবাক ভঙ্গিতে বললো, বাবা তুমি হঠাৎ এরকম বলছো কেন?
বাবর মৃদু হেসে বললো, কারন আমি চাই আমার মেয়েরা নিজের পায়ে দাড়াক।ওদের নিজের একটা পরিচয় হোক। কারন সবাই বলে মেয়েদের কোন পরিচয় হয়না।বিয়ের আগে বাবার , এবং বিয়ের পর স্বামীর পরিচয় বাঁচতে হয়।
আমি চাই তোদের নিজেদের পরিচয় নিজেরা গড়বি।
রঞ্জনা থম মেরে বললো, বাবা আমি পরাশুনা তো করছি। কিছুদিন পর ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা। কিন্তু তার পাশাপাশি আমি নৃত্য নিয়ে এগোতে চাই।

বাবর রঞ্জনার চুল গুলো বেনুনি করতে করতে বললো, তাতো আমি জানি পাগলী।আমি তোদের ঘর বন্দি ঘরে রাখবো না।আমি স্বাধীনতা দিবো। আমার বিশ্বাস আমার মেয়েরা কোনদিন ভুল কাজ করবে না।
রঞ্জনা বাবর কে জড়িয়ে ধরে বললো,বাবা তোমার মত একজনের মেয়ে হয়ে আমি গর্বিত। কোনদিন কাউকে তোমার দিকে আঙুল তুলতে দিবো না।
বাবর মৃদু হেসে রঞ্জনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে দেখলো, দরজার কোনে মালাইকা দাঁড়িয়ে আছে।
মালাইকা রঞ্জনার জমজ বোন। কিন্তু তাদের পার্থক্য অনেক। মালাইকা খুবই শান্ত স্বভাবের। একটু হলেই ভয় পেয়ে যায়।

বাবর হাতের ইশারায় ডাকলো।মালাইকা কাছে আসে।
বুকের ডান পাশে মালাইকাকে জড়িয়ে ধরে বামপাশে রঞ্জনা কে।
মালাইকাকে উদ্দেশ্যে করে বললো, সাহসী হতে হবে। বাহাদুর হতে হবে।এত ভীতু হলে ,অন্যরা পায়ে ঠেলে যাবে। দুর্বলতার সুযোগ নিবে। তোমার আপুকে দেখো।কত সাহসী। জীবনে একটু তো সাহসী হতেই হবে তাই না।
এবার দুজনে হাতে হাত মিলাও দেখি। রঞ্জনা হাত বাড়িয়ে দেয়,মালাইকা ইতস্তত বোধ করে। বাবর ইশারা করে । হাত রাখে রঞ্জনার হাতে।
বাবর অহংকারী স্বরে বলল, রঞ্জনা তোমার বোনকে সাহসী করে তুলতে হবে। একদম তোমার মত।

— রাত ৮ টা নাগাদ সবসময় ই সিকদার বাড়ি জমজমাট থাকে।
রঞ্জনা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রংডং করছে ‌।
ট্যাপে একটা গান চালু করে এরপর একা একা নাচছে।ঘরের দরজা খোলা তা খেয়াল ই নেই।
আনমনে নাচ করছে।
হঠাৎ দেখে ঘরের ভিতর কেউ ঠুকে পরেছে।
তাকাতেই দেখে সেই ছেলেটা ,যে আজকে আমাদের সাথে ঝগড়া করেছে,। রঞ্জনার চোখ গুলো বড় ছানবরা হয়ে যায়।

দূর্জয় ও রঞ্জনা কে দেখার পর অবাক,এই মেয়েটা এখানে কি করছে।
রঞ্জনা হঠাৎ করে আহহহ করে এক চিৎকার। দূর্জয় কি করবে বুঝতে না পেরে দেখলো সবাই চলে আসছে।
বাবর শিকারী করার বন্ধুক নিয়ে হাজির হয়।
কি হয়েছে মা ? চিৎকার করলি কেন? এই কে কোথায় আছিস ?বাবর উত্তেজনা স্বরে বলতেই
রঞ্জনা বললো, বাবা এই ছেলেটা কে ? এখানে কি করছে?
বাবর নিঃশ্বাস ছেড়ে,বন্ধুক টা নিচে নামিয়ে শান্ত স্বরে বলল, ও এ হচ্ছে দূর্জয়। আমার একমাত্র বোনের ছেলে। ও আসছে বেড়াতে । সাথে ওর কিছু বন্ধুরা।
এখানে কিছুদিন থাকবে।

রঞ্জনা অভিমনী স্বরে বললো, তুমি আমাকে জানাও নি কেন ? যে বাড়িতে মেহমান আসতে চলেছে।
লক্ষী মা আমার,এই কান ধরেছি ভুল হয়েছে। এবারের মত ক্ষমা করো। ( বললো আদুরে গলায় বাবর)
তারমানে রঞ্জনা বাবর মামার মেয়ে। বাপরে কার দিকে নজর দিলাম।সে তো তার মেয়েদের জন্য ১০ টা খু,ন মিনিটে করে ফেলতে পারবে। যাইহোক চেষ্টা করতে হবে। মনে মনে ভাবতেই দূর্জয় স্থানত্যাগ করে
চারদিকে কো’লাহল সৃষ্টি হয়েছে। সবার কোলাহলে সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়।সবাই চারদিকে ছুটছে।কি যেন কি হয়েছে।চট করে দূর্জয় সহ সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়।বাহির থেকে দেখতে পায় সবাই একদিকে ছুটছে।
তারেক দূর্জয় কে প্রশ্ন করে,সবার ডাকাডাকি তে সুন্দর ঘুম টাই ভেঙে গেলো।কি হয়েছে ।সবাই দৌড়াচ্ছে কেন।
দূর্জয় বললো,আজকে আমার মামা ত্রান বিতরণ করবে। উনি কিছুদিন পর পরই ত্রান বিতরণ করে। গ্রামের সবাই তাকে ফেরেশতা রুপে দেখে।

কৌতূহল নিয়ে বাবু বললো,তোর মামা এত ধনসম্পদ অর্জন করলো কিভাবে?
দূর্জয় ঘরে প্রবেশ করে খাটে বসতে বসতে বলল,সে অনেক কথা। আমার মামা তার জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। অনেক সংগ্রাম করেছে।অতংপর সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।তাই উনি সবার কষ্ট বুঝতে পারেন। ওনার বাবা মানে আমার,নানা তিনিও অন্যদের পাশে থাকার চেষ্টা করতেন।তিনি মৃত্যুর আগে বলেছেন যেন,তিনিও অন্যর পাশে থাকে।
তারেক বিষয় পাল্টে দিয়ে বললো,তোর বোন গুলো হেব্বি।একটা পটাই দে।
দূর্জয় আর চোঁখে বললো, খবরদার নজর দিসনা।
মামা কে দেখেছিস কেমন,তাছারা রঞ্জনার বড় ভাই অন্তিম সে কিন্তু তার বোনদের জন্য সবাইকে শেষ করে দিতে পারবে।

কিন্ত মামাকে এখনো ভয় পায়। সম্মান করে তাকে অনেক।
তারমানে এখানে তার অনেক প্রভাব। ( বললো তারেক)
বাবু : আমার তো তাকে দেখলেই ভয় লাগে। তার মেয়েরা আ থেকে উ করলেই বন্ধুক নিয়ে আসে।
বাবুর কথা শুনে সবাই খিল খিল করে হেসে উঠে।
এই গ্রামে এত সুন্দরী মেয়ে তাও আবার আমার মামাতো বোন। কি তার কথা বলার ভঙ্গিমা।কি তার তেজ।যার চোখের চাহনি তে যে কেউ চাপসে যাবে।যার চুলের ঝলকানি,দৌড়ের দর্পন থেকে ট্রেন থেকে ছুটে আসলাম।তাকে এত কাছে পেয়েও হাত ছাড়া করবো।তাও কিনা তার বাবার ভয়ে। আজ একবার রঞ্জনার সাথে কথা বলবো।
তার বান্ধবীদের সাথে ওরকম আচরণ করার জন্য মাফ চাইবো। হুমম এটাই একটা কথা বলার উপায়।

এসব ভাবতে ভাবতে দূর্জয়
বাড়ির কাজের লোক মিনারাকে জিজ্ঞেস করলো,
বাড়িতে এখন কারা কারা আছে? সবাই কি ত্রান দিতে গেছে।
বাড়িতে রঞ্জনা আফা,মালাইকা,আর প্রিয়া,আর দাদি আছেন।
তাদের ফিরতে কতক্ষন লাগবে?
বড় মালিক ফিরে আইতে আইতে সন্ধ্যা হইয়া যাইবো।
সব বান্ধবীদের নিয়ে রঞ্জনা নৃত্য করছে।তিলকা ভাবছে,।মেয়ে হয়েও মেয়েদের সুন্দর্য নিয়ে আলোচনা করতে এই প্রথম দেখছি। সত্যি বলতে রঞ্জনার রুপের তুলনা হয়না।দু পায়ে নূপুর,কালো স্কার্ট, সাথে লম্বা চুল।কি দারুন লাগছে।

বেলা ফুরিয়ে বিকেল হয়ে গেলো। দূর্জয় ও তার বন্ধুরা বাহিরে বের হয়েছে। আশেপাশে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। কত সুন্দর রাজকীয় বাড়ি। বিভিন্ন কাজের লোক বিভিন্ন কাজ করছে।
বাড়ির গেটের বাইরে আসতেই দেখে রঞ্জনা তার বন্ধুদের বিদায় জানাচ্ছে।
দূর্জয় ভাবলো এই সুযোগ কথা বলার। কিন্তু ভয় ও হচ্ছে কোথা থেকে ওর রা,ক্ষুসে বাবা আর ভাই চলে আসে বলা যায়না। ওর বন্ধুদের বললো পাহাড়া দিতে।
দূর্জয়: বাবু তুই ঐদিক টায় যা।যদি মামা বা অন্তিম ভাই আসে তো তুই গান গাইতে শুরু করবি। তাহলেই আমি বুঝবো তারা আসছে।
আর তারেক তুই যদি কাউকে আসতে দেখো তো ,বার বার ওঠা বসা করবি তাহলে বুঝবো বিপদ কাছে।
যেই চিন্তা সেই কাজ।

দূর্জয় রঞ্জনার কাছে যায়।
রঞ্জনা তোমার সাথে কথা বলার ছিল। বলতেই নক কুটতে শুরু করে।
রঞ্জনা ঘুরে তাকায় দূর্জয় এর দিকে।
অহংকারী স্বরে বলল, আপনার সাথে কথা বলতে আমার বয়েই গেছে।
দূর্জয় বললো,ঐদিনের ঘটনার জন্য দুঃখিত।
রঞ্জনা কিছু বললো না।

দূর্জয় ভাবলো এবার ওর রুপের প্রশংসা করতে হবে।মেয়েরা নাকি প্রশংসা শুনতে ভালো বাসে।
দূর্জয় কিছু বলবে,ঠিক তখনই বাবু বেসুরো গলায় গান গাইতে শুরু।
দূর্জয় পেছনে তাকিয়ে দেখে বাবর সিকদার আসছে।
তিনবন্ধু মিলে কোথায় যাবে পথ খুঁজে পাচ্ছে না। রঞ্জনার সাথে কথা বলছি দেখলে এখানেই শেষ।
এদিক সেদিক করতেই দেখে পাশে অনেক বড় গোয়াল ঘর। ( বড় খামার)
দূর্জয় কাপা কন্ঠে বললো,চল গোয়াল ঘরে কাজ শুরু করি।
তারেক; কি বলছিস তুই?

দূর্জয়: কথা বারাস না,গুলি খেতে না চাইলে চল।
বন্ধুরা মিলে গোয়াল ঘরে কাজ শুরু করে দিছে।গরুর লাথিও খাচ্ছে।
রঞ্জনা ওদের ভয় দেখে অট্টহাসি তে তলিয়ে যাচ্ছে। বাবার ভয়ে শহরের ছেলে গুলো গোয়াল ঘরের কাজ করছে।
অন্যরাও হাসতে হাসতে ঠলে পরছে।
রাত ২ টো নাগাদ —-

পাশের ঘর থেকে নূপুরের আওয়াজ আসছে।আর তবলার আওয়াজ। চারদিক নিশ্চুপ।পূরো বাড়ি শ্মুনশান।
তারেকের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
ভয়ে চাপসে গেছে।এতবড় বাড়ি তার উপর এত রাতে।তবলার আওয়াজ।
বাকিদের ফিস ফিস করে জাগিয়ে নিয়েছে।
চোখ ঠলতে ঠলতে প্রশ্ন করলো দূর্জয়, কি হয়েছে?
তারেক :বাহির থেকে নুপুরের আওয়াজ আসছে।
সবাই একটু চমকে যায়। রঞ্জনা নৃত্যের পাগল তার মানে এই নয় যে এত রাতে নাচবে । চল বাহিরে গিয়ে দেখি।
সবাই বাহিরে বের হয়। হঠাৎ আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়।কোন দিক থেকে আওয়াজ আসছে কেউ বুঝতে পারছে না।
সবাই মিলে এদিক সেদিক দেখছে।পূরো বাড়ি নিস্তব্ধ।
হঠাৎ চোখ পরে‌। নিচের তলায়। তা যা দেখলো সবার অবস্থা খারাপ। কেউ একজন সাদা কাপড় মুরি দিয়ে ধীরে ধীরে বাড়িতে ঠুকছে।

এলিজা পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬

তারেক কাঁপতে কাঁপতে বলতে শুরু করে,ভাই শুনেছি বড় বাড়িতে ভুত থাকে।এটা হয়তো ভুত ই হবে।
বাবু , দূর্জয়, তারেক তিনজন ই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একসাথে হাদিসের সব দোয়া পরতে শুরু করে……

এলিজা পর্ব ৪০+৪১+৪২