এলিজা পর্ব ৬৮+৬৯
Dayna
নতুন ভোরের সূর্যর কিরন নিয়ে আলোকিত হয় পূর্ন সকাল। এলিজা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরে চলে যায়।পাখির জন্য কিছু খাবার রান্না করে নিয়ে যাবে হাসপাতালে। মনজুরা এসেছে। মনজুরা মনোরা,দু’জন এলিজাকে কাজে সাহায্য করছে। মমতাজ রান্না ঘরে আসে এলিজাকে বললো, তুমি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরি হও।আমি এদিক টা সামলাচ্ছি। এলিজা মৃদু হাসি দিয়ে উপরে চলে যায়।কালো রঙের শাড়ি পরে।তার সাথে চুল গুলো বেনুনি।
কিছুক্ষণ এর মধ্যে ই বেড়িয়ে পরে হাসপাতের উদ্যেশ্যে।
শ্রাবন শুকনো মুখে বসে আছে সিটের উপর ।বার বার উকি মেরে দেখছে পাখিকে। অপূর্ব সান্ত স্বরে বলল,আমি বাহির থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসি। এভাবে না খেয়ে থাকলে যে অসুস্থ হয়ে পরবি। শ্রাবন আহত কন্ঠে বললো, আমার পাখি নিস্তেজ হয়ে সুয়ে আছে আর আমি খাবার খাবো।গলা দিয়ে নামবে । অপূর্ব কিছুটা রেগে বললো, তবে কি তুই চাস তোর এই শুকনো মুখ দেখে পাখি আরো ভেঙে পরুক, অসুস্থ হোক! শ্রাবন কিছু বললো না। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় ডাক্তার। অপূর্ব শ্রাবন উঠে দাড়ায়। শ্রাবন আহত কন্ঠে বললো, পাখির কি অবস্থা! ও কি সুস্থ হয়ে যাবে!আমরা কি পাখিকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবো!ডাক্তার বললো,পাখির যা শারীরিক অবস্থা,তাতে বাড়ি রাখা সম্ভব নয়। হাসপাতালেই রাখতে হবে।যদি হাসপাতালে থাকে তবে আমাদের আয়ত্তে থাকবে।পাখির জন্য ভালো হবে। এখন আপনাদের ইচ্ছা।বলেই ডাক্তার চলে যাম। শ্রাবন থমকে যায়।ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসে পরে । মুখের রঙ নিমিষেই বদলে যায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শ্রাবন কাপা কন্ঠে বললো, পাখি আর কোনদিন তার স্বামীর ঘরে ফিরবে না ‘এটা কি করে হতে পারে।কেন আমার সাথেই এমন টা হলো। অপূর্ব কি বলবে বুঝতে পারছে না। শান্তনা দেয়ার মত কোন শব্দ নেই। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় এলিজা।
এলিজা পাখির কাছে কাছে আসে।নার্স বললো আপনারা বেশিক্ষণ রোগীর কাছে থাকবেন না।পাখি ধিরে ধিরে উঠে বসে। শ্রাবন বেডের কাছে দাঁড়িয়ে। এলিজা খাবার খাওয়া তে চাইলো পাখিকে।পাখি খেতে চাইলো না। এলিজা মুখের ভাষাতে বুঝে গেছে কি বলতে চায়। এলিজা মৃদু হেসে বললো,তুই আগে খেয়ে নে তারপর শ্রাবন খেয়ে নিবে।
শ্রাবন এলিজার হাত থেকে খাবারের বাটি টা নেয়।বললো আমি খাইয়ে দিচ্ছি,এবার তো খেয়ে নাও।তুমি খেয়ে নেয়ার পর আমরা খাবো।পাখি শ্রাবনের হাতে খেয়ে নেয়।
এলিজা অপূর্বর দিকে পরোক্ষ করে। এলিজা দেখলো অপূর্বর চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে।এলিজা বাহিরে সিটে বসে। অপূর্ব কে খাবার দিয়ে বললো খেয়েনিন। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, আমার জন্য চিন্তা হচ্ছিল বুঝি।
এলিজা দৃষ্টি সংযত করে বললো,হওয়ার ই তো কথা। আপনার এখানে থাকতে হবে না বাড়ি চলুন। এখানে আমি আর শ্রাবন থাকবো।আর তা না হলে আমরা পাখিকে বাড়ি নিয়ে যাবো।
অপূর্ব বললো,পাখিকে আর বাড়ি নেয়া যাবে না।ডাক্তার বলেছেন এখন থেকে এখানেই রাখতে হবে। এলিজা কাঁপা গলায় বললো,কি বলছেন আপনি?
অপূর্ব হ্যা সুচক মাথা নাড়ে।
দেখতে দেখতে কেটে যায় ৩টি দিন!
শ্রাবন আর থানাতে যাবে না বলে দিয়েছে ।কারন পাখিকে রেখে এক মুহুর্ত ও দূরে থাকা শ্রাবনের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।কখন কি হয় না হয় ,এই ভেবে কাজ থেকে লম্বা একটা ছুটি নিয়েছে। এখন বলছে আর চাকরি ই করবে না।
অপূর্ব থানাতে বসে নতুন কিছু ফাইল দেখছে। তখন উপস্থিত হয়,ডিসি সাহেব বললো, অপূর্ব আমরা কি সেই সাই,কো কি,লার কে খুঁজে পেতে ব্যার্থ হলাম। অপূর্ব চা খেতে খেতে বললো,এর শেষ তো হতেই হবে।হয়তো দুদিন আগে নয়তো পরে। আপনি এ নিয়ে চিন্তা করবেন না।
ডিসি সাহেব চলে যায়। অপূর্ব নতুন করে সেই চিন্তায় ডুবে যায়। অপূর্ব চেয়ারে টান হয়ে বসে পরে। বিকেল ৩টা নাগাদ।এলিজা গতকাল তিলকনগর গেছে।মামা মামির কাছে।বাড়িতে জাহাঙ্গীর, মমতাজ অর্পা, এবং কাজের লোক ছাড়া আর কেউ নেই। শ্রাবন হাসপাতাল পাখির কাছে।বাড়িটা সম্পুর্ন নিস্তব্দ। অপূর্ব বসে বসে এসব ভাবতেই থানাতে উপস্থিত হয় সূর্যর মা। অপূর্ব হকচকিয়ে উঠে। অপূর্ব বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,আরে আন্টি আপনি এখানে?
সূর্যের মা কাপা কন্ঠে বলল, সূর্য দুদিন ধরে বাড়ি ফেরেনি ।ওর বাবার শরীর টা হঠাৎ করেই খারাপ হয়।জানি না এই অবস্থায় ছেলেটা কোথায় গেছে।তাই তোমার কাছে আসলাম। অপূর্ব মেঝেতে দৃষ্টি স্থাপন করলো। অপূর্ব বুঝতে পেরেছে সূর্য কোথায় আছে। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, আপনি চিন্তা করবেন না আমি সূর্য কে পাঠিয়ে দিবো।
সূর্যর মা চলে যায়। অপূর্ব ভাবলো সূর্য সেই পরিত্যাক্ত বাড়িতে আছে। অপূর্ব সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। অপূর্ব তিলকনগর পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে যায়।গাড়ি তিলকনগর বাজারে রেখে হাঁটতে শুরু করে। কিছুক্ষণ এর মধ্যে রুশরাজ্যে পৌছায়। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে পৌছায় পরিত্যাক্ত বাড়িতে। সূর্যদের আস্তানায়।দিনেও এই জায়গাটা এতটা শ্মুনশান যে,কোন পাখিও এখানে থাকে না। অপূর্ব বাড়িটার চারদিক দেখছে।ভেতরে কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না। দরজা বন্ধ। অপূর্ব সেদিন যে জানালা থেকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছিলো সেখান থেকে ভেতরে প্রবেশ করে। অপূর্ব ধিরে ধিরে উপরে উঠে। কিন্তু কোথাও নেই। অপূর্ব প্রতিটা ঘর খুঁজে।।কোথাও কেউ নেই। অপূর্ব থম মেরে বসে পরে। কোথায় এরা। অপূর্বর হঠাৎ মনে পরলো সাগরের লাশের কথা।
সাগরের লাশের সাথে সাগরের বউ ছিলো সেই ঘরটা দেখা হয়নি। অপূর্ব দ্রুত পায়ে হেঁটে সেই ঘরে আসে। অপূর্ব যা দেখে অপূর্ব সম্পূর্ণ ভাবে বিষিন্নত হয়ে যায়।সেই ঘর সম্পুর্ন ফাঁকা।কোথাও কিছু নেই।মৃত দেহ অক্ষয় রাখার ক্যামিকেল গুলো ও নেই। অপূর্ব ঘামতে শুরু করে।কোথায় যাবে এরা। তারমানে এদের অন্য কোন আস্তানা আছে।আর আমি সবকিছু জেনে যাওয়া তে ওরা এখান থেকে চলে যায়। অপূর্ব রেগে দেয়ালে এক ঘুষি মেরে বললো, তুই আমায় দ্বিতীয় বার বোকা বানিয়ে আমার চোখে ধুলো দিলি। সূর্য আমার হাত থেকে তুই রক্ষা পাবি না।অপূর্ব ভাবলো কিভাবে ওদের আস্তানা অব্দি পৌছাবো। কিভাবে হাশেমের দেয়া নকশার সে-ই স্থানে পৌছাবো। অপূর্ব সিড়ির উপর বসে পরে। মস্তিষ্ক ঘাটালো,ভাবলো অপরাধী নিজেকে যতই চালাক ভাবুক না কেন,সে নির্বোধ হয়।
অপরাধের মাঝে সে কোন না কোন ক্লু ফেলেই যায়। সূর্যর সমস্ত কিছু, সূর্যর বলা প্রতিটি অক্ষর মনে করতে থাকে। অপূর্ব এসব চিন্তা করতে করতে মাথা বেথা শুরু হয়। কোথায় ওদের আস্তানা কোথায়। অপূর্ব সূর্যর বলা প্রতিটি অক্ষর মনে করতেই মনে পরে ”বাবর রাজ্যর’কথা। অপূর্বর বাবর রাজ্যর কথা মনে পরতেই , উঠে দাড়ায়।অপূর্ব মনস্থির করলো সেই পূরানো বাবর রাজ্যে যাবে।কি আছে সেই বাবর রাজ্যে।আসল সত্যিটা কি তা আমাকে জানতেই হবে। কিন্তু বাবর রাজ্য কোথায়।তার পথ কিভাবে আমি পাবো।বাবর রাজ্য এখন পরিত্যাক্ত হলেও একসময় সবাই তা চিনতো।কেউ তো কিছু বলতে পারবে। অপূর্ব রুশরাজ্যে থেকে বের হয়।বেলা ফুরিয়ে যাচ্ছে।
আশেপাশে কেউ নেই।কাকে জিজ্ঞেস করবে। অপূর্ব এদিক সেদিক পরোক্ষ করছে।দক্ষিন দিক থেকে দুজন লোক আসছে।বয়স মধ্যেম অপূর্ব মনস্থির করলো, তাদের জিজ্ঞেস করবে।লোক দুটো কাছে আসতেই দাড় করায়।লোক দুটো ভ্রু কুঁচকে দেয়। অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,চাচা বাবর রাজ্য টা কোথায়?বলতে পারেন!বাবর রাজ্যর নাম শুনতেই লোক দুটো চোখ বড় করে দুজন দুজনার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে। নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে,দুটো দ্রুত পায়ে অপূর্ব কে উপেক্ষা করে চলে যায়। অপূর্ব হতভম্ব হয় যায়।লোক দুটোর চাওয়ার পানে দেখে।ভাবলো ,কি অদ্ভুত লোক। অপূর্ব চিন্তিত হয় কাকে জিজ্ঞেস করবে। অপূর্ব বাজারের উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকে, তৎক্ষণাৎ সামনে পরে রাশেদ। রাশেদ অপূর্ব কে দেখেই, অমৃদু হাঁসি দিয়ে বলল,স্যার আপনি! কেমন আছেন! অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা রাশেদ বাবর রাজ্য টা কোথায় বলতে পারবে!
রাশেদ বাবর রাজ্যর কথা শুনেই মুখ ফ্যাকাশে করে ফেলে,বললো না স্যার আমি তো জানি না। অপূর্ব বুঝতে পারলো রাশেদ জানে । রাশেদের মুখের ভাষাই তা বলে দিয়েছে। অপূর্ব পকেট থেকে মানিব্যাগ টা বের কিছু টাকা রাশেদ কে ধরিয়ে দেয় বললো,এই টাকা রাখ আর সত্যিটা বল! দরকার পরলে আরো দেবো! কোথায় সে রাজ্য! রাশেদ টাকা হাতে পেয়ে বললো,স্যার অনেক দূর আর ঐ জায়গা টা অনেক ভয়ানক।কেউ যায়না।ওটা পরিত্যাক্ত । অপূর্ব বললো সে যাইহোক,আমি দেখে নিবো।তুই আমায় নিয়ে চল। রাশেদ মুখ ভার করে বললো,না স্যার আমি যামু না।আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না । আপনি যান। অপূর্ব নিজের মাথায় হাত দিয়ে অসহ্য হয়ে বললো,তোর যেতে হবে না তুই দূর থেকে দেখিয়ে চলে আসবি। রাশেদ রাজি হয়। অপূর্ব বললো, গাড়ি দরকার?
রাশেদ বললো, কিছুদূর গাড়িতে যাওয়া যাইবো।
বেড়িয়ে পরে বাবররাজ্যর উদ্দেশ্যে। গাড়ি চলে তিলকনগর থেকে উত্তর দিকে।৩ ঘন্টা গাড়ি চলে। রাশেদ বললো এখানে থামেন। অপূর্ব বললো, চলে এসেছি? রাশেদ বললো না। সামনে নদি।নদী টা অনেক বড়।এই নদীর পর আরো একটা নদী পাবেন।সেই টা পার হলেই বাবর রাজ্যর সীমানা। অপূর্ব বললো,তো চল যাওয়া যাক। রাশেদ কাপা কন্ঠে বললো স্যার আপনি যান আমারে আর টাইনেন না।মাফ করেন স্যার। অপূর্ব বললো, আচ্ছা যা তুই।আমি একাই যাবো।রাত ৮ টা নাগাদ রাশেদ ফিরে আসে। অপূর্ব সামনে এগোতে দেখে অনেক গুলো মাঝি।মাঝি-জ্বেলেরা জ্বাল বাইছে। অপূর্ব কে দেখে মাঝিরা বসা থেকে উঠে দাড়ায়।সবাই অবাক হয়।
এদিকে তো জেলে ছাড়া আর কেউ আসে না তবে ইনি কে।ভালো করে পরোখ করতে দেখে পুলিশ অফিসার। একজন মাঝি বললো,স্যার আমরা কোন চোরা জ্বাল দিয়ে মাছ ধরি না। অপূর্ব বললো,আমি এখানে আপনাদের জন্য আসেনি।আমাকে বাবর রাজ্য দিয়ে আসেন।সবাই হকচকিয়ে উঠে। হতভম্ব হয়ে যায়। অপূর্ব বুঝলো এনারা কেউ যেতে রাজি নয়।তাই অপূর্ব বললো,যে নিয়ে যাবে তাকে ৫০০ টাকা দেবো। তৎক্ষণাৎ মাঝিদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়।এ বললো,আমি নিয়ে যাবো ও বললো আমি নিয়ে যাবো। তাদের কথা না থামতেই অপূর্ব একটা নৌকায় উঠে।যার নৌকায় উঠে উনি খুব খুশি হয়।নৌকা চললো বাবর রাজ্যর উদ্যেশ্যে। আকাশের তারা রা জ্বল জ্বল করছে। চাঁদনীর আলো নদীর ঢেউয়ে দর্পন হচ্ছে। শীতল হাওয়া বইছে।মাঝি অপূর্বর দিক পরোখ করে বললো, স্যার আপনি বাবর রাজ্য যাবেন কেন?ওটাতো পরিত্যাক্ত!
অপূর্ব বলল, কিছু আসামি ঘাপটি মেরে বসে আছে বাবররাজ্যে। তাই ওদের ধরার জন্য যাচ্ছি।মাঝি বললো,তা আপনি একা!ভয় করছে না! ওখানে যাওয়া তো ঝুঁকিপূর্ণ।অপূর্ব বললো,আমি একাই যথেষ্ট ।বেশ অনেকক্ষন ধরে নৌকা চলছে। অপূর্ব খেয়াল করলো,নৌকা সোজা না গিয়ে বাকা দিকে যাচ্ছে। অপূর্ব জিজ্ঞেস করলো,ওপার যাচ্ছেন না কেন?ওদিক থেকেও নাকি নদী পার হতে হবে! মাঝি বললো,আমি আপনারে একেবারে বাবর-রাজ্যের নদীর তীরে নামাই দিয়া আসমু।
নদী পথে কেটে যাচ্ছে অনেক সময়।যেতে যেতে পৌছে যায় বাবররাজ্য। অপূর্ব ভাবলো গাড়ি করে ওপার অব্দি আসাতে হয়তো তারাতাড়ি পৌঁছেছি। চারদিক অন্ধকার।বড় বড় ঝোপঝাড়।কোথাও কোন জনব মানব নেই।এ এক নির্জন প্রহর।মাঝি বললো,সার রাত শেষ অংশে আমরা পৌছেছি।আপনে আমার টাকা টা দিয়ে চলে জান। অপূর্ব টাকা দেয়। অপূর্ব ওপার উঠতেই মাঝি বললো, এটা সাথে নিয়ে যান দরকার পরবো। অপূর্ব দেখলো একটা টর্চ। অপূর্ব ধন্যবাদ জানায়।মাঝি ফিরে যায়। অপূর্ব সামনে এগোতে থাকে।দুপাশে ঝোপঝাড় মাঝখান থেকে একটা সরু পথ চলে গেছে। অপূর্ব সামনে এগোতে থাকে। দু’পাশে পূরানো কিছু উঁচু উঁচু বিল্ডিং।যেগুলো দেখতে সাধারণ কোন বিল্ডিং নয়। পুরানো পিরামিড এর মত দেখতে।হয়তো বাবর রাজ্য রাজাদের ন্যায় ছিলো।
চাঁদনী রাত চারদিক আলোকিত।এমন মনে হচ্ছে আশেপাশে কোন জন্তু জানোয়া,র ও নেই। অপূর্ব যতই সামনের দিকে এগোচ্ছে ততই বুকের ভেতর ধুবধুবানি টা বেড়ে চলেছে। অপূর্ব যতই চারদিক দেখছে অপূর্বর মনে হচ্ছে এই বাবররাজ্য আমি অনেক বার এসেছি। সবকিছু পরিচিত মনে হচ্ছে। অপূর্ব চারদিক দেখছে। অপূর্ব ঘামছে। আশেপাশে বড় বড় ভাঙা বিল্ডিং। অপূর্ব কাপা হাতে ছুয়ে দেখছে। অপূর্বর অনুভূতি অন্যরকম মনে হচ্ছে। অপূর্বর মনে হচ্ছে এ দেয়াল আমি আরো ছুয়েছি।এইসব কিছুর সাথে আমার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। অপূর্ব কিছুক্ষণ থম মেরে দাড়ায়।একা একা বির বির করে বলছে, আমার এরকম অনুভুতি হচ্ছে কেন। সবকিছু আমার পরিচিত মনে হচ্ছে কেন। অপূর্ব মাথা চেপে ধরে চোখের সামনে অনেক কিছু ভেসে আসছে। কিন্তু পরিষ্কার নয়।
অপূর্ব সামনে এগোতে ই দেখে বিশাল বড় এক রাজপ্রাসাদ এর মত বাড়ি। অপূর্ব ভাবলো এটাই হয়তো বাবর সিকদার এর বাড়ি।বাড়ির চারদিকে বড় করে দেয়াল ফেরাঁনো। অপূর্ব ধির পায়ে এগোয়।বাড়িটির বা-দিকে বড় একটা খামার।একদম পরিত্যাক্ত। অপূর্ব ভালো করে পরোখ করে দেখলো,মৃত গরু মহিষের অনেক কঙ্কাল পরে আছে।কি এমন হয়েছিল এই বাবররাজ্য যারজন্য সবকিছু আজ এত এলোমেলো। অপূর্ব বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।বড় গেট তবে তালাবিহীন অপূর্ব খুব সহজে প্রবেশ করতে পারলো। অপূর্ব বাড়ির ভেতর পা রাখতেই সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে। অপূর্ব হতভম্ব হয়ে যায়।এমন কেন অস্থির অনুভব হচ্ছে। অপূর্ব বাড়িটি পরোখ করছে। অনেক বড় বাড়িটি। আশেপাশে অনেক কাঁটা দেয়া। আশেপাশের সবকিছু এলোমেলো হয়ে পরে আছে।
এই বাড়িতে কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না। অপূর্ব বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে থাকে।বাড়িটি এতই বড় যে,গোলাকার ভাবে ঘুরলেও কয়েক প্রহর কেটে যাবে। অপূর্ব চারদিক পরোখ করতে থাকে। মানুষের মত মুর্তি ভেঙে পরে আছে। অপূর্ব ঘুরতে ঘুরতে চোখে পরে একটা ছোট দরজার দিকে। অপূর্ব মনস্থির করলো,এই দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে। অপূর্ব দরজায় হাত দিয়ে খোলার চেষ্টা করলে অতি সহজেই খুলে যায়। অপূর্ব হতভম্ব হয়। অপূর্ব নিশ্চিত হয় এখানে কেউ নেই। কিন্তু একবার এর ভেতর টা দেখতে হবে। অপূর্ব দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলে, সবকিছু অন্ধকার। অপূর্ব টর্চ জ্বালিয়ে আশপাশ দেখতে থাকে। সবকিছু নতুন বাড়িটার বাহির থেকে সবকিছু পরিত্যাক্ত মনে হলেও ভেতরে সব নতুন। দেয়ালে অনেক ছবি পেইন্টিং করা।
অপূর্ব স্পর্শ করলে অনুভব করে,এ সবকিছু আমার পরিচিত। এখানে আমি আগেও এসেছি। অপূর্ব চোখ বড় বড় করে পরোখ চারপাশ দেখতে থাকে।এটা একটা ছোট বৈঠকখানা। অনেক জিনিস পত্র। অপূর্বর চোখ পরে ,পুরোনো রুপার তৈরি একটা আলমারির দিকে। অপূর্ব আলমারি টা ছুয়ে দেখে।একদম নতুনের মত চকচক করছে। অপূর্ব আলমারি টি খোলার চেষ্টা করলে খুলতে পারে। অপূর্ব অবাক হয় তালাবিহীন কি করে সম্ভব। অপুর্ব ভেতরে দেখতে চাইলে দেখলো, অনেক শাড়ি , লেহেঙ্গা, নৃত্য পোশাক।সোনা,রুপার বিভিন্ন ধরনের অলংকার।এত মুল্যবান জিনিস এভাবে পরে আছে।কেউ নিচ্ছে না।নাকি পূরোনো বাড়ি বলে ভয় পায় সবাই। অপূর্ব ভাবনা উপেক্ষা করে। বৈঠকখানাটা পরোখ করছে, বৈঠকখানার ধরন সেকেলের রাজাদের বৈঠকখানার মত।হয়তো বাবর সিকদার এসব পছন্দ করতেন। অপূর্ব বৈঠকখানা থেকে সামনে আসে।একটা ঘর।ঘরটা আয়তনে অনেক বড়।
অপূর্ব ঘরটাতে আসতেই অন্যরকম অনুভূতি হয়। অপূর্ব ভালো ভাবে দেখে বুঝলো,এটা মেহমানদের ঘর। অপূর্ব সম্পূর্ণ ভাবে হতভম্ব হয়ে যাচ্ছে। চারপাশ দেখে খুব চেনা চেনা লাগছে।বার বার এটা কেন মনে হচ্ছে।দেয়ালে বিভিন্ন পশু,দের ছবি খুব সুন্দর ভাবে আঁকা।পূরোনো বাড়ি কিন্তু সেটা ঘরের ভেতর অংশে মনেই হচ্ছে না। অপূর্ব দেখলো বা- দিকে দরজা। তবে তালাবদ্ধ। অপূর্ব খোলার চেষ্টা করলো। অপূর্বর কৌতুহল হলো এটা তালাবদ্ধ কেন।হয়তো এটার পরের ঘরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে। অপূর্ব তালা বরাবর সুট করে দরজাটি খুলে যায়। অপূর্ব যা দেখলো তাতে সম্পুর্ন ভাবে হতভম্ব হয়ে যায়।চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়।ঢেক গিলতে থাকে।
এটা বাড়ির মধ্যখান, চারদিক সোনালী রঙে চিকচিক করছে। চারদিক রাজকীয় আকারে সাজানো।নিচে বড় বড় চেয়ার ময়ূরপঙ্খীর মত।এত বিশাল বাড়ি।এটা পূরানো হলে, সবকিছু এত নতুন কি করে হতে পারে। অপুর্ব প্রথম তলায়। চারদিকে কেউ নেই।কোন মানুষের ছিটেফোঁটাও নেই। অপূর্ব ধির পায়ে এগোয়। সবকিছু পরিচিত মনে হচ্ছে। অপূর্ব নিশ্চিত ,যে সে আগেও এসেছে। কিন্তু কবে কখন, কিছু মনে পরছে না। শুধু মনে হচ্ছে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। অপূর্ব এদিক ওদিক পরোখ করতে দেখে দেয়ালে অনেক বড় পেইন্টিং করা একজন লোকের ছবি। লম্বা,চাপ দাড়ি, মনোভাব সম্পন্ন লোক। সূর্যর বর্ননার সাথে মিলে গেছে।ইনিই হয়তো বাবর সিকদার।
অপূর্ব অপলকে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অপূর্ব ছবিটার উপর হাত দিয়ে বললো,ভিষন পরিচিত মনে হচ্ছে।কে ইনি,এমন কেন অনুভূতি হচ্ছে। অপূর্ব সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে। অনেক গুলো ঘর।একটা ঘরের সামনে একটা নৃত্যশিল্পীর ছবি আঁকা । অপূর্ব ছবিটিকে ভালো করে দেখছে। খুবই সুদর্শন একজন নারী।যার চুল গিয়ে পরেছে হাটুর নিচ পর্যন্ত।এটাই হয়তো রঞ্জনা। অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে ঘরটাতে প্রবেশ করে।পূরোনো বাড়ি অথচ বাল্ব জ্বলছে।ঘরটির ভেতরে সবকিছু সোনার মত চক চক করছে।বাবর সিকদার একজন প্রতাবশালী ব্যাক্তি ছিলেন । সূর্যর তথ্য ভুল ছিল না।ঘর গুলো সাজানো গোছানো।চোখ পরে একটা আলমারির দিকে, তবে এটায় সোনার প্রলেপ দেয়া। অপূর্ব আলমারি টি খোলার চেষ্টা করলে খুলতে পারে।ভেতরে নৃত্য পোশাক। সাথে বই। অপূর্ব দেখার চেষ্টা করলো না। অপূর্ব ঘরটা পরোক্ষ করে ।মনে মনে ভাবছে, সবকিছু পরিচিত মনে হচ্ছে।আমি এই বাড়িটাতে আগেও এসেছি।
কিন্তু কেন এসেছি।কোন কিছু মনে পরছে না। অপূর্ব ঘরটা থেকে বের হয়। ঘরটার বাহির থেকে একটা সরু পথ চলে গেছে। অপূর্ব সরু পথে যেতে থাকে। সামনে এগোতেই উপরে ক্রোস চিন্হ দেয়া।মানে এখানে যাওয়া নিষেধ। কিন্তু এখানে কি আছে। চারদিক কতটা শ্মুনশান। কিন্তু সবকিছু স্বর্নের মত চকচক করছে। অপূর্ব সামনে এগোতে থাকলে,যত এগোয়,তত আলো কমতে থাকে।সামনের পথগুলো অন্ধকার। অপূর্ব সামনে এগোলেই দেখতে পায়,একটা ঘরের সামনে দু জোড়া জুতা। অপূর্ব হকচকিয়ে উঠে।ভ্রু কুঁচকে দেয়। এখানে জুতো আসবে কোথা থেকে। অপূর্ব ঘরটির জানালার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলেই দেখে,ডাঃ ইব্রাহিম।তার সামনে কেউ বসে আছে।কোন অল্প বয়সি লোক।মুখ দেখা যাচ্ছে না। অপূর্ব থমকে যায়।শরির শিউরে উঠলো।ডাঃ ইব্রাহিম এর খোজ নেই আজ অনেক দিন।
তারমানে উনি এখানে। অপূর্ব নিজের চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারছে না। অপূর্ব অবাক হয়। অপূর্ব নিশ্চিত হলো,এই বাড়িতেই কিছু আছে।এটাই ওদের আস্তানা। কিন্তু এখানে তো কিছু পেলাম না। অপূর্ব দেখলো ডাঃ ইব্রাহিম বের হচ্ছে। অপূর্ব ঘরের পেছন দিকে লুকিয়ে পরে। আজকে আর সেদিনের মত ভুল করলে চলবে না। অপূর্ব ডাঃ ইব্রাহিম এর পিছু নিতে চায়। দূরুত্ব রাখলো অনেক।যাতে ইব্রাহিম ধরে না ফেলতে পারে। অপূর্ব দেখলো ইব্রাহিম নিচের দিকে নামছে। অপূর্ব দোতলা থেকে, বারান্দায় যায়। বাহিরে বের হয়ে এরা কোন দিকে যায় এটা দেখতে হবে। অপূর্ব বারান্দায় এসে দাড়িয়ে আছে।কয়েক প্রহর দাড়িয়ে থাকে। ইব্রাহিম তো বের হচ্ছে না। অপূর্ব ভেতরে আসে। অপূর্ব অবাক হয়,কোথাও ডাঃ ইব্রাহিম নেই।এত কম সময় কোথায় যাবে। অপূর্ব দ্রুত পায়ে হেঁটে নিচে আসে।
এসে দেখে প্রবেশ দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। অপূর্ব হকচকিয়ে উঠে। আশে পাশে দেখতে থাকে। কোথায় যাবে এত কম সময়ে। অপূর্ব এদিক সেদিক পরোক্ষ করতে থাকে।চোখ পরলো বাবরের বড় পেইন্টিং- টার দিকে অপূর্ব ভালো ভাবে খেয়াল করলে দেখলো, ছবিটা বাঁকা হয়ে আছে।একটু আগে তো বাকা ছিলো না ।অপূর্ব ছবিটির কাছে এগোয়।ছবিটি নাড়ানোর চেষ্টা করলে দেখে, ছবিটি এদিক সেদিক নড়ছে। অপূর্ব অবাক হয়।এতবড় ছবিটা পিন দিয়ে না আটকিয়ে এভাবে রেখে দিয়েছে। চট করে অপূর্বর মস্তিষ্কের নিউরন সতেজ হয়।
এলিজা পর্ব ৬৬+৬৭
অপূর্ব পেইন্টিং টার উপরে হাত দিয়ে পর্যবেক্ষন করে দেখলো,এটা পেছনে দেয়াল নেই। খোলস-এর মত শব্দ হচ্ছে। অপূর্ব পেইন্টিং টা সরিয়ে ফেলে। অপূর্ব যা দেখলো, অপূর্বর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।পেছন দিক টা অন্ধকার। অপূর্ব টর্চ মেরে দেখলো, নিচের দিকে সিড়ি বেয়ে গেছে।তার সামনে বন্ধ দরজা। অপূর্বর বুঝতে আর বাকি রইলো না।এটা গুপ্তঘর।ডাঃ ইব্রাহিম এই পথেই গেছে। অপূর্ব সিড়ি বেয়ে নিচে নামলো,দরজার উপর লেখা ”হ্রদয়হীন অন্ধকার জগৎ” অপূর্ব চোখ গুলো বড় বড় করে ফেলে। অপূর্ব হাতের উল্টো দিক হয়ে ঘাম মুছে।ভাবলো,আমি শেষ পর্যন্ত সঠিক আস্থানায় চলে এসেছি। এত বড় বাড়ি থাকতেও,মাটির নিচে অন্ধকার ঘরের রহস্য কি।ভেতরে কি আছে?