এলিজা পর্ব ৮৭+৮৮+৮৯
Dayna
আজকের তারিখ ১৫ মার্চ ২০০০..
অপূর্বর বুকের ভেতর কুহ ডাকতে শুরু করে। বুকের ভেতর ধুকবুকানি বেড়ে চলেছে। অপূর্ব বিষিন্নত হয়ে ওঠে।
। তৎক্ষণাৎ ল্যান্থলাইনে ফোন বেজে ওঠে। অপূর্ব হইহুম্মুর খেয়ে উঠলো। কাঁপা হাতে ফোনটা তুললে, ওপাশ থেকে একজন কনস্টেবল বললো,স্যার দীগন্ত নদীতে দুটো লাশ পাওয়া গেছে। তদন্ত অনুযায়ী জানা যায়, তাদের মৃত্যুর বয়স তিনদিন। অপূর্ব কাপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, তাদের পরিচয়?
ওপাশ থেকে বললো, একজনের নাম চীপস ডুপিয়ালি এবং ডাঃ ইব্রাহিম। অপূর্বর হাত থেকে চট করে ফোন টা পরে যায়।চীপস ডুপিয়ালি এবং ডাঃ ইব্রাহিম কে ,কে মেরেছে!তাও ৩ দিন হয়। অপূর্ব দ্রুত পায়ে বাহিরে বের হয়।থানার উদ্দেশ্য বের হতেই, সামনে পরে একজন কনস্টেবল। অপূর্ব থমকে দাঁড়ায়। কনস্টেবল হাঁপাতে হাঁপাতে এগোয়। অপূর্বর সামনে এসে দাঁড়ায়।ইনি নতুন পুলিশে যোগদান করছে। অপূর্ব আহত চোখে বললো,কি হয়েছে এভাবে ছুটে এলেন কেন? কনস্টেবল হাঁপাতে হাঁপাতে,কাপা কন্ঠে বললো,স্যার আমরা দীর্ঘদিন ধরে যে,সিরিয়াল কি,লার কে খুঁজেছি সে নিজে এসেই ধরা দিয়েছে। অপূর্ব ছিটকে দু-কদম পেছনে স্বরে যায়। অপূর্বর চোখ গুলো ছানাবড়া হয়ে যায়। হৃদয়ের স্পন্দন ধিরে ধিরে বন্ধ হয়ে যায়। অপূর্ব আতংক স্বরে বলল, কিহ কোথায় উনি?আর উনি মহিলা না লোক? কনস্টেবল ঢেক গিলে বললো,মহিলা। অপূর্ব নিমিষেই থমকে যায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সময় না নিয়ে অপূর্ব দ্রুত পায়ে দৌড়াতে শুরু করে। কনস্টেবল পেছন পেছন দৌড়ে বললো স্যার,গাড়ি তে চলেন। দৌড়ে যাচ্ছেন কেন? অপূর্ব কি করবে বুঝতে পারলো না।দ্রুত পায়ে গাড়িতে উঠে। কনস্টেবল গাড়িতে উঠার আগেই, অপূর্ব গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে। অপূর্ব বার বার ঢেক গিলতে থাকে।গলা শুকিয়ে একাকার। শরীরের সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস টা বন্ধ হয়ে আসছে। অপূর্ব কাঁপা ঠোঁটে বললো,এটা তুমি কি করলে। অপূর্বর চোখ মুখে আতংক। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে।দিনের রোদ কড়া অথচ সবকিছু ধোঁয়াসা লাগছে। অপূর্ব কিছুক্ষণ এর মধ্যে পৌছে যায় থানাতে।থানাতে কেউ নেই। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় একজন কনস্টেবল বললো,স্যার আমরা যে কি,লার কে, খুঁজছিলাম,২৭ বছরের ছেলেদের হত্যা,র পেছনে যে ছিল।সে আজ নিজেই আত্মসমর্পণ করেছে। অপূর্ব কনস্টেবল এর দুই স্বিনাতে শক্ত করে হাত দিয়ে বললো, কোথায় সে, কোথায়? কনস্টেবল বললো,ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
অপূর্ব সম্পূর্ণ ভাবে বিষিন্নত হয়ে যায়। নিস্তেজ হয়ে যায়। থমকে যাচ্ছে চারদিক। অপূর্ব গাড়িতে উঠে রওনা হয়,ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশ্যে। বারবার রক্তমাখা চোখে বিরবির করে বলছে,এটা তুমি কি করলে!আমি তো পাপীটাকে নিয়েই থাকতে চেয়েছিলাম।তবে এরকম করলে কেন।
গাড়ি এসে থামে,ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে। অপূর্ব দেখলো, ইতিমধ্যে হাজার ও মানুষ ভির করেছে। সৃষ্টি হয়েছে কো’লাহল।কেউ কেউ দৌড়ে দৌড়ে আসছে। কিছু শব্দ কানে ভেসে আসছে।কেউ কেউ বলছে,এত বছর লেগেছে এই মারাত্মক,কিলা,র কে ধরতে।কেউ কেউ পাশ থেকে বলছে আমার ২৭ বছরের ছেলেটাকেও এই হায়,না বাঁচতে দেয়নি। অপূর্বর শ্রবন শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে হৃদয়। অপূর্ব ধির পায়ে হেঁটে কারাগারের সামনে এগোয়। হাজার হাজার মানুষ ভির করেছে। অপূর্বর বুকের ভেতর সুনামির মতো প্রবনতা শুরু হয়। সামনে এগোতেই সামনে পরে ,ডিসি সাহেব। অপূর্বর কথা বলার ক্ষমতা নিমিষেই হ্রাস পায়।ডিসি সাহেব অপূর্বর কাছে আসে। কাঁপা কন্ঠে বললো, পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলে গেছে। আইনমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ,উনি কিছুক্ষণ এর মধ্যে ই , আদালতে হাজির করতে বলেছে। অপূর্বর চোখ দিয়ে বিন্দু বিন্দু পানি পরছে।
ডিসি সাহেব, আমতা আমতা করে বলল,আমি চিনতে পেরেছি, এলিজা হচ্ছে মালাইকা।ডিসি সাহেবের দৃষ্টি সংযত।ডিসি সাহেব অপূর্বর কাদে শান্তনা মূলক হাত দিয়ে বললো,দ্রুত একজন উঁকিল ঠিক করো।যদিও চেষ্টা করে কিছু হবে না।তবুও…
অপূর্ব নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।কি শুনছে এসব। চারদিক কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব ডিসি সাহেব কে, উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশ করে। কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করতেই, দেখে বা দিকের লকাবের ভেতর তার প্রিয়তমা স্ত্রী দাড়িয়ে আছে। এলিজা উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।পরনে সাদা কাপড়।আচল টা অনেক বড়।চুল গুলো ছেড়ে দেয়া।হাতে হাতকড়া,গলাতে শিকল। অপূর্ব থমকে যায়।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। হৃদয়ের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব মনে মনে বললো, এটা হতে পারে না,সবকিছু দুঃস্বপ্ন হয়ে যাক। অপূর্ব লকাবের দিকে এগোয়।কি বলবে বুঝতে পারলো না।কন্ঠনালী থেকে কথা বলার স্বর বের হচ্ছে না। বুকের ভেতর ধুকবুকানি টা বেড়েই চলেছে। অপূর্ব কাপা কন্ঠে বললো, এলিজা —
এলিজা হকচকিয়ে উঠে। এলিজা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অপূর্ব ভাঙা গলায় বললো,ঐ ম্যাডাম, তুমি কেন করলে এমনটা ,কেন করলে?ঘুরে তাকাও, আমার দিকে ঘুরে তাকাও, জবাব দাও। এলিজা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এলিজা অপূর্বর দিকে ঘুরে তাকাচ্ছে না। অপূর্বর বলা বাক্য গঠন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না। অপূর্বর চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে । বারবার থমকে যাচ্ছে হৃদয়।নীলাকার আকাশ টা ভেঙ্গে পরছে। অপূর্বর কোন কথার জবাব দিলো না এলিজা। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় দু’জন অফিসার। অপূর্ব কে উদ্দেশ্য করে বললো,মি.অপূর্ব ডিপার্টমেন্ট থেকে আপনাকে সবাই ছিঃ ছিঃ করছে। একজন দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার হয়ে, কিভাবে পারলেন একজন কিলা,র কে নিজের ঘরের স্ত্রী করতে! এবং সেই অপরাধী কে দিনের পর দিন,আশ্রয় দিয়েছেন। অপূর্ব জবাব দেয়ার মত শব্দ পেলো না। অপূর্ব কাকুতি মিনতি করে বললো, একটাবার আমায় এলিজার সাথে কথা বলতে দিন, একটাবার!
কর্কট মেজাজে অফিসার দুজন বললো, কখনোই না। কনস্টেবল ডেকে বললো, আইনমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ,এলিজা কে নিয়ে ১১ ঘটিকায় আদালতে হাজির হতে বলেছে।তোমরা এখনই নিয়ে চলো। চারজন মহিলা কনস্টেবল এসে এলিজা কে লকাব থেকে বের করে। অপূর্ব এলিজা কে কিছু বলার চেষ্টা করবে,ঠিক তখনই তিনজন কনস্টেবল অপূর্ব কে ধরে ফেলে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় কমিশনার। কমিশনার অপূর্বর উদ্দেশ্য বললো, অপূর্ব কে, আসামি এলিজার আশেপাশে ও আসতে দিবেন না। অপূর্ব কান্না জড়িত কন্ঠে বললো, একটা বার আমায় এলিজার সাথে কথা বলতে দিন।একটা বার।
এলিজা ভাব ভঙ্গিমা দেখে মনে হচ্ছে অপূর্বর কোন কথা সে শুনছেই না। অপূর্বর কোন বাক্য, হাহা,কার এলিজার কানে পৌঁছাচ্ছে না।
। এলিজা কে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা হাইকোর্টে। অপূর্ব পেছন থেকে জোর গলায় চিৎকার দিয়ে বললো,ম্যাডাম, আমার কথা শুনুন ম্যাডাম।কেন করলে এমন?অপূর্ব ধিরে ধিরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। শরীরের সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র আচরে পরছে। অপূর্ব হাঁটু গেড়ে বসে পরে।কাপা কন্ঠে বললো,এটা তুমি কি করলে!কেন এমন করলে!আমি অপরাধীটা _ কে নিয়েই সারাজীবন থাকতে চেয়েছি।কেন এরকম করলে। এলিজা কে লকাব থেকে কারাগারের সামনে নিয়ে আসা হয়। চারদিক দিয়ে কোলাহল এর নির্মম বাক্য গুলো ভেসে আসছে।কেউ ইটের টুকরা,পাথর ছুরে মারছে।কেউ কেউ চিৎকার দিয়ে বলছে,কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেয়া হোক। এলিজার কোন উত্তেজনা নেই। এলিজা কে পুলিশ গাড়িতে বসানো হয়।পাশে বসা ছয় -জন মহিলা কনস্টেবল।সামনে বসা কমিশনার। একজন মহিলা কনস্টেবল পরোখ করলো, এলিজা মিটিমিটি হাসছে। মহিলা কনস্টেবল,ভয়ে চাপসে যাচ্ছে।এত সাংঘা,তিক কি করে হতে পারে। দেশের সমস্ত মানুষ তাকে সাজা দেয়ার জন্য ওত পেতে আছে।আর সে হাসছে। মহিলাটি দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
অপূর্ব মেঝে থেকে উঠে দাড়ায়। কোথায় যাবে কি করবে কিছু বুঝতে পারলো না। হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে, হাইকোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তৎক্ষণাৎ সামনে পরে ডিসি সাহেব,বললো, একজন উঁকিল পেয়েছি, মোটামুটি সবকিছু বলেছি।আমরা ওনাকে নিয়ে যাই।যেখানে এলিজা নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছে সেখানে কিছু করা যাবে না।তবুও চেষ্টা করে দেখি।
অপূর্ব ডিসি সাহেব এর কথা মত তাই করলো।রওনা হয় হাইকোর্ট এর উদ্দেশ্যে। সমস্ত ঢাকার শহরের মানুষ ছোটাছুটি করছে।এত বছরের ব্যাবধানে ,সেই সাংঘাতি,ক সাইকো কি,লার কে খুঁজে পেয়েছে।সবাই একটা নজর দেখার জন্য ছুটছে।
অপূর্ব ঘামছে। নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। চারদিক কোলা,হলে আচ্ছন্ন । কিন্তু অপূর্বর কাছে সবকিছু শ্মুনশান মনে হচ্ছে।কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে।কি হবে না হবে,এসব ভেবেই ,ভেতরের কম্পন টা বেড়ে চলেছে। অপূর্ব বারবার বিড়বিড় করে বলছে, সবকিছু দুঃস্বপ্ন হয়ে যাক।আর ঘুমটা এখনি ভেঙ্গে যাক।
গাড়ি এসে থামে ঢাকা হাইকোর্টের সামনে। সমস্ত পুলিশ বেরিগেট দিয়ে রেখেছে । চারপাশে ভির করেছে হাজার ও মানুষ। আদালত এই অপরাধের কি রায় দিবে সবাই তা শোনার জন্য বেকুল।
অপূর্ব গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ভেতরে যেতেই, কিছু অফিসার আটকে দেয়। অপূর্ব কাপা কন্ঠে বললো,আমাকে যেতে দিন।আটকাচ্ছেন কেন।ভেতরে যেতে দিন না,দয়াকরে যেতে দিন।
অফিসার রা বললো,ভেতরে আইনমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আছেন।উনি আপনাকে যেতে বারন করেছে। কোনভাবে আপনি ভেতরে যেতে পারবেন না। অপূর্ব তাদের সাথে কিছুক্ষণ লরিঝাপটা করলো।তবুও ভেতরে যেতে পারলো না। অপূর্ব নিস্তেজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ডিসি সাহেব তার ঠিক করা উকিল কে নিয়ে হাইকোর্টের ভেতরে চলে যায়।
আইনমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন আদালতের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে ।সেই অনুযায়ী সবকিছু হচ্ছে।
সকাল ১১:০০ ঘটিকা।শুরু হয় আদালতের কার্যক্রম।
এলিজা কে দাড় করিয়ে দেয়া হয় , কাঠগড়ায়। আদালতে উপস্থিত হয়, সাধারণ কিছু মানুষ ।সবাই আতংকিত হয়ে দেখছে।সবাই ফিসফিস করছে।বাহিরে থাকা সবার কোলাহল ভেসে আসছে। একজন বয়স্ক মহিলা ঘৃনিত কন্ঠে বলে উঠলো,এই সেই ডাইনি,এই ডাইনি আমার ছেলেটাকে বাঁচতে দেয়নি।খালি করেছে আমার বুকটাকে।
জজ, অর্ডার অর্ডার বলে,চুপ নির্দেশক ইঙ্গিত করলো।সবাই শান্ত হয়ে বসলো। উপস্থিত হয় আইনজীবী তোফায়েল আহমেদ। তোফায়েল আহমেদ,কোন কেসে আজ পর্যন্ত আদালতে উপস্থিত হননি। কিন্তু আজ সে উপস্থিত। উপস্থিত কমিশনার,এসপি সহ সকলে।
জজ এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো।চুল গুলো এলোমেলো।দু হাতে হাতকড়া,গলাতে শিকল।পরনে সাদা কাপড়। এলিজার ভেতরে কোন ভয় ভিতী কাজ করছে না।জজ,অবাক হয়,সে এত। বড় অপরাধি হয়েও ,কেন নিজেই দোষ শিকার করলো। পাপের অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে নাকি অন্য কোন রহস্য।জজ ভাবনা উপেক্ষা করলো।
জজ বললো, আদালতের কার্যক্রম শুরু করা হোক।
উকিল আশরাফ বলতে শুরু করলো, মিলট গত নয় বছর আমরা যে কি,লার কে খুঁজেছি সে এই মুহূর্তে আমাদের সামনে। একের পর এক নির্মম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে আসামি এলিজা।১৯৯২ সাল,৪ঠ অক্টোবর প্রথম ২৭ বছর বয়সী খলিল এর লা,শ পাওয়া যায় দীগন্ত নদীতে। ময়নাত,দন্তের পর জানা যায়,তার শরীর থেকে হার্ট বের করা হয়। যার প্রমান পত্র আপনার কাছে পেশ করছি। উকিল মেডিক্যাল রিপোর্ট সহ সবকিছু জজ কে দেখায়।
উকিল আশরাফ আবার বলতে শুরু করলো,
খলিল পর্যন্ত ই থেমে থাকেনি এই নির্মম হত্যা,কান্ড। এরপর থেকে শুরু হয় একের পর এক নিরীহ মানুষদের নিয়ে মৃত্যু খেলা। এই পর্যন্ত আমরা হৃদয়হীন লা,শ পেয়েছি ৪০ টা। তাদের কারো শরীরে হার্ট ছিল না। কেননা,তাদের হার্ট গুলো, বিদেশ পাচার হতো। এবং সেই টাকা মানবসেবা নামক প্রতিষ্ঠানে দান করা হতো।যার প্রমানপত্র আপনার কাছে পেশ করছি। উকিল প্রমানপত্র জজের কাছে দেয়।জজ দেখলো। আইনমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এলিজার দিকে পরোক্ষ করলো, মনে মনে বললো,ডেঞ্জারাস।
উকিল আশরাফ আবার বলতে শুরু করলো, মিলট,শুধু ২৭ বছরের ছেলেদের হ,ত্যা করা হতো, এবং তাদের শরীর থেকে হার্ট বের করা হতো শুধু তাই নয়, এদের সাথে হ,ত্যা করা হতো, সদ্য বিয়ে ঠিক হওয়া কনেদের। গত নয় বছর ধরে আসামি এলিজা খেলছিল এই নির্মম মৃ,ত্যু খেলা। আসামি এলিজা, তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সমস্ত কিছুর পেছনে তার ই হাত।
তার গ্যাং এর কথা জিজ্ঞেস করলে উনি বলেন,তার গ্যাং এ দু-জন ছিল। এবং তাদের দুজনকে ৩ দিন আগে আসামি এলিজা নিজেই হ,ত্যা করেছে।তথ্য অনুযায়ী একজনের পরিচয়,ভিন্ন দেশের নাগরিক চীপস ডুপিয়ালি। এবং ডাঃ ইব্রাহিম।যাদের ফরেন্সিক রিপোর্ট আপনার কাছে পেশ করা হয়েছে।
মিলট, সমস্ত প্রমান এবং আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সব কিছু বিশ্লেষণ করা হয়েছে।মিলট আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।
এলিজা ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। একবার চোখ তুলে পর্যন্ত দেখেনি।সবাই এলিজার দিকে ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
বাহিরে হাজার ও মানুষ কোলাহ,ল সৃষ্টি করছে। কখন আদালত তার রায় ঘোষণা করবেন।
জজ ,বললো, আসামির পক্ষে কোন উকিল নেই? তৎক্ষণাৎ ডিসি সাহেব এর ঠিক করা উকিল কিছু বলার জন্য দাড়ায়।তিনি কিছু বলার আগেই, এলিজা কাট গলায় বললো,আমি অপরাধী,আমি খু,নি, আমাকে শাস্তি দিন। আমার পক্ষে কোন উকিল এর দরকার নেই।
আদালতে উপস্থিত থাকা সমস্ত মানুষ হকচকিয়ে উঠে।কানা ফিসফিস শুরু করে। আইনমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ,এর ম্যানেজার , তোফায়েল এর কানে ফিসফিস করে বলল,স্যার,কতটা সাহসী,কতটা মারাত্মক খু,নি।কি করে ধরলেন একে? তোফায়েল হুসস করে, চুপ নির্দেশক ইঙ্গিত করলো।
জজ অর্ডার অর্ডার বললে সবাই চুপ হয়।সবাই আতংকিত জজ কি রায় দিবেন।
অপূর্বর বুকের ভেতরের হাড় গুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস এর গতিক্রম কমে যাচ্ছে। থমকে যাচ্ছে অপূর্ব। থমকে যাচ্ছে হৃদয়ের দর্পন। হাইকোর্টের সামনে ভির করে থাকা সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। কখন জজ রায় দিবেন।
জজ বলতে শুরু করলো, আসামি এলিজা যিনি একজন নির্মম হত্যাকারী। আসামি এলিজার বিরুদ্ধে সমস্ত সাক্ষ্য ,প্রমান এবং আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিক আসামি এলিজা কে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করা হলো। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড , এবং পাচারকারী জঘন্য তম অন্যায়। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের ৩০৩ ধারা, এবং পাচারকারী ১০১ ধারা অব্যাহত করে আসামি এলিজা কে ৩০৬ ধারা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।
আগামী ১৬ মার্চ ২০০০ ”তারিখে আসামি এলিজার মৃত্যুদণ্ড আইনমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ১০০ সিড়ি বিশিষ্ট অচিন পাহাড়ে বিকেল ৪:০০ ঘটিকায় কার্যকর করা হবে।
ভবিষ্যতে যাতে এরকম অন্যায় কাজ কেউ না করে ,তাই সবার স্বচক্ষে আসামি এলিজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
রায় শেষে জজ তার কলমটি ভেঙে উঠে চলে যায়।
সমস্ত মানুষের কোলা,হলে আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে চারদিক।রায় শুনতে আশা প্রতিটি মানুষ খুশিতে আপ্লুত হয়ে ওঠে।
কিন্তু থমকে গিয়েছে অপূর্ব। নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে অপূর্ব। অপূর্ব ধপাস করে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে।কথা বলার বাকরুদ্ধ হারিয়ে ফেলেছে।আজ প্রকৃতিও থমকে গিয়েছে। আকাশ টা কালো মেঘে ঢেকে গেছে। সমুদ্র আচরে পরছে। অপূর্বর বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়,যা পর্বত পাহাড় ধ্বং,সের মতন। এলিজা কে আদালত থেকে বের করা হয়। এলিজার দৃষ্টি সংযত। এলিজা মৃদু হাসছে। আশেপাশের সবাই দেখছে।সবাই হকচকিয়ে উঠছে।সবাই বলাবলি করছে কতটা নিষ্ঠুর,এই এলিজা। মনে কোন ভয় নেই। মৃত্যুদণ্ডের রায় শোনার পরেও হাসছে।
অপূর্ব দ্রুত পায়ে উঠে দাড়ায়। অপূর্ব চট করে দৌড়ে গিয়ে এলিজার পা জড়িয়ে ধরে, অঝরে কাঁদদে কাদদে বললো, কেন করলে,কেন আমার সাথে এমনটা করলে,কি দোষ করেছিলাম আমি, ধ্বংস করে দিচ্ছ কেন আমায়, বেঁচে থাকতেও যে মরে যাচ্ছি।আমি বাঁচব না, বাঁচব না আমি। এলিজা অপূর্বর দিকে একবার ও দৃষ্টি স্থাপন ও করলো না। কনস্টেবল রা অপূর্ব কে সরিয়ে দেয়। অপূর্ব তাদের সাথে ধস্তাধস্তি করেও এলিজার দিকে আসতে পারলো না। এলিজা কে নিয়ে যাওয়া হয় , ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। অপূর্ব গাড়ির পেছন পেছন ছুটতে থাকে। অপূর্ব বেঁচে থেকেও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করছে।তিব্র যন্ত্রনায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
রাত ১০ টা নাগাদ —
এলিজা কারাগারে। অপূর্ব কে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। একবার দেখা করতেও দেয়নি। হাজারবার চেষ্টা করেও এলিজার সাথে একটি বার কথা বলতে পারেনি। অপূর্ব ক্লান্তিময় দেহ নিয়ে কারাগারের সামনে দেয়াল ঘেঁষে বসে আছে। অঝরে কাঁদছে।এই কান্না কোনদিন থামার নয়। অপূর্বর বুকের ভেতর টা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে।যা প্রকাশ করার মত কোন বাকরুদ্ধ নেই।
তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় শ্রাবন। উপস্থিত হয় ডিসি সাহেব। শ্রাবন কাঁপা গলায় অপূর্ব কে হাজার টা প্রশ্ন করলো।যার কোন উত্তর অপূর্ব দিতে পারলো না।
একজন কমিশনার আসলো। এলিজা লকাবের এক কোনে ঘাপটি মেরে বসে আছে।কোন নড়াচড়া ও তার মধ্যে নেই। কমিশনার কনস্টেবল কে বললো, শেষ বারের মত ইচ্ছা প্রকাশ করতে বলো। এবং আমাকে জানাও।বলেই কমিশনার চলে যায়। একজন মহিলা কনস্টেবল লকাবের ভেতর প্রবেশ করে। মহিলাটি মেঝেতে বসলো। এলিজা কে দেখে তার মায়া হয়। শান্ত স্বরে বললো, কিছু বলতে চাও? এলিজা কিছু বললো না। দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করলো, তোমার শেষ ইচ্ছা কি? এলিজা মহিলা কনস্টেবলের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো। এলিজার তেজি,রক্ত মাখা চোখ দেখে মহিলাটি কিছুটা অবাক হয়। আবার ও জিজ্ঞেস করলো, তোমার শেষ ইচ্ছা কি? এলিজা অহংকারী স্বরে, বলল ”’আমার শেষ ইচ্ছা আমার স্বামীর বুক পাঁজরে মাথা রেখে ঘুমানো”’
কনস্টেবল কথাটি শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। ছিটকে কিছু টা দূরে সরে যায়। দৃষ্টি সংযত করলো। পাশে থাকা আরেকজন কনস্টেবল কে বললো, কমিশনার স্যার কে ডেকে নিয়ে এসো।
কমিশনার স্যার উপস্থিত হয়। কনস্টেবল বললো,ওনার শেষ ইচ্ছা,ওনার স্বামীর বুক পাঁজরে মাথা রেখে ঘুমানো।
কমিশনার কর্কট স্বরে বলল,এটা ছাড়া অন্য কোন ইচ্ছা থাকলে বলতে বলো।এটা কখনো ই সম্ভব নয়। অপূর্ব কে সাসপেন্ড করা হবে।কমিশনার উৎফুল্ল আচরনে চলে যায়।
কনস্টেবল মহিলাটি নতসত হয়ে বসলো। শান্ত স্বরে বললো, তোমার অন্য কোন ইচ্ছা থাকলে বলো। এলিজা কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে বললো,একটা সাদা কাগজ এবং একটা কলম দিন।
কনস্টেবল কথা মত সাদা কলম আর কাগজ দেয়। এলিজা ধিরে ধিরে অনেক কিছু লিখলো।চোখ দিয়ে দু এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো।
এক প্রহর দুই প্রহর কেটে যায় অনেক প্রহর। এলিজার লেখা শেষ হচ্ছে না।
অতংপর শেষ হয় লেখা । কাগজটি ভাঁজ করে বললো, আমার শেষ ইচ্ছা পূরন হলো না। কিন্তু এই চিঠিটা আমার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর আমার স্বামিকে দিয়ে দিবেন।
১৬ মার্চ ২০০০
বিকেল ৪:০০ ঘটিকা।
ঢাকার শহরের প্রতিটি মানুষ অচিন পাহাড়ের নিচে অবস্থান করে।সবাই হইহই করছে। নিকৃষ্ট হত্যাক,রীর মৃত্যুদণ্ড দেখার জন্য বেকুল হয়ে আছে সবাই।
এলিজা কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অচিন পাহাড়ের চূড়ায়। অপূর্ব কে কিছু কনস্টেবল জোড় করে ধরে রেখেছে। এলিজা এলিজা বলে চিৎকার করছে।
কেউ কেউ অপূর্বর বুক ফাটা কান্না দেখছে। তো কেউ, পাহাড়ের চূড়ায় তাকিয়ে আছে।
শ্রাবন মুখের উপর হাত দিয়ে অঝরে কাঁদছে।ভিরের মধ্যে কাদছে অর্পা। এলিজা কে চুড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঝুলন্ত দড়ির সামনে দাড় করিয়ে দেয়া হয়।
অপূর্ব কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করে ছুটে আসতে পারে।একটা ,দুটো করে দ্রুত পায়ে অচিন পাহাড়ের সিড়ি বেয়ে উপরে আসতে থাকে। অঝরে কাদতে থাকে।
এলিজার মুখে কালো কাপড় বাঁধবে,ঠিক তখনই এলিজা বললো, কাপড় টি বাঁধবেন না।আমি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার স্বামী কে দেখছে চাই। অপূর্ব দৌড়ে আসতে আসতে ফাসির দড়িতে ঝুলে পরে এলিজা।
অপূর্ব সিড়ি বেয়ে অচিন পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে উঠতে ততক্ষণে এলিজা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। অপূর্ব এসেই আঝাপটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে এলিজার ঝুলন্ত পা। শুরু হয় বুক ফাটা কান্না। অপূর্বর কান্নার শব্দে ভেঙ্গে যাচ্ছে অচিন পাহাড়।ভস্য হয়ে যাচ্ছে শস্য শ্যামল। প্রকৃতির রঙ নিমিষেই বদলে গেছে। আকাশে কালো মেঘের হাতছানি। দিনের আলো নিমিষেই ফুরিয়ে যায়।ধেয়ে আসে অন্ধকার।
অপূর্ব এলিজার মৃত দেহ টে জড়িয়ে কাঁদছে।চিৎকার দিয়ে বললো,কেন করলে এমন ,কেন করলে।হও তুমি মহাপাপী,থাকতাম না হয় এই পাপিকে নিয়েই।কেন নিজেকে এভাবে শেষ করলে।কেন আমার জীবন টা ছারখার করে দিয়ে গেলে। ধ্বংস করে দিয়েছো আমায়।কেড়ে নিয়েছো সুখ।মাটি হয়ে গেছে আমার আনন্দ। চিরতরে শেষ হয়ে গেছি আমি।কেন এমন করলে। অপূর্বর কান্নায় প্রকৃতি ও কাঁদছে।
অপূর্ব এলিজার পা টা চট করে ছেড়ে দেয়।এক কদম-দু কদম করে পেছনে সরে। ঝুলন্ত এলিজার দেহ’খানীর দিকে তাকিয়ে ক্লান্তি কন্ঠে বললো, তুমি বেইমান।তুমি ছিলে স্বার্থপর।তুমি ছিলে মিথ্যা বাদি। কথা দিয়েছিলে, চিরদিন আমার সাথে থাকবে। তুমি কথা দিয়েও কথা রাখতে পারোনি।”প্রতিশোধের বি,ষাক্ত নেশায় তুমি আশক্ত ছিলে”আমার পবিত্র ভালোবাসাও পারেনি তোমাকে পরিবর্তন করতে ”।
তুমি আমাকে ভালোবাসালে নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে না। আমার হয়েই থাকতে। গুটিয়ে নিতে নিজেকে।দুজনে চলে যেতাম গহীন রাজ্যে।যেখানে আমাদের কেউ পেতো না।
”তুমি মরোনি ,মরোনি তুমি ”
জনমে জনমে এলিজা অমর হয়ে থাকবে আমার মাঝে ”’
অপূর্ব পেছনের দিকে যেতেই একজন কনস্টেবল ধরে ফেলে বললো,এক্ষুনি পরে যেতেন।
অপূর্ব এলিজার ঝুলন্ত লাশ টিকে মায়ার দৃষ্টিতে পরোক্ষ করে। এলিজার মৃত দেহ ঝুলছে।
ভির কমে যায় পাহাড়ের নিচ থেকে।
রাত ১২ টা নাগাদ। এলিজার মৃত দেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
অপূর্ব এলিজার মৃত দেহ টাকে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরে আছে।আজ কোন ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক নেই।নেই কোন অঙ্গিকার।থমকে আছে আকাশ,থমকে আছে প্রকৃতি।
দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে অর্পা।
শ্রাবন মেঝেতে লুটিয়ে বসে আছে। বায়েজিদ আপা আপা বলে চিৎকার করছে।মনজুরা মনোরা, হতভম্ব হয়ে দেখছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো।
জাহাঙ্গীর বাকরুদ্ধ হারিয়ে ফেলেছে। পাপের অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।
তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় একজন মহিলা কনস্টেবল।
অপূর্বর কাছে এসে নত হয়ে বললো, এলিজা মৃত্যুর আগে আপনার জন্য, জেলখানায় বসে চিঠি লিখেছে
অপূর্ব দ্রুত হাতে চিঠিটা নেয়। এলিজা কে বুকের মাঝে শুইয়ে চিঠিটা খুললো।
চিঠিতে লেখা
”প্রানের চেয়েও প্রিয় স্বামি। আমি জেলখানা থেকে বলছি। আপনার ভালোবাসা জড়িত কন্ঠে,ঘৃনিত অহর্নিশি ছিলো ,হৃদয়_হরনের চেয়েও বিষাক্ত।
রক্ত মাখা মায়ার চোখে যখন,ঘৃনা দেখতে পেয়েছি, দুমরে মুচড়ে গিয়েছিল আমার হৃদয়।যখন থেকে প্রতিশোধের বি,ষাক্ত নেশায় আসক্ত হয়েছি,তখন থেকে এই দু’চোখ, হৃদয় শুধু আপনাকে হ’ত্যা করতে চেয়েছে। এঁকে এঁকে বহু বার আপনাকে ‘হ’ত্যা করার পরিকল্পনা করি। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে বার বার থমকে গিয়েছে আমার বিষা,ক্ত হ্রদয়। বিষা,ক্ত মনের আঙ্গিনায়,ধিরে ধিরে ফুটেছে , ভালোবাসার কলি। আমার মিথ্যা ভালোবাসার মায়াজালে আপনাকে ফাসাঁ তে যেয়ে আমিই ফেঁসে গেছি, আপনার পবিত্র ভালোবাসায়। জোৎস্না রাতের, অহর্নিশি ঝিলিকের মাঝে উপস্থিত হই, আপনার হ্রদয় কেড়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, আপনার ঐ মধুরতা কন্ঠ- স্বর।সেই,বাধাকেও অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে_ছিলাম,আপনাকে ভস্য করে দেয়ার জন্য।
কিন্তু অজানা কোন বাধায় আমি বেঁধে যাই। বিয়ের মত পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও, ছারখার করতে চেয়েছি আপনার ঐ বুক’। কিন্তু সেই বুক হয়ে যায় আমার নিদ্রার স্থান। আপনার বুক পাঁজর হয়ে যায় আমার প্রতিদিনের অভ্যাস। প্রতিশোধের বি,ষাক্ত নেশায় আসক্ত হতে হতে, আটকে গিয়েছি আপনার নেশাক্ত ভালোবাসায়।ধিরে ধিরে হেরে যাই, আপনার পবিত্র ভালোবাসার কাছে। অনুভূতি_হীন হৃদয়ে যখন, আপনার ভালোবাসার অনুভূতি আগ্রতি হয়, তখন ইচ্ছা করতো, আমার হ্রদয়টাকে ছুরির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে দেই। তখনই ভেবে নিঃস্ব হতাম,যখনই ভাবতাম যে, মনে আপনাকে ভালোবাসি,সেই মনে আপনাকে হত্যা করতে চেয়েছি।
খুব কষ্ট হতো,যখনই মনে পরতো,যে চোখ দিয়ে, আপনার মায়াবী চোখ গুলো দর্পন করেছি,সেই চোখ দিয়ে আপনাকে একসময় হত্যা করার দৃষ্টি এঁকেছি ।অনেক বার চেয়েছি , আমার হ্রদয়টাকে বুক চিরে বের করে আপনার হাতে দিয়ে দেই।যদি সম্ভব হতো, আমার চোখ গুলো খুলে আপনার বুকের উপর রেখে দিতাম। একবার নয় ,বহুবার চেয়েছি, কিন্তু আমি পারিনি।”ভেবেছি,যদি আমার দৃষ্টি চলে যায়,তবে আপনার ঐ রক্তমাখা দৃষ্টি আমি আর দর্পন করতে পারবো না। প্রতিশোধের বিষা,ক্ত নেশা হেরে যায়,আপনার পবিত্র ভালোবাসার আশরের কাছে। আপনার স্পর্শ, আপনার চাহনি, আপনার কন্ঠস্বর, আপনার আলতো হাতের ছোঁয়া,জোড় ভ্রুর জোড়াশয় দর্পন,হয়ে ওঠে আমার প্রতিদিনের অভ্যাস’।
হিং,স্রী মালাইকা সিকদারিনী থেকে হয়ে উঠি,শান্তময় এলিজা। হিংস্রী মালাইকা,যার মনে ছিল না ভালোবাসা,যার মনে ছিল না,আবেগ,ছিলো না মিষ্টিময় অনুভুতি, আপনার পবিত্র ভালোবাসার জোড়ে,তার মনে ফুটে ছিলো বসন্তের ফুল। বিষাক্ত মনে জন্মনেয় ভালোবাসা,জন্মনেয় আবেগ, জন্মনেয় মায়ার অনুভূতির ভূষণ।যে হৃদয়ের গহীন আঙিনায় প্রতিজ্ঞা করেছি আপনাকে ধ্বংস করার”সেই হৃদয়ের কার্নিসে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই,আপনাকে রক্ষা করার। বলেছিলাম, আপনার বিপদে আমি ঢাল হয়ে দাড়াবো।আমি বেঁচে থাকতে আপনার উপর বিপদের আঁচ ও আসতে দিবো না।সেই,আমি আমার কথা রেখেছি। শেষ বারের জন্য যেদিন,বাবররাজ্যে উপস্থিত হই, আমার অস্তিত্ব সেদিন বরবাদ হয়ে যায়।
মৃত্যুর আগেই ,আজরাইল রুপে উপস্থিত ছিলো,চীপস ডুপিয়ালি এবং ডাঃ ইব্রাহিম। বেঈমানি করেছে আমার সাথে।৫ কোটি টাকার লোভে পরে আমার সমস্ত সত্যি বাংলাদেশ আইনমন্ত্রীর কাছে প্রকাশ করে দেয়। চীপস ডুপিয়ালি এবং ডাঃ ইব্রাহিম চেয়েছিলো,আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে , আইনমন্ত্রীর পুরষ্কিত,৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে বিদেশ চলে যাবে। আইনমন্ত্রী এটাও জেনে গিয়েছিল,এস আই অপূর্ব চৌধুরীর স্ত্রী,এলিজা চৌধুরী।সেই কিলা,র যাকে খুঁজে বেড়িয়েছি কয়েকটি বছর ধরে।ডাঃ ইব্রাহিম এবং চীপস এর মাধ্যমে আইনমন্ত্রী এবং কমিশনার আমার উদ্দেশ্যে চিঠি পাঠায়। এবং সেই চিঠিতে বলা হয়,আমি যদি ৭২ ঘন্টার মধ্যে,নিজের স্বীকারোক্তি, এবং সমস্ত অন্যায়, এবং হ,ত্যার দায় যদি স্বীকার না করি তবে,আপনাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে।
এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট চেয়ারে বসিয়ে আপনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।কারন, আইনমন্ত্রী এবং কমিশনার জেনে গিয়েছিল আমি আমার জবানবন্দি একবার, ঘুরিয়ে নিলে আমার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ থাকবে না।তাই তারা পরিকল্পিতভাবে আমার উদ্দেশ্যে চিঠি পাঠায়। এবং আপনাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করে। হিং,স্রি এলিজা সেদিন থমকে গিয়েছিল।থমকে গিয়েছিল আমার হৃদয়।সেদিন আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম আমার আর আমার প্রিয় মহারাজার সাথে পথচলা এখানেই শেষ। আমার জীবনের নীল রঙ নিমিষেই কালো হয়ে যায়। সেদিন আমি ডাঃ ইব্রাহিম এবং চীপস ডুপিয়ালি কে হ,ত্যা করি।আমি মনস্থির করি,আমি আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করবো।
কারন কথা দিয়েছিলাম,আমি বেঁচে থাকতে, আপনার বুকে কেউ আঘাত করতে পারবে না।আমি কথা দিয়েছিলাম, আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আপনাকে রক্ষা করবো। সেই আমি আমার কথা রাখতে পেরেছি। ”আমার জীবনের বিনিময়ে আপনার জীবন দিয়ে গেলাম ”।আপনাকে বাঁচাতে একবার নয়, হাজার বার আমি ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে রাজি।আপনাকে রক্ষা করতে একবার নয়, হাজার বার হাসি মুখে, মৃত্যু কে বরন করে নিতে রাজি। আইনের আদালতে আমি হেরে গেছি, কিন্তু আমি ভালোবাসার আদালতে জিতে গেছি। শুনছেন, হাজার চেষ্টা করেও, আপনার বুক পাঁজরে আর কয়টা দিন মাথা রেখে ঘুমাতে পারলাম না।
আপনার ঐ মধুরতা কন্ঠের,ম্যাডাম ডাকটি আর কয়টা দিন শোনা হলো না। শুনছেন, দুনিয়াতে আমাদের মিলন হয়েও হলো না,ভাগ্যের আতশবাজি জোয়ারে হেরে গেছি। পরপারে না হয়,আমরা নীলতিমি হয়ে জন্ম নেবো। একসাথে নীলাশয় সমুদ্র হাজার বছর ধরে পারি দেবো।যেখানে থাকবে না অন্ধকার,যেখানে থাকবে না, মৃত্যু খেলা,যেখানে আমাদের বিচ্ছেদ হবে না। শুনছেন, খুব কষ্ট হয়,আমি মরে যাবো সেই ভেবে কষ্ট হয়না, কিন্তু আমি চলে যাওয়ার পর আপনার হাহাকা,র তারনার কথা ভেবেই বুকটা ছারখার হয়ে যাচ্ছে। শুনছেন, আপনার
সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো শিরায় শিরায় বেঁধে আছে। নিয়তির এক কঠিন পরিহাস।অচিন পাহাড় ১০০ সিড়ি বিশিষ্ট সিড়ি বেয়ে উঠে, আপনার ভালোবাসার প্রমান দিয়েছিলেন।আমিও সেদিন কথা দিয়েছিলাম, আপনার বিপদে ঢাল হয়ে দাড়াব।কিছুটা সময়ের ব্যাবধানে আমার বলা বাক্যটি বাস্তব রুপ ধারণ করেছে।অচিন পাহাড়ে প্রথম বার আপনি আপনার ভালোবাসা প্রমান দিয়েছিলেন,নিয়তের জোড়ে প্রথম ও শেষ বার,আমিও অচিন পাহাড়ে ফাসির দড়িতে ঝুঁলে ভালোবাসার প্রমান দিলাম।
নিয়তি আমাকে আর কয়টা দিন বাঁচতে দিলো না। সৃষ্টিকর্তা চাইলে পরপারে হয়তো আবারো আমাদের মিলন হবে।রোজ হাশরে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো।রোজ হাশরে সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনাকে ভিক্ষা চাইবো।আমি পাপী, কিন্তু সৃষ্টিকর্তা অধম দয়াবান। একবার নয় বারেবারে আপনাকে চাইবো। বিনিময়ে আপনাকে পাবো।
আমি হাসি মুখে আমার মৃত্যু গ্রহন করে নিলাম। আমার প্রানের বিনিময়ে,দিয়ে গেলাম আপনার প্রান। এলিজার প্রানের বিনিময়ে বেঁচে থাকবে অপূর্ব। শুনছেন, কষ্ট পাবেন না।আমি বেঁচে থাকবো আপনার মধ্যে। নিয়তি আমাকে কাঠ গড়ায় এনে দাড় করিয়েছে,বিনিময়ে পরপারে, আপনি আমার পাশে এসে দাঁড়াবেন। আমার প্রিয় মহারাজা ,আপনাকে আমি ভালোবাসি। আজকে শেষ বারের মত বললাম।হয়তো আর কোনদিন বলার সুযোগ হবে না।বুক ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে আপনাকে ভালোবাসি। শুনছেন,ভালো থাকবেন। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকবেন।আর হ্যাঁ নামাজে বসে আমার জন্য দোয়া করবেন,যাতে রোজ হাশরেও আমি আপনাকে নিজের করে পাই।
এলিজা পর্ব ৮৫+৮৬
ভালো থাকবেন। নিজের শরীরের যত্ন নিবেন।বাবার সাথে সবসময় সদাচরণ করবেন।অর্পাকে আগলে রাখবেন। শ্রাবন কে বলে দিয়েন,পাখি আমার কাছে ভালো থাকবে।
শেষ বারের মত,বলতে ইচ্ছে করছে,আপনাকে ভালোবাসি, অসম্ভব ভালোবাসি। আমার প্রানের বিনিময়ে দিয়ে গেলাম আপনার জীবন।
ইতি
আপনার আপরাধী
এলিজা।