ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৬

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৬
সারিকা হোসাইন

অঝোর ধারায় ঝরঝর করে এক নাগাড়ে ঝরে যাচ্ছে ভারী বর্ষনের ধারা।বর্ষনের রাত টুকুকে আরো গভীর রূপ দিতে পাল্লা দিয়ে ক্রমাগত গুড় গুড় শব্দে বিদ্যুৎ চমকে যাচ্ছে।নিস্তব্ধ এই রাতে কোনো মানুষের সাড়া শব্দ পাওয়া তো দূর একটা পশুপাখির ও নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
শহর থেকে খানিক দূরে গহীন বনের কাছটায় দূতলা বিশিষ্ট একটি ধবধবে সাদা বাংলো।চারপাশে হরেক পদের গাছের সমাহার সেই সাথে নয়নাভিরাম ফুলের মেলা।দূর থেকে দৃষ্টি দিলে দূতলার দক্ষিণের কামড়াটায় টিম টিমে হলুদ আলোর অস্পষ্ট ঝলকানি দেখা যাচ্ছে।

সেই কক্ষে বধূ বেশে আধ হাত ঘোমটা টেনে হাটু ভাঁজ করে তার উপর হাতের ভর দিয়ে থুতনি পেতে আখি পল্লব মুদে বৃষ্টির সুর মূর্ছনা উপভোগ করছে রাজ্য।অপেক্ষা বিশেষ পুরুষের জন্য।এই পুরুষ যেই সেই পুরুষ নয়।একদম দলিল করে পাওয়া প্রেমিক পুরুষ।
হঠাৎই যুবরাজের বাঁকা হাসি যুক্ত চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই অজানা ভয় আর লজ্জায় আড়ষ্ট হলো রাজ্য।সারা শরীর থর থর করে কেঁপে উষ্ণ শরীর শীতল হয়ে উঠলো নিমিষেই।
খানিক ঘোমটা তুলে কক্ষের চারপাশে চোখ বুলালো রাজ্য।কক্ষটিতে কোনো কৃত্রিম ফকফকে বৈদ্যুতিক বাতির রোশনাই পরিলক্ষিত হলো না।পুরো কক্ষ জুড়ে বাহারি রঙের মোমবাতি শোভা পেয়েছে।কারুকার্য খচিত নান্দনিক বাতিদানেও শোভা পেয়েছে সাদা রঙের এক ঝাঁক মোম বাতি।সেই মোম বাতি গুলো পুরো কক্ষ জুড়ে মোলায়েম উষ্ণ আলো বিলিয়ে গলে যাচ্ছে সেই সাথে বিলিয়ে দিচ্ছে মাদকতা মিশ্রিত সুবাস।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু এতো কিছুর মধ্যেও যুবরাজের অপেক্ষা রাজ্যকে অধীর করে তুললো।সেইযে এই কক্ষে রাজ্যকে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো এখনো ফিরলো না!
রাজ্যকে বিয়ের পর যুবরাজ তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়নি।বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের থেকে বিদায় নেবার পর যুবরাজ নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে রাজ্যকে এখানে নিয়ে এসেছে।কিন্তু জায়গাটা কোথায় রাজ্য জানেনা।হঠাৎই যাত্রাপথে নিজেদের কথোপকথন মস্তিষ্কে হানা দিলো রাজ্যের।
“আজ থেকে তুমি যুবরাজ শাহীরের একান্ত ব্যাক্তিগত সম্পত্তি।তোমাকে পাবার বাসনা তো দূর তোমার দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তার চোখ ই উপড়ে নেবো আমি”

শক্ত কন্ঠে কথা গুলো বলে এক হাত স্টিয়ারিং এ রেখে অপর হাত দিয়ে রাজ্যের নরম তুলতুলে হাত চেপে ধরলো যুবরাজ।এরপর সেই হাতের করপুটে নিজের উষ্ণ চুম্বন বিনিময় করে বুকে চেপে ধরে গভীর শ্বাস নিলো।
সেই মুহূর্ত মনে পড়তেই বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে গেলো রাজ্যের।কিন্তু পরক্ষণেই যুবরাজের অদ্ভুত এক কান্ড মনে পড়তেই বিস্ময়ে হতবাক হলো।
শার্টের বুক পকেট থেকে একটা কালো কাপড় বের করে রাজ্যের দুই চোখ বেঁধে দিয়ে যুবরাজ বলে উঠলো
“ওয়েলকাম টু মাই কিংডম”

যুবরাজের কথার আগামাথা কিছুই না বুঝে চুপচাপ গাড়িতে বসে রইল রাজ্য।তার ডান হাত তখনো যুবরাজের হাতের মুঠোয় বন্দি।কতো সময় এভাবে পেরিয়ে গেছে রাজ্য জানেনা।হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষার শব্দে নড়েচড়ে উঠলো সে।
“লক্ষী মেয়ের মতো এভাবেই বসে থাকবে।একদম ছটফট করবে না ঠিক আছে?
যুবরাজের কথায় সম্মতি জানিয়ে রাজ্য ঘাড় কাত করলো।গাড়ির দরজা খুলে যুবরাজ বাইরে বেরিয়ে এসে রাজ্যের পাশের দরজা খুলে তুলতুলে নরম কন্ঠে আহ্বান জানালো
“প্লিজ গিভ মি ইউর হ্যান্ড মাই ডিয়ার বিলভড ওয়াইফ”

যুবরাজের এমন আহ্বানে রাজ্যের সারা শরীরে অদ্ভুত বৈদ্যুতিক তরঙ্গ খেলে গেলো ।উচ্ছাস আর আবেশ দুইয়ের মিশেলে নিজের কাঁপা কাঁপা দুই হাত যুবরাজের দিকে বাড়িয়ে লাজুক হাসলো সে।
রাজ্যের পদ্মের পাপড়ির ন্যায় দুই হাতে উষ্ণ চুম্বন দিয়ে রাজ্যকে পাঁজাকোলে তুলে নিলো যুবরাজ।
দৃষ্টি হীন রাজ্য পরম আস্থাতে দুই হাত দিয়ে যুবরাজের গলা জড়িয়ে বুকে মাথা ছোয়ালো।রাজ্যকে কোলে নিয়ে নিজের পা চালালো যুবরাজ।
কীয়তখন বাদে দুজন পুরুষের গলার স্বর পেলো রাজ্য।কিন্তু খুবই চাপা।যুবরাজের ইশারায় দরজা খুলে দিলো একজন পুরুষ।রাজ্য মনে মনে ভাবল
“এই বাড়ির চাকর বাকর হবে হয়তো”

কক্ষে প্রবেশ করতেই অসম্ভব রকমের সুন্দর সুবাসে ঠোঁট প্রশস্ত হলো রাজ্যের।সেই নরম উষ্ণ ঠোঁটে যুবরাজ তার ঠোট ছুঁইয়ে রাজ্যের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো
“সো ম্যানি এরেন্জমেন্টস ফর ইউ ডিয়ার বউ”
কথাটি বলতে বলতে রাজ্যের কানের লতিতে উষ্ণ স্পর্শ ছুঁইয়ে দূরে সরে গেলো যুবরাজ।রাজ্য যুবরাজকে আকড়ে ধরতে চেয়েও বিফল হলো।শেষমেশ নিজের হাত গুটিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো রাজ্য।যুবরাজ রাজ্যের চোখের বাধন উন্মুক্ত না করেই রাজ্যকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠলো
“এভাবেই বসে থাকবে,কোথাও এক পা নড়বে না।আমি যাবো আর আসবো!

যুবরাজের অপেক্ষায় এভাবেই বসে থেকে কতো সময় ব্যয় করলো রাজ্য তার হিসেব রাখলো না।যখন ধৈয্যের বাঁধ ফুরাবার উপক্রম তখন চোখের বাধন উন্মুক্ত করে বিষন্ন মনে আরো এক প্রহর অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নিলো সে।
হঠাৎই বিকট বজ্রপাতে ধ্যান ছুটলো রাজ্যের।সেই সাথে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো।এরপর মনে সাহস এনে সময় কতো হয়েছে সেটা দেখার জন্য কক্ষের চার দেয়ালে দৃষ্টি বুলালো।কিন্তু কোনো দেয়াল ঘড়ি নজরে এলো না।বাধ্য হয়ে বিছানা থেকে নেমে ঘোমটা খুলে নিজের ব্যাগ থেকে মোবাইল খানা বের করে পাওয়ার অন করে সময় দেখে নিলো।ঘড়িতে সময় রাত বারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট।
এবার বেশ ঘাবড়ালো রাজ্য
“যুবরাজ গেলো টা কোথায়?’

শুনশান ফাঁকা রাস্তা,কোনো জনমানব তো দূর একটা গাড়ি পর্যন্ত দৃষ্টিগত হচ্ছে না।পুরো আকাশ কাঁপিয়ে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সেই সাথে জোরে বৃষ্টি হচ্ছে।ঘুটঘুটে অন্ধকারে চারপাশের সবকিছুই দৃষ্টিগোচর।এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে প্রানপনে দৌড়ে চলেছে দুজন কালো পোশাকধারী মাঝবয়সী লোক।নিজের প্রিয় জীবনখানা বাঁচানোই যেনো এখন মুখ্য উদ্দেশ্য তাদের।

বৃষ্টির দাপটের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।বারবার মাঝ রাস্তায় মুখ থুবড়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে কিন্তু সেসব তারা গায়ে মাখছে না।ঘন্টাখানেক এভাবে দৌড়ানোর পর সামান্য হাফ ছেড়ে দুই হাঁটুতে হাতের ভর দিয়ে মুখ খোলে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো তারা।
কিন্তু সেই নিশ্বাস বেশিক্ষন স্বস্তির হলো না।চোখের সামনে যম তুল্য মানুষটিকে দেখে দুজনের ই চক্ষু কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।সেই সাথে শ্বাস টাও যেনো বুকের কাছে এসে গট করে আটকে গেলো।এমন শীতল বর্ষনেও গলা শুকিয়ে কাঠ হলো পানির পিপাসায়।ভয়ে জিভ বের করে বৃষ্টির পানি শুষে নিয়ে গলা ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করলো দুজনে।

তাদের এই দৃশ্য দেখে হো হো শব্দে হেসে উঠলো সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তি।একদিকে বিকট বজ্রপাত অপরদিকে আগন্তুকের অদ্ভুত হাসি দুই মিলেই লোক দুটোর কলিজা কাঁপিয়ে দিলো।
নিজের গাড়ির সামনের অংশে হেলান দিয়ে হাতে একটা রিভলবার ঘুরাতে ঘুরাতে আরো কিছুক্ষন হেসে নিলো ব্যাক্তিটি।এরপর চোখে আগুন নিয়ে গর্জে উঠা কন্ঠে শুধালো
“আমার বাবাকে মা*রার মতো সাহস কে দেখিয়েছে তোদের ওই সুবহান শেখ?
লোক দুটো বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না।উপায়ন্তর না পেয়ে শুধু হাটু মুড়ে দুই হাত জোড় করে নিজের জীবন ভিক্ষার আকুতি জানালো।

“আমাদের ক্ষমা করে দিন যুবরাজ স্যার।আমরা বুঝতে পারিনি উনি আপনার বাবা।আমরা শুধু কন্ট্রাকে কাজ করি।আমরা যদি ঘূর্ণাক্ষরেও টের পেতাম সাদাফ শাহীর আপনার বাবা তাহলে আমরা কখনো এই চুক্তি করতাম না”
লোক দুটোর কান্না আর ভয়ার্ত আহাজারী শুনে যুবরাজের মনে বেশ এক আনন্দ হলো।সেই আনন্দ বেশিক্ষন স্থায়ী না হয়ে মুহূর্তেই হিংস্র রূপে বহিঃপ্রকাশ ঘটলো।
“বাসর ঘরে নতুন বউ রেখে এই বৃষ্টির মধ্যে তোদের পিছনে ছুটে চলেছি।ওদিকে বউ আমার একা।কতখানি হয়রানি করেছিস জানিস?কোন মুখে ক্ষমা চাইছিস সেটাই তো বুঝতে পারছি না”
লোক দুটো দৌড়ে এসে যুবরাজের পা খামচে ধরে কেঁদে উঠলো হাউমাউ করে।কিন্তু কঠিন হৃদয়ের যুবরাজ সেসব কেচ্ছা শুনতে নারাজ।এতোক্ষন বউয়ের সাথে থাকলে এক গেম হয়ে যেতো।কিন্তু এখানে এসে দৌড়াদৌড়ি খেলা খেলতে হচ্ছে।এসব অহেতুক খেলা সহ্য করবে কোন সবল পুরুষ?

প্রচন্ড ক্রোধে ঝটকা দিয়ে নিজের পা সরিয়ে গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে গাম্ভীর্য পূর্ণ কন্ঠে যুবরাজ বলে উঠলো
“এসব মামুলি পাতি মাস্তান পেটাতে আমাকে বাসর ঘর থেকে এখানে কেনো অনলি রেহান?এসব ছোট কেস তো তুই নিজেই সামলাতে পারিস।ছুঁচো মেরে হাত নোংরা করা বহু আগেই ছেড়ে দিয়েছি জানিস না?তার চেয়ে মা*ল দুটোকে ঠুকে দিয়ে কফিনে ভরে ফুল দিয়ে সাজিয়ে সুবহান শেখের কাছে পাঠানোর ব্যাবস্থা কর।তোর বোন আমাকে না পেয়ে কেঁদে বুক ভাসালো বোধ হয়,বৃষ্টি ফুরিয়ে গেলে বাসর এর মজাই মাটি হবে।আর আমার বাসর ভালো না হলে সুবহান শেখের চামড়া তুলে ডুগডুগি বাজাবো এই আমি বলে দিলাম।”

রাগে গজগজ করতে করতে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গাড়ি স্টার্ট দিলো যুবরাজ।স্কেলেটরে পা চেপে ধরতেই সচল হলো গাড়ির চাকা।এক মিনিট ও না আগাতেই ভিক্ট শব্দে বাজ পড়লো সেই সাথে শোনা গেলো দুজন ব্যাক্তির গগন বিদারী চিৎকার।সেই চিৎকারে শব্দে ক্রুর হাসলো যুবরাজ।
গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে শীষ বাজাতে বাজাতে প্রশস্ত হেসে বলে উঠলো
“ইউ হ্যাভ ডান ভেরি ব্র্যাভ ডিয়ার রেহান”

নিজের মাথার লম্বা ঘোমটার ওড়না খুলে চুলের বাধন আলগা করে ধীরে ধীরে নিজের গা থেকে সমস্ত অলঙ্কার খুলে ফেললো রাজ্য।বিষাদের মেঘ তার মন দখল করে উষ্ণ স্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছে সব কিছু।বার বার চেষ্টা করেও নিজের নেত্র বারী রোধ করা যাচ্ছে না।বাতিদানে থাকা মোমবাতি গুলোও অকারণে উদ্দীপনার সাথে জলে জলে নিজের শক্তি হারিয়ে নিভে যাওয়ার বাহানা করছে।
“যেই মানুষটার জন্য এতো মনোমুগ্ধকর সাজসজ্জা এতো আবেগঘন অপেক্ষা সে একটি বার তাকিয়েও দেখলো না”!

যুবরাজের এহেন কাণ্ডে এক নিমিষে ভেঙেচুরে দুর্বল হয়ে পড়লো রাজ্য।শেষমেশ নিজের অশ্রুদানা মুছতে খোলা বেলকনির কাছে গিয়ে নিজেকে মেলে ধরলো ।দুই হাত পাখির ডানার মতো মেলে ধরে চক্ষু মুদে নিজেকে বৃষ্টির ধারার সামনে সপে দিলো সে ।বুকের ভেতরের উত্তাল কষ্টে ক্রমশ ফুঁপিয়ে উঠা নীরব কান্নারা উঠানামা করছে বারংবার।মুহূর্তেই বৃষ্টির মোটা মোটা ছিটা রাজ্যকে অনেকটাই ভিজিয়ে দিলো।
পুরো মুখমন্ডল আর গলা জুড়ে শিশির বিন্দুর মতো মুক্তা দানার ন্যায় বৃষ্টির ফোঁটা রাজ্যকে দখল করলো।
খট করে খোলে গেলো কক্ষের দরজা।ব্যাথায় নিমগ্ন রাজ্য সেটা খেয়ালই করলো না।
অভিজাত্যে ভরপুর ড্রেসিং টেবিলের দিকে করুন দৃষ্টিপাত করে নিজের দীর্ঘশ্বাস লুকালো যুবরাজ।বিছানার উপর অনাদরে পড়ে রয়েছে সোনালী রঙা ঘোমটা খানা।

নিজের ভেজা কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ফেলে একটা ট্রাউজার পরিধান করে খালি গায়ে বেলকনির দিকে অগ্রসর হলো যুবরাজ।
বিদ্যুৎ চমকানোর ঝকঝকে আলোয় বিষাদে ভরা রাজ্যের ছোট মুখ খানি বেশ করে নজর কাড়লো যুবরাজের।
ধীরপায়ে রাজ্যের পিছনে দাঁড়িয়ে নিজের পেশীবহুল হাতের বেষ্টনীতে শক্ত করে বেঁধে ফেললো নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে।
যুবরাজের উষ্ণ স্পর্শে কেঁপে উঠার পরিবর্তে ঠোঁট টিপে চোখ বুঝে নীরব অশ্রু বিসর্জন দিলো রাজ্য।সবটাই বুঝতে পেরে যুবরাজ আরো শক্ত বাঁধনে রাজ্যকে জড়িয়ে আহত স্বরে বলে উঠলো

“আমি ভুল করেছি,আমাকে কঠিন শাস্তি দাও।তুমি যেই শাস্তি দিবে আমি সেটাই মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত”
যুবরাজের এমন শীতল কন্ঠে রাজ্যের কষ্ট গুলো বাধন ছাড়া হলো।যুবরাজের দিকে ঘুরে নিজের সিক্ত দুই হাতে যুবরাজকে জড়িয়ে ধরে জোড়ে কেঁদে উঠলো রাজ্য।
“আপনি আসলেই কঠিন হৃদয়ের পুরুষ,আপনি ইচ্ছে করেই আমাকে কষ্ট দিতে পছন্দ করেন।আমি আর এক মুহূর্তও আপনার সাথে থাকবো না।আমি এক্ষনি বাড়ি চলে যাবো।
রাজ্যের আহত কান্না বৃষ্টির ধারার সাথে ধুয়ে মুছে যুবরাজের প্রশস্ত বুকে বিলীন হচ্ছে।মেয়েটার এহেন বিধস্ত অবস্থায় যুবরাজের কষ্টে হৃদপিন্ড খানা ফেটে যাবার উপক্রম হলো।রাজ্যের মাথায় গাঢ় চুম্বন একে যুবরাজ পুনরায় বলে উঠলো

“আম সরি জান”
নিজের কান্নাকে কোনো মতে রোধ করে রাজ্য তার মলিন মুখ খানা নিয়ে যুবরাজের দিকে দৃষ্টি পাতলো।চোখে তার হাজারো প্রশ্ন।কিন্তু মুখ ফুটে একটাও করতে পারলো না।
চতুর যুবরাজ সবগুলো প্রশ্ন পড়ে ফেললো সদ্য হওয়া স্ত্রীর সমুদ্রের ন্যায় স্বচ্ছ নয়ন থেকে।
দুই হাতের আজলায় রাজ্যের মুখ জড়িয়ে যুবরাজ মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে জবাব দিলো
“সকল প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে আছে বউ।সময় এলে সুদে আসলে পুষিয়ে উত্তর দেবো।
ভারী বৃষ্টি আর ঠান্ডা বাতাস রাজ্যের ভেজা শরীরে কাঁপন ধরালো।সেই কাঁপনে তিরতির করে কেঁপে উঠলো গোলাপের পাপড়ি সম রাজ্যের পাতলা ঠোঁট জোড়া।সেই ঠোটের কম্পনে খেই হারালো যুবরাজ।নেশাক্ত ব্যাক্তির ন্যায় পরম আবেশে রাজ্যের সিক্ত দুই ঠোঁট আকড়ে ধরলো নিজের খসখসে শীতল উষ্ঠদ্বয় দিয়ে।
যুবরাজের ভালোবাসার স্পর্শে চোখ বুজে যুবরাজের গলা জড়িয়ে ধরলো রাজ্য।মুহূর্তেই বৃষ্টির দাপট আরো তেজী হলো।নিজেকে উষ্ণ করতে যুবরাজের পেশিযুক্ত পিঠে জাপ্টে ধরলো রাজ্য।

ঠান্ডায় জমে যাওয়া রাজ্যকে হ্যাচকা টানে কোলে তুলে নিলো যুবরাজ এরপর কক্ষের দিকে পা বাড়ালো।মোমবাতির কোমল আলোয় নব বধূর আকর্ষণীয় স্নিগ্ধ রূপ দেখে চূড়ান্ত বেসামাল হলো নির্লজ্জ্ব যুবরাজ।লেহন আর উষ্ণ স্পর্শে রাজ্যকে অস্থির করে তুলতে ব্যাস্ত হলো বেহায়া প্রেমিক পুরুষ।
সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেলে যুবরাজের পিছনের চুল খামচে ধরে নেশাক্ত চোখে মাদকতা মিশ্রিত ভাঙা ভাঙা স্বরে রাজ্য গুঙ্গিয়ে উঠে
“প্লিজ”

রাজ্যের আকুতি শুনে যুবরাজের হাতের বিচরণ অবাধ্য থেকে অবাধ্যতর হতে থাকলো। সইতে না পেরে এক পর্যায়ে শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো রাজ্য।ধীরে ধীরে রাজ্যের গায়ের পেঁচানো শাড়ি খুলে মেঝেতে ছুড়ে ফেললো যুবরাজ।
উন্মাদ যুবরাজ রাজ্যের গ্রীবাদেশে,বক্ষ ভাঁজে এবং সর্বশেষ মেদহীন উদরে মুখ ডুবালো
যুবরাজের মাসেল পিঠে নখ যুক্ত আঙ্গুলি দিয়ে সজোড়ে খামচে ধরলো রাজ্য।বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে উঁচু হলো রাজ্যের শীৎকার আর গোঙানির আওয়াজ।
নিজেকে পুরোপুরি পরিতৃপ্ত করতে রাজ্যকে চূড়ান্ত সুখের সাগরে ভাসাতে আহবান জানালো।যুবরাজের ঠোঁট আকড়ে ধরে সম্মতি জানালো রাজ্য।

ঝড় বৃষ্টির রাতে উন্মাদনা যুক্ত আদিম খেলায় মত্ত হলো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ দুজন মানব মানবী।তাদের শারীরিক কসরতে দলিত মথিত হলো বিছানার দামি মখমলি চাদর খানা।অসহনীয় অস্থিরতা ছেয়ে গেলো পুরো বাংলো জুড়ে।
দুজনের পবিত্র সুখের শীৎকার মূর্ছনা তুললো বদ্ধ কক্ষজুড়ে।
নিজের পিপাসা মিটিয়ে সমস্ত ভর রাজ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে পরিতৃপ্ত যুবরাজ রাজ্যের কপালে নাকে আর চোখে গভীর চুমু আকলো।এরপর মাদকতা মিশ্রিত আবেগী কন্ঠে বলে উঠলো
“হাও ডু ইউ ইনজয় মাই টরচার্ড লাভ?
বেকাবু রাজ্য অস্ফুট ভাঙা স্বরে উত্তর করলো

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৫

“শেইমলেস”
নিজের নির্লজ্জ্বতার পরিচয় দ্বিগুন হারে দিতে নগ্ন রাজ্যকে নিজের বুকের উপর শুইয়ে সারা মুখমন্ডলে চুমু একে শক্ত হাতে বুকের সাথে মিশিয়ে রাজ্যের ঝলমলে চুলের ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে বলে উঠলো
“লাভ ইউ সেনিওরিটা”

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৭