ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৪০

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৪০
সারিকা হোসাইন

গভীর নিস্তব্ধ হেমন্তের রাত।চৌধুরী বাড়ির প্রত্যেকেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে আরো অনেক আগেই।ঘুম নেই শুধু যুবরাজের চোখে।মনে বেঁধেছে নানান দুশ্চিন্তার পোক্ত বাসা।কোথায় গিয়ে সব কিছুর শেষ হবে কিছুই তার জানা নেই।মরুভূমিতে সামান্য পানির আশায় ছুটে বেড়ানো উন্মাদ বেদুইন বৈকি নিজেকে আর কিচ্ছুটি মনে হচ্ছে না।কাছের মানুষ গুলোকেও আর এক দন্ড বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।কখন কোন দিক থেকে কে এসে ধারালো ছুড়ির ফলা বুক বরাবর বসিয়ে দেবে সেই চিন্তায় যুবরাজ হয়েছে দিশেহারা।চারদিক থেকে নানান বিপদ ধেয়ে আসছে।মুখ ফুটে সেই বিপদের কথা কাউকেই বলা পর্যন্ত যাচ্ছে না।

যুবরাজের বাহুডোরে ঘুম কুমারী শেহজাদীর ন্যায় নিশ্চিন্তে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে রাজ্য।এই মুহূর্তে যুবরাজের বাহুই যেনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিরাপদ জায়গা মনে হচ্ছে তার কাছে। রাজ্যের ঘুমন্ত নিষ্পাপ ধবধবে ফর্সা মায়াবী মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো যুবরাজ।
“তোমাকে সর্বনাশের কারন জেনেও আমি তোমাকে আমার সাথে জড়িয়েছি।কারন একদিন না একদিন আমাকে শেষ হতেই হতো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শ্লেষত্বক হেসে নিজের বাহু থেকে রাজ্যকে সরিয়ে বালিশে মাথা ছোয়াতেই নড়েচড়ে উঠে রাজ্য।একপর্যায়ে ঘুমের ঘোর থেকে বেরিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে যুবরাজকে উদ্দেশ্য করে শুধায়
“এখনো ঘুমাও নি?কি হয়েছে তোমার বলোতো?
যুবরাজ কোনো উত্তর দেয়না কারন এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কি তা তার জানা নেই।অন্যদিকে পাশ ফিরে একটা বালিশ জড়িয়ে চোখ বুজে যুবরাজ।
“এমনি ঘুম আসছে না ,তুমি ঘুমাও।সকালে তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে রেখে আসবো।
যন্ত্রনা আর কষ্টে যুবরাজের কন্ঠনালী দিয়ে স্বর বেরুতে চায়না।তবুও নিজেকে যথেষ্ট সামলে ঝটপট কথা গুলো বলে বেড সাইড টেবিলের উপরে থাকা মৃদু আলোর ল্যাম্প টা নিভিয়ে রাজ্যের থেকে নিজের কষ্টটা লুকানোর প্রয়াস করে।

যুবরাজের এমন অদ্ভুত আচরণে বেশ মনোক্ষুণ্ণ হলো রাজ্য।ইদানিং যুবরাজ তাকে একপ্রকার এড়িয়েই চলছে ধরতে গেলে।কোনো নব দম্পতির মধ্যে এতটা দুরত্ব কি আদৌ সৃষ্টি হয়?ভেবে পায়না রাজ্য।নিজের মনের চিন্তা ভাবনা কে এক পাশে সরিয়ে রেখে যুবরাজকে সাময়িক আনন্দের ভেলায় ভাসাতে যুবরাজকে নিজের দুই উষ্ণ হাতের শক্তিতে তার দিকে ফিরায় রাজ্য।বেলকনি ডিঙিয়ে আসা চাঁদের ফকফকে আলোয় যুবরাজের মলিন মুখখানি সহজেই দৃষ্টি গত হচ্ছে।কোনো কিছু না ঘাটিয়ে নিজের লম্বা সরু আঙ্গুলি দিয়ে যুবরাজের কপাল থেকে থুতনি পর্যন্ত স্লাইড করে শিহরণ জাগাতে চায় রাজ্য।

কিন্তু মাঝ পথে বাধ সাধে যুবরাজ।এই মুহূর্তে তার এসবের মোড মোটেও নেই।যেখানে নিজের জীবনের এক সেকেন্ডের ভরসা নেই সেখানে এসব রঙ্গ তামাশা করার মানেই হয়না।ইদানিং না চাইতেও হুটহাট রাজ্যের উপর আকাশ সম রাগ আর জেদ হচ্ছে যুবরাজের।কিন্তু সেগুলো প্রকাশ না করে নিবিড়ে ধুকে ধুকে নিজেই বিষাক্ত হেমলকের মতো গিলে নিচ্ছে।
যুবরাজের বাধা দেয়া হাত সরিয়ে নাছোড় বান্দা রাজ্য নিজের আবেদনময়ী উন্মাদনায় যুবরাজকে ধরাশায়ী হতে বাধ্য করলো কিছু সময়ের ব্যাবধানেই।
একবার জলে উঠা বারুদ নিজেকে না জ্বালিয়ে যেমন ক্ষান্ত হয়না যুবরাজের হলো সেই দশা।নিজের চিন্তা চেতনা ভুলে রাজ্যের তুলতুলে নরম মাখনের মতো শরীরকে ভোগ দখলে মরিয়া হয়ে উঠলো।মুহূর্তেই দুজন মানব মানবী কঠিন আলিঙ্গনে সুখ সাগরের অথৈ জলে ডুব দিলো।

পাগলের মতো রাজ্যকে সারা শহর চষে খুঁজে যাচ্ছে শেরহাম।যুবরাজ এতো বাধা পেরিয়ে বার বার কিভাবে জয়ী হয় সেটাই শেরহামের বৃহৎ মস্তিষ্কে ঢুকছে না।নিজের বাপের উপর আর যুবরাজের উপর ক্রোধে তার মাথা ফে*টে যাবার উপক্রম।
“দুটোকেই ধরে যদি বড় পাতিলে ক*ষাতে পারতাম তাহলে যদি মনের জ্বালা একটু কমে আর কি”

শেরহামের জানা চেনা সব মানুষকেই একে একে দুনিয়া ছাড়া করেছে যুবরাজ।যাদের সহায়তায় এক তুবড়িতে সকল জিনিস নখের ডগায় এসে হাজির হতো আজ তারা কেউ নেই শেরহামের পাশে।এই ঢাকা শহর শেরহামের কাছে গোলকধাঁধার ন্যায়।যার জন্ম বেড়ে উঠা দুই ই বিদেশের মাটিতে সে কি করে এই জনমানবে পরিপূর্ণ সাপের মতো প্যাচানো শহরের রহস্য খুঁজে বের করবে?
“হা*রা*মজাদা ডক্টর রেহানকে কেনো সেদিন একবারে শেষ করলাম না?গর্তের সাপ একদম ব্ল্যাক ম্যাম্বা হয়ে ফনা তুলেছে”!

নিজের কৃত গাধামোর উপর নিজেরই ধিক্কার আসছে বার বার।গুছানো জিনিস বার বার যুবরাজ এলোমেলো করে দিয়ে চলে যাচ্চে।আর সবকিছু মুখ বুজে ওই সুবহান শেখের জন্য সহ্য করতে হচ্ছে শেরহামের।বুড়ো ভাম টা সম্পদ সম্পদ করে একেবারে মুখের ফেনা ছুটিয়ে ফেলছে।আর যুবরাজের অপরাধের হিসেব?
“সকল প্রমাণাদি হাতে কলমে রাজ্যের অফিসে দিয়ে আসলাম তার কি হলো?মেয়েটা জেনে বুঝে একটা কিলার কে বিয়ে পর্যন্ত করে ফেললো?সব প্ল্যান ভেস্তে দিলো সা*লা”

আর ভাবতে পারেনা শেরহাম।রাগে দুঃখে বার বার তার ব্রেন নিজের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে।
শেষমেশ এক জঘন্য ভাবনা ভেবে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো শেরহাম।সেই হাসিতে আশেপাশের মানুষ পর্যন্ত আড়চোখে দেখতে লাগলো শেরহাম কে।লোকটাকে নিতান্ত বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না তাদের কাছে।
হাসতে হাসতে নিজের গাড়িতে উঠে ফোন বের করে ডায়াল করলো কাঙ্খিত ব্যাক্তির নম্বর।
রিং হতেই ফোন রিসিভ করে গম্ভীর ভারী কন্ঠে বলে উঠলো।।
“হেই ব্রো ইটস এস্টন স্পিকিং”
বাঁকা হেসে আমোদ জড়ানো কণ্ঠে শেরহাম বলে উঠলো
“শুট হিম”
“এগেইন?
“ইয়েস”
কথা শেষ করে ফোনের লাইন কেটে বাঁকা হেসে গাড়ি স্টার্ট করলো শেরহাম।
“অনেক দৌঁড় করিয়েছিস, এবার একটু থামতে চাই।নিড সাম রেস্ট”

“আচ্ছা এনি আপনি যদি কখনো জানতে পারেন যে আমি একজন ক্রিমিনাল তখন আপনি কি করবেন?
সন্দিহান কন্ঠে কথাটি বলে শ্যামবর্ন মুখের অধিকারী এনির দিকে উত্তেরের আশায় নজর রাখে রেহান।রিলেশন গাঢ় হবার আগে অবশ্যই কমিটমেন্ট এর প্রয়োজন আছে।যেই ভুল যুবরাজ করেছে সেই একই ভুল সে কখনোই করবে না।কারন যুবরাজের বেঁচে ফেরার হাজারটা পথ আছে কিন্তু তার সকল পথ অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
যুবরাজের কোনো পিছুটান নেই,কোনো ভাবান্তর নেই।যুবরাজ মানুষ হিসেবে খুবই শক্ত মনের অধিকারী।
কিন্তু রেহান?

তার অসহায় বাবা মা সব সময় তার পথ চেয়ে অপেক্ষায় রয়।বারবার তাদের আশাহত করতে চায়না রেহান।এক খেলা কতবার খেলা যায়?অনেক তো হলো।এবার নাহয় খেলার সমাপ্তি টা যুবরাজই টানুক।
রেহানের এমন প্রশ্নে বিগলিত হাসে এনি।এরপর ক্যাফেটেরিয়ার ছোট টেবিলে দুই হাত ভাঁজ করে রেখে রেহানের দিকে কিছুটা ঝুঁকে এসে কৌতুকের স্বরে বলে উঠে
“আমি জানি আপনি একজন ক্রিমিনাল ডক্টর রেহান।কিন্তু এতে আমার কোনো যায় আসে না।প্রত্যেকটা মানুষের ক্রিমিনাল হবার পিছনে একটা না একটা কারণ থাকে।আর আপনার কারণটা আমি জানি”
কথা গুলো এক দমে বলে এক ভ্রু উঁচু করে মুখে বাঁকা হাসির রেখা টেনে ঘাড় কাত করে এক দৃষ্টিতে রেহানের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রইলো এনি।
এনির এমন অদ্ভুত আচরণে বেশ ঘাবড়ালো রেহান।তবুও শক্ত কন্ঠে শুধালো

“কিভাবে জানেন আমি ক্রিমিনাল?
“কারন সিরাজ আর টিটু কে কি*ল করতে আমি নিজ চোখে দেখেছি আপনাকে”
অবাক চোখে এনির পানে তাকিয়ে রয় রেহান।তার কথা বলার ভাষা এলোমেলো হয়ে কন্ঠনালীর কাছে আটকে রইলো।মেয়েটির হাস্যরসাত্মক কথা গুলো একদম বিশ্বাস হচ্ছে না রেহানের।এই টুকুন মেয়ে এতোটা ধুরন্দর কিভাবে?শ্বাস গুলো ও বুকের কাছে থেকে থেকে আটকে ধরছে।
রেহানের এমন অবস্থা দেখে খানিক মেপে হাসলো এনি।এরপর একটা পানির বোতল এর ক্যাপ খুলে রেহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো

“আরে রিল্যাক্স এতো ভয়ের কিছু নেই।ওরা অনেক দিন আগে থেকেই ওয়ান্টেড আসামি ছিলো।ডিপার্টমেন্ট ওদের প্রতি এতটাই বিরক্ত ছিলো যে দেখা মাত্র শুট এর ওর্ডার ছিলো উপর থেকে”
আমি নিজেই রাজ্যের বিয়ের দিন ওদের পিছু নিয়ে ছিলাম ।কিন্তু আপনাকে এমন ভয়ংকর ভাবে দেখবো স্বপ্নেও ভাবিনি।ইউ আর এ গ্রেট শুটার।আমি তো ওটা দেখে আরো ফিদা হয়ে গেছি আপনার উপর”
এনিকে এই মহুর্তে মোটেও ভরসা করতে পারছে না রেহান।মেয়েটা চূড়ান্ত বুদ্ধিমতী।এসব পুলিশের লোককে একদম বিশ্বাস করা যায়না।
রেহানের ঘাবড়ানো চেহারা দেখে রেহানের শীতল দুই হাত চেপে ধরে এনি বলে উঠলো
“চাইলে আরো সতেরো দিন আগেই আপনাকে এরেস্ট করতে পারতাম।সবটা দেখেও আমি ডিপার্টমেন্ট এর কাছে চেপে গিয়েছি।আপনার বোনের কাছে আমি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব যে আমি নিজে চেয়ে নিয়েছি ডক্টর রেহান।

সাদাফ চৌধুরীর মুখোমুখি বসে আছেন সুবহান শেখ।দুজনের মুখেই ক্রুর হাসি।কিন্তু কার হাসির কি কারন তা দুজনেরই অজানা।
“শেষমেশ ছেলেকে খু*নী বানিয়েই ক্ষান্ত হলে সাদাফ?
বাঁকা হেসে কথাটি বলে পায়ের উপর পা তুলে সামান্য নড়ে চড়ে বসলেন সুবহান শেখ।
সুবহান শেখের এমন কথায় হো হো শব্দ তুলে হেসে উঠল সাদাফ চৌধুরী।
এরপর চায়ের পেয়ালা হাতে তুলে নিতে নিতে সাদাফ চৌধুরী বলে উঠলেন
“আমার ছেলে তবে তোমার পেছনে এক হাত দিতে পারলো!
সাদাফ চৌধুরীর এমন কটুকপূর্ন কথায় রাগে সর্বাঙ্গে জ্বালা ধরে গেলো সুবহান শেখের।সাদাফ চৌধুরীর হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে চোখ মুখ খিচে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো

“ছেলের জীবনের জন্য মায়া লাগে না?
“আমার কথা বাদ দাও তোমার ছেলের জন্য তোমার আফসোস হয়না?
“কি বলতে চাইছো তুমি সাদাফ?
“বলতে চাইছি পাগল ছেলেটাকে এভাবে মানুষের পিছনে আর কতদিন লেলিয়ে বেড়াবে?
“তোমার ছেলের বিনাশ হলেই পাগলটাকে মুক্ত করবো।
“তার আগে যে তোমাকে আমি জমের দুয়ারে পৌঁছে দেবো মামুজান”
হঠাৎ যুবরাজের কন্ঠ পেয়ে বসা থেকে লাফিয়ে উঠেন সুবহান শেখ।যুবরাজের ক্রুর হাসি যুক্ত হিংস্র নজরে দৃষ্টি রেখে সুবহান শেখ খেঁকিয়ে উঠেন

“বেশি বার বেরো না।তোমাকে বধ করার মানুষ কিন্তু তোমার ঘরেই বাস করে।
“আমাকে বধ করার মতো কারোর জন্মই হয়নি এখনো এই দুনিয়ায় সুবহান বুড়ো শু*য়ো*র ।
অবলিলায় কথাগুলো বলে সাদাফ চৌধুরীর পাশে ধপ করে বসে পড়লো যুবরাজ।
বাপ ছেলের থেকে চূড়ান্ত অপমানিত হয়ে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে চুপচাপ বসে রইলেন সুবহান শেখ।
“দুই মিনিটের মধ্যে আমার সামনে থেকে দূর না হলে হা*ড্ডি মাং*স চ*ট*কিয়ে ক*ফিনে ভরে ছেলের কাছে গিফট হিসেবে পার্সেল করবো মামুজান”
বিগলিত হেসে সুবহান শেখকে কথাটি বলে টেবিলের উপর রাখা নাস্তার ট্রে থেকে একটা বিস্কুট নিয়ে চিবুতে চিবুতে পুনরায় রাগী স্বরে যুবরাজ শুধালো

“এতো দামি বিস্কুট এই কুকুরটাকে কে খেতে দিয়েছে পাপা?এটা ঘিয়ে ভাজা বিস্কুট।কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় কখনো শুনেছো?
আর টিকতে পারলেন না সুবহান শেখ।দাঁত দিয়ে ঠোঁট কা*ম*ড়ে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে হনহন করে দরজার কাছে এসে পায়ের গতি শ্লথ করলেন।এরপর বাজ খাই গলায় বলে উঠলেন

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৩৯

“ভুলে যেওনা যুবরাজ আমার ছেলে একজন ন*র*খাদক”
কথাটি কর্ণপাত হতেই যুবরাজ গলায় তেজ এনে গর্জে উঠা স্বরে বলে উঠলো
“তোমার ছেলেকে গিয়ে কানে কানে বলে দিও আমিও একজন র*ক্ত পি*পা*সু!

ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৪১