ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৪১
সারিকা হোসাইন
বেনজির আশফির সামনে স্যালুট ঠুকে তর তরে বাঁশের ন্যায় পেছনে হাত মুড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজ্য।আজকে তার বলার মতো কোনো ভাষা অবশিষ্ট নেই।সকল পথ নর পি*চাশ শেরহাম নামক মানুষটা রুদ্ধ করে রেখেছে।কীয়তখন হম্বিতম্বি করে হাতে থাকা স্থির চিত্র গুলো রাজ্যের সামনে থাকা টেবিলে শব্দ করে ছুড়ে মারলো বেনজির আশফী।শক্ত পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা রাজ্য হঠাৎ শব্দে কিছুটা কেঁপে উঠলো সেই সাথে অশ্রুসজল হলো চোখ জোড়া।
কিন্তু সেসবে ধ্যান দিলেন না কঠিন হৃদয়ের চীফ বেনজির।গলার সর্বোচ্চ তেজ ঢেলে হুংকার দিলেন
“এক্সপ্লেইন ইট”
রাজ্য বেনজির আশফির থেকে নজর সরিয়ে টেবিলে দৃষ্টি দিতেই যুবরাজের অস্ত্র হাতে র*ক্ত মাখা শরীর আর ক্রুর মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে থরথরিয়ে উঠলো।
মুখে অনেক কিছুই বলতে চাইলো।কিন্তু অজানা কোন শক্তি যেনো আজ তার গলা টিপে কন্ঠনালী রোধ করেছে।খাঁচায় থাকা বন্দি পাখির ন্যায় গুছানো কথা গুলো বুকের ছাতিতে এসে পাখা ঝাপ্টালো।কিন্তু কন্ঠের শক্ত দুয়ার ডিঙিয়ে বাইরে বেরুতে পারলো না।কিন্তু উত্তর হীন কাউকে ছেড়ে দেবার পাত্র বেনজির নয়।
হনহন পায়ে রাজ্যের সামনে দাঁড়িয়ে রক্ত চক্ষু নিয়ে শুধালো
“জেনে শুনে একজন কিলার কে বিয়ে করেছো?হুয়াই?
নির্বাক রাজ্য শুধু উষ্ণ স্রোতের ধারা ঝরিয়ে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো।
রাজ্যের এমন বাক শূন্য অবস্থা বেনজির আসফিকে চরম রাগান্বিত করে তুলল মুহূর্তের ব্যাবধানে।
তপ্ত শ্বাস ছেড়ে গটগট পায়ে নিজের ডেস্কের সামনে গিয়ে টেলিফোন কানে তুলে আঙ্গুল চেপে চেপে কাঙ্খিত নম্বর ডায়াল করলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“টিম আলফা ,যুবরাজ শাহিরকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কাস্টুডিতে চাই ।এলাইভ ওর ডেথ”
বেনজির আশফির এমন কথায় বিস্ফারিত নেত্রে তার দিকে তাকালো রাজ্য।সে জানে বেনজির আশফী নিষ্ঠুর।তাই বলে এতোটা?
আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না রাজ্য।হাটু গেড়ে বেনজির আশফির সামনে দুই হাত জোড় করে বলে উঠলো
“এখানে অনেক বড় চক্রান্ত চলছে চীফ।।এই চিত্র গুলো যে আপনাকে পাঠিয়েছে সে ইচ্ছে করে যুবরাজকে ফাসিয়েছে।যুবরাজকে এরেস্ট করবেন না চীফ প্লিজ।প্রয়োজন পড়লে ওকে নিয়ে আমি অন্য কোথাও চলে যাবো।
রাজ্যের অহেতুক কান্নায় বেনজির আশফির শরীরে জ্বালা ধরে গেলো।
“এই মেয়ে পাগল নাকি?এতো বড় একটা ক্রিমিনাল কে কিভাবে ছেড়ে দিতে বলছে?আর যদি ছেড়ে দেই ও দেশের মানুষের সামনে কি জবাব দেবো?
রাজ্যকে পাত্তা না দিয়ে কঠিন কন্ঠে বেনজির আশফী বলে উঠলেন
“যাও নিজের কাজে যাও।আর একটা কথা মনে রেখো নিজের হাজব্যান্ড কে বাঁচাতে গিয়ে গাদ্দার হইও না।মুভ”
আজকে পৃথিবীর সবচাইতে অসহায় নিজেকে মনে হচ্ছে রাজ্যের কাছে।এতটা কঠিন পরিস্থিতি তাকে সামাল দিতে হবে এটা সে স্বপ্নেও ভাবে নি।সে জানে যুবরাজকে নিয়ে তাকে সাফার করতে হবে।তাই বলে এতো দ্রুত?
চতুর এনি সবটাই জেনেছে রাজ্য অফিসে আসার আগেই।যুবরাজ ফেঁসে গেলে রেহানকেও ছাড় দেয়া হবে না এটা সে ভালো করেই জানে।সে জেনে বুঝে নিরপরাধ মানুষকে পুনরায় শেষ হতে মোটেও দেবে না।শেরহাম আর তার বাপের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা এখনো যে বাকি।
ওয়াশ রুমে ঢুকে নিজের প্রাইভেট ফোন বের করে রেহান এর নম্বরে সংক্ষিপ্ত এক বার্তা পাঠালো।এমন ভাবে বার্তা পাঠালো যে, কারো কাছে ধরা পড়লেও কেউ সেটা বুঝতে পারবে না।এই ট্রিক্স অবশ্য রেহান ই তাকে শিখিয়ে ছিলো।কিন্তু এতো দ্রুত এই ট্রিক্স ফলো করতে হবে এটা এনি স্বপ্নেও ভাবেনি।
নিজেদের ড্রয়িং রুমে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে শেরহাম।চোখ বুজে যুবরাজের কঠিন পরিণতি ভেবে ভেবে বেশ হাসি পাচ্ছে তার।
অবশেষে বাগে আনা গেলো তবে”
কিন্তু সেই হাসি মুহূর্তেই হিংসা আর ক্রোধে রূপ নিলো।মুহূর্তেই নিজেকে চরম বোকা মনে হলো।
“পুলিশ তোকে শাস্তি দিলে তো আমি সেই দৃশ্য উপভোগ করতে পারবো না।কিন্তু আমি যে তোর জীবন ভিক্ষা চাইবার দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে চাই”
এদিকে এস্টন কেও বলা হয়েছে শুট করতে।
মহা ক্যাচাল নিজ হাতে বাধিয়েছে সে নিজে।সুবহান শেখ জানতে পারলে চরম কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
“কি করি এখন?
দ্রুত হাতে পকেট থেকে নিজের ফোন খানা বের করে এস্টন এর নম্বর ডায়াল করলো শেরহাম।অনেক সময় রিং বেজে লাইন কেটে গেলো কিন্তু এস্টন ফোন রিসিভ করলো না।শেরহাম দমে যাবার পাত্র নয় সে একের পর এক সেই নম্বরে কল করতেই থাকলো।
বেশ কয়েক মিনিট পর ফোন ব্যাক করলো এস্টন।
“এভাবে কল করে বার বার বিরক্ত করছো কেনো?টার্গেট আমার সামনে”
টার্গেট সামনে শুনেই লাফিয়ে উঠলো শেরহাম।জিভ কেটে মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো
“হেই প্লিজ ডোন্ট শুট,ডোন্ট শুট।হোল্ড ইট”
এস্টন ভ্রু কুঁচকে সিউর হতে চাইলো
“হোল্ড?আর ইউ সিরিয়াস?
“ইয়েস হোল্ড।”আই ওয়ান্না কি*ল হিম”
আর কথা বাড়ালো না এস্টন।নিজের তাক করে রাখা রাইফেল ব্যাগে ভরে নিজের কর্মস্থলে পা বাড়ালো।
এস্টন চলে যেতেই ক্রুর হাসলো যুবরাজ।চারপাশ থেকে ধেয়ে আসা বিপদ সম্পর্কে সে অবগত হয়েছে বহু আগেই।এরকম ভাড়াটে কি*লার তার একটা লোম ও বাঁকা করতে পারবে না সে বিষয়ে সে নিশ্চিত।কিন্তু সোয়াট পুলিশ?চারপাশ থেকে ঘিরে ফেললে বাঁচার পথ কোথায়?চোরের মতো পালানোর মানুষ সে নয়।ঘটনা মোকাবেলা অবশ্যই করবে সে।কিন্তু তার আগে বাপ ছেলের খেল খ*তম করা চাই।
শেরহামের কুৎসিত চিন্তা ভাবনা মাথায় আসতেই রাগে মস্তিস্ক ফেটে যাবার উপক্রম হলো যুবরাজের।না চাইতেও রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সজোড়ে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো সাদা রঙের দেয়াল বরাবর।কঠিন কংক্রিটের দেয়াল মুহূর্তেই যুবরাজের হাত র*ক্তা*ক্ত করতে ভুললো না।
হঠাৎই নিজের ফোন টা ভোঁ ভো শব্দে কেঁপে উঠলো।স্ক্রিনে তাকিয়ে রেহানের নম্বর দেখে ভ্রু কুঁচকে ফোন কানে তুলতেই রেহান বলে উঠলো
“তোকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে জীবিত বা মৃ*ত অবস্থায় এরেস্ট করার পরোয়ানা জারি হয়েছে”
রেহানের থেকে কথাটি শুনে যুবরাজের দুই চোখ ক্রোধে ফেটে পড়লো।সব কিছুই নিমিষের ব্যাবধানে হাতের বাহিরে চলে যাচ্চে।কোনটার ই লাগাম টানা যাচ্ছে না।তাহলে তো এবার শেরহামের মুখোমুখি হতেই হয়।
রায়াফকে নিজের গোপন বাড়ির ঠিকানা দিয়ে সাদাফ শাহীর আর সামিনা কে এই বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলার আদেশ দিয়ে খট করে ফোনের লাইন কেটে দিলো যুবরাজ।কাবার্ড থেকে কালো রঙের একটা শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিজের বহু পছন্দের রিভলবার টি কোমরে গুঁজে হাতে একটা হেলমেট নিয়ে নিজের কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো যুবরাজ।
“আজকে হয় বাপ ছেলে এই দুনিয়া ছাড়বে নয়তো সে”
পার্কিং এরিয়াতে এসে নিজের বাইক বের করে স্টার্ট দিয়ে মাথায় হেলমেট পরে নিলো যুবরাজ।গন্তব্য সুবহান শেখের পাপের আস্তানা।
দুদিন ধরেই মানুষ ভাড়া করে নিজের বাড়ির সকল পাপ ধুয়ে মুছে সাফ করে একদম চকচকে করে ফেলেছেন সুবহান শেখ।ছেলের কৃত অপরাধের বিন্দু মাত্র চিহ্ন তিনি রাখতে চান না।কোনো মতে যুবরাজের বাপের আর যুবরাজের খেলা সাঙ্গ করতে পারলেই স্বস্তির শ্বাস নেয়া যাবে।নিজের হাতে পিষে পিষে মা*রবেন দুই জনকে।বহুত জ্বালিয়েছে।এতো যন্ত্রনা আর নেয়া যাচ্ছে না।এদের বাপ ছেলের চিন্তায় আজকাল মাঝে মাঝেই প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে তার।বৃদ্ধ বয়সে এতো চাপ মানা যায় নাকি?
নিজ কক্ষে শুয়ে শুয়ে নানাবিধ চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছেন সুবহান শেখ।এমন সময় ধাম করে খুলে গেলো কক্ষের দরজা।হঠাৎ বিকট শব্দে চমকে শোয়া থেকে বসে পড়লেন সুবহান শেখ।
“ক ক কে ?কে ওখানে?
কন্ঠে খানিক রস লাগিয়ে যুবরাজ বলে উঠলো
“আমি তোমার ভাগ্নে মামুজান”
যুবরাজের কন্ঠ পেতেই ধরফড়িয়ে উঠলেন সুবহান শেখ।বালিশের নিচ হাতড়ে নিজের পি*স্ত*ল খানা বের করে যুবরাজের উপর আ*ক্রমন করতে তৎপর হলেন।
কিন্তু যুবরাজের ধুর্ততার সাথে পেরে উঠলেন না।মুহূর্তেই নিজের শক্তিশালী থাবার মতো হাতের সহায়তায় কাবু করে ফেললো সুবহান শেখকে।
অসহায় সুবহান ভীত কন্ঠে ডেকে উঠলেন
“শে শে শেরহাম?
সুবহান শেখের ডাকাডাকি তে হো হো শব্দ তুলে হাসলো যুবরাজ।
“তোর পাগল ছেলে দরজা খুলেই বাইরে চলে গিয়েছে।এই জন্যই তো তোর কাছে কোনো বাধা না ডিঙিয়েই পৌঁছাতে পারলাম।
সুবহান শেখ কে কথা বলার চান্স না দিয়ে মুখে স্কচটেপ আটকে হাত পা বেঁধে কাঁধে নিয়ে নীচে নেমে এলো যুবরাজ।এরপর পার্কিং এরিয়ায় এসে সুবহান শেখের গাড়িতেই উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
গাড়ি স্টার্ট দেবার আগে যুবরাজ পিছনে মাথা ঘুরিয়ে বলে উঠলো
“আমার বাইক তোর বাড়ির গেটের সামনে রেখে যাচ্ছি।যাতে তোর পাগলা কু*ত্তা গন্ধ শুকে শুকে তোকে খুঁজতে চলে আসে।”
বিস্ফারিত নেত্রে সুবহান শেখ শুধু যুবরাজের ক্রুরতা দেখে যাচ্ছে আর উম উম শব্দ করছে।এই বুঝি তার জীবন লীলা সাঙ্গ হলো আজ!
সারা শহর তন্ন তন্ন করে যুবরাজের সন্ধান চালাচ্ছে সোয়াট আর গোয়েন্দা বিভাগের কয়েকটা টিম।দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেলের পথে কিন্তু যুবরাজের সন্ধান পেতে ব্যার্থ হচ্ছে তারা।এদিকে রাজ্যকে রাখা হয়েছে স্পেশাল নজর বন্দিতে।না তাকে বাড়িতে যেতে দেয়া হচ্ছে না কারো সাথে যোগাযোগ।তার ব্যাক্তিগত সেল ফোন খানাও হেফাজতে নেয়া হয়েছে।মাঝে মাঝে দুই একটা কল এলেও সেগুলোর লোকেশন ট্র্যাক করে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।কিন্তু সারা দিনে যুবরাজের একটা কল বা মেসেজ পর্যন্ত পাওয়া গেলো না।
ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব ৪০
রাজ্য মনে মনে সৃষ্টিকর্তা কে সমানে ডেকে যাচ্ছে আর অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।বেহায়া নেত্রও যেনো আজ বাঁধ হীন নদীর মতো হয়েছে।যুবরাজের চিন্তায় নিজেকে বদ্ধ উন্মাদ মনে হচ্ছে তার।সব কিছু ভুলে মনে প্রানে একটাই চাওয়া
“যুবরাজ যেনো বেঁ*চে থাকে”