ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব ২৫

ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব ২৫
দিশা মনি

দৃঢ়তা হোস্টেলে ফিরে জাবিরের বলা কথা গুলোই ভাবছিল বসে বসে। তার মনে কেন জানি এক বিন্দু পরিমাণ শান্তি ছিল না। দৃঢ়তার এই অবস্থার মাঝেই হঠাৎ করে ইউভান এসে তার পাশে বসে। দৃঢ়তার কাধে হাত রেখে বলে,
“কি ভাবছেন দৃঢ়তা? নিশ্চয়ই জাবির চৌধুরীর বলা কথা গুলোই!”
দৃঢ়তা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“মিথ্যা বলব না। আমি আসলেই সেই ব্যাপারে ভাবছিলাম। আমি জানি না কেন, কিন্তু ওনার বলা কথাগুলো আমায় ভীষণ ভাবাচ্ছে। উনি কেন বলে গেলেন যে,আমাকে যেভাবেই হোক আবার ওনার জীবনে ফেরাবেন? আমি তো ওনার জীবনে আর ফিরতে চাই না।”
“এত চিন্তা করার কিছু নেই। উনি বললেই তো আর কিছু হয়ে গেল না। তোমার উপর জোর করে উনি কিছু করতে পারবেন না।”

দৃঢ়তা এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এমন সময় হঠাৎ করে বাইরে থেকে কিছু হট্টগোলের আওয়াজ শুনে দৃঢ়তা রুম থেকে বের হয়। ইউভানও বের হয় তার সাথে। মিষ্টি দৃঢ়তাকে দেখেই বলে,
“দৃঢ়তা! তুমি কেন আসতে গেলে?”
দৃঢ়তা বলে,
“কিসের যেন আওয়াজ শুনলাম এখানে৷ কিছু কি হয়েছে আপু?”
“না কিছু হয়নি৷ তুমি ভেতরে যাও।”
দৃঢ়তা ভেতরে যেতে নেবে এমন সময় হঠাৎ করে জাবির ছুটে আসে। জাবিরকে দেখেই দৃঢ়তা হতবাক স্বরে বলে,
“আপনি এখানে?! আমার ঠিকানা আপনি কিভাবে পেলেন।”
জাবির দৃঢ়তার হাত ধরে বলে,
“তোমাকে আমি নিজের সাথে নিয়ে যেতে এসেছি দৃঢ়তা। চলো আমার সাথে ঢাকায় ফিরে যাবে।”
“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। ছাড়ুন আমার হাত।”
“তোমায় যেতে হবে। তুমি যেতে বাধ্য। কারণ আইনত আমি এখনো তোমার স্বামী।”
“আমি মানি না এই সম্পর্ক আর না তো আপনাকে স্বামী বলে মানি। আপনি প্লিজ আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যান।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জাবির নাছোড়বান্দা। সে বলে ওঠে,
“তুমি যদি না যাও তাহলে কিন্তু আমি..”
“কি করবেন? আপনার যা করার আপনি করে নিন।”
জাবিরের মাথায় যেন জেদ চেপে যায়। জাবির এবার দৌড়ে বেলকনির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দৃঢ়তা হতবাক স্বরে বলে ওঠে,
“এ কি করছেন আপনি?”
জাবির বলে,
“আমার সাথে যাবে না তো তুমি। এবার দেখো।”
বলেই জাবির ঐ উঁচু বেলকনি থেকে একটা লাফ দেয়। সবকিছু এত দ্রুত ঘটে যায় যে দৃঢ়তা কিছু বুঝেই উঠতে পারে না৷ কিন্তু যখন বুঝতে পারে তখন ভয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“মিস্টার জাবির!”

জাবিরকে কক্সবাজারের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু এত উপর থেকে পড়ে যাওয়ায় তার অবস্থা ভীষণ খারাপ। অনেক ব্লাড লস হয়েছে আর তার চিকিৎসার জন্যেও অনেক ব্লাডের প্রয়োজন। এছাড়া কক্সবাজারে তার চিকিৎসার জন্য উন্নত প্রযুক্তিও নেই এজন্য চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হলো। তবে চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়েও বেশ একটা লাভ হলো না। দৃঢ়তা, ইউভান সাথে রাফসানও এসেছে চট্টগ্রামে। মোহনাও খবর পেয়ে ছুটে এসেছে। মোহনার চোখে জাবিরের জন্য উৎকণ্ঠা দেখেছে দৃঢ়তা। যা থেকে বোঝা যায় মোহনার মনে হয়তো জাবিরের প্রতি একটু হলেও অনুভূতি আছে। ব্যাপারটা ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দৃঢ়তা। তার কেন জানি ব্যাপারটা একটু খারাপ লাগে। মনের কোণে একটু ঈর্ষা বোধ হয়।
এরইমধ্যে একজন ডাক্তার এসে বলেন,

“ওনার চিকিৎসার জন্য আমাদের প্রচুর A- ব্লাড গ্রুপ দরকার।”
দৃঢ়তা বলে,
“আমার ব্লাড গ্রুপ A- আমি ওনাকে ব্লাড দিব।”
“বেশ, আসুন তাহলে।”
মোহনা দৃঢ়তার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। জাবির আপনার সাথে এত কিছু করেছে তবুও আপনি…”
“এখানে ধন্যবাদের কিছু নেই। ওনাকে রক্ত দেয়াটা আমার কর্তব্য।”
বলেই একটু থমকে যায়। অতঃপর বলে,
“ওনার যায়গায় অন্য কেউ হলেও আমি দিতাম। কারণ এটা মানবতার ব্যাপার।”
দৃঢ়তা চলে যায় জাবিরকে ব্লাড দিতে। ইউভান খেয়াল করে জাবিরের কথা ভেবে দৃঢ়তা যেন একটু বেশিই চিন্তিত হয়ে গেছে। এই ব্যাপারটা তার একদম ভালো লাগে না। তবুও সে এটা ভাবে যে, দৃঢ়তা হয়তো সবটা মানবিকতার খাতিরেই করছে। এটা ভেবেই সে শান্ত হয়।

দুই দিন পর,
জাবির এখন একদম সেরে উঠেছে। জাবিরের এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে আমিনা চৌধুরী ও ললিতা চৌধুরী, জলিল চৌধুরীও ছুটে এসেছেন। তবে আনিকা চৌধুরী আসেন নি। কারণ তার নিজের শরীরও খুব একটা ভালো না এবং তিনি কিছুদিন থেকে বিছানায় পড়ে আছেন।
ললিতা চৌধুরী তো নিজের ছেলের পুরো অবস্থার দায় মোহনার উপর চাপিয়ে বললেন,
“এই মেয়েটার সাথে ঘুরতে এসেই আমার ছেলেটার আজ এই অবস্থা।”
তখন মোহনাও চুপ না থেকে বলে,
“আমাকে দোষারোপ করা বন্ধ করে সত্যটা জানুন। আমি যদিও এটা বলতে চাইনি কিন্তু এখন বলছি, আমি না আপনার ছেলের এই অবস্থার জন্য সে নিজেই দায়ী৷ সে তার প্রাক্তন স্ত্রী দৃঢ়তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য ব্লাকমেইল করতে বেলকনি থেকে ঝাপ দিয়েছে।”

দৃঢ়তার কথা শুনেই আমিনা চৌধুরী হতবাক হন। বলেন,
“তার মানে ঐ মেয়েটা এখন চট্টগ্রামে আছে।”
এরইমধ্যে একজন ডাক্তার এসে বলেন,
“মিস্টার জাবির চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু উনি বেশ পাগলামি করছেন।”
কথাটা শোনামাত্রই সবাই ছুটে যায় জাবিরের কেবিনের দিকে। কেবিনে প্রবেশ করামাত্রই সবাই দেখতে পায় জাবির নিজের ক্যানুলা খুলছে আর বলছে,
“আমি কিছু জানতে বা শুনতে চাই না। আমি আমার দৃঢ়তার কাছে যাব। আমার ওর সাথে কথা বলা দরকার।”
ললিতা চৌধুরী এগিয়ে এসে বলেন,
“শান্ত হও জাবির।”
“না,আম্মু। আমি শান্ত হবো না। তোমরা সবাই দৃঢ়তাকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছ। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে চাই না। আমি নিজেকে শেষ করে দেব।”
ললিতা চৌধুরী জাবিরকে সামলাতে বলেন,

“তুমি শান্ত হও। আমি কথা দিচ্ছি, দৃঢ়তাকে আবার তোমার জীবনে ফিরিয়ে আনবো।”
আমিনা চৌধুরী রাগী কন্ঠে ললিতা চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“এসব তুমি কি বলছ ছোট বৌমা? তুমি ঐ মেয়েটাকে আবারো ফেরাতে চাও।”
“ক্ষমা করবেন আম্মা। আমি কখনো আপনার বিরুদ্ধে যাই নি। কিন্তু এবার প্রসঙ্গ আমার ছেলের জীবন-মরণ নিয়ে। তাই আমি এবার আপনার বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য হবো।”
জাবির বলে,
“দৃঢ়তা অনেক জেদি। ও ফিরবে না। তোমরা ওকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছ।”
ললিতা চৌধুরী বলেন,
“ভুল আমরা করেছি তো? বেশ, প্রায়শ্চিত্তও আমরা করবো। প্রয়োজনে আমি গিয়ে দৃঢ়তায় পায়ে পড়ব। ওর কাছে ভিক্ষা চাইব যেন ও তোমার জীবনে ফেরে।”
“তোমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে নাকি ছোট বৌমা?”

“আমার ছেলেকে আমি মরতে দেখতে পারবো না আম্মা। আপনার অহংকার আর দম্ভ আপনি সাইডে রাখেন। আপনার এই অহংকারের জন্য এই মোহনার মতো একটা ডাইনিকে আমার ছেলের জীবনে এসেছে। এর থেকে তো দৃঢ়তাই ভালো ছিল। আমরা সত্যি হিরার মূল্য বুঝতে পারি নি। তবে এবার আর ভুল করবো না। এবার আমি ওকে ফিরিয়ে আনবোই। ”
এমন সময় জাবির বলে,
“আমি জানি ও কোথায় থাকে। সেদিন আমি চট্টগ্রামে ওদের ঠিকানাটাও জেনে নিয়েছি।”
“বেশ, আমায় ঠিকানাটা দাও। আমি নিজে গিয়েছিল দৃঢ়তাকে নিয়ে আসব।”
মোহনা দূর থেকে এসব শুনে। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। তাহলে কি এবার তার সব হারানোর পালা?
এদিকে আমিনা চৌধুরী ভাবেন,

ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব ২৪

“যাইহোক, এই দৃঢ়তা মেয়েটা অন্তত মোহনার থেকে ভালো হবে। ছোট বৌমাকে আপাতত না আটকাই। এই মোহনা তো মরলোও না এবার ওকে অন্যভাবে সরাতে হবে। তার জন্য যদি দৃঢ়তাকে ব্যবহার করা যায় তাহলেও বা মন্দ কি!”

ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব ২৬