ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব ২৭

ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব ২৭
দিশা মনি

দৃঢ়তা জাবিরের সাথেই কথা বলছিল এমন সময় ইউভান এসে বলে,
“দৃঢ়তা তুমি এই ভুল করো না। এই লোকটার পাতা ফাদে পা দিও না৷ ওনার কথা শুনো না তুমি। এক্ষুনি আমার সাথে ফিরে চলো।”
বলেই ইউভান দৃঢ়তার হাত ধরে টানতে টানতে তাকে নিয়ে যেতে থাকে। জাবিরের হাতে ক্যানুলা লাগানো থাকায় সে উঠতেও পারে না। তাই সে ললিতা চৌধুরীকে ইশারা করে কিছু করার জন্য। ললিতা চৌধুরী ইউভানের পথ আটকে ধরে বলে,

“কি করছ তুমি? এভাবে ওকে নিয়ে যাচ্ছ কেন? ও তো আমাদের সাথে যেতে রাজি হয়েছে।”
“চুপ করুন আপনি। আপনারা দৃঢ়তার সাথে যা যা অন্যায় করেছেন তারপর কোন মুখে ওকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। আপনাদের কি মিনিমাম লজ্জাটুকু নেই? দৃঢ়তাকে নরম আর বোকাসোকা পেয়ে ওকে ব্যবহার করতে চান। এতই সহজ? এটা আর হবে না। এখন আমি আছি, দৃঢ়তার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর জন্য। দৃঢ়তাকে এখন আর কোন অযৌক্তিক, ভুল সিদ্ধান্ত অন্তত আমি নিতে দেব না।”
“খুব যে বড় বড় ফটর ফটর করছ তা কিসের ভিত্তিতে? দৃঢ়তার সাথে কি সম্পর্ক তোমার?”
ইউভান এবার কিছুটা থমকে যায়। অতঃপর বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমি ওর বন্ধু।”
“একজন বন্ধুর থেকে একজন স্বামীর অধিকার বেশি। আমার ছেলে জাবির ওর স্বামী হয়। বুঝলে? ”
“স্বামী? কিসের স্বামী? যে নিজের বউ থাকতে আরেকটা মেয়ের সাথে..যাইহোক এসব কথা আমি টানতে চাই না। দৃঢ়তা আপনাদের সাথে যাবে না এটাই ফাইনাল।”
“তুমি কোন অধিকারে ওকে নিয়ে যাচ্ছ?”
“সেটা সময় হলেই জানতে পারবেন।”
বলেই ইউভান দৃঢ়তাকে নিজের সাথে নিয়ে যায়। এদিকে জাবির ফুঁসতে থাকে। মোহনা এসব ঘটনা দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলে,
“যাইহোক, সব কিছু ঠিক হলো।”

ইউভান দৃঢ়তাকে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে এসে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“তুমি এত বোকা কেন দৃঢ়তা? ঐ মহিলা আর জাবির তোমায় ম্যানুপুলেট করল আর তুমিও গলে গেলে? এতোটা বোকা কেউ কিভাবে হয়? এত সরল হলে জীবনটা কঠিন হয়ে যায়। তুমি ওনাদের আগের ব্যবহার গুলো কি ভুলে গেছ? সব জেনেও কিভাবে ওনাদের ভরসা করতে পারলে তুমি?”
দৃঢ়তা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আসলে মিস্টার জাবির অসুস্থ ছিল আর তাই…”
‘তুমি চুপ করো৷ ঐ লোকটার জন্য তোমায় এত মায়া দেখাতে হবে না। অলরেডি ওনার জন্য অনেক করেছ বিনিময়ে কি পেয়েছ অপমান আর অবজ্ঞা ছাড়া? এবার অন্তত অন্যের কথা বাদ দিয়ে শুধু নিজের কথা ভাবো তুমি। নিজের জন্য বাঁচতে শেখো।’

দৃঢ়তা কিছু বলতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করে তার মাথা ঘুরে ওঠে। সে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে নেবে এমন সময় ইউভান দৃঢ়তাকে আগলে নেয়। ভয় পেয়ে বলে,
“কি হলো দৃঢ়তা? এই দৃঢ়তা..কথা বলছ না কেন? আমি কি ওকে একটু বেশিই বলে ফেললাম। চোখ খোলো..ওপেন দা আই…”
ইউভান দৃঢ়তাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। আর কোন উপায় না পেয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তার দৃঢ়তার চেকআপ করে বলে ওঠে,
“ওনার শরীর তো ভীষণ দূর্বল৷ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে গেছে। মনে হয় উনি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়ায় করেন না আর অনেক স্ট্রেসে আছেন৷ এভাবে চললে হবে না। আপনি ওনার খেয়াল রাখুন বেশি করে। ওনার সাথে যেন রাগারাগি করা না হয় আর ওনার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও কিছু করবেন না। উনি যা বলবেন তাই রাখার চেষ্টা করবেন।”

দৃঢ়তার জ্ঞান ফিরতেই সে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে এবং তার সামনেই বসে ছিল ইউভান। দৃঢ়তা চোখ মেলে তাকাতেই ইউভান বলে ওঠে,
“তুমি ঠিক আছ তো?”
দৃঢ়তা হঠাৎ করে উঠে বসে। তার আবছা আবছা কিছু কথা মনে পড়তে থাকে। আর মনে পড়ে যায় একটা ডায়েরির কথা। দৃঢ়তা আচমকা নিজের গলায় হাত দেয়। তার গলায় একটি চেইন আছে যেটা সে ছোটবেলা থেকে সবসময় পড়ে। মনোয়ারা বেগম দৃঢ়তাকে বলেছিল এটা তার মায়ের চেইন। দৃঢ়তার মূলত কিছুদিন থেকেই নিজের ছোটবেলার কিছু স্মৃতি অস্পষ্ট ভাবে ভেসে আসছিল আর সেসব নিয়েই সে অনেক চিন্তায় ছিল।
ইউভান দৃঢ়তাকে এভাবে অন্য ভাবনায় মত্ত দেখে বলে,

“তুমি ঠিক আছ তো?”
দৃঢ়তার অস্বস্তি বাড়ে। তার মাথায় আজ অনেক প্রশ্ন। আজ হঠাৎ আরো মস্তিষ্কে আরো কিছু স্মৃতি স্পষ্ট হয়েছে। তাই সে বলে ওঠে,
“আমায় ঢাকায় নিয়ে যাবেন প্লিজ..আমি নিজের চাচির সাথে দেখা করতে চাই। ওনার থেকে আমার অনেক কিছু জানার আছে।”
“কি বলছ কি তুমি?”
“প্লিজ আমার কথা রাখুন।”
বলেই সে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। ইউভান বলে ওঠে,
“ওকে কুল। আমি তোমাকে তোমার ঢাকা নিয়ে যাব তোমার চাচির কাছে। আগে তুমি একটু সুস্থ হয়ে নাও।”

২ দিন পর,
মনোয়ারা বেগম উদাস মনে সোফায় বসে আছেন। ইদানীং তার শরীর বা মন কোনটাই ভালো নেই৷ দৃঢ়তা সেই যে হারিয়ে গেল তারপর থেকে তার আর কোন খোঁজ নেই। মান্যতার সাথেও তিনি সব সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছিন্ন করেছেন। স্বামীর সাথেও তার ঝামেলা হয় রোজকার নিয়মে। সব মিলিয়ে তিনি আজকাল বড্ড একা বোধ করছেন।
এরইমধ্যে তার অতীতের কিছু স্মৃতিও ভেসে আসে। মনে পড়ে যায় সেই কথাটা,
“আমার মেয়েকে দেখে রাখিস মনোয়ারা..আমি ওর দায়িত্ব তোর উপর দিয়ে গেলাম।”
এসব ভেবে তিনি এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে বলেন,
“দৃঢ়তার থেকে ওর জীবনের সবথেকে বড় সত্যটা আমি এতদিন লুকিয়ে রেখেছি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? ওকে তো সবটা জানানো দরকার। কিন্তু আমি তো ভরসাও পাই নি কখনো।।যদি সবটা জানার পর..ওর পারিবারিক শত্রুরা ওকে শেষ করে দেয় তখন?”
মনোয়ারা বেগমের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে তার কানে একটা কাতর স্বর ভেসে আসে,

“চাচি!”
মনোয়ারা বেগম হতবাক স্বরে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,
“দৃঢ়তা!”
দৃঢ়তা ছুট্টে এসে মনোয়ারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে। মনোয়ারা বেগম যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেন না। আজ কতদিন পর তিনি দৃঢ়তাকে সামনাসামনি দেখলেন। ইউভান দূরে দাঁড়িয়ে তাদের দুজনের মিলনের দৃশ্য দেখে খুশি হলো আর আবারো নিজের আপনজন না থাকার দুঃখ অনুভব করল। মনোয়ারা বেগম বলে উঠলেন,
“এটা কি সত্যিই তুই? তুই ফিরে এসেছিস দৃঢ়তা?”
“হ্যাঁ, চাচি। আমি ফিরে এসেছি। আজ যে তোমার থেকে অনেক প্রশ্নের উত্তর চাই।”
“কি প্রশ্ন?”
“আমার আসল পরিচয় কি চাচি? আর আমার আসল মা-বাবাই বা কে?”
মনোয়ারা বেগম হতবাক হন। দৃঢ়তার মুখে এই কথা শুনবেন তিনি আশা করেন নি। তাহলে কি দৃঢ়তা সব জেনে গেল–ভাবলেন তিনি।
দৃঢ়তা বলে উঠল,

“আমি কি আসলেই তোমার দেবরের মেয়ে? আমার আজকাল নিজের অতীতের কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। যেখানে আমার মনে হচ্ছে, ছোটবেলা থেকে যাদের ছবি আমি দেখে আসছি তারা আমার আসল মা-বাবা নয়। তাহলে আমার আসল পরিচয় কি?”
“আজ বোধহয় সময় এসেছে তোর সব সত্যটা জানার। তুই ঠিক ধরেছিস তুই আমার দেবরের মেয়ে নস। তুই আমার প্রিয় বান্ধবী অনিকার মেয়ে!”

ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব ২৬

“চাচি!”
“হ্যাঁ, অনিকা কলেজ লাইফে আমার প্রিয় বান্ধবী ছিল৷ অনিকার বিয়ে হয়েছিল একটা বড়লোক বাড়িতে। মূলত ওরা ভালোবেসেই বিয়ে করে পরিবারের অমতে। এরপর ওর সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় আর তারপর প্রায় ৭ বছর পর একদিন ও আমার সাথে যোগাযোগ করে বলে… ”

ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব ২৮