কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৩২
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
সময় পেরোলেও কান্নাকাটির দৃশ্য এখনও শেষ হয়নি। জল তখন প্রায় প্রতিটি মানুষের চোখে। সাইফুল থেকে রেহনূমা,জয়নব সবার কান্নায় ঘরের পরিবেশ বড্ড ভারি হয়ে উঠল। শুধু মাথায় বাজ পড়ল আইরিনের। বিস্ময়ে মেয়েটার চোখ সাদা হয়ে বসেছে। ঠোঁট জোড়া আলাদা হয়েছে দুই প্রান্তে এসে।
শেষমেষ চোরটা কিনা এই বাড়ির মেয়ে! যাকে ও বস্তির কীট বলে বলে দিন রাত গালাগালি করেছে, সে এখন ছোট মামার নিজের মেয়ে! আইরিনের কপালে হাত পড়ার অবস্থা। হায় হায়! আগে তো সব সময় ছোটো মামী ওর পক্ষে থাকতো, এখন তো তাও থাকবে না। এবার তাহলে ও তুশিকে বাড়ি থেকে তাড়াবে কী করে? ইয়াসিরের জীবনেই বা ও ঢুকবে কী করে!
রেহনূমা বড্ড শক্ত করে তুশিকে বুকে চেপে রেখেছেন। পাছে ছেড়ে দিলেই মেয়েটা পালিয়ে যায় যদি! অথচ এখনো মূর্তির মতো বসে রইল তুশি। তার নিষ্প্রভ চোখজোড়ায় অবিশ্বাস। শূন্য মস্তিষ্ক যেন মেনে নিতে পারছে না,আচমকা সামনে এসে দাঁড়ানো এই সত্যিটাকে। ঐ ফরসা,সুশ্রী মুখটায় কিছুক্ষণ চোখ সরু করে চেয়েছিল ইয়াসির। হঠাৎ চাউনি বদলাল। রুক্ষ থেকে নরম হলো অক্ষিকূট। তারপর চট করে দৃষ্টি মেঝের বুকে নামিয়ে আনল সে। ছোট্ট শ্বাস ফেলে লম্বা পায়ে রওনা করল ঘরে। আইরিন বিমর্ষ চোখে সেই প্রস্থান দেখল। এবার তুশির স্ট্যান্ডার্ড বদলে গেছে। বদলে গেছে ওর পরিচয়। এখন কি তাহলে ভাইয়া ওকে বউ বলে মেনে নেবে? তবে ওর কী হবে? ওর সামনে তুশিকে নিয়ে এক ঘরে থাকবে ইয়াসির! ভাবতেই মেয়েটার চোখ ঘোলা হয়ে এলো। মানস্পটে ভেসে উঠল করুণ এক দৃশ্য। হঠাৎ রাতে বালিশ- কাঁথা নিয়ে কোথাও একটা রওনা করেছে তুশি। আরিইন সামনে পড়ল আচমকা। জিজ্ঞেস করল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ কোথায় যাচ্ছ?”
তুশি ভাবসাব নিয়ে বলল,
“ আমার স্বামীর ঘরে,আজ থেকে আমি ওখানেই থাকব।”
গর্জে উঠল আইরিন,
“ না! ওই ঘরে তুমি যাবে না। ওটা আমার ঘর। আমি থাকব!”
তুশি শুনল না। ওর চোখের সামনে দিয়েই ড্যাংড্যাং করে পা বাড়াল। সহসা পিছু ছুটল আইরিন। কিন্তু শেষ রক্ষে হলো না! ইয়াসিরের ঘরে ঢুকেই ওর মুখের ওপর ধড়াম করে দোর আটকে দিলো তুশি। ঝড়ের বেগে ঢুকতে গিয়ে দরজার কাঠে কপাল ঠুকে গেল আইরিনের। এক ধাক্কায় ক হাত পেছনে ছিটকে পড়ল সে। আইরিন ছলকে ওঠে। পা হড়কে পড়তে নিলে ,শক্ত করে মুঠোয় আকড়ে ধরে সিঁড়ির হাতল। তারপর হকচকিয়ে দেখে চারিপাশ। ওহ, এটা স্বপ্ন ছিল! কিন্তু এই স্বপ্ন সত্যি হতে কতক্ষণ!
রেহণুমা বারবার তুশিকে বুকের সাথে ধরছেন,আবার চুমু খাচ্ছেন। তনিমা আঁচলে চোখ মুছে হাসলেন। বললেন,
“ ওরে ছোটো, মেয়েটাকে ছাড় এখন। আমাদেরও একটু সুযোগ দে।”
ভদ্রমহিলা অস্থির কণ্ঠে বললেন,
“ একদম ছাড়বো না আপা,জন্মের পর ওকে প্রথম বুকে নিলাম আমি। কেন ছাড়ব বলো তো? তুমি শুনেছ আপা, ও আমার মেয়ে? এতদিন যে মেয়েকে আমি যা নয় তাই তাই বলে কথা শুনিয়েছি সে নাকি আমার নিজের মেয়ে। এতটা কাকতালীয় কখনো হয় বলতো!”
সাইফুল হাসলেন। বললেন,
“ কিন্তু মেয়েটার বাবাও তো দাঁড়িয়ে আছে, মেয়েকে বুকে নেবে বলে। একটু তো সুযোগ দাও!”
“ না একদম না। আগে আমি মন ভরে ওকে আদর করব,তারপর।”
তুশি একদম সোজা হয়ে বসেছিল। নিষ্প্রাণ চোখ ঘুরিয়ে মায়ের দিকে চাইল এবার। তারপর আস্তে করে গা থেকে ছাড়িয়ে দিলো হাতদুটো। খুব আস্তে,অথচ স্পষ্ট গলায় বলল,
“ আপনি আমার মা নন।”
রেহনূমা প্রথমে বোঝেননি। কথা জড়িয়ে এলো,
“ কী বলছিস মা?”
তুশির শক্ত জবাব,
“ আমার মতো চোর-ছ্যাচর তো আপনি পেটে ধরতেই পারেন না। তাহলে আমার মা হবেন কী করে?”
রেহনূমা থমকে গেলেন। বলতে নিলেন,
“ তুশি আমি..?”
মেয়েটা শুনল না। কেমন ঝট করে ছুটে এসে তনিমার সামনে দাঁড়াল। ছটফটিয়ে বলল,
“ আমি আপনাকে মা ডাকব? আপনি আমার মা হবেন?”
রেহণূমার বুক ভেঙে এলো। ভেজা চোখ শুকিয়ে শূন্যের মতো চেয়ে রইলেন তিনি। তনিমা ভারি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। টেনেটুনে হেসে বললেন,
“ তুশি,মা এরকম একটু আধটু…”
মেয়েটার গলার জোর বাড়ল। মাঝপথেই অধৈর্য হয়ে বলল,
“ ডাকতে দেবেন কিনা বলুন। না দিলেও কোনো অসুবিধা নেই। তুশির মা ছাড়া বড় হওয়ার অভ্যাস আছে।”
ওর বাহুদুটো নরম হাতে ধরলেন তনিমা। “ বোকা মেয়ে, কেন দেবো না? তুমি তো আমারও মেয়ে!”
তুশির কণ্ঠ ভিজে এলো।
“ তাহলে একটু জড়িয়ে ধরুন। এতদিন তো অন্য ভাবে ধরেছেন, আজ নিজের মেয়ে ভেবে ধরুন। সত্যি কারের একজন মা কেমন হয়, আমি আপনাকে ধরে অনুভব করতে চাই!”
তনিমার চোখ ফের ছলছল করে উঠল। দুহাত বাড়িয়ে ওকে বুকে টেনে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে হুহু করে কেঁদে উঠল তুশি। টানা উড়ে বেড়ানো কালো মেঘ ফেটে হুট করে নেমে আসা বৃষ্টিটা যেমন হয়? তার কান্নায় ঠিক যেন সব কিছুর বাধ ভেঙে গেল। মনে হলো কত হাহাকার,কত চাপা কষ্ট লুকিয়ে এখানে। কী ভীষণ, ভয়ানক আর্তনাদ মেয়েটার কণ্ঠফুড়ে ছিটকে এলো বাইরে ,তার অন্ত হয়ত নেই। পরপরই সেখানে ছুটে এসে ভিড়ে গেল ইউশা। পেছন থেকে হাত ছড়িয়ে তুশিকে জড়িয়ে ধরল সেও। তনিমা এক হাত বাড়িয়ে ওকেও বুকে আগলে ধরলেন। পাশ থেকে মিন্তু ফ্যাচফ্যাচে গলায় বলল,
“ আমাকেও একটু জড়িয়ে ধরো না কেউ। ও তুশি আপু, আমি তো তোমার একমাত্র ছোট ভাই। আমাকে একটু আদর করবে না!”
তুশি সরে আসে। মিন্তুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়। ছেলেটা মিনমিন করে বলে,
“ আমার বোন তুমি,আমি যে কী খুশি হয়েছি শুনে। এই পেত্নীটাকে আমার একটুও পছন্দ না!”
ইউশা চোখ মুছতে মুছতে বলল,
“ সব কিছুতে তোর আমাকে টানতেই হবে তাইনা!”
রেহনূমার আহত নজর তুশির পানে। জন্মের পর শরীরী অসুস্থতায় মেয়ের মুখটাও ভালো করে দেখতে পাননি তিনি। জানতেনও না ও কেমন দেখতে হয়েছে। অথচ মেয়েটা হারিয়ে গেল,বুকে নেয়ার আগেই একটা করুণ দুরুত্ব নেমে এলো বাতাসে। কত কান্না,কত আহাজারি,কত প্রার্থনার পর আজ মেয়েটাকে কাছে পেলেন তিনি,অথচ ঠিক করে ছুঁতেও পারলেন না! মেয়েটা তাকে মা ডাকল না? না না,তা কী করে হয়? রেহণূমা
এগোতে গেলেই,হাতটা চেপে ধরলেন সাইফুল। মাথা নেড়ে বললেন,
“ এখন যেও না। অভিমান করে আছে। পড়ে গেলে দেখবে নিজেই তোমার কাছে আসবে।”
চুপচাপ মাথা নুইয়ে নিলেন রমণী। সাইফুল মেয়ের কাছে এসে দাঁড়ালেন। মাথায় হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুরে চাইল তুশি। সাইফুল আর্দ্র স্বরে বললেন,
“ বাবাকে একবার জড়িয়ে ধরবি না? নাকি আবার উপরেও রাগ করে আছিস?”
ঠোঁট দুটো ভেঙে এলো তুশির। ঝট করে হামলে পড়লো বাবার বুকে। সাইফুলের চোখ জল। অথচ আনন্দে খলবল করে বললেন,
“ ভাইজান, ভাইজান দেখেছেন আপনি, আপনাকে কদিন আগে বাবা ডাকা মেয়েটা এখন আমার মেয়ে হয়ে গেছে। এখন কী করবেন?”
ঠোঁট টেনে কাষ্ঠ হাসলেন শওকত। ঘাড় ঘুরিয়ে চোখের জলটা মুছে নিলেন আস্তে। বিষণ্ণ চিত্তে ভাবলেন,
“ মেয়ে! আমি কোন মুখে এখন ওর থেকে বাবা ডাক শুনব রে সাইফুল। ওই যোগ্যতা তো আজকে হারিয়ে বসেছি।”
জয়নব বসে থেকেই দুটো হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
“ তুশি, আয় দিদুন। এতদিন কী করেছি, কী বলেছি সব ভুলে দিদুনের কাছে আয় না একবার! “
বাবা ছাড়লেন ওকে। তুশি চোখের জল মুছে এসে দাদির পায়ের কাছে বসল। কোলে মাথা রাখতেই ঘাড় নামিয়ে এনে কপালে চুমু খেলেন জয়নব। তুশি হাসল, তৃপ্তির বুক ভরা হাসি। এই তো কয়েক ঘন্টা আগেও ও হাহাকার করছিল একটা পরিবারের শূন্যতায়! আর এখন,এখন ওর কাছে সব আছে! সব!
মেয়েটার সিক্ত চোখ আচমকা দোতলায় পড়ল। তুরন্ত বেগে সরে গেল একটা পুরুষালি শরীর । তাও ইউনিফর্মের অল্প একটু অংশ স্পষ্ট দেখেছে তুশি। অমনি সোজা হয়ে বসল মেয়েটা। সচেতন চোখে দেখল চারিপাশ। ইয়াসির কোথাও নেই। এর মানে কি বিটকেলটাই ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছিল এতক্ষন?
সব কিছু মিটে যাওয়ার পর এবার কেক কাটার পালা। দুইপাশে দুই মেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়েছেন সাইফুল। গোল টেবিলের কাছটায় ভিড় করেছে সকলে। একটু আগে শোকে-দুঃখে নিঙড়ে আসা ঘর এখন মেতে উঠেছে উচ্ছ্বাসে। শুধু ইউশার চোখ চারপাশে ঘুরছিল। অয়ন ভাই কোথায়? একটু আগেই না দেখল এখানে! ওনাকে ছাড়া ও কেক কাটবে কী করে?
মেয়েটা কোনোরকম ফোন টিপেটুপে একটা ম্যাসেজ পাঠাল,
“ অয়ন ভাই তুমি কোথায়? কেক কাটব তো!”
সে মানুষ একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। পেছনে মেইন রোডে যাতায়াত করা গাড়ির প্যাপু শব্দেও ম্যাসেজ টোন কানে এলো। ফোন বের করে পড়ল অয়ন। লিখে পাঠাল, “ দেরি হবে,কেক কেটে ফ্যাল!”
দোকানি তখন শুধালেন,
“ কয় পিস দিমু ভাই?”
“ বিশ পিস দিন।”
কিন্তু ম্যাসেজ দেখে ইউশার সব আনন্দ ফুস করে উবে গেল বাতাসে। ও কেক কাটবে আর অয়ন ভাই পাশে থাকবেন না? কী নিষ্ঠুরের মতো বলে দিল,
কেটে ফ্যাল!
সাইফুল তাগিদ দিলেন,
“ কী হলো, ধর ছুরিটা?”
তুশি- ইউশা একে অন্যের দিকে চাইল। হাসল দুজনেই। ইউশার জন্যে বরাদ্দ কেকটা কাটতেই হাততালির বৃষ্টি হলো ঘরে। অনেকগুলো আওয়াজ একইসাথে শোনাল,
“ হ্যাপি বার্থডে ইউশা! হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!”
আইরিন তালি বাজাল অনীহায়। হ্যাপি বার্থডে গান গাওয়ার জন্যে তার ঠোঁট নড়ছে না। চিন্তায় মেয়েটার মাথা ঘুরছে শুধু। তক্ষুনি পাশে এসে দাঁড়াল ইয়াসির। অমনি সে মেরুদণ্ড সোজা করে ফেলল। ইয়াসির এক পল তাকাতেই,চোখ সরাল ঝটপট। এরপর, তুশির কেক কাটার পালা।
রেহণূমার বানানো দ্বিতীয় কেকের দিকে ছুরিটা এগোলেন সাইফুল। মেয়েটা সহসা হাত চেপে ধরে বলল,
“ আমি এই কেক কাটব না?”
“ কেন? কী হয়েছে?”
রেহনূমা প্রহৃত শ্বাস ফেললেন। মুখ কালো করে বললেন,
“ বুঝেছি,আমি বানিয়েছি বলে কাটবি না। তাইত?”
“ হ্যাঁ। এই কেক আপনার মেয়ের জন্য,আমি আপনার মেয়ে নই।”
রেহনূমা কিছু বলতে গেলে ইশারায় থামালেন সাইফুল। জয়নব বললেন,
“ কিন্তু বাড়িতে তো আর কেক নেই তুশি।”
মেয়েটা উদ্বেগ নিয়ে বলল,
“ না,আছে তো।”
সাইফুলের কণ্ঠে বিস্ময়,
“ আছে। কই? কে আনল?”
তুশি অস্থির চোখে গাল চুলকাল। দৃষ্টির কোণ তুলে দেখল ইয়াসিরের বুক অবধি। কী ঘাড়ত্যাড়া লোক রে ভাই! নিজে কেক এনেছে,অথচ জিভ নেড়ে বলতে পারছে না। তুশি কি লজ্জার মাথা খেয়ে এসব বলতে পারে?
তক্ষুনি কেক নিয়ে ছুটে এলো আসমা।
টেবিলে রাখতেই অবাক হলেন সাইফুল।
“ এটা আবার কে আনল?”
তনিমা মিটিমিটি হেসে বললেন,
“ সার্থ এনেছে।”
জয়নব চোখ কপালে তুলে বললেন,
“ দাদুভাই,তুমি তুশির জন্যে কেক এনেছ? কখন আনলে? এর মানে ওর জন্মদিনের কথা তুমি জানতে আগে থেকে?”
এতগুলো দৃষ্টি একইসাথে মুখের ওপর পড়াতেও,ইয়াসির অপ্রস্তুত হলো না। খুব পরিষ্কার জবাব দিলো,
“ ভর্তির সময় ডকুমেন্টস জমা করার দিন শুনেছিলাম ওর কাছে। ছোটো মা তো ওর জন্যে কেক বানাতো না,তাই বাইরে থেকে এনেছি। ভেবেছিলাম ও যখন এ বাড়িতেই থাকে তখন, এটুকু দায়িত্ব আমার পালন করা উচিত।”
জয়নব বললেন,
“ বাহ কত দায়িত্বজ্ঞান তোমার! মুগ্ধ হই তোমাকে দেখে। এখন শুধু কেক থেকে দায়িত্বটা সংসার অবধি গড়ালেই হলো!”
শেষটুকু বৃদ্ধা বিড়বিড় করে বললেন। শুনল না কেউ। সাইফুল মাথা নেড়ে বললেন,
“ ভালো ভালো। তুশি তাহলে এটাই কাটুক!”
তুশি কেকে পোচ বসাতে গিয়েও পাশ ফিরে চাইল। শওকতকে বলল,
“ বাবা, আপনিও আসুন না! দুই বাবাকে সাথে নিয়ে কাটি।”
ভদ্রলোক নড়ে উঠলেন। অবাক হলেন সাথে। কিচ্ছুটি বুঝতে না দিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে এসে দাড়ালেন ত্রস্ত। ওই একটা ছুরিতে এখন মোট চারটে হাত পড়ল। ফের তালি বাজাল সবাই। আইরিন ভেংচি কেটে মুখ ঘোরাল অন্যদিকে। কানে এলো ইয়াসিরের কথা, বলল,
“ তালি দিচ্ছো না কেন?”
বিভ্রান্ত চোখে ফিরল মেয়েটা।
“ জি?”
“ দাও।”
ধমকাল সে। হকচকিয়ে সাথে সাথে তালি বাজাল আইরিন।
এদিকে সকলের হাসিহাসি মুখগুলো এক ক্লিকে ক্যামেরায় বন্দি করল মিন্তু।
সাথে গলা ফাটিয়ে চ্যাঁচাল,
“ হ্যাপি বার্থডে তুশিপু। হ্যাপি বার্থডে!”
রেহণুমা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কী কপাল! মেয়ের জন্মদিনে একটু পাশেও দাঁড়ানোর উপায় নেই। তক্ষুনি কাঁধে হাত রাখলেন তনিমা। বললেন,
“ সব ঠিক হয়ে যাবে ছোটো, কষ্ট পাস না!”
তুশির মনে আচমকা এক সাহসী ইচ্ছের উদয় ঘটে গেছে। ইয়াসিরকে একটু কেক খাওয়াতে পারতো যদি! কিন্তু কী করে খাওয়াবে? কাছে গেলে যদি ধমকে অজ্ঞান করে দেয়? মেয়েটা ঠোঁট কামড়ে ভাবতে বসে। চট করে একটা বুদ্ধির আলো জ্বলে ওঠে মাথায়। এক পিস কেক নিয়েই দুরন্ত পায়ে জয়নবের কাছে এসে বলে,
“ দিদুন হাঁ করো।”
জয়নব বসে ছিলেন চেয়ারে। পায়ের ব্যথায় বেশি নড়তে পারেন না তিনি। বললেন,
“ কিন্তু আমার যে মিষ্টি খাওয়া বারণ!”
“ আরে একটু খেলে কিছু হয় না। নাও!”
বৃদ্ধা খেলেন। জয়নবের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল ইয়াসির। তুশি ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,
“ আজকে আমি সবাইকে নিজের হাতে কেক খাওয়াব দিদুন।”
“ বেশ তো, খাওয়াও। “
তুশি এই প্রশ্রয়ের আশাতেই ছিল। ফড়িং এর মতো এক লাফে গিয়ে দাঁড়াল ইয়াসিরের সামনে৷ মুখের কাছে কেক ধরতেই, ছেলেটা ভড়কে গেল একটু। নিজের থেকে অর্ধেক সাইজের মেয়েটাকে দেখল ভ্রু কুঁচকে। তুশি ভেতর ভেতর ভয় পাচ্ছে। তাও সামনে থেকে নড়ল না। আইরিনের গা জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেল। খিটমিট করল মৃদূ স্বরে,
“ ভাইয়া মিষ্টি খান না। জানো না তুমি?!
তুশি কিছু বলল না। ভান করল যেন শুনতেই পায়নি। দু চোখ ছাপানো অলীক আশা নিয়ে কেকটা ইয়াসিরের সামনেই ধরে রইল শুধু। জয়নব বললেন,
“ কী হলো দাদুভাই, খাও!”
ইয়াসির তুশির হাত থেকে কেক খেলো না। দু আঙুল দিয়ে ওর কব্জি ধরে,কেক নিজের হাতে নিলো। সেটুকুই পুরলো মুখে। এতেই তুশির শান্তি, খেয়েছে তো! জয়নব বললেন,
“ একটু দোয়া তো করে দাও মেয়েটাকে।”
তুশি নিষ্পলক চেয়ে। কত শত প্রত্যাশা সেথায়। কিন্তু একটাবারের জন্যেও চোখে চোখ ইয়াসির রাখল না। অস্থির চিত্তে হাতটা তুলে মাথার একপাশে রাখল। এদিক ওদিক চেয়ে ছোটো করে বলল,
“ বেস্ট অফ লাক!”
তারপর সবেগে উঠে গেল ওপরে। শুধু চলে যাওয়া শরীরটার পানে তুশি হাঁ করে রইল। বিটকেলটা ওর মাথায় হাত রেখেছে,
এটুকু যে ভীষণ অনাকাঙ্ক্ষিত! এরপর আস্তে ধীরে আত্মীয়দের অনেকে তুশিকে কেক খাওয়ালেন। যখনই দোয়া করতে ছুঁতে যাবেন, তুশি ত্রস্ত মাথার অন্যপাশ ঘুরিয়ে দেয়। বলে,
“ এদিকে হাত বোলান। এপাশে ধরা যাবে না।”
আয়োজনের ঐ পুরোটা সময় ইয়াসিরের স্পর্শে তুশি কারো হাত পড়তে দিলো না। তবে হাসল,কথা বলল,ছুটল ভাইবোনের সাথে। দুরন্ত মেয়েটাকে হাসনা দুচোখ ভরে দেখলেন। তুশি এমনিতেই চঞ্চল। ওর হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখলে কেউ বুঝবে না,ভেতরে কী লুকিয়ে আছে! কিন্তু আজ,ওর এই চপলতা ভিন্ন পুরোপুরি। আজ তো মেয়েটা নিজের পরিচয় পেয়েছে,পেয়েছে পরিবার,বাড়ি সব কিছু। হাসনার বুকের ভেতর শঙ্কার ধ্বনি আওয়াজ তোলে। এই বাড়ির লোকগুলো এখন কী করবেন ওনার সাথে? যাই করুক, তুশি কি ওনাকে ভুল বুঝেছে? খারাপ,লোভি ভাবছে তাকে? এখন মেয়েটা দূর সরে যাবে না তো! দাদি বলে কি আর ডাকবে না ওনাকে? ঠিক এই ভয়েই হাসনা বারবার চেয়েও তুশিকে সত্যিটা বলতে পারেননি। মেয়েটা যখন দুহাতে জড়িয়ে ধরে দাদি বলে ডাকে হাসনার সব শূন্যতা ধুয়েমুছে যায়। এখন যদি তাও ফুরিয়ে আসে,কী নিয়ে বাঁচবেন তিনি!
ঠিক তক্ষুনি কাছে এসে বসলেন রেহণুমা। কাঁধে হাত রাখতেই ভেজা চোখ তুলে চাইলেন তিনি। অপরাধে চুইয়ে আসা মন নিয়ে ব্যস্ত গলায় বললেন,
“ আমারে মাফ কইর…”
রেহনূমা বলতে দিলেন না। মাঝপথেই মৃদূ হেসে বললেন,
“ আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি। আপনার ওপর আমার কোনো রাগ নেই।”
হাসনার চোখে অবিশ্বাস,
“ সত্য?”
“ হ্যাঁ। প্রথমে অবশ্য রাগ হলেও,আমার মেয়েটাকে তো আপনিই বাঁচিয়েছিলেন। আপনি না থাকলে আমি ওকে পেতাম? ও তো সেদিনই ওই বানের জলে ভেসে যেত। আপনি যেভাবে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওকে বাঁচালেন,আদর যত্ন দিয়ে মানুষ করলেন তার কাছে আপনার বাকিসব অন্যায় ফিকে। আমি আপনার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব,খালা।”
হাসনা বিস্মিত,স্তম্ভিত। সাইফিল বললেন,
“ ঠিক তাই। আমারও আপনার ওপর কোনো অভিযোগ নেই।”
কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে ডুকরে উঠলেন বৃদ্ধা। তুশি সব ছেড়ে অমনি কাছে ছুটে এলো। ঠিক আগের মতো দাদিকে জড়িয়ে ধরল দুহাতে। উদ্বীগ্ন হয়ে বলল,
“ কাঁদছো কেন দাদি? ভেবেছ, সব পেয়ে আমি তোমার থেকে দূরে চলে যাব? বোকা, এটা কখনো হয়? তুমিতো আমার মা,তুমিই আমার বাবা দাদি। তোমার জন্যে আমি কখনো কোনো আদরের অভাব বুঝতে পারিনি। জন্ম দিলেই কি মা হওয়া যায় বলো! মায়েদের মন উদার হতে হয়। ভালো হতে হয়। অন্যের সন্তান বলে পায়ে ঠেলার পর,নিজের সন্তান জেনেই বুকে টেনে নেয়াকে মাতৃত্ব বলে না।
তুমি তো সবার থেকে আলাদা দাদি। যে অন্যের বাচ্চাকে বাঁচায়,বুকে নিয়ে মানুষ করে। তুশি তোমাকে তোমার ঋণ শোধের জন্যে নয়, তুশি তোমাকে এমনিই ভালোবাসে দাদি। মায়ের মতো ভালোবাসে!” চেহারার আলো নিভে
গেল রেহনূমার। মাঝের কয়েক লাইন যে তার উদ্দেশ্যে বলা,তিনি জানেন। কিন্তু উত্তর দেয়ার মতো মুখ তার নেই। শুধু নীরস চোখে মেয়েটার ফরসা চেহারায় চেয়ে রইলেন তিনি।
হাসনা কথা বলতে পারলেন না,শুধু কান্নার গতি বাড়ল। ধড়ফড়িয়ে মেয়েটাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে রাখলেন তারপর। তনিমা হেসে বললেন,
“ খালা, আপনার কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যাওয়া চলবে না। আমাদের সবার সাথে কিছু দিন থাকতে হবে। এই আনন্দ,এই উৎসব তো আমাদের একার নয়। আপনারও।”
হাসনা শাড়িতে চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন,
“ কিন্তু আমার যে কামে যাইতে হইব!”
“ এসব কাজ টাজ বাদ। পরে যাওয়া যাবে। আপাতত সবাই মিলে আনন্দ করি। আমাদের বাড়ির মেয়ে ফেরত এসছে। আর সেটা আপনার জন্যে। প্লিজ না করবেন না!”
জয়নব বলার পরে হাসনা আর মানা করতে পারলেন না। মাথা নেড়ে বললেন,
“ আইচ্ছা!”
এখন রাত প্রায় অনেক!
ইউশা শাডি- চুড়ি কিচ্ছু খোলেনি। অমন সাজগোজ নিয়েই গোটা ঘর অস্থির চিত্তে পায়চারি শুরু করল। তুশি খাটে বসে বসে দেখছিল ওকে। ইউশা হাঁটলেই ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছে নূপুরে,হাতের চুড়িতে। মেয়েটাকে শাড়িতে কী অপরূপ লাগছে দ্যাখো! সবথেকে সুন্দর ইউশার ঠোঁটের পাশের তিলটা। তুশিরও একইজায়গায় তিল! কিন্তু ইউশাকেই যেন বেশি মানায় এতে। ও মুচকি হাসল। এতদিন জেনে আসা ওর সবথেকে ভালো বন্ধু,আজ আচমকা ওর জমজ বোন হয়ে গেছে! একই দিনে,একই সময়ে মায়ের পেটে জন্ম ওদের? ভাবতে গিয়েই একটা কথা কাঁটার মতো তুশির শরীরে ফুটে উঠল,
“ এসব চোর ছ্যাচর আমি পেটে ধরব কেন?”
কিন্তু মুখের হাসি কমতে দিলো না মেয়েটা। ঢোক গিলে উবে দিলো সব। বরং হাসল আরো বেশি। কণ্ঠ চটপটে করে বলল,
“ হুয়াই ইউ ওকিং( walking) ইউশা?”
এভাবে ওক না করে সিট মি!”
মেয়েটা থামল না । অমন হাঁটতে হাঁটতেই চ সূচক শব্দ তুলল জিভে।
“ আহা তুশি,ওক না ওটা ওয়াক। আর সিট মি না,সিট হিয়্যার! কতবার বলেছি যতদিন না পুরোপুরি শিখে যাচ্ছ,এমন আধভাঙা ইংরেজি বলবে না।”
“ ওকে ওকে। আসলে অনেকদিনের অভ্যেস তো। মুখ ফস্কে বেরিয়ে যায়। কিন্তু তুমি এরকম হাঁটছো কেন?”
ইউশা দাঁড়াল। কোমরে হাত দিয়ে বলল,
“ কী করব তাহলে, অয়ন ভাইয়ের কাণ্ডজ্ঞান দেখলে? আমি সেই সন্ধ্যে থেকে এত ভারি শাড়ি চুরি পরে বসে আছি ওনার সাথে ছবি তুলব বলে। আর উনি কী না লাপাত্তা। কেকটা অবধি কাটল না আমার সাথে!”
তুশি মাথা ঝাঁকায়,
“ তাই তো! এ তো ভারি অন্যায়। আচ্ছা, ওনারা দুভাই-ই এমন রসকষহীন কেন বলোতো? মেয়েদের মন বোঝে না।”
“ হুউউউ, আমিও সেটাই ভাবছি। বড়ো মাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে।” ওদের কথার মাঝেই ডোরবেল বাজল। সবেগে চোখের তারা ঝলকে উঠল ইউশার। এখন তো আর বাড়ির বাইরে অয়ন ছাড়া কেউ নেই। তুশি ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“ ওই এসছেন, তোমার অয়ন ভাই।”
“ যাই হ্যাঁ!”
বলেই দুরন্ত পায়ে ছুট লাগায় মেয়েটা। তুশি মুচকি হাসল। বুক ফুলিয়ে শ্বাস ফেলার মাঝেই, মনে পড়ল ইয়াসিরের কথা। ফের মাথার ওইপাশটা আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো সে। তারপর ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে স্লিপার পায়ে পরল। ইয়াসিরকে দেখার এক অমোঘ তৃষ্ণায় ভেতরটা ছটফট করে উঠেছে। চপল চিত্তে বের হলো তুশি। ইয়াসিরের ঘরে একটু উঁকি মেরেই আবার চলে আসবে। অথচ বাইরে এসেই থামল পা দুটো। ইয়াসির সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছে। ওপরে তো ছাদ। তুশি ভ্রু কুঁচকায়। উনি ছাদে যাচ্ছেন,এত রাতে ছাদে কেউ যায়! মেয়েটা ঘরে ফিরতে নিয়েও থামল।
এই মাঝরাতে ইয়াসিরের ছাদে যাওয়ার কারণ না জানলে ঘুম হবে না আজ। তড়িৎ পা টিপে টিপে ওর পিছু নিলো তুশি।
ইউশা দরজা খোলার আগেই আসমা খুলে দিয়েছে। ব্যাপারটা ওর পছন্দ হলো না। ভাবল ও দরজা খুলবে। সাথে সাথে চারটে চোখ মিলবে একে-অন্যের সাথে। অয়ন ভাই তাকাবেন। তখন সবার মাঝে ওকে, ওর এই সাজকে ভালো করে দেখতে পারেননি নিশ্চয়ই! এখন না হয় দেখবেন মন ভরে। ইউশা তখন গাল ফুলিয়ে বলবে,এখন আসার সময় হলো আপনার?
ধ্যাত!
বাইরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। অল্পস্বল্প ভিজেছে অয়ন। হাত দিয়ে ট্রিম করা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ভেতরে ঢুকল সে। লক ঘুরিয়ে ফিরতেই দেখল, অদূরে মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে ইউশা। সাথে সাথে হেসে ডাকল ও,
“ এদিকে আয়।!
মেয়েটা অভিমানের বরফে এই ডাক যেন এক টুকরো তাপ। সব গলে জল হলো নিমিষে। দৌড়ে এলো পাখির মতো। দুগালে টইটম্বুর হাসি নিয়ে বলল,
“ হ্যাঁ?”
অয়ন পেছন থেকে হাতটা সামনে আনল। এক থোকা লাল গোলাপ টসটস করছে মুঠোতে। বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“ ধর।”
ইউশার বুক ধ্বক করে ওঠে। ফুলগুলো দেখে অবাক হওয়ার সাথে,ভীষণ উল্লাসে চুইয়ে আসে মন। সেই তাল,সেই ছন্দে যাতে প্রেমিকের সামনে এলেই মেয়েলি হৃদয়ে সেতার বেজে ওঠে। কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে ফুলগুলো ধরল মেয়েটা। আস্তেধীরে নিয়ে রাখল বুকের কাছে। এই ফুল অয়ন ভাই ওর জন্যে এনেছেন? ওকে ভালোবেসে এনেছেন। ইউশার দু চোখের তৃপ্তি,ঠোঁটের হাসি,আর কপোলের ফেঁপে ওঠা লজ্জায় অয়ন চাইল না বোধ হয়। বলল আচমকা,
“ যা,দিয়ে আয়।”
চকিতে মাথা তুলল সে। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ কাকে দিয়ে আসব?”
অয়ন জ্বিভে ঠোঁট ভেজাল। কণ্ঠ চেপে বলল,
“ তুশিকে।”
ইউশা থমকায়। এক পল বিভ্রান্ত চোখে দেখে ফুলের দিকে। মাথায় প্রশ্ন, অথচ জিজ্ঞেস করতে কণ্ঠ জড়িয়ে এলো,
“ তুশি,ততুশশিককে কেন দেবো,অয়ন ভাই?”
অয়ন চারপাশটা সতর্ক চোখে দেখল। কেউ নেই। কপাল কুঁচকে বলে,
“ তুই কি বোকা, বড়ো হোসনি? একটা ছেলে একটা মেয়েকে গোলাপ কখন দেয়,এখনো বুঝিস না?”
ইউশার বুকের ভেতর দুম করে লাগল কিছু একটা। আতঙ্ক,উদ্বেগ আর চিন্তায় মুখের রক্ত সরে গেল। এখন কী শুনবে ও! কী বলতে চাইছেন অয়ন ভাই!
ছেলেটা অধৈর্য বেশ,
“ কী হলো, যা।”
তারপর কেমন করে হাসল অয়ন। বলল,
“ বলিস, এটা ওর জন্মদিনের উপহার।”
ইউশার এসব কানে ঢুকল না। শূন্য দৃষ্টিতে অয়নের ওই চমৎকার হাসি দেখল সে। এই হাসি যে অন্যকিছুর ইঙ্গিত। তবে কী!
ভাবতেই মেয়েটার নিঃশ্বাস ফুরিয়ে এল। ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠে শুধাল,
“ তুমি কি,তুমি কি তুশিকে পছন্দ করো?”
অয়নের মাঝে বিব্রত হওয়ার চিহ্ন নেই। বরং ঘাড় ডলতে ডলতে হাসল সে। বলল,
“ হুঁ।”
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৩১
ইউশা কিংকর্তব্যবিমুঢ়! গগনবিদারী শব্দে পৃথিবী দুলে উঠল তার! মাথার ওপর খণ্ডখণ্ড হয়ে ভাঙল বিশাল আকাশ। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। প্রেম শেখানো সেই নির্মম ভুবনের সাথে পাল্লা দিয়ে হৃদপিণ্ডটাও ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠল যেন। অয়ন ভাই তুশিকে পছন্দ করে? তাহলে ও! অয়ন ভাইয়ের জীবনে ও কে?