কালকুঠুরি পর্ব ১২
sumona khatun mollika
মাহা পড়া শেষ করে কেবল মাত্র সামিরের খাতাটা খুলল,,, স্পাইরাল বাইন্ডিং করা খাতা ওপরে নাম লেখা,, ” সামির বাঙ্গি”
মাহা লেখাটা দেখে বেশ বিরক্ত হলো। যেহেতু সে কোনোকিছু উল্টোপাল্টা দেখতে পারেনা। বিনা কারণে সামিরের নামের পিছের বাঙ্গি লেখাটা কেটে লিখে দিল, সিকান্দার। মোমবাতির আলোয় খাতাটা খুলে সামিরের লেখাগুলোর সামনে চিরকুট টা রেখে চোখ বুলাতে আরম্ভ করল।
খাতাটা খুলে দেখতেই অবাক হয়ে গেল! বিশ্বাস হয়না এটা এলাকা খ্যাত ফুটো মস্তানের খাতা।
হাতের লেখা দেখে তব্দা খেতে হয়। মাহার চেয়ে একধাপ এগিয়ে সুন্দর সামিরের হাতের লেখা। মাহা একপ্রকার ভুলেই গেল কাগজ মেলানোর কথা।
কি কি সব লেখা পড়ার চেষ্টা করেও লাভ হলোনা৷ তাছাড়া মাহা আরেকটা বিষয় খেযাল করল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
খাতার মাঝে মাঝে ছবি আঁকা পেন্সিল স্কেচ। অবাক হতে হয়,, সামির সিকান্দার এতো সুন্দর আর্ট করতে পারে, কিছু পাতা ঘাটতেই মাহা একটা চোখের আর্ট দেখে হা হয়ে গেল,,
দুইচোখের অসম্ভব রকম সুন্দর স্কেচ,, প্রথমটার নিচে লেখা Nacl,, পরেরটায় , ডানপাশে চোখের নিচে ছোট কাটা দাগ, চিকন ভুরু,, কপালে আবার ছোট্ট একটা টিপও আঁকিয়েছে।
নিচে ইংরেজিতে ডিজাইন করে লিখেছে,,
” বেঈমান, স্বার্থপর “”
মাহা ভাবলো হতে পারে এটা তার কোনো প্রাক্তনেরছবি। সে বড্ড মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখছিল ঠিক তখনি কেও তার পেছন থেকে কানে ফিসফিস করে বলর,,
” বাঙ্গির নাতনির চোখদুটা সুন্দর না? ”
মাহা চিৎকার করে ওঠার আগেই সামির তার মুখ চেপে ধরল। তারপর আবার আওয়াজ নিচু করে বলল,,
– আরে চিৎকার কোরোনা, আমি তোমার ক্ষতি করতে আসিনি।
মাহা ইশারা করে হাত সরাতে বলল। সামির তার সামনা সামনি বসতে প্রথমবারের মতো মাহার চেহারা দেকতে পেল। তাও আবছা। চাঁদের আলো এসে পরেছে মাহার মুখে। পাশে জ্বলা মোমবাতি নিভে গেছে।
মাহা হুড়মুড় করে ওড়না দিয়ে চেহারা ঢেকে ফেলল,,, পাশে থেকে ফুলদানি হাতে নিয়ে সামনে ধরে বলল,,
-আপনি এখানে কেন এসেছেন? কিভাবে এসেছেন!
সামির বিছানায় আধ শোয়া হয়ে বলল,,
-চোরের বাড়িতে ডাকাতি করতে এসেছি।
– মানে?
-মানেটা একদম সোজা,, তুমি নকল পরিচয় দিয়ে আমার খাতা হাইজ্যাক করেছ,,
– সামান্য একটা খাতাইতো,,, তারজন্য আপনি যখন তখন বাড়িতে চলে আসবেন!
-সামান্য খাতা মানে,, কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের ক্যাপ্টেইন এর খাতা ওটা। তুমি শিক্ষা হাইজ্যাক করেছ। এটাকি অপরাধ না?
– শিক্ষা হাইজ্যাক!! আপনি আপনার খাতা নিয়ে চলে যান। নাহয় কিন্তু আমি চিৎকার করব।
সামির কোনো জবাব দিল না। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বাকা চোখে মাহাকে দেখতে লাগল। চুলগুলো উড়াউড়ির করছে। মাজা সমান এলোমেলো চুল ছড়িয়ে আছে পেছনে। মোটামুটি ছিমছাম গড়নের। হাত- পায়ের রঙও আলতারাঙা ফর্সা। পায়ে নিরব দুই নুপুর নিথর হয়ে আছে। গলায় একটা চিকন সোনার চেন, কানে রিঙ দুল।
মাহা আবারো ক্ষেপে উঠে বলে,
-শেষ বারের মতো বলছি,, চলে যান নয়ত কিন্তু, একদম,,
সামির মষ্করা করে বলল,,
– কি আর করবে? মেরে দেবে? দাও। তবে মেজিস্ট্রেট আফু হওয়ার আগে আবার ১৪ শিকের ওপারে চলে যেও না। যতই হোক সিকান্দার বাড়ির মাল বলে কথা!
– আপনার মতো গিরগিটি কে মারলে সরকার থেকে সম্মাননা পাওয়া যাবে।
– তুমিতো আমার রঙের ভ্যারাইটি এখনো দেখইনি
ডিপজলের মা।
– আপনি যাবেন কিনা?
– বড্ড ঘুম ধরছে জানো,, এক কাজ করি এখানেই শুয়ে পরি সকালে চলে যাব৷
– বেরোন বলছি,,
– আরে যাচ্ছি যাচ্ছি,, এই ফকিন্নির ঝি এর বিছানায় আমি ঘুমাবো? অসম্ভব!
– বেরোন।
সামির উঠে দাড়িয়ে বলল,,
– শোনো,,তোমার চেহারাটা একটু দেখাওতো,, দরকারি।
– কচুর তরকারি,, কেন দেখাব চেহারা?
– কাজ আছে,, দেখাও৷
– নাাআ!
সামির জবরদস্তি মাহার দিকে হাত বাড়ালেই মাহা আবারো ঠাস করে সামিরের গালে চড় বসিয়ে দিল। সামির অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার নাটক করে বিছানায় পরে গেল।
মাহা হুড়মুড় করে এগিয়ে গিয়ে এক আঙুল দিয়ে টোকা মেরে বলল,,
– আরে আজব,, কি হলো? হায় খোদা ভুল পয়েন্টে লাগেনিতো,, মরে টরে গেল নাকি!!
মাহার মাথায় একবার নাড়া দিল,, সামির নাটক করছে। তারপর কি করবে ভেবে না-পেয়ে সিরিয়াস কণ্ঠে বললো,,
– আরে,, একি,, আপনার লুঙ্গি খুলে যাবেতো!! আরে এ-ই কি বিপদ!! কেন গেছিলাম খাতা আনতে। আল্লাহ বাঁচাও ।
মাঝরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো লাভ হলোনা। সামির একিভাবে পরে আছে। খাটের পাশে হেলান দিয়ে পা মুড়িয়ে বসে থাকতে থাকতে মাহা কখন হাঁটু তে মুখ গুজে ঘুমিয়ে গেছে খেয়াল নেই।
সামির আস্তে করে মাহার দিকে ঝুঁকে আলতো করে মুখের ওপর ছিটিয়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিল। ঘুমন্ত অবস্থায় মাহাকে দেখতে ভিষন অদ্ভুত! ঠোঁট কামড়ে সেদিকে চেয়ে থেকে মেলাল ইনায়ার বলা কথা গুলো,,
গভীর অতল কাজলটানা চোখ! বাঁশির মতো নাক,, রক্তজবার মতো ঠোট ,,, পানির মতো স্থির তার রূপের আবহা।
সামির আস্তে করে বলল,,,
– আসলেই পানি সুন্দরী, বেইমানটার মতোই।
বলেই সে চুপচাপ তার খাতা নিয়ে বারান্দা দিয়ে বেরিয়ে দেয়াল টপকে বেরিয়ে গেল। চিরকুট টা নিতে চেয়েও নিলনা।
সকালে চাচির দড়জা ধাক্কানোতে ধরফরিয়ে
লাফিয়ে ওঠে মাহা। বিছানার দিকে তাকাতেই দেখে, সামির নেই।
বড়সড় দম ফেলে উঠে বাইরে চলে যায়।
সিকান্দার বাড়িতে সিয়াম আর নুসরাতের বিয়ের অনুষ্ঠানের কাজ চলছে। সামির সোফার ওপর উল্টো হয়ে শুযে আছে। কোথা থেকে সিভান এসে পিঠের ওপর চড়ে বসে,,
– এ কাকা, কালকে রাতে কোথায় গেছিলে?
-তুই জেগে ছিলি?
– না, পানি খেতে উঠেছিলাম। বলনা কোথায গেছিলে?
– চড়ওয়ালীর বাড়ি।
– কটা খেয়ে এসেছ?
– একটাই।
– ডোজ কেমন ছিল,,?
– কালকেরটা একটু জোড়েই ছিল, নিকট ঘেঁষে আদর করেছেতো।
– কট খাওনি?
– আমি খাব কট, দুরু বাঙ্গির নাতি আমার নাম কি?
– সামির সিকান্দার,,
– আরো জোরে
– সামির সিকান্দার।
– বেটার।
সাথি এসে বলল,
– বাড়িতে লোকজন আসবে তুই রেডি হসনি?
সমির ঘাড় নাড়িয়ে জবাব দিল,,
– বিয়াইত্তা কাপলের বিয়া আমি খামুনা। বাইরে কাজ আছে।
সাথি আর কিছু বলার আগেই নুসরাত একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলল,
– সামির তুমি এই মেয়েটাকে প্রোপোজ করেছিলে?
– ছ্যাকাও দিয়েছি।
– কযজনকে প্রপোজ করো? এটা আমার কাজিন ইমা।
– আমার মনটা আসলে অনেক বড়। সমুদ্রের মতো গভীর। যারেই পেলেন সেই ডুবে যাবে। আর প্রোপোজ? আমারতো সবসময় লাবিউ ই চলে। যেমন,
মষ্করার সুরে সামির টান দিয়ে দিয়ে শোনালো,,,
-~~ লাবিউ ইমা,, লাবিউ রুমা
, লাবিউ সাথি,, লাবিউ ইতি।
লাবিউ রিয়া কিস ইউ অরু,
ইনায়া ছাড়া চলেনা, তরু এখন নতুন জিএফ,
জেনির কথা ভাবিনা ,,
নসরাত তুমি নিশি রাইতে জাইঙ্গা ধরি টানিছো,,
সাদিয়া মুলা খাইয়া খেতার তলে পাদিছো,
বাত্তি দিয়া খুজি রাইতে রুমাশা জানটুস রেএ,
রানি তুমি ধলা পাইয়া আমায় গেলা ভুলে।
কালকুঠুরি পর্ব ১১
কাশেম পেছন থেকে আরেকটা লাইন যোগ করল,
” মাহা তুমি চড় মারিয়া কোথায় গেলা চলে! ”
সামির বলে উঠলো,
– সাবাশ বেটা। !
নুসরাত ভেংচি কেটে চলে গেল। কাশেম জানালো, রাগিব দেওয়ান ডেকেছে,,, লুঙি উচিয়ে কাশেমের সাথে বেরিয়ে গেল সামির
