কালকুঠুরি পর্ব ১৩
sumona khatun mollika
মাহা সামিরের হাতের লেখার সাথে একবিন্দুও মিল পায়নি। পাবে কি করে, চিরকুট টাতো সামির সিকান্দার লেখেইনি ।
মাহা বুঝলো,, নিশ্চয়ই অন্য কাওকে দিয়ে লিখিয়েছে। হঠাৎই মাহার মনে পরে সেদিনকার ভার্সিটির ঘটনাটা। সেদিনো লাশের সাথে একটা চিরকুট ছিল।
হুড়পাড় করে মাহা মুহিবের ঘরে যায়। মুহিব ঘরে নেই।
কলেও পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর সোজা মাহবুব উদ্দিন কে কল করলে দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ হয়।
– বলুন মিস মাহা,,
– স্যার সেদিন ভার্সিটিতে লাশের সাথে একটা চিরকুট পেয়েছিলেন? ওটা এখনো আছে?
– জ্বি আছেতো।
– আপনার সাথে দেখা করতে হবে।
– আমি এখন থানায় আছি। আপনি কোথায় আছেন বলুন আমি আসছি।
– আপনার আসতে হবেনা। আমি আসছি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আধা ঘন্টার মধ্যে মাহা থানায় পৌছে গেল। মাহবুব উদ্দিন হতবাক! মাহার সন্দেহ একদম ঠিক! দুই চিরকুটের হাতের লেখা ৮০ শতাংশ মিল! মাহবুব উদ্দিন বললেন,,
– এটাই কি সামির সিকান্দার এর হাতের লেখা?
– অদ্ভুত! নাতো। সামিরের হাতের লেখা অনেক সুন্দর। এগুলো ইচ্ছে করে এমন করে লেখা যাতে ধরা না যায়। এতে যদি সামির সিকান্দার এর হাত থাকেও,, এটা সে অন্য কাওকে দিয়ে লিখিয়েছে।
– তাহলে?
– ভার্সিটির লাশটার ব্যাপারে তদন্ত কতদূর এগিয়েছেন? সেখানে কি সামির সিকান্দার এর হাত আছে বলে মনে হয়?
– না। মনে হয় না। কারণ সিকান্দার বাড়ির সকলে সেদিন বাড়িতে ছিল। মেয়র আবু সালার সিকান্দার ও বাইরে ছিলনা। তবে সামির অত্যান্ত ধুর্ত জীব তাকে ধরতে পারাটা মনে হয় ভয়াবহ কঠিন।
– আপনার কেন ঘুরে ঘুরে সামির সিকান্দার কেই সন্দেহ হয়? ।
– দেখুন মিস মাহা,, একটা কথা সেদিন বলতে পারিনি৷ আমার সন্দেহের তালিকায় আপনার কাজিন মুহিব ও আছে। কারণ,, তিনি সেদিন আমার বাড়ির সামনে অনেক্ক্ষণ জাবত দাড়িয়ে ছিলেন। আমি সচক্ষে দেখিনি। সে জন্য কিছু বলতে পারছিনা।
– কি বলছেন,, মুহিব ভাই এমন না সরল সোজা। ভার্সিটির সিনিয়র হিসেবে সামির সিকান্দার এর সাথে মাঝেমধ্যে কথা বলে ব্যাস এটুকুই।
– হতে পারে। তবে আপনার নজরানায় হিংসা করতে হয় বলুন! সত্যি আইনজীবী হবার যোগ্য আপনি।
– দোয়া রাখবেন। ইনশাআল্লাহ । আমি এখন আসছি। আরেকটা কথা বলার ছিল,, বিগতকাল রাতে,,
– রাতে??
কি একটা ভেবে মাহা বলল,,
– না কিছুনা। ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আসছি।
– কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই জানাবেন।
– জ্বি।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। মুহিব আজ সাথে নেই। বাড়ির খানিকটা কাছে আসতেই গলির মোড়ে মাহাকে ৬ জন ছেলে ঘেরাও করে। তাদের মধ্যে একজন বলে,,
– তোমার নাম মাহাদিবা ফারনাজ মাহা?
-জি। আপনারা কে?
– তোমার চাচার আত্মীয়। চলো আমাদের সাথে। ভালোভাবে না গেলে টেনে ছেচড়ে নিযে যাব।
-যাচ্ছি। গায়ে হাত দেবেন না। যাচ্ছি।
খুব একটা বেশি দুরে নয়। তারা সবাই হেটেই গলির মোড়ে ক্লাবে ঢুকল। মাহার চোখ কপালে। বাইরে সব সাধুবাবা সেজে বসে। আর ভেতরের কি অবস্থা! ছেলে মেয়ের কোনো বাছবিচার নেই, সবাই একসাথে বসে বসে আড্ডা মারছে,, মদ গিলছে।
মাহাকে সাথে করে সোজা দুইতলার একটা রুমে নিয়ে যায়। বড়সড় ঘর। সোফায় বসে আছে রাগিব দেওয়ান। পাশে বসে আছে মাহার চাচা মফিদ উদ্দিন। পাশের সোফায় উল্টো হয়ে শুয়ে খাতায় কি যেন আঁকাআকি করছে সামির সিকান্দার। রনি আর কাশেম পেছনে দাড়িয়ে।
সামির মাহার দিকে একবার চোখ দিয়ে আবারো নিজের কাজে মন দেয়। মাহা প্রথমে একটু বিব্রত হলেও মফিদ উদ্দিন কে দেখে শান্ত হয়।
রাগিব দেওয়ান বলল,,
– এইত্ত কাকা এটাই,,
মফিদ উদ্দিন গলা খাকাড়ি দিয়ে বলল
– কি কও,, অরতো বিয়া নির্বাচনের পর,
– তাতে কি? বুইঝেন কাকা ৩০ লাখ।
– তাইলে এক কাজ করা যায়৷ বিযাডা পযন্ত অপেক্ষা করো। পারবানা,,
– কেন নয়,, সবুরে মেওয়া ফলে,,
সামির হাই তুলে তাচ্ছিল্য করে বলে,,
– ভুল সবুরে পেছন জ্বলে!
রাগিব তার দিকে তাকিয়ে রহস্যজনক একটা হাসি দিল।
মাহা কিছু না বুঝলেও একটা নেগেটিভ চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে। মাহা আর মফিদ উদ্দিন সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। রাগিব দেওয়ান সামিরকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
– তোর মতিগতি ঠিক সুবিধার লাগছেনা।
– ভাঙা টিনেরও লাগেনা। লাগবে কি করে বলো, আমিতো আর মাম্মাস বয় নই যে আমার মতিগতি সোজা থাকবে।
রাগিব বলে,,
– কাজের কথায় আসা যাক,,
– একটা বিষয় বুঝতে পারছি না,,
– সামির সিকান্দার কথা বুঝতে পারচেনা??
– ভ্যাট বইকোনাতো বাল, কি যেন নাম,, আমাশা না হুমাশা,,
কাশেম ঘাড় বাকিয়ে বলল,,
– রুমাশা ভাই।
– হ্যা ওই ওই,, ওই বাঙ্গি টাকে কি করেছ? ধরে রেখে লাভ নেই,, পুলিশ শালাটা সেদিকে মনযোগ দিচ্ছে বলে আমার মনে হয় না।
– কেন?
– আরে কেন মানে,, মনে হয় আমরা বাচিয়ে দিয়েছি বুঝলে,, সম্পত্তির ভাগ কমে গেছে,,
রাগিব বাকা হেসে বলল,
– পার্সেল কাকে দিয়ে পাঠাবো? তোর চে ভালো ডেলিভারি বয় কেও আছে নাকি?
-ডেলিভারি চার্জ মেরে দাও,, ১২ ঘন্টার ভেতরে চলে যাবে।
– টাকা ছাড়া কিছু বোঝোনা শালা?
।
সামির তার হাতের খাতা কাশেমের হাতে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে লুঙ্গি ঠিক করতে করতে গানের স্বরে রাগিবের জবাব দিল,,
– টাকা পয়সা না থাকিলে
কোনো শালায় চিনে না
দুনিয়া টাকার গোলাম হইয়াছে
আরে মোল্লা ভাইয়ে ভাইবা কয়
দুনিয়া কের বাপের নয
ফিটিং করো বুকের
মেশিনগান
ধর গুলকি মারো টান
গাঞ্জা বাবার আশেকান,,,,,
রাগিব সামান্য একটু হাসলো। সামির তার চেলাপেলা নিয়ে বাইরে চলে যায়। ।
বাড়ি ফিরতেই দেখে বাড়িতে অনুষ্ঠানের কাজ শুরু হয়ে গেছে। সামির সোজা গিয়ে নিজের বিছানায় ধাম করে শুয়ে পরে। সাথি তাকে ডাকতে গিয়ে বলে,,
– কি হয়েছে? এভাবে ল্যাটকায় আছিস কেন? চল বাইরে,,
– যাবনা। আমার ভাল্লাগে না ওসব অনুষ্ঠান ফনুষ্ঠান। ওদের বিয়ে একবার এটেন্ড করছি আমি।
– চাচা ডাকছে তোকে,
– গিয়ে বল টাল্লি খেয়ে পরে আছে। বাইরে গেলে ইজ্জতের কাবাব বানাবো।
– ছি সামির! তোর গা থেকে জঘন্য গন্ধ আসছে।
– তোকে শুকতে কে বলেছে বাঙ্গির নাতনি। যা বেরো।
সাথি বেরিয়ে গেলে,, সামির নিজের ড্রয়ার খুলে কিসের যেন ঔষধ বের করে। ঢকঢক করে পানি গিলে টান হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে । প্রায় অর্ধেক অজ্ঞান হতে হতে,, সামির খেযাল করে সাফিন ডাকছে,,
– কি হইছে তোর?
কাশেম পাশে দাড়িয়ে। ইনায়া মাথার কাছে বসে নিঃশব্দে কাঁদছে।
সাফিন কাশেমকে ডেকে বাইরে নিয়ে যায়। সামির ঘাড় ঘুরিয়ে ইনাযাকে জিজ্ঞেস করে,,
– শোন, আমাকে একবার টাচ করতো।
ইনায়া আস্তে করে সামিরের গালে হাত ছুঁইয়ে দেয়। সামির কপাল কুচকে বলে,,
– টাচ যখন লেগেছে মানে এখনো পটল তুলিনি। মরা কান্না কাদছিস কেন?
– ভয় পেয়ে গেছিলাম।
– কি হইছিল আমার?
– চোখমুখ উল্টায় গেছিল। চেহারা পুরা লাল হয়ে গেছিল। ৩ ঘন্টা যাবত অজ্ঞান ছিলেন।
– ওও,, যা,, এক কাপ কড়া করে চা বানিয়ে আন।
ইনায়া উঠে যেতে যেতে আবার ফিরে এসে বলল,
– সামির ভাই?? আপনি কি টেস্ট করতে গিয়ে…
– চুপচাপ চলে যা। নিজের কাজ কর।
ইনায়া ধরতে পেরেছে। রাগিব তাকে ড্রাগস টেস্ট করতে ডেকেছিল। তবে হয়ত তাতে এলার্জিটিক কিছু ছিল যার কারণে এমন হয়েছে। এর আগেও এমনটা হয়েছে। সাফিন রাগিবকে মানা করেছিল,, যে ওই ধাঁচের ড্রাগ যেন সামিরকে না দেয়। রাগিব বা সামির কেও সে কথা পরোয়া করেনা।
বাহিরে নুসরাত আর সিয়াম সিকান্দার এর বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। সবাই সেখানে। শুধু ইনায়া আর সাথি মানা করা সত্বেও সামিরের ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছে। সিভান গিয়ে ওদের দুজনকে নিচে যেতে বলে সামিরের কাছে গিয়ে দাড়ালো,,
– এ কাকা,, তোমার চুলগেলা বড় হইছে। কাইটবানা?
– তোরও বাল পেকেছে মরবিনা?
– বাল মানে কি গো?
– ঢ্যাংগামারা চুল।
– সে যাই হোক,, তুমি যা খে এসেছ ওটার কি অনেক দাম,,
– আমি তোদের মতো ভিখারি বা ফকিন্নির ঝি নই। এক হাতে কামাই করি আরেকহাতে ঢালি।
কালকুঠুরি পর্ব ১২
তখনি সাফিন এসে বলল,,
– কি এক্কের কামাই মারাও!
– বেকার তো নই,, কামাই করি ব্যাস,, কোথা থেকে কি এটা ফ্যাক্ট না।
– তোর পরীক্ষা কবে থেকে?
– দেরি আছে এক, দেড় মাস,,
– পড়াশোনা ঠিক রেখে বাইরে যা খুশি মারা গা।
সাফিনের কথা শেষ হতেই বাহির থেকে ইনায়া এসে ডেকে নিয়ে যায়। সামির একা একা উল্টে ঘুরে শুয়ে থাকে।
