কালকুঠুরি পর্ব ৩২
sumona khatun mollika
ভোরের আলো চারদিকে নতুন দিনের সম্ভার তুলেছে। পাখির কাকলিতে মুখরিত হয়েছে চারপাশ! মাহা ঘুম ভাঙতেই একদৃষ্টে চেয়ে আছে সামিরের ঘুমন্ত চেহারার দিকে। মাহা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। তারপরেও সে বারবার কালকের কথাটাই মনে করছে,,
সামির স্পষ্ট ভাষায় বলল,, সে স্যালেন্ডার করবে। বিষয়টা বড্ড চিন্তার বিষয়। সামির সিকান্দার করবে স্যালেন্ডার! বারবার একি কথা ভাবতে ভাবতে নামাজের সময় হয়ে গেল। মাহা যখন ওযুর জন্য বাহিরে গেল দেখল কলপাড়ে বুড়ি ওযু করছে আর বুড়ো টর্চ ধরে আছে। মাথায় কাপড় তুলে মাহা তাদের দিকে এগিয়ে গেল। বুড়ো ভেতরে চলে গেলে বুড়ি লাইট নিয়ে দাড়িয়ে রইল। মাহা ওযু শেষে জিজ্ঞেস করল,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– দাদু নামাজ পড়বেনা?
– হাটুর ব্যাথা পড়তে পারেনা। যখন বলি তখন পড়ে। খালি নামাজডাই পড়েনা বাকি আমল কালাম করে। রুজাও রাখে।
– তাহলে এখানে কি করে প্রতিদিন ভোরে?
– আমি ওযু করি হেয় ভয় পায় যুদি পইরে যাই এই বয়সে টানবে কেডা। তাছাড়া সেইই যুবত বয়স থেকেই আমার সোয়ামী সবসময় আমারে চোকে চোখে রাখে।
– দাদু বুঝি আপনাকে খুব ভালোবাসে, না দিদা?
বুড়ি মাথা নেড়ে বলে,,
– পুরুষের ভালোবাসা এমনি হয়। ওরা ভয়ানক ভাবে ভালোবাসতে পারে কিন্তু তা প্রদর্শন করতে পারেনা। যে নারী তার ভালোবাসা বুঝতে পারে সেই নারীর কাছে সে নিজেই সবচে ভাগ্যবান।
বুড়ির কথাটা বেশ ভালো করে মাথায় গেথে নেয় মাহা। ওযু শেষে নামাজ পড়ে বিছানায় গিয়ে বসে। সঙ্গে বইগুলো আনলে কি ক্ষতি হতো! পড়ায় একটা বিরাট গ্যাপ পরে গেল। কথাগুলো ভেবে মাহা সামিরের দিকে তাকালো। সে এখনো নিঘোরে ঘুমাচ্ছে । কাত ঘুরে নিজেও তার পাশে শুয়ে পরল মাহা। সামির আজকে আবারো চোখমুখ কুচিয়ে ফেলছে। ঘেমে একাকার অবস্থা মানে নিশ্চয়ই দুঃস্বপ্ন দেখছে। মাহা বড্ড মনযোগ দিয়ে তাকালো দেখল সামির আসলেই দুঃস্বপ্ন দেখছে। আলগা করে ডান হাতের তালু ছুঁইয়ে দিল সামিরের বাহুতে। নরম হাতের ছোঁয়ায় সামিরের দুঃস্বপ্নের আকাশের ভাবোদয় হলো। সে ঠান্ডা হয়ে গেল।
হঠাৎই তার শরীর ঠান্ডা হতে লাগল। মাহা ভরকে গিয়ে তাকে ঠেলা মেরে জিজ্ঞেস করল,,
– এই,, কি হয়েছে আপনার? জ্বর ঠান্ডা নাকি? মরে টরে গেলেন নাকি! উঠুন, আরে সামির সিকান্দার !
সামির পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,
– মরে গেলে শান্তি পেতে নাকি! ভয় পাচ্ছো? এই বয়সে বিধবা হবে তাই!
– না। ভয় লাগে আপনি এখানে মরলে বাড়ি ফেরত যাব কি করে?
– শালী স্বার্থপর বাঙ্গি একটা। সর!
সামির বাইরে চলে গেলে মাহা বিছানা গুছাতে লাগল। বাহিরে গিয়ে দেখল বুড়ো আর বুড়ি রান্নাঘরে বসে গল্পগুজব করছে। হঠাৎই বুড়ি আচমকা অসুস্থ বোধ করে। মাথা ঘুরে পরে যায় । মুখের একাংশ কিছুটা বেকে যায় । সামির বুঝতে পারে বুড়িটা ছোটখাটো স্ট্রোক করেছে।
,- এই বুড়ো, তোমার ছুড়াছুড়ি দের খবর দাও। বুড়ি অনেক অসুস্হ। হাসপাতালে নিতে হবে।
বুড়ো ২ মিনিট কিছু একটা ভেবে একটা বাটন ফোন বের করল। মাহা বড্ড অবাক হলো এনাদের কাছে ফোন ছিল বোঝাই যায়নি।
বুড়ো যখন সবটা ফোনে জানালো ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,,
– আমি টাকা পাঠাচ্ছি তুমি মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাও। তাছাড়া আমাকেতো এখন ছুটি দেবেনা আমি যাব কি করে!
সামির ঠোট টেনে তাচ্ছিল্য করে বলল,,
– কপালপোড়া। এ বুড়ো,, ফোনটা আমাকে দাও।
কল লাগালো সোজা কাশেমের নাম্বারে। ২ বার রিং হতেই কল রিসিভ হলো।
– হ্যালো কে??
– তোমার বাল! বাঙ্গির নাতি
– সামির ভাই? আপনে? কার নাম্বার কই আপনে?
– এই নাম্বার ট্র্যাক কর, জানিনা আমরা কই তবে নাটোরের আশেপাশে । কুত্তাগরে রুটি গিলাইছোস?
– হ ভাই । সব ঠান্ডা । আইসা পরেন।
– আসতে পারলে তোমারে ডাকতাম না সমুন্দির বাঙ্গি। নাম্বার ট্র্যাক কইরা আসো। সাথে গাড়ি নিয়ে আসিস সঙ্গে দুজন যাবে
– আচ্ছা ভাই।
বুড়ো বড্ড চিন্তিত হয়ে আছে। বুড়ি চোখ খুলতেই হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল
– কি হয়েছে তোমার?
বুড়ি কোনো জবাব দিল না। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইল। মুখটা খানিকটা বেঁকে গেছে। সামির কপাল জড়ো করে দাড়িয়ে আছে। মাহা তাকে বাইরে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
– আচ্ছা,, দিদার কি হয়েছে?
– বুড়ি স্ট্রোক করেছে । দেখছ না মুখ বেঁকে গেছে।
– একটা কথা রাখবেন?
– উমমম?
– আমরা কি উনাদের সিকান্দার বাড়ি নিয়ে যেতে পারিনা? দিদার কিছু হলে দাদু আমাদের সাথে থাকলে কোনো সমস্যা ?
– এসব পরের বিষয় । বাইরে থেকে কাপড় তুলে জামাকাপড় বদলে নাও। আমরা আজকেই ফিরে যাব।
– কিন্তু,,
– কথা কম বলো, এদের ও সাথে নিয়ে যাব।
মাহা আর কথা বাড়ালোনা। চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগল। তাও ৪-৫ ঘন্টা পরে কাশেম এর উপস্থিতি হলো। কাশেম বলল,,
– আপনেরা রামচন্ডিপুর গ্রামের শেষ মাথায় আছেন। মানে এই বাড়িটা গ্রামের শেষ বাড়ি।
এখানে কি করে পৌছলেন?
– রামচন্ডিপুর! আমি রামচন্ডিপুর!
-কেন ভাই?
-না এমনি। ঘুরতে ঘুরতে। চল যা ওই বুড়িটাকে তোল হাসপাতালে যাব সোজা।
– জ্বে ভাই।
কাশেম সামিরের নির্দেশমতো বুড়ো বুড়িকে গাড়িতে তুলে সোজা গাড়ি ছুটিয়ে রাজশাহী মেডিকেলে। বুড়িকে ভর্তি করানোর পরে বুড়োকে সঙ্গে করে সিকান্দার বাড়ি ফিরে এলো সবাই। তবে বুড়োর চেহারা কেমন অদ্ভুত ভঙ্গিমা দারণ করল সিকান্দার বাড়িতে উপস্থিত হওয়ার পর। বাড়ির চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে বুড়ো সামিরকে জিজ্ঞেস করল,,
– ও ছুড়া,, তোমার পুরা নাম কি রে?
– নাম দিয়া কাম কি! আমর নাম সামির বাঙ্গি। যাও ওই ঘরে গিয়ে বসো আমি আসছি।
মাহা সামিরের এহেন জবাবে বড্ড বিরক্ত হলো। বুড়ো এবার মাহাকেই জিজ্ঞেস করল
– তোমার সোয়ামীর নাম কি গো মে?
– সামির সিকান্দার ।
– সি… সিকান্দার!!
বুড়ো যেন এক প্রকার আৎকে উঠলো! কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
– অর বাপের নাম কি?
– আবু সালার সিকান্দার ।
– আর। মা?
– উনার মায়ের নাম আমার জানা নেই। উনি মারা গেছেন অনেকবছর আগে । সামির ছোট থাকতে।
– আচ্ছা!
-কেন দাদু?
– না, মানে এমনি জিজ্ঞেস করতিছি।
সেই মুহুর্তে বাড়িতে প্রবেশ হয় সালার সিকান্দার এর। চশমা তুলে বুড়োর দিকে তাকাতেই বুড়োর মুখটা শুকিয়ে যায়। সালার সিকান্দার কপাল ভাজ করে শান্ত কণ্ঠে বলে,,
– আপনি এখানে? আপনি কি রামচন্ডিপুর থেকে আসছেন?
বুড়ো মাথা নেড়ে হ্যা জানায়। সালার সিকান্দার এর চোয়াল ঝুলে পড়ে। তিনি কন্ঠ উচিয়ে মাহাকে ভেতরে যেতে বলেন। মাহা বুঝে গেছে বুড়োকে সালার সিকান্দার বেশ ভালোই চেনেন।
মাহা চলে যাওয়ার পর সালার সিকান্দার বুড়োকে বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন সামির যেন কিছুতেই তার পরিচিত না পায়। নিজের কাজ শেষে যেন নিজ অবস্থানে ফিরে যায় বুড়ো। বুড়োও মাথা নেড়ে সায় জানায়।
সারাটা বিকেল পার হলো কিন্তু সিভান একবারো নিজের ঘর থেকে বেরোলোনা। ব্যাপারটা বেশ খেয়াল করল সামির। গলা উচিয়ে ডাকল সিভানকে। মাহা বিরক্তি নিয়ে বলল,
– ষাঁড়ের মতো না চেচিয়ে গিয়ে দেখলেই তো পারেন।
তাদের কথার মাঝেই ইতি দৌড়ে এলো , এক দৌড়ে সামিরের ঘাড়ে। বুড়ো জিজ্ঞেস করল,,
– এটা কি সাথির মে? কি মিষ্টি দেখতে!
– কি বললে? সাথি? তুমি চেন সাথিকে? দিবা তুমি বলেছ?
মাহা ঘাড় নেড়ে না জানায়। সামির চোখমুখ বেকিয়ে বুড়োর দিকে তাকালো। বুড়ো কেমন সন্দিহান হয়ে বলল,,
– তোমার বাপ বলেছে। কেবলি দেখা হইলো।
– আরে বাপরে! আমার বাপ আপানারে নিজের পরিচিতি এত সুন্দর কইরা দিছে?
– কেন? দিতে পারেনা?
– নাআ দিতেই পারে । তবে সে তো এত ভদ্রলোক নয়। সে যাকগে! তোমার বুড়ির অবস্থা তো ভালোনা। ঘোরের মধ্যে তোমার মেয়েরে দেখতে চাইতেছে।
– অর কি হইছে?
– অদ্যেক মরে গেছে। এখন যে অবস্থায় আছে বাচার চে মরা উত্তম।
– চলো তার কাছে।
– কাইশসারে বলে দিচ্ছি তোমারে নিয়ে যাবে।
– না তুমি চলো ভাই। না মানে আমিতো তারে চিনিনা। তাই তুমি গেলে ভালো হয় ।
– কি জ্বালা! আচ্ছা চলো।
হাসপাতালে যাওয়ার পর বুড়ো খেয়াল করে বুড়ির চোখ দিয়ে সমানে পানি ঝড়ে যাচ্ছে । এবং সে বলছে,, আমার মেটারে একবার দেখব। বুড়ো চোখের পানি মুছে বুড়ির ঝুলে পরা চামড়ার হাতটা নিজের মুঠোয় ধরে বলল,,
– আমাগের মেটাতো মরে গেছে নিরুপমা । তবে তারে না দেখতে পাইলেও তুমি অন্যজনরে দেখে নাও,, যারে দেখার আক্রোশ তোমার আজীবনের ছিল নিরুপমা ।
বুড়ো সরে দাড়াতেই বুড়ি চোখের মণি ঘুরিয়ে দেখতে পেল সামনে এক ছেলে দাড়িয়ে । বুড়োর দিকে তাকাতেই বুড়ো ওপর নিচে মাথা নেড়ে বলল,,
– হ নিরুপমা, ওই। ও-ই আমাদের ভিরান।
বুড়ির চোখদুটো ভিজে উঠলো মুহূর্তে ! কান্নাভেজা কণ্ঠে আওড়ালো,,
– ও আমাদের ভিরান? ভি,, ভিরান? আমার ভানুর
ছুড়া? বি… ভিরান? ভিরান?
বুড়ো মাথা নেড়ে সায় জানায়। বুড়ি ভাঙা কণ্ঠে বলে,,
– আহহহ কি সুন্দর দেখতে হয়েচে গো! ভানুর মতোই একবার কাছে ডাকো না? আমি একবার ওকে বলি,,,
কথাটা আর শেষ করতে পারলোনা বুড়ি। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল সামির আর কাশেমের দিকে তাকিয়ে । কাশেম দৌড়ে এসে ডাক্তার কে ডাকতে লাগল। কিন্তু বুড়ি ততখনে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। বুড়ো নিঃশব্দে কাঁদছে। মাহা পাশেই দাড়িয়ে আছে। তারও খুব খারাপ লাগছে। নিঃসন্দেহে বুড়ি সম্ভবত ভালো মানুষ ছিল।
তাকে সাথে করে আবারো রামচন্ডিপুর ফিরে যায় বুড়ো। কাশেম, সামিরও যায়। মাহার কথায় আর লোক দেখাতে । তাকে মাটি দেয়া শেষে সামির আর কাশেমসহ বাকিরা ফিরে আসে৷
বাড়ি ফিরে সামির দেখতে পায় সিভান কে তখনও দেখা যাচ্ছে না। রাহা ঠিকি সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করছে। রাহা যেখানে থাকে নুসরাত সেখানে থাকেনা। মাহাকেও টেনে নিয়ে যায়। এই মেয়ে টাকে একটুও সহ্য করতে পারেনা সে। সামির সোজা নিজের ঘরে চলে যায়।
মাহা নিজের জামাকাপড় গোছাচ্ছিল। হটাৎ সামির খেয়াল করে মেঝেতে সাদা পাউডারের মতো কিছু পড়ে আছে! বিষ্ময়ে চোখ ফেটে আসে। হুড়পাড় করে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারের ভেতরের গোপন ড্রয়ার কুলে দেখে যা ভেবেছে তাই! রোখ দেকিযে মাহাকে জিজ্ঞেস করে,,,
– এখানকার প্যাকাটগুলো কোথায়?
– ফেলে দিয়েছি!
– কিই?? ফেলে দিয়েছি মানে? সত্যি কথা বলো দিবা,, এগুলো কোনো মেকআপ পাউডার নয়!
– জানি, সেগুলো ড্রাগস!
– এসবের মানেটাকি? তুমি জানলে কি করে এখানে এসব আছে?
– একটা ক্ষুদ্র জীব সাহায্য করেছে।
– ওহহো! দিবা এসব ইয়ার্কি মারার বিষয় নয়। সত্যি বলো কোথায় রেকেছ?
– আজব! মিথ্যা কেন বলতে যাব! বলছিতো ফেলে দিয়েছি৷
সামির হুট করে ক্ষেপে গিয়ে মাহার গলা টিপে ধরল!
মুহূর্তে তার হিংস্র রূপ পরিস্ফুটিত হয়ে গেল।
– একটু ভালো আচরণ করেছি জন্য মনে করিসনা আমি বদলে গেছি! তুই জিতে গেচিস! জীবনেও না! আমি সামির সিকান্দার ! কে? সামির সিকান্দার!! আমি কে তাই এখনো জানিস না তুই! জানিস তুই কতবড় ক্ষতি করেছিস? ৪ লক্ষ টাকার মাল ছিল ওকানে ৪ লক্ষ! হাহহ!
মাহার চোখমুখ লালহয়ে গেছে! দম নিতে পারছেনা মাহা। চোখ যেন উপচে বাইরে চলে আসবে!
– ছেড়ে দিন মরে যাব !
– মরে যা শালী বাঙ্গির নাতনি !
রাগে সামিরের কানদুটোও লাল হয়ে গেছে। মাহার গলা ছেড়ে ধাক্কা মেরে তাকে বিছানায় ফেলে সামির বাইরে চলে যায়। মাহার কাশ উঠে গেছে। পাশের রুম থেকে সাথি আর ইনায়া দৌড়ে এসেছে! তার এই অবস্থা দেখে সামিরের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে ইনায়ার।
ওদিকে ক্লাবে,,, রাগিব দেওয়ান সামিরকে জিজ্ঞেস করছে,,
– তোকে বলেছিলাম আসার সময় মালগুলো নিয়ে আসবি। সেগুলো বউকে দিয়ে গিলিয়ে দিলি? সাবধান হয়ে যা! তোর বউ যে জিনিস মাইরি, তোকে আবার ঘুরিয়ে কালকুঠুরি তে না পৌছে দেয় !
– চোপ শালা!!! আমার মাথায় বাঙ্গি ভেঙে দিয়েছে এখন মষ্করা ঠাপাচ্ছো! মষ্করা ভরে দেব একদম! আমি আর তোর কাজই করবনা ! কাইশসা ওরে ৪ লাখ ট্যাকা মাইরে দে! চল এখান থেকে।
– ারে আরে সামিরর!! এত চটছিস কেন ভাই! বড়ভাই শাসন করতেই পারি। আয় আয় চটিসনা৷
সোমা এসে পামে বসে বলল,,
– এত রাগিস কেন সোনা? অবশ্য রাগটা তর সাথে মানায়৷ রাগিসনা।
ভুলিয়ে ভালিয়ে আবার চেয়ারে বসানো হল সামিরকে।
মাহা বারান্দায় দাড়িয়ে। সামিরের হিংস্র চেহারাটা ভেসে উঠছে বারংবার।
রাগে মাথা টা ফেটে যাবে মনে হচ্ছে । তখন যখন মাহা কাপড় গোছাচ্ছিল,, ড্রয়ার থেকে চু চু শব্দ আসছিল ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেকে ড্রযারের নিচ দিয়ে সাদা পাউডারের মতো কিছু পরছে।
ঝাড়ু দিয়ে দুটো বাড়ি দিতেই ছোট্ট একটা ইঁদুর দৌড়ে পালালো। আরো খানিকটা পাউডার পরল।
মাহা টেনে হিচড়ে ড্রয়ার খুলে দেখল কিচ্ছু নেই। ড্রয়ারেরওপরে আরেকটা ড্রয়ার আছে। মনে পরল সামির তার চাবি বইখাতার টেবিলে রাখে।
সৌভাগ্যবশত একটু খুজতেই কলমের ঝুড়িতে পেয়ে যায় চাবি। ৬ টা চাবির ৫নাম্বারটা ছিল ড্রয়ারের চাবি । ড্রযার খুলতেই অবাক মাহা,
১০- ১৫ প্যাকেট হোয়াইট ড্রা*গস!
অনেক দাম হবে নিশ্চয়ই ! সুন্দর করে প্যাকেটগুলো নিয়ে গিয়ে বাইরের ড্রেনে ফেলে দিয়ে এসেছে। এটা রাগিব দেওয়ান সামিরকে দিযেছিল এর মাত্রা টেস্ট করতে! কিন্তু তার আগেই মাহা সেসব ড্রেনে ঢেলে দিয়ে এসেছে।
রাগ সামলে নিচে গিয়ে দাড়াতেই কানে এলো সালার সিকান্দার সাফিন সিকান্দার কে বলছে,,
” ওই বুড়োকে সামির কই থেকে খুজে পেল! ! ”
” যেখান থেকেই পাক অতীতের ঘটনা না উঠালেই হলো। তাছাড়া সামির কে কি তুমি কম ধুর্ত ভেবেছ নাকি? ”
সিয়াম উঠে দাড়িয়ে বলল,,
” ও নিশ্চয়ই সব জেনে গেছে । না জানার ভান করছে শুধু শুধু ! তাছাড়া রামচন্ডিপুর এর কথা তো ওর ভোলার কথা না। আর ভিরান! ভিরানের ব্যাপারটাতো নাইই। বুড়ো বা বুড়ি যদি ভিরানের কথা তুলে থাকে, ওটুকুই যথেষ্ট সামিরের সব জানার জন্য । ”
মাহাকে দেখতে পেয়ে সাফিন বাঁকা হেসে বলল,,
– নিচে আসুন সন্মানিত হাজী ম্যাডাম। কেমন কাটলো ট্যুর?
– জ্বি খুব ভালো। তবে একটা ভুল করে ফেলেছে সামির সিকান্দার , সিভানকে সাথে নিতে ভুলে গেছে৷ যদি ওকে সাথে নিতাম বেচারা সৎ মায়ের হাতে মার খে ঘরে বসে থাকত না। আপনি দেখেছেন আপনার বউ আপনার শিশু বাচ্চা টাকে চড় মেরে ঠোঁট কেটে দিযেছে! ??
– তোমাকে আবারো বলছি মাহা, আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপারে নাক গলিওনা। কুল পাবেনা।
– তাছাড়াও আমার আরেকটা কথা জানার ছিল মেয়র সাহেব । আপনারা বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করেন না কেন? মাটির নিচে পাতালঘর টর আছে নাকি?
– আপাতত মাটির নিচে কিছু নেই । তবে তুমি যদি যেতে চাও, বানিয়ে দিতে ২ দিন কি ৩ দিন লাগবে।
– অবশ্যই যেতে চাই।
– শিওর থাকো বানিয়ে দেব। তবে বাড়ির আঙিনায় হবেনা।
– সেটাই তো জানতে চাচ্ছি,, কেন হবেনা? বাড়ির আঙিনা কেন হবে না?
– আমাদের ব্যাপার।
সালার সিকান্দার বলল,,
– তোমার যদি খুব বেশি রহস্য উদঘাটনের আকাঙ্খা থাকে,, তবে সাফিন,, একে কালকুঠুরি তে দিয়ায়। শখ মিটুক! তুমি আমাদের অবৈধ কাজ সম্পর্কে জানতে চাও তো?? জেনে যাবে সমস্যা নাই । বাড়ির বউ যখন হয়েছ সবকিছু জানাতো তোমার অধিকার!
মাহা নিকাবের নিচে বাকা হেসে ভেতরে চলে গেল। সামির রাতে বাড়ি ফেরেনি। মাহার কেমন যেন শরীর খারাপ লাগছে। মাথা ঘোরাচ্ছে গা গোলাচ্ছে,, তবে মাথায় একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে সামির সিকান্দার বলেছে সে স্যালেন্ডার করবে।
সকালবেলা সামির ডুলতে ঢুলতে বাড়ি এসে দেখে মাহা এখনো ঘুমাচ্ছে । জায়নামাজ টাও ওঠায়নি। সামির গিয়ে তার পাশে বসতেই মাহার ঘুম ভেঙে গেল। সামিরের গা থেকে ভেসে আসা মদের জঘন্য গন্ধে বমি চলে এলো। দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে গরগর করে বমি করে দিল। সামির কিছুটা ভরকে গেল। কালতো জামাকাপড়ে এক ফোটাও মদ পরেনি। গন্ধ তো এত তীব্র হওয়ার কথা না। সামির মাহাকে তেমন কিছু বললনা। আগে নিজে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। তারপর মাহার পাশে গিয়ে শুয়ে পরল।
ঘুম ভাঙে বেলা বারোটায় হাই তুলে নিচে গিয়ে দেখে বাড়ির সবাই উপস্থিত । তাদের মাঝে গলা উঁচু করে সামির ঘোষণা করে দেয়,,
কালকুঠুরি পর্ব ৩১
– আমি ইনায়ার বিযে ঠিক করেছি। খুবই সুপাত্র। এসব ঝয় ঝামেলাও করেনা। পড়াশোনা ভালো। বেশ ভালো চাকরি হবে। দেখতেও সুদর্শন।
তার এই কথায় পুরো বাড়ি যেন বিস্ফোরিত হয়। তবে চাচি খুব ভালো করে জানে সামির যেহেতু বিয়ে ঠিক করেছে সেটা বিয়ে কোনো ব্যাবসায়িক চুক্তি নয়।
